সৌমেন্দ্র লাহিড়ী - মায়াজম

Breaking

৫ জুন, ২০১৫

সৌমেন্দ্র লাহিড়ী




বিষাক্ত লিপস্টিক






আয়নার সামনে শার্টটা ঠিক করে নিতে গিয়ে থমকে দাঁড়ালাম, চেহারায় কি বয়স ছাপ ফেলছে নাকি জৌলুষ কমে যাচ্ছে ? নাতো , তাহলে, ঠিক কি? কেন আমি আমার কাছেই চ্যালেঞ্জে হেরে যাচ্ছি ।
আজ পর্যন্ত একটা চ্যালেঞ্জে হারি নি, সে লেখাপড়া , খেলাধুলা চাকরি যাই হোক। আমার সুন্দর চেহারার সাহায্যে অনেক সুন্দরী শিকার করেছি শুধু চ্যালেঞ্জ নিয়েই। শরীরী চাহিদা মিটিয়ে আস্তাকুঁড়ে ছুঁড়ে ফেলার পরও নিজের ক্লিন ইমেজ ধরে রেখেছি , সেটা তো আজকের দিনে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।
তবু কেন আজ হেরে যাচ্ছি সেই একটা মেয়ের কাছেই । একটা সফটওয়্যার কোম্পানিতে উঁচু পোস্টে আছি , এক বিদেশী মেয়ে এরা এসেছে একটা প্রোজেক্ট নিয়ে। অনেক দেশির পর একটা বিদেশী দেখে আমার জান্তব লোভী জিভ লকলক করতে শুরু করেছে। একবার একবার শুধু ওই শরীরটা চাই। কিন্তু পারছি না, হেরে যাচ্ছি বারে বারে। এরা আমার সমস্ত ইঙ্গিত নস্যাৎ করে দিচ্ছে ।
প্রোজেক্ট নিয়ে কথা বলার অছিলায় এরাকে ডেকে নিয়েছি অফিস কেবিনে বা অফিসের পরে কোন রেস্তোরার দামি কেবিনে, কিন্তু কাজের কথা ছাড়া একটা কথাও এগোয় নি, এমনকি কোন অছিলায় হাতটা পর্যন্ত ছুঁতে পারিনি। ওপেন সেক্স দেশের মেয়ে হয়ে এরার এমন ব্যবহার আমার ব্যর্থতা ছাড়া কিছু নয়।

জুতার লেস বাঁধতে বাঁধতে আমার ভালমানুষ মুখোশের জান্তব শয়তানটা জেগে উঠল। আজ কোম্পানি একটা নতুন সফটওয়্যার লঞ্চে মজার পার্টি থ্রো করেছে, সবাইকে একটা মুখোশ পড়ে হলে ঢুকতে হবে।
হলের বাইরে একজন আমাকে একটা মুখোশ ধরিয়ে দিল, ওটা মুখে লাগিয়ে হলে ঢুকলাম, আস্তে আস্তে পার্টি জমে উঠল। আমার চোখ শুধু এরাকে খুঁজে বেড়াচ্ছিল, অনেক পরে একটা শুধু চোখ ঢাকা সুন্দর মুখোশে এরাকে দেখতে পেলাম। উঠে দাঁড়ালাম - আমি কি আপনার নৃত্যসঙ্গী হতে পারি?
- না, আমি নাচ করতে চাই না
তাহলে কি আমরা একান্তে কিছুটা সময় কাটাতে পারি?
- না, আমার একটু তাড়া আছে, আমি তাড়াতাড়ি ফিরে যাব
- ওকে, তবে আর না করবেন না , আমরা একসাথে একপাত্র পান করি
- সেটা কি ঠিক হবে?
না, আমি আর সুযোগ দিতে রাজি নই, চললাম দু পাত্র হুইস্কি আনতে, একটাতে আমার পকেট থেকে ঘুমের গুড়ো ওষুধ মিশিয়ে ফিরে এলাম এরার কাছে। পাত্রটা ধরিয়ে দিয়ে উইশ করলাম, মনে মনে আমার সাফল্যের । এরা মুখ খুলল- আমি আপনাকে চিনে ফেলেছি মিঃ রুদ্র
হাসলাম- তাই? আপনি আমাকে ভাল চেনেন দেখছি।
মনে বললাম আমাকে চেনা অত সহজ নয়, তবে চিনবে। পানীয় শেষ হবার আগেই ওষুধ খেল দেখান শুরু করল। এরাকে ধরে বললাম এখানে থাকা ঠিক হবে না চলুন, এরার ছোট্ট ব্যাগটা নিয়ে এরাকে নিয়ে গাড়ির দিকে চললাম। এরা পুরো সেন্স হারানোর আগে একটা কথাই বলল- বড় ভুল করলেন মিঃ রুদ্র ।
আমি কখনও ভুল করি না, ওর প্রোজেক্টর সবকিছু এখন আমার হাতে, ও কিছু ফাঁস করলেই ওকে এমন ফাঁসাব যে কূলকিনারা পাবে না। এরাকে বিছানায় শুইয়ে , রাতের পোশাকে মদের গ্লাস নিয়ে বসে আছি। ঘুমন্ত আর মৃত নারীতে আমার আসক্তি নেই। মাঝরাতে এরা জাগল, মাথা ধরে উঠে বসল - আপনি এখনও ওয়েট করছেন?
জবাবে শুধু হাসলাম, তারপর সাফল্যের উজ্জাপন, ঝাঁপিয়ে পড়লাম বিছানায় আকণ্ঠ পৈশাচিক পিপাসায় । এরার শরীরটা নিয়ে খেলতে শুরু করলাম নগ্ন উল্লাসে, কিন্তু অবাক কাণ্ড , এরা এতটুকু বাধা দেওয়ার চেষ্টা করল না। একসময় ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম ।

ঘুম ভাঙল বেশ বেলা করেই, উঠেই দেখি এরা নেই আর আমার ওয়ার্ডরোব খোলা, না কিছু এদিক ওদিক হয়নি, শুধু একটা টি-শার্ট নেই, বিছানায় এরার ছিন্নভিন্ন টপটা পড়ে আছে, বুঝলাম এরা ওটা পড়ে চলে গেছে। একটু স্বস্তি পেলাম । তোয়ালে নিয়ে বাথরুমের দিকে যেতেই নজরে পরল আয়নাটা। ডিপ খয়েরী রঙের লিপস্টিকে লেখা -
মিঃ রুদ্র ওয়েলকাম টু আওয়ার এইডস ক্লাব।

মাথাটা কেমন ঘুরে গেলো, বিছানায় ধপ করে বসে পড়লাম । আয়নার পাশে কালকের ড্রাকুলার মুখোশটা যেন হাসছে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র