সর্ভানু দাশগুপ্ত - মায়াজম

Breaking

১৫ মার্চ, ২০১৫

সর্ভানু দাশগুপ্ত




রঙের অসুখে 


পাতলা রঙিন পর্দা খোঁজার কাজ ছেড়ে দিয়েছি অনেকদিন আগে,আসলে শরীরটা ভালো নেই।|আজ সকালে ঘুম থেকে উঠেই ধূসর পায়জামাটকে কাচলাম অনেকক্ষণ ধরে,ঘষে ঘষে তোলার চেষ্টা করলাম রাতজাগার হলুদ চিহ্নটাকে |শেষে ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়লাম।এসব আমার দোষ নয়,ডাগর পিশাচী একটা আমার বাড়ির সামনেই থাকে। স্বপ্নের মধ্যে লাল কাপড় পরে ঘুরে বেড়ায় ওই দংশমক্ষিকা। ওর উদ্যত নখ আমার বিছানা হাতড়ায় একটা কালো মোমবাতির জন্য । উত্তেজনায় আমার ঘুম ভেঙে যায়,দেখি গবাদি পশুর মতো পাটকিলে নরম লোম গজিয়েছে আমার গায়ে। তোষকের তলা থেকে বার করে আনলাম খয়েরি মাদুলি,তোমারই দেওয়া । দুটি বিকল্প একসঙ্গে সত্য হতে পারেনা,হলুদ রস লাগা পায়জামাটকে মসৃণ সাদা বালতির মধ্যে রেখে এলাম । এখন ভয়টা একটু কমেছে,তবে শরীর এখনও শীতল হয়নি। অপেক্ষায় থাকি কখন বিষুববৃত্ত থেকে নেমে আসবে বেতারবার্তা,আর বাদামি নেউলটা বমি করতে থাকবে আমার গোটা বিছানা জুড়ে ।  কাগজের শব্দ পাই,বুঝি আমার খাতাগুলো ডাকছে আমায়,এই ঘরে সবকিছু নিজে থেকে কেমন বদলে যায় । অচেনা ভাষায় লেখা একটা ক্যালেন্ডার হাওয়ায় উড়তে থাকে,ওর গায়ে কোনও লালদাগ নেই,তাহলে কি কোনোদিনও আমি দাঁড়াতে পারবোনা নীল আকাশের নিচে?ওষুধের প্যাকেটটা হাতে তুলে নিই,প্যাকেটটা খুলতেই তোমার বাড়ির গন্ধ পাই ।|তোমার মা এমনই একটা লাল ক্যাপসুল খেতেন । তারপর ফ্যাকাসে দুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়তেন । তারপরে আমরা ওনার অস্তিত্বের কথা ভুলেই যেতাম,সবুজ যমুনা এসে মিশে যেত নাগা-সন্ন্যাসীর শরীরে !একদিন তুমি রান্নাঘরে ব্যস্ত,আমাকে দিয়ে গেলে ক্যাপসুলটা মাকে খাইয়ে দেওয়ার জন্য,আমি তোমাকে বলতে পারলাম না যে ওনার চোখের নীল শিরাগুলো দেখলে আমি ভয় পাই । গা গুলিয়ে ওঠে আমার,ওষুধটা হাত থেকে পড়ে যায়,আমি পাগলের মতো খুঁজতে থাকি,তোমার মায়ের বিছানার তলায় দেখতে পাই এক বিশাল নীল গর্ত ।এ কী সেই নীল,সেই রোমাঞ্চ,সেই মুক্তির চিঠি !আমি গুড়ি মেরে ঢুকে যাই ওই গর্তে,হামাগুড়ি দিয়ে যেতে যেতে চলে আসি তোমাদের বাড়ির বাইরে ।|শান্তি পাই এই ভেবে যে আমাকে আর আশ্রমের গল্প শুনতে হবেনা । কিন্তু এ কোথায় এলাম,চারিদিকে অচেনা গাছ,চারপাশে কোথাও তোমাদের বাড়িটা দেখতে পেলামনা !এক অচেনা গাছের নিচে দেখলাম লুটিয়ে আছে সিংহের সোনালী কেশর ।কাছে গিয়ে দেখি কেশর নয় আমার প্রিয় নাট্যকার,তার ঘামে আর রক্তে ভেজা লাল জামা পড়ে আছে পাশেই । লাল ঘেঁষা বলে বদনাম ছিল ওনার,অথচ এখন ওনার সমস্ত নাটকে লাল পর্দা পড়ে গেছে । নীল আকাশের নিচে উনি শুয়ে আছেন রবিঠাকুরকে বিকৃত করার অপরাধে । ওই লাল জামাটা আমি তুলে নিলাম,নদীর জলে ধুয়ে পরেও ফেললাম । তখন বুঝিনি লালজামা পরার মেরুদণ্ড আমার নেই,সেই থেকে আমার এই রঙের অসুখ । এ কোনও আশ্চর্য ঘটনা নয়,তুমি ঋষি-কুমারের সাথে ঘুরতে যাও তাও ভালো,আমার সাথে যেন ভাব না হয়……

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র