সুনেত্রা সাধু

মায়াজম
19

   উন্মাদ ঈশ্বর... 






কাজটা আর শেষ পর্যন্ত কাজ রইল না, নেশা হয়ে গেল। স্বপ্ন লেখার নেশা। ডায়েরিটার শব্দভার যত বাড়ছে অলির নেশাটা ঠিক ততটাই গাঢ় হয়ে উঠছে। আজকাল এই রক্ত মাংসের পৃথিবীটাকে ওর ভীষণ ভাবে মিথ্যা মনে হয়। যেন রংদার খোলস। মনের গহীনে নিজস্ব রঙ ধামাচাপা দিয়ে মানুষজন ধার করা রঙ মেখে ঘুরছে। তাদের ভিতরে হয়তো ছোঁয়াচে অসুখের মতো ছড়িয়ে গিয়েছে সবজে ছত্রাক। অথচ সবটাই অস্বাভাবিক রকমের স্বভাবিক। কেউ কি কিছুই বোঝে না ? জানে না মনের দরজা খুলে চেতনার গায়ে রোদের আঁচ লাগাতে হয়? অলি তাই গন্ধ পায়, মন পচার গন্ধ…

অলিকে অবচেতন টানে। এক অদম্য টান, নিশিডাক যেন। অলি আসে, রোজ। রেজিস্টারে সই করে তারপর লম্বা টানা বারান্দা ধরে হাঁটতে থাকে। অনেকটা উঁচু লাল ইঁটের দেয়ালের মাথায় ঢালু ছাদ থেকে চিনেমাটির ছাঁদহীন বাতিদান ঝোলে। রাত নামলে ওরা জেগে ওঠে, তখন অ্যালজোলাম খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে এই বাড়ির সব বাসিন্দা। অলি অবশ্য সকালে আসে। যখন বারান্দার একদিকের মেঝে ছোঁয়া জানলা দিয়ে অল্প বিস্তর ভাঙা রোদ্দুর আসে, জানলার গরাদশ্রেণী মেঝেতে অনুভূমিক ছায়া ফেলে। যেন এক্কা দোক্কার ঘর। অলি মাড়িয়ে যায়, হিসেব করে, রোদটা আর ক’হাত লম্বা হলে খুপরিগুলোকে ছুঁয়ে ফেলতে পারত…
আসলে সবার ভাগ্য রোদেলা নয়। অন্তত খুপরি গুলোতে যারা থাকে তাদের তো নয়ই…
আপাত সুস্থ পৃথিবী ওদের নাম দিয়েছে বদ্ধ উন্মাদ। অলি হাঁটে, মেন্টাল অ্যাসাইলামের বারান্দা দিয়ে, হিল জুতোর খট খট শব্দ তুলে। খুপরি গুলো থেকে বেরিয়ে আসে উন্মত্ত লোলুপ হাতেরা, অলিকে ছুঁতে চায়। ওরা বহুদিন অথবা কোনোদিন নারী মাংস ছোঁয়নি। ওদের সব্বার একটা অপরাধের খাতা আছে। আছে খাতা ভরা বিকৃতি। প্রথম প্রথম অলি,ওদের ভয় পেত। চোখ বুজে পেরিয়ে যেত পথ। এখন যায় না। ওদের দিকে ঘন চোখের চকমকি দৃষ্টি ছুঁড়ে দেয়, উন্মাদ কামে আগুন জ্বালতে জ্বালতে পেরিয়ে যায় পথ। এক প্রেমিক পুরুষ অলিকে প্রত্যাখান করেছে। ওর নিজের হাতে পাতা ফুলেল বিছানায় অন্য নারীর সঙ্গে ফুর্তি করেছে। অলি সেই প্রেমিক পুরুষকে একদলা ঘৃণা উপহার দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। আর মনে পুষেছে ক্ষোভ। তারপর প্রেম জেহাদি অলি ঠিক করেছে আগুন জ্বালবে, অথচ কোনো পতঙ্গকে সেই আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেবে না। উন্মাদরা বাদ থাকে কেন? অলির এখন মনে হয় পৃথিবীর সব পুরুষই প্রায় উন্মাদ…
বারান্দা শেষে একটা লোহার দরজার সামনে বসেছিল উর্দিপরা রক্ষী। ঢুলছিল। কষ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল লালা, যেন কতকাল ঘুমোতে পায়নি। কাঁধের বন্দুক হেলে পড়েছে। ওতে কি বুলেট আছে? অলির ইচ্ছে করছিল বন্দুকটা হাতিয়ে নিয়ে ওর প্রেমিকের পিনিয়াল গ্ল্যান্ডে রেখে ফায়ার করতে। বারুদ ভরা ধাতব বুলেট মগজের কোষে ধাক্কা দিয়ে ছিন্ন ভিন্ন করে দিক ওর সমস্ত কামগন্ধ মাখা স্বপ্ন, সব লোলুপ ইচ্ছে। স্বপ্নের কথা মাথাতে আসতেই সজাগ হল অলি। গলা খাঁকরি দিয়ে বলল - “আমি ডঃ অলি স্যানাল। পঁয়তাল্লিশ নম্বর বন্দির সঙ্গে দেখা করব।” রক্ষী অলিকে চেনে, তাই ধীরে সুস্থে জাগে, হাতের চেটোয় লালা মুছে দরজা খোলে। অলি নেমে যায় বেসমেন্টের স্যাঁত স্যাঁতে সিঁড়ি দিয়ে। রক্ষী ওর ভরাট নিতম্বের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে, তারপর ঝনাৎ শব্দে দরজা টানে। আধো-আঁধারি সিঁড়ির শেষে ঝিম ধরা হাওয়ারা অলির অপেক্ষায় থাকে। সেই হাওয়ার শরীর কেটে কেটে হেঁটে যায়। মনে হয় ও যেন কোনো মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করেছে, যেখানে বন্দি আছে এক দৃশ্য উন্মাদ ঈশ্বর।
“গতকাল রাতে কী স্বপ্ন দেখলেন?” মুখোমুখি বসে জিজ্ঞেস করে অলি। মাঝে গরাদের ব্যবধান। একটা লোহার চেয়ারে বসে আছে পঁয়তাল্লিশ নম্বর বন্দি। ঘুলঘুলি বেয়ে ক্ষীণকায় তেরচা আলো রুদ্র দেবের ঠিক মুখের উপর এসে পড়েছে। গরাদের ওপারটা এখন একাঙ্ক নাটকের স্টেজ, মনস্তত্ববিদ অলি এখন দর্শক। বন্দি রুদ্র স্বপ্ন দেখে, অদ্ভুত সব স্বপ্ন। এই যেমন গতকালই সে অতিকায় লুডোর স্বপ্ন দেখেছে। যার একটা ঘরে অনন্ত অপেক্ষা নিয়ে বসে থেকেছে। তার ভাগ্যে ছক্কা পড়েনি,ঘর থেকে বেরোনো হয়নি, তার আগেই শেষ হয়ে গেছে খেলা…
রুদ্র এসব কথা ভেঙে ভেঙে বলে। অলি মন দিয়ে শোনে, ডায়েরিতে নোট রাখে। এক অপরাধীর মগজ চেনার চেষ্টা করে যা ওর গবেষণার বিষয়। রুদ্র এমনিতে কম কথার মানুষ, অলি মন খুঁড়ে কথা বার করে। তবে কেন জানি আজ রুদ্রর চোখ দুটো অসম্ভব উজ্জ্বল। যেন বহু কথা জমা রেখেছে, অলির প্রশ্নের অপেক্ষাতেই ছিল।
  • “মধুকে দেখলাম জানো, মধু, সেই রোজার মধু। এসেছিল। রুদ্র এমন করে কথাটা বলল যেন অভিনেত্রী মধু এসে এই গরাদের পিছনে কাটিয়েছে গোটা একটা রাত…
  • “কী বলল আপনার মধু?” ঠোঁটে সামান্য একটা হাসি টেনে জিজ্ঞাসা করল অলি। সেই হাসিতে মিশে ছিল এক টুকরো অদেখা তাচ্ছিল্য।
  • “ও তো কিছু বলে না, শুধু স্নান করে। সবুজ গাছে ঘেরা খরস্রোতা নদীতে ডুবে, ভেসে… ওর ভেজা ব্লাউজের ভিতর থেকে ফুটে ওঠে উত্তুঙ্গ বুক। চুল বেয়ে জল ঝরে টুপটাপ। মধু গান গাইতে গাইতে দুহাত দিয়ে জল ছেটায়, আমি কিনারে বসে দেখি। কথাগুলো বলে সামান্য উদাস হল রুদ্র, তারপর ধীরে ধীরে বলল, “সময়ের জলহাত আমার সব স্মৃতি একদিন মুছে দেবে, কিন্তু মধুকে আমি কখনো ভুলব না।” কথাটা শুনে অলির বুকের ভিতর চিনচিনে একটা কষ্ট হল। তার প্রেমিক তাকে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার এমনকি মন থেকেও মুছে ফেলেছে, অথচ অলি তো প্রেমিকের স্বপ্নে বাঁচতে চেয়েছিল। অলির খামতিটা কোথায়? শরীরে? নাকি মনে? প্রশ্নটা অমীমাংসিত থেকে গেছে। ভাবনা থেকে বেরিয়ে আবেগ সামলে অলি আবার প্রশ্ন করল…
  • “মধুকে প্রথম কোথায় দেখেছিলেন?”
  • “ জানো আমাদের বাড়িতে কোনো টিভি ছিল না। ভাড়াটেদের ছিল। আমি মাঝে মাঝে দেখতে যেতাম। ওরা আমাকে পছন্দ করত না। বলত পাগলাটা আবার জ্বালাতে এসেছে। ওরাই একদিন ভি সি আর ভাড়া করে সিনেমা চালিয়েছিল, রোজা। আমি দেখেছিলাম জলে ভেজা মধুকে। তারপর থেকে পৃথিবীর সমস্ত ছবিকে আমি জলে ভিজিয়ে দেখতাম। এক ছবির ভিতর থেকে ফুটে উঠত আর এক ছবির অন্তর্বাস।”
  • “আহা, এ যেন কবিতা!” অলি চমকে বলে উঠল। রুদ্র হাসল।
  • “ আমার বাবা নামজাদা কবি ছিল। তার অন্তরে কবিতা ছিল অথচ আমার জন্য এতটুকু ভালোবাসা ছিল না! আমি নাকি স্বাভাবিক নই। অথচ কত কচি কবিকে বাবা কোলে বসিয়ে ভালোবেসেছে। আদর করেছে। আমি দেখেছি। তখন দৃশ্যের ভিতর দৃশ্য খুঁজতে শিখেছি আর বার বার আহত হয়েছি। একদিন সন্ধ্যে বেলায় বাবার পড়ার টেবিলে বসে অভিধান ঘাঁটছিলাম। বাবা এসে দেখল,খুব রাগ করল। অশিক্ষিত বলে গালিগালাজ করল। তারপর জিজ্ঞেস করল কী খুঁজছ? আমি সাধারণ স্কুলে যাইনি বলে আমি অশিক্ষিত হলাম? আমার মরা মা যে আমায় বইয়ে ডুবে থাকতে শিখিয়েছিল…
আসলে সেদিন আমি একটা শব্দ খুঁজছিলাম। ‘বারো-ভাতারি’ কথাটা মেয়েদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কিন্তু পুরুষদের জন্য এর সমতুল্য শব্দ নেই? আমি বাবার নামের উপর সেই শব্দটা সেঁটে দিতে চেয়েছিলাম। শুনে অভিধানখানা হাত থেকে টেনে নিয়ে ছুঁড়ে দিল বাবা। একটা সামান্য শব্দের প্রতি কি আক্রোশ! যে বাবা শব্দ বেচে খায় সেই কিনা শব্দকোষের শিরদাঁড়াটা নির্মম ভাবে ভেঙে দিল! তারপর বেল্ট খুলে আমার পুরুষাঙ্গে সপাৎ সপাৎ শব্দে বাড়ি মারতে লাগলো। এরপরের ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে আমার অপরাধের খাতায় লেখা আছে। বাবার দেহের প্রত্যেকটা টুকরো আমি বহু যত্নে অভিধানের ছেঁড়া পাতায় মুড়িয়ে রেখেছিলাম। একজন কবির এর থেকে ভালো গতি হতে পারে?”
অলি শোনে। চুপ করে থাকে। তার অপরাধী মনটা দোসর খুঁজে পায়। মনে মনে সে বহুবার তার প্রেমিককে খুন করেছে। মাথার চুলে প্রেমিকের রক্ত মাখার বাসনা লালন করেছে। রুদ্রর যন্ত্রণাটা অলি অনুভব করতে পারছে। এত যন্ত্রণার মধ্যেও রুদ্রর অপ্রকৃতস্থ মনে মধুর স্বপ্নটা এখনো বেঁচে আছে। অথচ অলির কেউ নেই? সে কখনো কারো মধু হতে পারল না?
  • “তোমাকে দেখতে অনেকটা মধুর মতো। কেউ কখনো বলেনি? গরাদ ধরে দাঁড়িয়েছে রুদ্র। অলির দিকে চেয়ে আছে নির্নিমেষ। সেই দৃষ্টিতে কুহক।
সম্মোহিত অলি গুনগুন করছে ‘দিল হ্যায় ছোটা সা, ছোটি সি আশা…’
জলের বোতল খুলে গলায় ঢালছে, সেই জল উপচে পড়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে অলির বুক। অন্তর্বাস স্পষ্ট হয়ে উঠছে। কয়েক মুহুর্তের জন্য মধু হবার অদম্য বাসনা নিয়ে সে তাকিয়ে আছে উন্মাদ রুদ্রর দিকে। নাটকটা শেষ হয়ে আসছে। আলো তার জায়গা পরিবর্তন করেছে। অন্তিম দৃশ্যে হা হা শব্দে হাসছে রুদ্র। পাথুরে দেয়ালে ধাক্কা খেতে খেতে সেই রব আবছা হয়ে এলে একমাত্র দর্শকের দিকে তর্জনী উঁচিয়ে বলছে,
  • “আমার তো কামভাব জাগছে না উর্বশী। তুমি পারবে তোমার সমস্ত নির্মোক ত্যাগ করে সত্যি সত্যি মধু হতে ? তোমার ভেজা জামা, অন্তর্বাস তার নীচে মসৃণ সফেদ চামড়া, মেদ, মাংস… পারবে সেই সমস্ত নির্মোক ত্যাগ করে আমার সামনে দাঁড়াতে ? তাহলে আমি তোমাকে আমার স্বপ্নে ঠাঁই দেব।”
মাথা নিচু করে বসে আছে অলি, সমস্ত নির্মোক? সমস্ত আবরণ? ধুয়ে যাচ্ছে অলির সব অহঙ্কার। গরাদের ওপারে নিশ্চল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে বন্দি রুদ্রদেব। মেন্টাল অ্যাসাইলামের গর্ভগৃহে তখন পাক খাচ্ছে চন্দন গন্ধ…
মধু স্নান করছে। ভেজা চুল, উত্তুঙ্গ বুক…
দৃশ্য উন্মাদ মানুষ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

19মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

  1. গল্পটা যেন একটা কবিতা। আর কবিতার ভেতরে শব্দে গাঁথা আবেগ, স্বপ্নভঙ্গ। শরীর মাত্রেই কাম যে নয় সেটা রুদ্র বুঝিয়ে দিলেন। অসামান্য লাগলো সুনেত্রা।

    উত্তরমুছুন
  2. খুউব খুউব ভালো লাগলো

    উত্তরমুছুন
  3. অসাধারন উপস্থাপনা সুনেত্রা। এক নিশ্বাসে শেষ করলাম। তোমার বোনা শব্দের জালে পতঙ্গের মতো জড়িয়ে গেলাম।

    উত্তরমুছুন
  4. আবেগ আবেগ দিদিভাই,আহহ,কি লিখলে গো

    উত্তরমুছুন
  5. খুব ভালো লাগলো কি অসাধারণ কথার জাল বুনেছো

    উত্তরমুছুন
  6. এক প্রবল অতৃপ্তি, খিদে, তৃষ্ণা গল্পটার সারা দেহে ছড়িয়ে আছে। খুঁজে বেড়িয়েছি তার স্বপ্নের 'দোসর'কে। জীবন নামক আজব গরাদের এক প্রকোষ্ঠ থেকে আরেক প্রকোষ্ঠে। তবু তার শরীরী প্রশ্ন উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে থাকে কোনো সমর্পণের আকাঙ্ক্ষা নিয়ে। মুগ্ধতা।

    উত্তরমুছুন
  7. অসাধারণ একটা গল্প। শব্দ চয়ন অসামান্য। এতো ভালো লাগলো যে কী বলি !

    উত্তরমুছুন
  8. সুনেত্রা সাধুরবিবার, জুন ২৫, ২০২৩

    ধন্যবাদ জানবেন।

    উত্তরমুছুন
  9. এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।

    উত্তরমুছুন
  10. যার ভাগ্যে শত চালেও একটা ছক্কা পড়েনি সে তার প্রাথমিক অবস্থানে অবদমিত; আর যে ওই চৌখুপি থেকে বেরিয়েও এমন চাল ফেলতে পারেনি যাতে একটা সিঁড়ি খুঁজে পায় পৌঁছে যাবার - কতটুকু তফাৎ তাদের অবস্থানে? ভাগ্যের উঁচু পাঁচিল তাদের আর তাদের আকাঙ্ক্ষার মাঝখানে। দুজনেই বন্দি, দৃশ্য বা অদৃশ্য, চতুর্ভুজে। পথ ভিন্ন, উদ্দেশ্য আলাদা, কিন্তু অবস্থিতি এক। দুজনেই মুক্তি চায় - একজন চায় ঘৃণামুক্ত হতে, আরেকজন নিষ্কাম কামনার চরিতার্থতা।
    অরিগ্যামির সূক্ষ্ম ভাঁজ গল্পকে নিজস্ব রূপ দেয় - কখনও সে ফুটে ওঠা ফুল, কখনও বর্ষাস্রোত বেয়ে চলা সাধের তরণী, মেঘভেদী হাওয়াজাহাজ কিংবা আপাত নিরীহ শিকারি পাখিটি। সে রূপনির্মাণ এক অধিগত বিদ্যা ও অধ্যবসায়। আমরা চমকে উঠি দ্বিমাত্রিক একটা কাগজ যখন কলমের স্পর্শে জীবন্ত হয়ে ওঠে, ভাঁজ খুলে খুলে দেখায় তার পাঁচ ইন্দ্রিয়ের অনুভব, তার ছয় রিপু-কেন্দ্রিক মনস্তত্ত্ব।
    জীবন্ত গল্পে নাড়ির স্পন্দন অনুভব করা যায় সচেতন চয়িত শব্দগুলিতে, একক অক্ষরগুলিতে আঙুল ছোঁয়ালে। যদি বলা হয় 'একতাল' ঘৃণা, একটি সজাগ বিশেষণ চিনিয়ে দেয় ঘৃণার মাত্রাটিকে। যদি বলা হয় নারীর 'মাংস' শরীর, তা নিশ্চিত করে কামনার ক্ষুধা। এরকম এক একটি শব্দ ব্যবহার দীর্ঘ বাক্যের তুলনায় তীক্ষ্ণতর হয়ে ওঠে।
    গল্পের অলি মুছে ফেলতে চায় তার ডানা থেকে বিগত ফুলরেণুর দাগ আর 'উন্মাদ ঈশ্বর' তার মধুহীন মধুচন্দ্রিমার স্বপ্ন দেখতে থাকে।

    উত্তরমুছুন
  11. সুনেত্রা সাধুসোমবার, জুন ২৬, ২০২৩

    এই মন্তব্য এক অমূল্য প্রাপ্তি।

    উত্তরমুছুন
  12. খুব সুন্দর লিখেছিস।

    উত্তরমুছুন
  13. আমার 'ভালোলাগা' জানবেন।
    . চন্দ্রনাথ শেঠ।
    বাঁশবেড়িয়া, হগলি।

    উত্তরমুছুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন