দীপঙ্কর বেরা

মায়াজম
0

 শান্তির বাসা 




- জানিস বসন্ত, বাবার জন্য আমার খুব দুঃখ হয়।
- কেন বলতো?
প্রতীক দেওয়ালে ঠেস দিয়ে বলল - দেখ, আমার বাবা প্রায় শেষ দিন পর্যন্ত শুধু চাষবাষ করেছে। আমাকে পড়িয়েছে। আর আমি, পড়াশুনা করে চাকরি পাওয়ার বছর খানিকের মধ্যে বাবা মারা গেল।
বসন্ত প্রতীকের পিঠ চাপড়ে দেয় - কি আর করা যাবে? তাতে তো তোর কোন দোষ নেই।
খুব যে দুঃখী তা নয়। তাও প্রতীক বলে - এখানে দোষ গুণের কোন ব্যাপার নয়। বাবা কোন সুখ ভোগ করতে পারল না।
একটু যেন রেগে গেল বসন্ত - কি যে বলিস? তোর বাবার মত পৃথিবীতে কেউ সুখী নয়।
- কি করে শুনি? একটা ফ্যান পর্যন্ত পায় নি। ছিঁটে বেড়ার ঘরে থাকতাম। এসি ফ্রিজ ওয়াশিং মেসিন তো দূরের কথা। টিভি পায় নি। মোবাইল জানত না। শুধু ভাঙা একটা রেডিও ছিল। ধুতি খদ্দর ছাড়া কিছু পরে নি। মদ ছুঁয়ে দেখে নি। আর আমার এখন সব বিলাসিতা আছে। বাবা আমাকে কষ্ট করে পড়াল আর আমি বাবাকে একটুও এসব সুখ দিতে পারি নি।
এবার বেশ রাগত স্বরে বসন্ত বলল - তার মানে কি তুই নিজে এখন পৃথিবীর সেরা সুখী।
- তা না। তবে?
- তবে? আরে, আমার বাবা অফিসার। মদ খায়। সব বিলাসিতা আমাদের আছে। আমি চাকরি পাই নি তবে মানুষ চরানোর কাজ করি।
প্রতীক একটু নরম সুরে বলে - আসলে তা না। বাবার জন্য মাঝে মাঝে দুঃখ হয়। সারা জীবন শুধু কষ্টই করে গেল।
- দুঃখ। ভালো বলেছিস। তোর বাবার প্রাণ খোলা হাসির মত হাসি আমার বাবার মুখে যদি একদিন একবার দেখতে পেতাম তাহলে আমি ধন্য হয়ে যেতাম। এখন চলি, পার্টির লোক আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)