প্রদীপ ঘোষ

মায়াজম
0

 সুনহারে লমহে /




জকেই ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে দু'জনে ডিক্লারেশন দিলেই দীর্ঘ সাত বছরের প্রেম সঙ্গে আরও দু'বছরের ঘরকন্না, ন'বছরের সম্পর্কের ইতি। অদ্ভুত না? মেম রঙের মেয়েটি আমায় নেটিভ ছাড়া কখনো মানুষ ভাবেনি। কলোনিয়াল সিনড্রোম আরকি। যাকগে, আমিও সব গুছিয়ে ফেলেছি এ শহর ছেড়ে বিদেশে পাড়ি দেয়ার সব বন্দোবস্ত একদম পাকা.....

যেন আউটিংয়ে যাচ্ছি কিংবা অন্য মধুচন্দ্রিমা ও বলতে পারো। একসাথে যাব বলে মিতুলদের বাড়িতেই চলে এলাম। উত্তেজনায় নাকি অভ্যাস বশতঃ জানি না, প্যাকেট থেকে একটা নেভিকাট বার করে....... সিগারেট টা তখনও ভালো করে ধরেইনি, সম্পর্কের মতোই, দেশলাই কাঠির আগুনটা এত তাড়াতাড়ি আমার আঙুল ছুঁয়ে ফেলবে কী করে ভাববো বলো তো? ফেলে যে দেব তার ও উপায় নেই। সারা ঘরে বিছানো রয়েছে তিরিশ হাজারি পুরু মখমলি পিঙ্ক কার্পেট। পুড়ে যাবে না?

এই যে দাঁড়িয়ে আছি, বিজবিজ, গুরগুর করছে। সি-বিচে সমুদ্রের ঢেউ ফিরে যেতে পায়ের নিচ থেকে বালি সরে গেলে যেমন অনুভূতি! সর্বার্থে ওরকম-টাই। আঙুল পুড়িয়ে ফেলবার আগেই মুখে চালান করে ও ব্যাটাকে ডুবিয়ে মেরেছি। ব্যাপারটা ঘটলো দশমিকের পরে আরো দু'চার শূন্য সেকেণ্ডে। নিজের এই অবিশ্বাস্য কারনামা-তে নিজেই অবাক। অত্তটুকু সময়ের মধ্যেই দু'তিনটে নোশান আত্মস্থ করে জাজমেন্ট(!) খেয়াল করিনি, ব্যাপারটা ঘটলো একেবারে মিতুলের চোখের সামনে।

ও সবেমাত্র সাওনা, নাকি জাকুজি বাথ শেষে বিদিশার নিশা কে ফিঙ্গারস্ট্রিপ টাওয়ালে পেঁচিয়ে আর ভিসুভিয়াস আগ্নেয়গিরি কে শুধু বাথসিট টাওয়ালের আলিঙ্গনে এসে দাঁড়িয়েছিল। সম্ভবত চেনা, সিগারেট পোড়া গন্ধে অবাক হয়ে।

আমার কাণ্ডকারখানা দেখে বিস্ফারিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে, আর দীর্ঘ আটমাস বাদে খুব চেনা দৃশ্যে আমার ভেতরে যে লাভার বিস্ফোরণের উদ্গীরণ !
মিতুলের বেবাক চোখ মুখের ভাষা পড়ে বললাম....

~ কী করবো জ্বলন্ত কাঠিটা যে কোথায় ফেলবো বুঝতেই পারছিলাম না। তোমার বাবা সিগারেট খান না বলে একটা অ্যাসট্রে ও রাখোনি বাড়িতে। আমার কারণে তোমার আর কোনো ক্ষতি হোক, পাষণ্ড হলেও চাই কি করে বলো?
~ তাই বলে এরকম ইডিয়সি কেউ করে ? নিশ্চয়ই মুখের ভেতরটা পুড়েছে! কই দেখি দেখি...

বলতে বলতে মিতুল এতটাই কাছে চলে এসেছে যে আমার জামাটি ওর বাথসিটের ডিয়ো আরো কীসব মেখেছে তার গন্ধে পাগল পারা। মানুষ হলে নিশ্চয়ই আমায় গাল পাড়তো। শুধু ঘামের গন্ধ মাখাস দ্যাখ তো কী সুন্দর বাস! হা হা হা হা হা হা হা...

জামার আহ্লাদ হতে পারে কিন্তু আমার অবস্থা তখন যেন ভেতর থেকে কেউ বলছে, মা ডাকছে আমি বাড়ি যাব। কিন্তু তার পরিবর্তে মুখ থেকে আমির খশরু বেরিয়ে গেল..

"गर फ़िरदौस बर-रु-ए-ज़मीं अस्त;
हमीं अस्त ओ, हमीं अस्त ओ"

পৃথিবীতে স্বর্গ যদি কোথাও থেকে থাকে এখানেই এখানেই

ওমা! আমাকে বেকুব বানিয়ে মেম রঙের মেয়েটি চকাস চকাস চুমুতে আমায় চান করিয়ে দিয়ে একেবারে লিপলক। কোথায় লাগে সাওনা আর জাকুজি।
আরে আরে গুরু! কী ভাবে কী হলো বাঁকেবিহারি জী?

আর কিছুক্ষণ বাদে ডিভোর্স হয়ে যাবে এই পরিস্থিতিতেও শিহরণ কাটিয়ে কৌতুক অনুভব করছি বেশ। আমার হামিয়াস্তো উচ্চারণ বোধহয় ওর কানে গেল হামিদাওতো। আর মেম রঙের মেয়েটি শেষবারের মতো দয়াপরবশ হয়ে......

তন্ত্রী হয়ে হয়তো বা আমি-ই ঠিক ভাবে বেজে উঠতে পারলাম না। তাই বলে তানপুরায় সুর ছিলনা তা কিন্তু বলছি না।

মিতুলের বন্ধন ক্রমশ শক্ত হচ্ছে। এবার কেঁদে ফেললো। যদিও ওর ডমিনেটিং, বসিং এটিটিউডে আমি তিতিবিরক্ত তবু এভাবে ওকে ভেঙ্গে পড়তে দেখে কে জানে কেন, আমার একটুও ভালো লাগছিল না। মায়া হচ্ছিল ভীষণই। দু'হাতে ওর মুখটা আলতো করে ধরে বললাম..

~ কী হয়েছে? কাঁদছো কেন? তুমি-ই চেয়েছিলে। আমি তো শুধু সম্মতি দিয়েছি মাত্র।
~ আয়েম এক্সপেক্টিং। আমরা নূতন করে আরেকবার চেষ্টা করতে পারি না পিকলু ?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)