গৌতম সেন - মায়াজম

Breaking

৫ জুন, ২০১৫

গৌতম সেন

মীরজাফর









তখন সন্ধে সাতটা হবে। বিকালের পাখিদের ডাক সবে স্তিমিত হয়েছে একটু। পাড়ার বাঁধাধরা ধোসার ফেরিওয়ালাটা হাতের খুন্তিটা ভারী লোহার ঢালা চাটুর ওপরে ঘণ্টাধ্বনি দিতে দিতে জানান দিয়ে যাচ্ছে। শিবানী পরনের সাজ-পোশাক সামান্য ঠিকঠাক দুরস্ত করে , ঘড়িটা পরতে বেরিয়ে পড়ল – প্রথমে টিউশান্‌ পরে রুমি দি র বাড়ি হয়ে ফিরবে। চিরকালীন এক অভ্যস্ত স্বরে মা'র উদ্দেশ্যে জানাই – মা বেরলাম, ফিরতে একটু দেরী হবে কিন্তু। সুধা দু'হাত কপালে ঠেকায়, বলে – সাবধানে যাস বাপু!
শিবানীর এই প্রতিদিন পড়াতে যাওয়া আর তদুপলক্ষে মায়ের এই বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ ঘরের দেওয়ালে ঘড়ির কাটার একঘেয়ে ঘুরপাকের মাঝে একটু হালকা বাতাসের ছোঁয়া যেন, নেহাত জন্মাবধি ওরা বাকশক্তিহীন। বেশ উপভোগ করে।

রাত দশটা পর্যন্ত সুধা এখন তার অসুস্থ স্বামী মাধবের সঙ্গে ভুতের মত রয়ে-বসে কাটাবে। ঘরেতে একটা টিভিও নেই যে সব ভুলে নেশাগ্রস্তর মত সিরিয়াল সুরা গিলবে। জানলায় গিয়ে দাঁড়ায় সে, দূরে বড়রাস্তার মোড়, তারই একটা ভগ্নাংশ দেখা যায়। অন্যমনস্কতার এই এক গুণ – আনমনা দৃষ্টির উজান স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে যায় দূর থেকে কত দূরে। ফেলে আসা স্মৃতির ভেলাটায় এই সময় ভাসতে খুব ভাল লাগে সুধার।
মাধব যেদিন সুধাকে বিয়ে করে এনেছিল, কারখানা তখন রমরম করে চলছে। কারখানার নাম উইলিয়ামস্‌ মেটালস্‌। খোদ সাহেবদের কারখানা ছিল কোনকালে, স্বাধীনতার পরে মালিকানা দেশী কোনও এক ধনকুবেরের হস্তগত হয়। মাধব তার নিজের দক্ষতার জোরে উপার্জন ও কিছু খারাপ করত না। সত্যি কথা বলতে কি সুধার কিঞ্চিত গর্বও ছিল মাধবের জন্য। কারখানায় বেশ কয়েকজন সেরা কর্মীদের মধ্যে একজন ছিল মাধব। সুখের সংসার না হলেও মাধবের একার রোজগারে মেয়েটাকে পড়াশুনাটা চালিয়ে নেওয়া যাচ্ছিল। ঝড়-ঝঞ্ঝা যে সামলাতে হয়নি তা নয়। তাদের মত তালিমারা সংসারে কোথায় না আছে একটু আধটু, সুধা সেকথা জানত। হঠাৎ চিন্তার আচ্ছন্নতা কেটে গেল তার। ভিতরের ঘর থেকে ক্ষীণকণ্ঠের ডাক কানে গেল তার। গেলে কোথায়, এ ঘরে একবার আসবে? – মাধবের গলা ভেসে আসে। স্পষ্টতা বা তীক্ষ্ণতা কোনটা না থাকলেও সুধা বেশ অভ্যস্ত হয়ে গেছে, যেখানেই থাক শুনতে পায় সে বেশ, একবারের বেশি দুবার ডাকতে হয় না প্রায় শয্যাশায়ী মাধবের।

সুধাকে ঘরে ঢুকতে দেখে মাধব ঘরের আলোটা জ্বেলে দিতে বলে তাকে। অবাক হবার পালা সুধার। আলো জ্বাললে যে লোকটা খেঁকিয়ে ওঠে, চোখে নাকি তার আলো বরদাস্ত হয় না একেবারেই। মাথা ঝনঝন করে ওঠে, মাইগ্রেনের যন্ত্রণা চাগার দিয়ে ওঠে, আরও কত কি! সে কিনা নিজেই আলো জ্বেলে দিতে বলছে। ঘরের আলোটা জ্বেলে সুধা এসে বিছানার পাশটায় বসে। শিবানী বাড়ি নেই? – মাধব জিজ্ঞাসা করে। সুধার ততোধিক নির্লিপ্ত জবাব – না, টিউশানে গেছে। আজ টিউশান সেরে রুমিদের বাড়িতে যাবে বলে গেছে। তাই একটু দেরী হবে। নিজের সমস্ত রোগব্যাধির যন্ত্রণাকে উপচে গলায় রাজ্যের উৎকণ্ঠা জড়ো ক’রে মাধব বলে – কেন রাতের বেলায় আবার রুমিদের বাড়ি কেন? ওকে বারণ করলে না কেন? দিনকাল কি আর আগের মত আছে? বোঝে না আমাদের কি চিন্তা হয়? - এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে মাধব হাঁপাতে থাকে। সুধা জানে মাধব যা বলছে তা যুক্তিযুক্ত। কিন্তু ওকে অকারণ দুশ্চিন্তার থেকে রেহাই দিতে বলে – চিন্তা কোরো না, ফেরার সময় রুমির ভাই সমর ওকে বাড়ি অবধি পৌঁছে দেবে। মাধব অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল সুধার মুখের দিকে। তোমাকে একটা কথা বলব আজ – মাধব টেনে টেনে বলে। সুধা বারণ করে – হাঁপাচ্ছ এত জোর, আজ থাক না! হাত নারিয়ে মাধব জানায় যে সে পারবে। জলের গ্লাসটা মুখের কাছে ধরে সুধা। খানিকটা গলায় ঢেলে সে নিজেও বোধহয় কিছুটা আরাম বোধ করে।

মাধব খুব নীচু স্বরে বলা শুরু করে – তোমার মনে আছে যেদিন আমাদের কারখানাটা হঠাৎ লক আউট হ’য়ে গেল। আর আমারও সেদিন ছিল সক্কাল বেলার ফার্স্ট ডিউটি। বিশাল ফাটকখানা সবার মুখের সামনে বন্ধ করা, তালা মারা। আর......... আর গেটে লটকানো কোম্পানির নোটিস - কারখানা বন্ধের ফরমান।
আমরা সেদিন ভেবেছিলাম, এ দুর্বিপাক সাময়িক। ইউনিয়নের নেতা চুনিলাল দরজার সামনে রক্তে ঘূর্ণিঝড় তোলা সে কি ভাষণ! মালিককে খবর দেওয়া হয়েছে, সব কর্মচারী, শ্রমিকের সামনে তাঁকে জবাবদিহি করতে হবে এত লোকের রুটিরুজির সম্বল, এতদিনের চালু কারখানা কেন তিনি বিনা কারণে নেহাতই নিজের মর্জি মাফিক বন্ধ ঘোষণা করেছেন। চুনিলাল কে আমরা ভরসা করতাম, ও আগেও বহুবার এই মালিককে পিছু হটতে বাধ্য করেছে। সেদিন যেন তার সে আরও বিধ্বংসী রূপ। তার ডাকে ...... কাশির দমক জাঁকিয়ে এল এবার। মাধবকে দম নিতে বাধ্য হয়ে চুপ করতে হ’ল।
সুধা বলে – কি হবে আর সে পুরানো কাসুন্দি ঘেঁটে। আমি জানি সারা কারখানার লোক সেদিন ভেঙ্গে পড়েছিল তোমাদের চত্বরে। তোমরা দিনের পর দিন পালা করে সেখানে অষ্টপ্রহর ধর্না দিয়েছিলে, পাহারা দিয়েছিলে, যাতে মালিক কারখানা সরিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
কত নেতা এল পার্টি থেকে, শহর থেকে শ্রমিক- মজদুর সংঘের বড় বড় নেতা স্থানীয় লোকে এল, তোমাদের পাশে দাঁড়াতে। কিন্তু আখেরে কি হল? সে কারখানা আজও বন্ধ, আর বন্ধ তোমাদের আন্দোলন ও। তোমাদের নেতা চুনিলাল বাবু তো এখন দিব্বি একজন বড় প্রোমোটার।
সুধা মাধবকে শান্ত করে, বিশ্রাম নিতে বলে... কিন্তু মাধবের শীর্ণ শরীরে দম নিঃশেষপ্রায় হলেও, তার চোখগুলো এখনো জ্বলতে থাকে। ঠিকরে আসে, কি যেন আরও আক্রোশ ঠেলে বেরোতে চায়।
সে আবার বলতে শুরু করে – হ্যাঁ, সে কারখানা আর খুলল না, কত লোক এ জায়গা ছেড়ে চলে গেল, নিজের জীবন শেষ করেও দিল কতজন। আর চুনিলাল কিন্তু আস্তে আস্তে ওর চ্যালা-চামুণ্ডা নিয়ে সরে পড়ল। কোথায় একটা বিরাট গণ্ডগোল ছিল গো!
সুধা ঘড়ির দিকে তাকায়। মাধবের খাওয়ার সময় ও হয়ে এসেছে। সে ছেদ টানে এই বিষণ্ণতার পাঁচালী পাঠে। শুধু মাধবকে বলে – কিছু তো একটা ছিলই, নইলে এত বড় গণ্ডগোল টা ঘটে গেল কি করে। যাক তোমায় খেতে দিই, খেয়ে শুয়ে পড়। রাতের ঘুমকে জবাই করে কিছু লাভ আছে!
মাধব দীর্ঘশ্বাস ফেলে। যেটা সে এতদিনে একটার পর একটা বিপর্যয়ের সিঁড়ি ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বেশ রপ্ত করে নিয়েছে। সে ভাবে মনে মনে, ঠিকই তো লাভ আর কি হবে তার, তবে চোখের সামনে কয়েকজনের লাভ হতে সে দেখেছে, যেমন দেখেছে তার মত আরও অনেক হতভাগ্য কর্মচারী ওই কারখানার।

সুধা রান্নাঘরের দিকে এগোয়, আর মাধব ক্লান্ত, অবসন্ন মনে একটা জঘন্য প্রতারণার ছবি একমনে উদ্ধার করে চলে, ঠিক না ভুল তা ভাববার মত ক্ষমতা বা শারীরিক সামর্থ্য কোনোটাই তার এতদিন পরে আর নেই।


রাত দশটা বাজল অবশেষে। শিবানী সব কাজ সেরে বাড়ি ফিরল। নির্বিঘ্নেই। সুধাও নিশ্চিন্ত হ’ল। বাবা শুয়ে পড়েছে? – শিবানী জানতে চায়।
সুধা বলে – হ্যাঁ, আধা ঘণ্টা হবে। জানিস, তোর বাবা আজ আমায় আবার সেই কারখানার বন্ধ হয়ে যাওয়ার দিনগুলোর কথা বলতে শুরু করেছিল। আজ ওনার মনে একটা তীব্র সন্দেহের গন্ধ পেলাম। আমার মনে হয় একেবারে ফেলে দেবার মত নয় সে কথাগুলো।
সে কি বাবা নিজের মুখে এই শরীরে আবার কারখানার কথা তুলেছিল? – শিবানী অবাক হয়ে মাকে জিজ্ঞাসা করে। শিবানী জানে, বাবা ইদানিং কারখানার কোনও কথা হলেই রুষ্ট হয়ে সবাইকে থামতে বলেন। এক বিতৃষ্ণা ছড়িয়ে পড়ে তাঁর মুখে। খানিকটা স্বগতোক্তির সুরে শিবানী বলে বসে – কি জানি বাবা কি তবে কিছু টের পেয়ে গেছেন, জানতে পেরেছেন কিছু?
সুধা মেয়ের হাবভাবে খানিকটা অন্যরকম কিছুর গন্ধ টের পেয়ে বলে – হ্যাঁরে কারখানার কিছু নতুন খবর আছে নাকি রে? মেয়ের মুখে একটা তির্যক হাসি খেলে যেতে দেখে সুধা।
হ্যাঁ, নতুন ই বটে, মা! – শিবানীর বলার ঢং এ স্পষ্ট শ্লেষের সুর। শিবানী মাকে খাবার ব্যবস্থা করতে বলে কলঘরে ঢোকে ফ্রেস হবার জন্যে।

খাবার টেবিলে মা আর মেয়ে। সুধার কেবলই অপেক্ষা মেয়ে হয়ত কিছু একটা নতুন খবর নিয়ে এসেছে, যা তাকে বলবে। শিবানী যতই স্বাভাবিক ভাবে এসে বসবার চেষ্টা করুক, সুধার কেমন যেন বোধ হয় আর পাঁচটা দিনের থেকে শিবানী আজ অন্যরকম। সুধা নিজেই প্রসঙ্গের অবতারণা করে।
মেয়েকে বলে – রুমি কেন ডেকেছিল রে তোকে? কোনও কাজ ছিল।
হ্যাঁ মা – সংক্ষিপ্ত উত্তর শিবানীর।
কি কাজ? – স্বভাবতই পাল্টা প্রশ্ন মায়ের। শিবানী কিছুক্ষণ মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকে আনমনে, তারপর বলে – মা তুমিও খেতে বসে যাও। অনেক কিছু বলার আছে। সুধার কৌতূহলে এবার কিঞ্চিত আশঙ্কার ছিটে লাগে। সে আর দেরী না করে, নিজের খাবারটা নিয়ে মেয়ের পাশে এসে বসে।

শিবানী শুরু করে – আচ্ছা মা মনে পড়ে, চুনিবাবু আমাদের বাড়িতে কত এসেছে? এমন কি কারখানা বন্ধ হয়ে যাবার পর ও নিয়মিত আসত, বাবাকে আর আমাদের কে কত আশার আষাঢ়ে গপ্পো শোনাত। আর বাবার চোখটা গর্বের চাহনিতে ভরে উঠত।
উনিই তো আমাদের ভীষণ ভরসার একটা আশ্রয় ছিলেন। সুধা বলে চলে – তোর বাবা চুনিবাবু চলে গেলে বুক ঠুকে বলতেন, দেখে নিও এ বিপদ থেকে কেউ যদি উদ্ধার করে সে ওই চুনিই। আমাদের এতগুলো কর্মচারী- শ্রমিকের নেতা ও। যোগ্য লোককেই আমরা বেছেছি। শিবানীর মুখে এক বিদ্রূপের বিদ্যুতলেখা ঝিলিক দিয়ে ওঠে। বলে – মা বাবা ঘুমিয়েছে তো?
শোনো এবার সেই মহানুভব চুনি বাবুর কিসসা। কারখানা বন্ধ হ’ল যখন, কি ভীষণ অ্যাক্‌টিভ হয়ে পড়েছিলেন উনি, মনে আছে তোমার। চাঁদা তোলা, ঘরে ঘরে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া, যৎসামান্য হলেও সে সময়ে গরীবের খুদকুঁড়ো তো বটে। চুনিবাবুর এই উদ্যম তাকে রাতারাতি দেবতা বানিয়ে দিয়েছিল শুধু কারখানার শ্রমিক- কর্মচারীদের কাছে নয়, আমাদের এলাকার সাধারণ মানুষদের কাছেও - শিবানী একটুখানি জল খেয়ে নেয়। মা-মেয়ে দুজনের ই খাবার গলাধঃকরণের গতি ক্রমেই শ্লথ হতে থাকে।
মায়ের চোখেমুখে এক অবিশ্বাসী বিস্ময় ফুটে উঠতে দেখে মেয়ে শুরু করে আবার – এবার বলি পর্দে কা পিছের একটা বেশ মুখরোচক গল্প। তবে মা তোমার বিশ্বাস না হ’লেও জানবে এটা একটা সম্পূর্ণ সত্যি মীরজাফরী প্রতারণার ঘটনা – যা কিনা গল্প হ’লেও সত্যি।
দুজনার খাওয়া যেমন এগোতে থাকে, শিবানীর কথায় যেন সাসপেন্স ও বাড়তেই থাকে।
সুধা মেয়েকে বলে – মোদ্দা কথা কি হয়েছে তাই বল। শিবানী বলে – মা সমর দা আমাদের কে জানাবেন বলে রুমি দি আমাকে আজ ডেকেছিলেন। কারখানা রাতারাতি বন্ধ হয়ে যাবার নেপথ্য কাহিনীটা এখন কোনভাবে প্রকাশ্যে এসে গেছে।
সুধা জিজ্ঞাসা করে – কি হয়েছিল কারখানাতে?
মালিক বহুদিন ধরে তাল খুঁজছিল এখান থেকে কারখানা সরিয়ে নিয়ে যাবার। কিন্তু কাজটা যে খুব সহজ হবে না সেটুকু বোঝার বুদ্ধি ওই ধুরন্ধর মালিকের ছিল। সে তাই তলে তলে ওই সর্বহারার নেতা চুনিলাল কে কব্জা করার চেষ্টা শুরু করে দিয়েছিল। আর এই মওকায় নেতাবাবু নিজের আখের গুছিয়ে নেওয়ার একটা বড় মওকা হাতের কাছে পেয়ে গেল। এর পরের সংক্ষিপ্ত গল্পটা হ’ল একদম হুবহু মীরজাফরের ছক। মালিক চুনিলাল কে বেশ বড়সড় টাকার টোপে গেঁথে ফেলল। বদলে কোনও রকমের বড় ঝামেলা না ঘটিয়ে মালিককে সে চোরা পথে কারখানা সরিয়ে নেওয়া প্লান কষে দিল। কারখানা বন্ধ হ’ল চুনিলাল নিজের কব্জায় রেখে দিল সমস্ত শ্রমিক- কর্মচারীদের, তাদের নিয়ে হাওয়া গরম ক’রে সাজানো আন্দোলন ও করল। ধীরে ধীরে প্রতিবাদের হাওয়া টা সে নিজেই ঢিমা করে সরে পড়ল।
বলিস কি রে! – সুধার আকাশ থেকে পড়ার অবস্থা তখন।
আরো আছে মা। সেই চুনিবাবু আজ হঠাৎ গজিয়ে ওঠা প্রোমোটার। আর ওর সঙ্গে কারা আছে জানো? ইউনিয়নের ওরই কিছু চ্যালা চামুণ্ডারা। কোন না কোনও ভাবে এ কথা টা বেড়িয়ে এসেছে। সমরদা ঠিক করেছে এর একটা ভাল জবার দেওয়ার সময় এসেছে। একটা সুযোগ ও পাওয়া গেছে এতদিনে – শিবানীকে বেশ উত্তেজিত বলে মনে হল সুধার।
তা সুযোগ টা কি? – সুধার পালটা জিজ্ঞাসা।
শিবানী একটু গলা উঁচিয়েই বলে ওঠে – শয়তানটার এত লোভ, এত দুঃসাহস! ওই বন্ধ কারখানাটার জমিটা ও কবজা করেছে মালিকের কাছ থেকে। বলে কিনা ওখানে ফ্লাট তুলবে।
তা ও এখন এই তল্লাটের বড় প্রোমোটার, ও চাইলে তো তুলতেই পারে! তাতে তোর ওই সুযোগের কি হ’ল? – সুধার সাদামাটা জবাব।
না মা, আমরাও এই কদিনে এলাকার সব মানুষকে একাট্টা করেছি, বুঝিয়েছি কারখানা বন্ধ হওয়ার পিছনে মূল নাটের গুরু টি কে, তার আসল চেহারা টা প্রকাশ্যে এনে দেব আমরা কাল। কালই উনি আসবেন কারখানার দখল নিতে। তখন সবাই মিলে এমন গন পিটুনি দেওয়া হবে, যে চুনির লাল রং মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হবে... –শিবানীর এমন জবাবে মা তো প্রায় বাক্যহারা। সভয়ে মেয়েকে জিজ্ঞাসা করেন – দাঁড়া দাঁড়া, আমরা মানে ? তুইও আছিস নাকি? বেশ বড়সড় গণ্ডগোল বাঁধবে তো?
সে ব্যবস্থা সব করা হয়েছে। আর আমি থাকব না, আমার ঘরে একজন এত বড় প্রতারণার শিকার, কি বল? – শিবানীর এমন আত্মবিশ্বাসী সুর সুধা আগে কোনদিন শুনেছে বলে মনে হয় না। সে তাও বলে – শোন সমররা যায় যাক, তোর আর গিয়ে কাজ নেই।
না মা, আমি সমরদাকে কথা দিয়েছি। ওই শয়তানটার মুখোশ খুলতে যা যা করার দরকার, কাল আমরা তাই করব- শিবানী বেশ জোড়ের সাথেই বলে।
কি জানি বাবা, একটা ঝামেলা বাধবে ঠিক, দেখে নিস! – সুধা মেয়ে কে নিবৃত্ত করার শেষ চেষ্টা করে।

বাঁধুক। গণ্ডগোল সেদিন কিছু কম বাঁধেনি সুধা, যেদিন আমাদের মুখের গ্রাস কেড়ে নেবার এত বড় ষড়যন্ত্র করেছে ওই মুখোশধারী চুনিলাল – হাঁপাতে হাঁপাতে এই কথাগুলো এক নিমেষে বলে গেল দপ করে জ্বলে ওঠা এক প্রাচীন শ্রমিক।
সুধা ও শিবানী দুজনেই চমকে গিয়ে মাথা ঘুরিয়ে দ্যাখে পিছনে অনেক কষ্টে ওয়াকারে ভড় দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে কোনমতে দাঁড়িয়ে আছে মাধব।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র