রেখা নাথ

মায়াজম
0

                                                         রং নাম্বার




-- হ্যালো
-- হ্যালো, আপনি কে বলছেন ?
-- ফোনটা আপনিই করেছেন । আপনিই বলুন, কাকে চান !
-- আমি মধুমিতার সঙ্গে কথা বলতে চাই ।
-- সরি, রং নাম্বার বলে চুমকি ফোনটা কাটতে যাচ্ছিল, সেই মুহূর্তে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ভরাট গলায় পুরুষ কন্ঠটি বেজে উঠল – প্লীজ, ফোনটা কাটবেন না । আমি আপনার সঙ্গেই কথা বলতে চাই ।
-- সরি, আমি অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলি না। চুমকি একটু রাগত স্বরে বলল ।
-- আমি আপনার অপরিচিত ঠিকই কিন্তু অপরিচয়ের বেড়া ডিঙিয়ে বন্ধু হতে আর কতক্ষণ লাগবে যদি আপনি ইচ্ছুক থাকেন !
-- সরি, আমি অচেনা, অজানা ব্যক্তির সঙ্গে খেজুরে আলাপে ইচ্ছুক নই বলে চুমকি ফোনটা কেটে দিল ।
ফোনটা আবার বেজে উঠল । মোবাইল স্ক্রীনে সেই অচেনা ব্যক্তির ফোন নাম্বার ফুটে উঠল । চুমকি দেখল । যতবারই চুমকি ফোন কেটে দিচ্ছে, নাছোড় ব্যক্তিটি ফোন করেই যাচ্ছে । বিরক্ত হয়ে চুমকি কঠিন গলায় বলল – আমি আপনাকে ব্লক করে দেব, আপনি যদি আমায় এ ভাবে বিরক্ত করেন ।
-- প্লীজ ব্লক করবেন না, করুণ কন্ঠে বলে উঠল অচেনা ব্যক্তিটি । আসলে আপনার কন্ঠস্বরটি ভারী মিষ্টি । মনে হয় কান পেতে কেবল আপনারই কথা শুনি । আপনি যখন কথা বলেন মনে হয় মধু ঝরছে । আর আপনার রাগী স্বরটি আরো মধুময় । আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করে হৃদ-বীণায় ঝংকার তুলছে ।
চুমকির চেনা জগতে তার কন্ঠস্বরের সুখ্যাতি সম্পর্কে সে ভালো ভাবেই বিদিত । একজন অচেনা ব্যক্তির কাছ থেকে তার কন্ঠস্বরের প্রশংসা শুনে চুমকিরও মনে একটা ভালোলাগার আবেশ ছড়িয়ে পড়ছিল । নিজের প্রশংসা কার না ভালো লাগে ! তাই কথোপকথনে ছেদ না টেনে উপহাসের গলায় চুমকি বলল – আপনি কি কবি ? কবিতা লেখেন ?
কামজ গলায় পুরুষ কন্ঠটি বলে উঠল – লিখিনি আজ অবধি কিন্তু আপনার মধুঝরা কন্ঠস্বর যদি প্রতিদিন শোনার সুযোগ পাই তাহলে একদিন নিশ্চয় কবিতা ধরা দেবে আমায়। আপনার কোকিল কন্ঠ আমায় যে মোহিত করেছে !
-- মধুমিতার খোঁজ করতে গিয়ে কবিতাকে ধরার প্ল্যান করছেন । বাব্বাঃ আপনি কী সাংঘাতিক মানুষ ! ঠাট্ঠার গলায় চুমকি বলল ।
-- আপনার মধুঝরা কন্ঠস্বর আমায় প্রেরিত করছে । আমার দোষ ? ভরাট গলায় অচেনা ব্যক্তটি বলল ।
-- সরি, একজন অপরিচিত,অজানা মানুষের দোষ গুণ জানার প্রয়োজন বোধ করি না ।
-- সব কিছু কি প্রয়োজনেই হয় । কিছু জিনিষ আপনা আপনিই হয়ে যায় না কি? এই যেমন রং নাম্বার আপনার মধুঝরা কন্ঠস্বরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল । আমার কি সৌভাগ্য !
উপহাসের গলায় চুমকি বলল – আপনার সৌভাগ্য, আমার দুর্ভাগ্য, কে বলতে পারে ! কথাগুলি বলেই চুমকি ফোন সুইচ অফ করে দিল ।
একজন অচেনা, অদেখা ব্যক্তির সঙ্গে অযথা বার্তালাপে মিছিমিছি সময় নষ্ট । সামনেই এম.এ পরীক্ষা । কত পড়া বাকী এখনও । চুমকি মনে মনে ভাবে । মনের একটি ভিরু স্বর প্রশ্ন তোলে - "তোমারও কি ভালো লাগেনি অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে ?" নিজের মনকে জিজ্ঞেস করতে বড় দ্বিধা চুমকির ।
শুতে যাওয়ার আগে ফোন সুইচ অন করতেই, টিং টিং করে মেসেজ আসতে শুরু করল । চুমকি দেখল বন্ধু-বান্ধবদের মিসকল ছাড়াও ওই অচেনা ব্যক্তির নাম্বার থেকে কয়েকটি মেসেজ এসেছে ।
-- আপনি শুভরাত্রি না জানিয়ে হঠাৎ করে ফোনটা সুইচ অফ করে দিলেন । আপনার মধু ঝরা কন্ঠস্বরে শুভরাত্রি না শোনা অবধি আমি জেগে থাকব ।
-- অধমের নাম সুহাস । সুহাস মিত্র । গতবছর ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে এখন একটি কর্পোরেট জবে রয়েছি ।
-- আমি আপনাকে খুব ভালো করে চিনি । কারণ আপনার এক বন্ধুর বন্ধু আমি ।
প্রথম মেসেজটা পড়েই চুমকি ভাবছিল এই মাঝ রাত্রে তাকে একবার ফোন করে দেখবে ! সত্যি সত্যি সে জেগে আছে নাকি ঢপ দিচ্ছে । ইচ্ছেটা মুলতুবি রেখে শেষের মেসেজটা পড়তেই চমকে উঠল চুমকি । মনে প্রশ্ন জাগল তার, "কোন বন্ধুর বন্ধু এই সুহাস মিত্র ?"এই কৌতুহলটা এবং সুহাসকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন বোধহয় আজ সারা রাত জাগিয়ে রাখবে তাকে

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)