মধুরেণসমাপয়েৎ
এবার মধুরেণসমাপয়েৎ করার ইচ্ছা নিয়ে চুপ করে গেলাম। কিন্তু বাদ সাধল যত কাণ্ড মধুর ভাণ্ড।
সমাজ জুড়ে যে একটাই ভাবধারা চলছে। টাকা। যেখানে যত টাকার গন্ধ আছে সেখানেই মৌমাছির মত মানুষের উৎপাত।
দুই বেলা খোঁজ চলছে। কেমন আছেন? কোন অসুবিধা হচ্ছে না তো? কি মধুর সংলাপ।
মাথা নেড়ে সম্মতি জানাতেই হবে। ভাল আছি। খুব ভাল আছি। একবার যদি এই নেই ওই নেই বলি তাহলেই হয়েছে।
এই নেই ওই নেই ওসব তো আগেও ছিল কি তখন তো রা কাড়ো নি কেন? থাকল পড়ে মধুর ভাণ্ড গাছের ডালে লটকে। নাও তাহলে এবার মৌমাছির হুল ফোটা সহ্য করো।
আগুন জ্বেলে ধোঁয়া দিয়ে গায়ে কি সব মেখে দৌড়ে পালিয়ে কোন কিছু দিয়ে রেহাই পাওয়া গেল না।
সেই গাছের নিচে উপরের দিকে হাঁ করে তাকিয়ে থাকতেই হবে। মধু আছে মধূ আছে নাচতে নাচতে করতে হবে দিনাতিপাত। আর ওদিকে চোখের সামনে মধুর ভাণ্ড যারা লুঠ করছে তাদের জন্য দিতেই হবে হাততালি।
কিন্তু কতক্ষণ আর সহ্য হয়। লুট করা রোয়াবে উঠছে কলরব। যোগ দিতে গিয়ে ভীষণ বিপদ।
অনেকেই বলছে - জন্মকালে কি মুখে কেউ মধু দেয় নি?
তা বাপু যাদের মুখে মধু দিয়েছিল বলে মনে হয়, যারা দিনরাত মধুর বাণী প্রচার করছে তাদের রোয়াব তাদের সাম্রাজ্যটা দেখো।
দেখেছি। তোমাদের ওই এক স্বভাব খারাপ খারাপ বলতে বলতে কেমন দুর্গন্ধময় হয়ে উঠছে। একবার বলেই দেখো না ভালো ভালো। দেখবে সব কিছু মধু হয়ে উঠবে।
আরে ভাই সেও দেখছি। মধু মধু ভাবতে ভাবতে দেখছি সব গাছের ডালে ঝুলছে মৌচাক। আমাদের কত আনন্দ। মধু মধু। জীবন হয়ে উঠবে মধুময়। ওমা! দেখি কি এ মধু অন্যে সংগ্রহ করে নিয়ে গেছে। মৌচাক সব মরীচিকা। গাছের ডালে অত দূরে ঠাহর করতে পারে নি অনেকেই।
তাই নিয়ে শুরু হয় চাপানো উতোর। কথা আর কথা থাকে না। তিক্ততায় ভরে ওঠে নিজের মুখ। কিন্তু মুখের লাগাম না দিলে যেটুকু মধু তাও যে বিস্বাদ হয়ে যাবে। তাই এখন চুপ থাকাই শ্রেয়।
কিন্তু তাতেও সমাপ্ত হল না। আসলে জীবন প্রবাহ তার নিজস্ব মতাদর্শে চলে। সেখানে মধু আছে তিক্ত আছে। অমৃত আছে বিষও আছে। যে যার নিজস্ব প্রয়োগ গুণে বিষও অমৃত হয়ে ওঠে এবং তিক্ততা মধুরতায় ভরে ওঠে। মুখ ফিরিয়ে মোহ বদল করে চলার পথ তেমন করে যে যার সাজিয়ে নেওয়ার রীতি হল বেঁচে থাকা। বাঁচিয়ে রাখা।
কত কিছুই তো রঙ ছড়ায় রঙ ভরায় রঙিন হয়ে যায়। যেটুকু আছে যতটুকু পাই সম্ভাবনায় যা কিছু সবটাই হোক ভাবনা মধুর। এগিয়ে চলার পথ।
নিজেকে নিজের জন্য উজ্জীবিত করার প্রয়াস। তাতেই অন্যের কাছে নিজের ভাব মূর্তি মধুর মধুর বংশী বেজে উঠবে। ভাবনার কথাকলি ঘরে বাইরে আকাশ প্রদীপ জ্বেলে এগিয়ে যাবে।
জানি, এত সব কথায় আমাদের মধুদা আরো কিছু মধুর বাণী শোনাবেন। তাও শুনতে হবে। মানুষের মাঝে বিচিত্র সব মধু বিতরণ ঘুরছে। কানে পেতে শুনলে নিজেকে তখন আরো মধুর মধুর ঝংকার মনে হবে।
আসলে অকৃপণ পৃথিবী সবই মধু মধু দিয়ে থাকে। আমরা তাকে নিজেদের প্রয়োজনে, নিজেদের অধিকারে, ক্ষমতার আস্ফালনে তিক্ত করে তুলি বিষময় করে তুলি। সংযত জীবনের যাপনের আমরা সেই মধুতে চলো আজ ভেসে চলি।
সুচিন্তিত মতামত দিন