মুরারি সিংহ - মায়াজম

Breaking

৫ জুন, ২০১৫

মুরারি সিংহ

                                       
রবীন্দ্র প্রভাব মুক্ত 'কল্লোল' যুগ বাংলা কবিতাকে যে বিশাল উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল , পরবর্তীতে তেমন কোন পরিবর্তন এলো না কেন ? কল্লোল প্রভাব কি এখনও বাংলা কবিতায় রয়ে গেছে ? আপনি কি মনে করেন ?  

মুরারি সিংহ -- 
   তোমার এই প্রশ্নের প্রথম অংশের মধ্যে যে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছ তার সঙ্গে একমত হতে পারছি না। কল্লোল-পত্রিকার প্রকাশ নিঃসন্দেহে বাংলা সাহিত্যে একটা নতুনের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছিল, কিন্তু তা বাংলা কবিতাকে ‘বিশাল উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল’ এমনটা আমি মনে করি না। বরং তা বাংলা গল্প-উপন্যাসকে অনেক বেশি প্রভাবিত করেছিল। আবার কল্লোল যুগ বলাতেও আমার আপত্তি আছে। সেটা একটা সময়, বড়ো অস্থির সময়। কল্লোল ও তার সহযোগী প্রগতি-উত্তরা-কালিকলম-এর যে এক যুগ সময় তাকে কেউ কেউ কল্লোলের কাল বা কল্লোলের কোলাহল বলেছে।  
আমি মনে করি কল্লোলের কাল হঠাৎ করে ভূমিষ্ঠ হয়নি। তার হয়ে ওঠার পিছনে একটা সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ছিল। বছর ছয়েক হল প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয়েছে। যুদ্ধ তো নয় সে এক বিশাল পতন।বিশ্বব্যাপী সেই অকারণ ও নিষ্ঠুর নরমেধ যজ্ঞে সমস্ত প্রচলিত নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ, বিশ্বাস ও মানবিকতা চুরচুর করে ভেঙে পড়েছে। বিশ্বমানবের উপর এই চরম আঘাত নেমে এসেছে আবার সেই রাষ্ট্রগুলির হাত দিয়ে তথাকথিত আলোকপ্রাপ্তির সুবাদে যারা এতদিন নিজেদের পৃথিবীর সবচেয়ে সভ্য ও শিক্ষিত দেশ বলে দাবি করে আসছিল। সভ্যতার মুখোসের আড়াল ভেঙে তাদের পাশবিক লোভ ও লালসার আসল দানবিক মুখ বেরিয়ে পড়েছে। আবার অন্যদিকে শ্রমিক-বিপ্লবের মধ্যে দিয়ে জন্ম নিয়েছে সাম্যবাদী রাষ্ট্র সোভিয়েত রাশিয়া। দেশিয় রাজনীতিতে ঘটে গেছে জালিয়ানাবাগ হত্যাকাণ্ড, সূচনা হয়েছে অসহযোগ আন্দোলনের। ভূমিষ্ট হয়েছে কমিউনিস্ট পার্টির। 
এদিকে দেশিয় সমাজও তখন ভাঙছে। গ্রাম-গঞ্জে ম্যালেরিয়ার প্রকোপ, শিক্ষিতের সংখ্যা-বৃদ্ধি, কলকাতা ও আশেপাশে কলকারখানার সংখ্যা-বৃদ্ধি সব কিছুর ফলে কলকাতায় আসা মানুষের স্রোত বাড়ছে।
সাহিত্যিক পরিমণ্ডলে আস্তিক্য-বুদ্ধি, সত্যনিষ্ঠা, সৌন্দর্যবোধ, আনন্দ-মঙ্গল-কল্যাণ-প্রেম এইসব মিলিয়ে তিল তিল করে গড়ে ওঠা রবীন্দ্রনাথের ভাবনালোকও আর নতুন প্রজন্মের মনঃপুত হচ্ছে না। রবি-কিরণের প্রকোপে হাঁসফাঁস করা অস্তিত্বের সংকটে-ভোগা কবি-যশঃপ্রার্থী তরুণ-তুর্কিরা খুঁজছে অন্যপথ। ইংরেজি শিক্ষার সুবাদে তাদের জানা হয়ে গেছে ইউরোপীয় সাহিত্য এবং ফ্রয়েড ও মার্ক্সের দর্শন। তখন আদিগন্ত ছায়া-বিস্তারকারী রবীন্দ্রচেতনার বিপরীতে দাঁড়িয়ে তাঁদের মনে হচ্ছে সর্বত্যাগী বৈরাগী বা সন্ন্যাসী হবার মধ্যে যেমন আনন্দ আছে, অনাচারী ব্যভিচারী লম্পট হবার মধ্যেও কিছু কম আনন্দ নেই। নিজেদের রবীন্দ্র-প্রভাব থেকে মুক্ত করার জন্য সেই ভাবনা থেকেই কল্লোলের সূত্রপাত। তাঁদের কাছে মানুষের মানে দাঁড়াল রক্ত মাংস হাড় মেদ মজ্জা ক্ষুধা তৃষ্ণা লোভ কাম হিংসা সমেত গোটা মানুষ। সেটা অবশ্য জগদীশ গুপ্ত, মণীশ ঘটক(যুবনাশ্ব), বুদ্ধদেব বসু, অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত এঁদের গল্প-উপন্যাস যতটা বেশি প্রকট হয়েছিল কবিতায় ততটা নয়। তবে নজরুল ইসলাম অচিন্ত্য সেনগুপ্ত বুদ্ধদেব বসু প্রেমেন্দ্র মিত্র জীবনানন্দ দাশ এঁদের কবিতায় একটা দ্রোহ একটা ভিন্ন উচ্চারণের বীজ অবশ্যই বোনা হয়ে গিয়েছিল। 
কল্লোলের পরেও বাংলা-কবিতায় পরিবর্তন কিছু কম হয়নি। কল্লোলের প্রভাব বলতে তুমি ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছ আমার বোধগম্য হল না। তবে যদি বলো বিদ্রোহ বা যৌনতার নামে নতুন কিছু করার ভাবনা, তাহলে বলতে হয় আরো পিছনে মুখ ফিরিয়ে বাংলা কবিতার অতীতটা একটু দেখে নাও। দেখবে বাংলা-কবিতা কখনো বন্ধ্যা হয়ে যায়নি। আমাদের সৌভাগ্য বাংলা-কবিতার সূচনায় রয়ে গেছে পরম সৌগতের ছোঁয়া। কারণ তার জন্ম বৌদ্ধ সিদ্ধাই-যোগী হাতে। যা প্রথম দিন দিন থেই তাকে দিয়েছে একটা বৈরাগ্য ভাব, তান্ত্রিক ও তাত্ত্বিক রহস্যময়তা, একটা শূন্যতার দর্শন। পরবর্তী সময়ে বৈষ্ণব পদকর্তাদের হাত ধরে বাংলা-কবিতায় এল রোম্যান্টিকতা পরকীয়া প্রেমধর্ম তথা জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে প্রেমধর্মের প্রকাশ। চৈতন্যদেবের প্রভাবে দীর্ঘদিন ধরে তার বিস্ফোরণ চলল। মঙ্গলকাব্যের কবিরা তার সঙ্গে মেশালেন মহাকাব্যিক মেজাজ ও দেব-কাহিনীতে প্রান্তিক-মানুষজনের সুখ-দুঃখ । পরে শাক্ত-পদাবলিতে এল পরম বাৎসল্য ও ভক্তিরস। মায়ে-পোয়ের ঘরোয়া আলাপচারিতায় দেবীকে সম্বোধন করা হল তুই বলে। আবার ভারতচন্দ্র আনলেন নাগরিক বিচক্ষণতা ও বৈদগ্ধ।
সুতরাং এইভাবে যদি দেখ প্রতিটা যুগ থেকেই বাংলা-কবিতার অর্জন কিছু কম নয়। সেই দিক দিয়ে কাম বা যৌনতাও এখানে কিছু নতুন নয়। বাংলার কবি জয়দেবের গীতগোবিন্দ-এতে বা মহাজন-পদাবলিতে যে শৃঙ্গার রসের প্রকাশ বা ভারতচন্দ্রের বিদ্যাসুন্দরে যে যৌনতার বর্ণনা তা বাঙালি সাহিত্য-রসিকের স্মৃতি থেকে কখনোই মুছে যাবার নয়।
অবশ্য ঔপনিবেশিক পর্বের ভিক্টোরীয় মূল্যবোধ ও রবীন্দ্রকবিতার মার্জিত শুচিতায় তা কিছুকাল ঢাকা পড়েছিল। নতুন সময়ে পশ্চিমি হাওয়ার নতুন মেজাজ গায়ে মাখিয়ে কল্লোলের গল্প-উপন্যাস বাঙালির সেই স্মৃতিকেই আবার উসকে দিয়েছিল মাত্র। সমাজে বা সাহিত্যে শুচি-অশুচি বা শ্লীলতা-অশ্লীলতার এই টানাপোড়েন কোনোদিনই লুপ্ত হবে না।    

 মায়াজম--  
     কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, অমিয় চক্রবর্তী, জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে প্রমুখ যে 'কল্লোল' এর যে ব্যাটন তুলে দিয়েছিলেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়  শক্তি চট্টোপাধ্যায়  বিনয় মজুমদার  উৎপল কুমার বসু  প্রভৃতি কবিদের হাতে তারা বাংলা কবিতা কতদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছিলেন ?আপনি এ ব্যাপারে কি মনে করেন ?

মুরারি সিংহ - 

তুমি এখানে যে কবিদের নাম নিয়েছ তাঁদের মধ্যে সুধীন দত্ত কল্লোলে এক কলমও লেখেননি, বিষ্ণু দে একেবারে শেষদিকে সপ্তম বছরের সপ্তম সংখ্যায় কল্লোলে একটা গল্প লিখেছিলেন। প্রথম দিকে সেখানে অমিয় চক্রবর্তীর মাত্র একটি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। কল্লোলে যে-দুজন বেশি লিখেছিলেন তাঁরা হলেন বুদ্ধদেব বসু এবং জীবনানন্দ দাশ। জীবনানন্দের পদবি তখনও দাশ হয়নি, ছিল দাশগুপ্ত। সপ্তম বর্ষের প্রথম সংখ্যায় তিনি দাশ হলেন। লিখলেন পাখিরা কবিতাটি। 
সুধীন দত্ত-বিষ্ণু দে-জীবনানন্দ-অমিয় চক্রবর্তীদের আধুনিক পর্ব শুরু হয়েছিল কল্লোল পরবর্তী সময়ে। আবার বিশেষজ্ঞদের চোখে চিহ্ন-প্রকরণ বিচার করে জীবনানন্দ ও বুদ্ধদেব বসু ছাড়া কল্লোলের আর কোনো কবিকেই আধুনিক বলা হয় না। এখানে অবশ্যই বলা দরকার বাংলা-কবিতায় আধুনিকতা বলতে আমরা যা বুঝি তা কিন্তু ইউরোপীয় আধুনিকতা যা এদেশে এসেছিল ঔপনিবেশিক শাসনকালে, পরাধীনতার সময়ে। তাই এখানে আধুনিকতা বলতে সম-সাময়িকতাকে অথবা কোনো নির্দিষ্ট সময়কালকে বোঝায় না। যে অর্থে ভারতচন্দ্রের চেয়ে ঈশ্বরগুপ্ত আধুনিক, বা ঈশ্বরগুপ্তর চেয়ে মাইকেল, মাইকেলের চেয়ে বিহারিলাল বা বিহারিলালের চেয়ে রবীন্দ্রনাথ আধুনিক, সেই অর্থে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে জীবনানন্দ আধুনিক নয়। 
আধুনিকতা বলতে একটা নতুন অ্যাটিটিউডকে, একটা বিশেষ মর্জি বা ঝোঁককে বোঝায়। বাংলা  কবিতার আরো অনেক বাঁক-বদলের মতো এটাও একটা নতুন বাঁক-বদল। এই মর্জির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল নগরকেন্দ্রিক ক্লান্তি ও নৈরাশ্যবোধ, আশ্রয়হীনতা ও বিচ্ছিন্নতাবোধ, প্রচলিত মূল্যবোধ বা সত্য-সুন্দর-মঙ্গল এসবকিছু নিয়েই ভয়ংকর সন্দেহ ও সংশয়, জৈব-প্রবৃত্তির প্রতি উদ্দাম বশ্যতা, প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তীব্র বিদ্রূপ ও বিদ্রোহ এইসব। সুতরাং সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, বুদ্ধদেব বসু, অমিয় চক্রবর্তী, জীবনানন্দ দাশ, বিষ্ণু দে, সমর সেন প্রমুখ রবীন্দ্র-পরবর্তী আধুনিকরা কল্লোলের কবিদের কাছে যা পেয়েছিলেন তা প্রধানত রবীন্দ্র-বিমুখতা। বাকিটা তাঁদের নিজস্ব। তাঁদের পূর্ণ প্রকাশ ও বিকাশ কিন্তু পরিচয়-পূর্বাশা-বিচিত্রা-কবিতা-চতুরঙ্গ এইসব সাময়িক পত্রকে কেন্দ্র করে। 
সুধীন্দ্রনাথ দত্ত-বুদ্ধদেব বসু-অমিয় চক্রবর্তী-জীবনানন্দ দাশ-বিষ্ণু দে এবং সুনীল-শক্তি-বিনয়-উৎপল এঁদের মাঝে কিন্তু আরো কবিরা আছেন। যেমন দিনেশ দাস, অরুণকুমার সরকার, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। এই সময়কালের মধ্যেই একদিকে যেমন ঘটে গেছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, আজাদ-হিন্দ ফৌজের আক্রমণ, পঞ্চাশের মন্বন্তর, কলকাতার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এবং শেষমেশ ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ ও ভারতবর্ষের স্বাধীনতা-লাভ। বাংলার বুদ্ধিজীবী মহলে আবার মার্কসবাদী ফ্যাসিবিরোধী চিন্তা-ভাবনার প্রসারও হয়েছিল ভালোমতো। এসবকিছুরই প্রভাব পড়ল বাংলা কবিতায়। ফলে কবিতার ক্ষেত্র অনেক বেশি প্রসারিত হল, তার নতুন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হল।
পঞ্চাশের দশকে আবার দুটি পত্রিকার ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠল। প্রথমটি আলোক সরকার-অলকরঞ্জন দাশগুপ্ত-দীপঙ্কর দাশগুপ্তদের শতভিষা, যারা স্পষ্ট জানিয়ে দিল তাঁদের পক্ষপাত মতবাদ-নির্বিশেষে কবিতার রসোত্তীর্ণতার প্রতি, আর অন্যটি দীপক দাশগুপ্ত-সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়-শক্তি চট্টোপাধ্যায়দের কৃত্তিবাস। তাঁরা আবার জোর দিলেন তরুণ কবিদের কবিতা প্রকাশের উপর।পরবর্তীতে দেখা গেল শতিভিষা ঝুঁকে পড়েছে বিশুদ্ধ কবিতার দিকে আর কৃত্তিবাস বলছে স্বীকারোক্তিমূলক ও বোহেমিয়ান কবিতার কথা। সুতরাং এঁদের সময়ে বাংলা কবিতা থেমে গেল বা পিছিয়ে পড়ল এমন মতামত আমার নয়।  

মায়াজম : -
  প্রধাণত পরাবাস্তববাদ (Surrealism) জীবনানন্দের হাত ধরেই বাংলা কবিতায় এসেছে , আপনি কি মনে করেন বর্তমান কবিতা পরাবাস্তববাদ এর দিকে বেশি করে ঝুঁকছে ?

মুরারি সিংহ -
 দেখো, সুরিয়ালিজিম বা মগ্নচৈতন্যবাদ ছিল ইউরোপীয় আধুনিকতাবাদীদের ভাব প্রকাশের একটা বিশেষ ভঙ্গিমা। এটা ঠিক যে জীবনানন্দের হাত ধরেই এই ভঙ্গি বাংলা কবিতায় প্রথম পা রেখেছিল। তারপর সময় বদলেছে। সময়ের বদলের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যাচ্ছে সেইসব ভঙ্গিগুলিও। জীবনানন্দের পরের প্রজন্মের কবিরাও যারা তাঁর কবিতায় বেশি আচ্ছন্ন হয়েছিলেন যেমন শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বিনয় মজুমদার এঁদের মতো কবিরা সেই ভঙ্গিকে অনুসরণ করে গেছেন। তারপর প্রজন্মের দূরত্ব যত বেড়েছে, সেই প্রভাবও ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়েছে। এই সময়ের কবিদের লেখাতেও পরাবাস্তবতা আসে, তবে তা এককভাবে নয়। অন্য আরো অনেককিছুর পাশাপাশি মিলিয়ে-মিশিয়ে। তাতে ভাব প্রকাশের বৈচিত্র্য বাড়ে। কবিতায় অনেক বেশি মুক্তাঞ্চল তৈরি হয়।
মায়াজম - 
  জাদু বাস্তবতা (magic realism) বাংলা সাহিত্যে তেমনভাবে আমরা পেলাম না কেন ? বাঙালি পাঠককূল কি এই ধারার সঙ্গে নিজেদের ঠিকঠাক মানিয়ে নিতে পারল না ? নাকি আমাদের দেখার মধ্যে সেই কল্পনার শক্তির হ্রাসের জন্যই বাংলা সাহিত্যে জাদু বাস্তবতা এখনও উপেক্ষিত ?

মুরারি সিংহ- 
  এখানে প্রথমেই বলতে হয় জাদু বাস্তবতা ব্যাপারটা আসলে কী, সেটা এল কোথা থেকে আর তা আমরা আদৌ বুঝি কিনা বা কতটা বুঝি।
জাদু বাস্তবতা বলতে আমি যতটুকু বুঝি ঠাসাঠাসি বাস্তবের মধ্যে হঠাৎ বিসদৃশ কিছু ঘটিয়ে ফেলা। বা ঘটনার সঙ্গে অকস্মাৎ এক অঘটনকে জুড়ে দেওয়া। যেটা মূলত লাতিন আমেরিকার সাহিত্যের একটা বিশেষ ভঙ্গি। কারণ সেদেশে বাস্তবতা বড়ো ভয়ংকর। সেখানে দুর্ভাগ্য মানুষকে অহরহ তাড়া করে বেড়ায়। সেই কর্কশ বাস্তব থেকে মুক্তির জন্য সেখানের শিল্পী-সাহিত্যিকরা তাই হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার মতো একটা জাদুকরী ঘটনা ঘটিয়ে তার মধ্যেই খানিক আশ্রয় নিতে চায়। ব্যাপারটা গল্প-উপন্যাসেই বেশি চলে, কারণ সেখানে কবিতার চেয়ে আখ্যান-বর্ণনার জায়গা অনেক বেশি। আর এই ভঙ্গির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে একজনের নাম – তিনি ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার অফ সলিটিঊডের স্রষ্টা, গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস। 
এখন বাংলা-কবিতার পরিপ্রেক্ষিতে যদি জাদু-বাস্তবতাকে বিচার করতে হয় তাহলে আমি বলব আমাদের অর্থনৈতিক বাস্তবটা লাতিন-আমেরিকার সঙ্গে অনেকটাই মিলে যায়। তবে বাংলাদেশের প্রকৃতির মধ্যেই একটা জাদুকরী মায়া আছে। আমাদের গল্প-গাথা-গান-কবিতা-ছড়া সবকিছুর কিছুর মধ্যেই আপনা-আপনিই কিছু না কিছু জাদু এসে যায়। সেই যে একদিন কবি লিখেছিলেন - কী জাদু বাংলা গানে গান গেয়ে দাঁড় মাঝি টানে, গেয়ে গান নাচে বাউল, গান গেয়ে ধান কাটে চাষা। 
আলাদা করে যদি কবিতার কথা বলি তাহলে বলব বাংলা-কবিতা নিজেই তো একটা জাদু। আর যাই হোক, বাংলা-কবিদের সেই জাদুকরী কল্পনা-শক্তিতে কখনো খরা আসেনি। কল্পনার ছোঁয়ায় রুমালকে মুহূর্তে বেড়াল বানাতে পারে বাংলায় এমন কবির কোনো অভাব আছে কি?  

মায়াজম - 
 ‘’মর্ডানিজম কবিতা ‘’ নিজেকে ভেঙে নিজেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার এই যে প্রবণতা , অদৃশ্য সুতো ছেড়ে দিয়ে পাঠকের লাটাই এর গোটানো এসমস্তই কি বিবর্তনের অস্থিরতাকেই নির্দেশ করছে না ? সময় যত জটিল হচ্ছে তার সঙ্গে কি  ‘’মর্ডানিজম কবিতা ‘’র কোন সূক্ষ্ম সম্পর্ক আছে ?

মুরারি সিংহ- 
বাংলা কবিতায় মডার্নিজিম ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে দেখেছি অনেকেই গুলিয়ে ফেলেন। শিথিলভাবে তাঁরা ভাবেন যা কিছু সমসাময়িক তাই বুঝি মডার্ন। ব্যাপারটা আদৌ তা নয়। বা অত সহজ নয়। আগেই বলেছি মডার্নিজিমের সঙ্গে সময়ের সম্পর্ক অতি ক্ষীণ। মডার্নিজিম মানে ইউরোপীয় কবিতার একটা বিশেষ ভঙ্গী যার জন্ম হয়েছিল দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে এবং বাংলা কবিতাতেও তা কোনো স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া ছিল না। এখানে তার আগমন ঘটেছিল সেই ঔপনিবেশিক সময়কালেই।
সেই মডার্নিজিম ছিল বড়ো একরোখা, জেদি, আধিপত্যবাদী ও সর্বগ্রাসী-হিংস্র। এক বচনে বিশ্বাস করে জগতের সব বৈচিত্র্যকে দুমড়ে মুচড়ে দলা পাকিয়ে সে এক ছাঁদে, একই ছাঁচে একটাই মূর্তি বানাতে চেয়েছিল। তার ছিল চরম সাম্রাজ্যবাদী মানসিকতা, অন্য সব কিছু ভাঙতে চাইলেও নিজেকে ভাঙার ক্ষমতা বা গরজ কোনোটাই তার ছিল না। সাম্রাজ্যবাদের অবসানের সঙ্গে সঙ্গে সেই ঔপনিবেশিক-আধুনিকতার প্রাসঙ্গিকতাও শেষ হয়ে গেছে।  
এখন উত্তর-ঔপনিবেশিক যুগ। যাকে কেউ কেউ পোস্টমডার্ন সময়কালও বলছে। এখন সময়ের বদলের সঙ্গে সঙ্গে ঔপনিবেশিক চিহ্নগুলিও তাই আজ আস্তে আস্তে ম্লান থেকে ম্লানতর হচ্ছে। 
আমাদের দেশ সর্বকালেই বহু-বচনের পক্ষে , বৈচিত্র্যের পক্ষে। তার বহু রাজ্য, বহু ভাষা, বহু জাত, বহু ধর্ম, বহু পোশাক, বহু রাজনীতি, বহু বহু সাংস্কৃতিক উপাদান। যদিও এদেশের মূল বৈশিষ্ট্য বৈচিত্র্যের মধ্যে  ঐক্য । আর ব্যাপারটা যখন বহুকে নিয়ে তখন তার মধ্যে জটিলতা থাকবে না, অস্তিরতা থাকবে না, তাই কি হয়! অবশ্যই থাকবে। সেটা কোনো সমস্যা নয়। কারণ অস্তিরতা আছে বলেই বিবর্তন শব্দটা তৈরি হয়েছে। স্থির বস্তুর কোনো পরিবর্তন বা বিবর্তন হয় না। বিবর্তিত হয়েছে বলেই বাংলা-কবিতার আজ এত মুখ, এত দিশা। 
আজ আমরা যাকে শিথিলভাবে দিশাহীনতা বলি সেটা আসলে এই বহুদিশাময়তা। অর্থাৎ নেতিবাচক নয় ভাবটা খুব খুবই ইতিবাচক।  
মায়াজম : - 
  শূন্য দশকে বাংলা কবিতার বাঁক পরিবর্তনকে কি চোখে দেখেন আপনি ? উদ্দেশ্যবিহীন  উপলক্ষ্যবিহীন সামনে কোন আদর্শ কবির অনুপস্থিতি বাংলা কবিতাকে কতটা এগিয়ে দিচ্ছে বলে আপনার ধারণা ?

মুরারি সিংহ- 
শূন্য দশক হঠাৎ করে আকাশ থেকে পড়েনি, মানে আমি বলতে চাইছি শূন্য দশক কোনো ভুঁইফোড় দশক নয়। তারও একটা হয়ে ওঠা আছে। তার আগের পর্বটা যদি দেখো তাহলে দেখবে সেখানে নয়ের দশকের শুরুটাই হয়েছে একটা পতনের আওয়াজে। 
বিশাল সে পতন। পূর্ব-ইউরোপের সমাজতান্ত্রিক-শিবিরের পতন, সোভিয়েত রাশিয়ার পতন, সর্বোপরি কমিউনিস্ট আদর্শ নামক আধুনিক সময়ের এক শ্রেষ্ঠ আদর্শের পতন। পতনের পাশাপাশি একই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এক উত্থান। সেই উত্থান মানে উচ্চ-প্রযুক্তি তথা বৈদ্যুতিন ক্ষেত্রে এক নিঃশব্দ বিপ্লব, এবং অর্থনৈতিক উদারনীতির হাত ধরে বিশ্বায়নের সূচনা। আবার দেখো যখন মনে হচ্ছে সমাজতান্ত্রিক শিবিরের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে গোটা পৃথিবীটাই আমেরিকা-নির্ভর এক-মেরু বিশ্বে পরিণত হবে, তখনি আরেক উত্থান। বিশ্বজুড়ে মৌলবাদ-নির্ভর ধর্মীয় উগ্রপন্থার ভয়ংকর উত্থান। 
সেই উগ্রপন্থার হাত ধরেই আবার নতুন সহস্রাব্দের সূচনাতেই আরেক পতনের আওয়াজে আমরা চমকে উঠলাম। সে পতন আমেরিকার টুইন-টাওয়ার ধ্বংস – দুঃখজনক হলেও সে আরেক গর্বের পতন। কঠোর-নিরাপত্তা নামক আরেক সাম্রাজ্যবাদী মিথের পতন। 
এইসব উত্থান ও পতনের স্মৃতিকে সঙ্গে করেই নতুন প্রজন্মের কবিরা কবিতা লিখতে এল। তাদের লেখালিখিতেও অনিবার্য হল তার প্রভাব। সে ভাবেই পরিবর্তিত হল শূন্য দশকের কবিতা। 
তোমার এই প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশে তুমি যেটা জানতে চেয়েছ তার উত্তরে বলি যে যে-কোনো কাজের পিছনে উদ্দেশ্য বা উপলক্ষ তো একটা থাকেই। না হলে অন্য কাজ ছেড়ে সেই কাজটাই বা মানুষ করবে কেন। যারা কবিতা লিখতে আসছে তারাও কোনো না কোনো উদ্দেশ্য নিয়েই আসছে। হতে পারে সেটা এক এক জনের ক্ষেত্রে এক এক ধরণের। কেউ নিতান্ত শখে, কেউ নাম-যশ অর্জনের জন্য কেউ আবার নিখাদ প্যাশন থেকে। 
তবে আদর্শর প্রশ্নে বলতে পারি আমার কাছে আদর্শ ব্যাপারটাকেই কেমন কেমন মনে হয়। মনে হয় ঠাকুর-দেবতার উপাসনার মতোই এটা যেন একটা ঠিকেদারি প্রথা। যেখানে উপাসক ও উপাস্য দুপক্ষেরই বিড়ম্বনা। কবিতা লিখতে গেলে আদর্শ থাকতেই হবে এমন মাথার দিব্যি কে দিয়েছে! যে যার নিজের মতো লিখুক না। ‘এর মতো’ ‘ওর মতো’ বলাটা আমাদের বহু পুরোন অভ্যাস। আরেক জনের ‘মতো’ হবার মধ্যে আদৌ কোনো গৌরব আছে কি!
আমি অবশ্য অনুপ্রেরণার কথা অস্বীকার করছি না। আজকের দিনেও বাংলা কবিদের কাছে সবচেয়ে বড়ো অনুপ্রেরণা তো রবীন্দ্রনাথ। বাংলা কবিতা এগোচ্ছে না পিছচ্ছে এমন বিতর্কেও আমার রুচি নেই। তবে বলতে পারি বাংলা কবিতার একটা আছে নিজস্ব প্রাণশক্তি আছে, একটা নিজস্ব গতি। এক এক পর্বে তার বিকাশ এক এক রকম। 

মায়াজম- 
  কবিকে বলা হয় তিনি নাকি সৎ ! সৎ না হলে নাকি কবিতা লেখা যায় না ! একজন কবি কতক্ষণ সৎ থাকতে পারেন ? তাকেও বাজারের থলে হাতে সকালে বেরোতে হয় , ভিড় বাসে চেপে অফিস যেতে হয় ...... তাহলে এই সৎ থাকাটা কি শুধু কবিতা লেখা সময় পর্যন্ত ?

মুরারি সিংহ-
এসব কথা শুনলে হাসি পায়। সৎ-অসৎ এসব ফেলে আসা সময়ের তৈরি করা ধারণা। পুরোন অভ্যাস থেকে সৎ-অসৎ প্রশ্ন যারা এখনো তোলেন তাঁদের ভেবে দেখতে অনুরোধ করি সেই মাপকাঠিতে তাঁরা নিজেরা কতটা সৎ। 
আর তথাকথিত সৎ থাকতে হলে যে বাজারের থলি হাতে বেরোনো যাবে না, ভিড় বাসে ওঠা যাবে না এসব নিষেধাজ্ঞাই বা কে জারি করল। কবিরা তো সমাজ-বিচ্ছিন্ন কোনো অদ্ভুত জীব নয়। রোজকার যাপিত জীবন তার ভালো-মন্দ অভিজ্ঞতাই তো কবিকে বেশি ভাবাবে। তা নাহলে কবির কাজ কি শুধু খাতা-কলম নিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বসে থাকা। কোনো দৈবী অনুপ্রেরণার জন্যে! যার দোহাই দিয়ে এক সময়  বৈদিক স্তোত্র-রচয়িতা বা স্তাবকেরা নিজেদের বিশেষ সুবিধাভোগী শ্রেণি বলে দাবি করে সমাজে পুরোহিতের মর্যাদা আদায় করে নিয়েছিল। 
মায়াজম - 
এই বিশ্বায়নের যুগে যেখানে ভেসে যাওয়ার হাজার মাধ্যম রয়েছে , সেই কঠিন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে বাংলা কবিতার ভবিষ্যৎ কি ? আপনি কি মনে করেন এই প্রজন্ম কবিতার দিকে ফিরবে কোনদিন ?

মুরারি সিংহ-
শুধু এই যুগ বলে নয়, প্রতিটা যুগেরই নিজস্ব কিছু সংকট থাকে যাকে আমরা যুগ-সমস্যা বলি। যুগে যুগে অনেক সমস্যা-সংকট বা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দাঁড়িয়েই কবিকে ভাবতে হয়, লিখতে হয়, লেখার ভেতর দিয়ে উত্তরণ খুঁজতে হয়। সাংসারিক জীবনেও যেমন অখণ্ড শান্তি-সুখ-তৃপ্তি বলে কিছু হয় না। স্বাভাবিক বা বলা ভালো প্রাকৃতিক নিয়মেই সংসারে অশান্তি-ঝগড়া-কলহ-অতৃপ্তি হাজির হয়। সংসারকে গতিশীল রাখে। আমরা সেসবের সঙ্গে মানিয়ে নিই বা সেসবের সঙ্গে মোকাবিলা করেই আমাদের মানসিক পেশিকে দৃঢ় করি। সামনের দিকে এগিয়ে যাই। তবে চেষ্টা করি যাতে সেই অশান্তি-কলহটা যেন মাত্রাছাড়া না হয়। আবার সময়ে সময়ে যখন মাত্রা ছাড়ায়, তখন একটা ভাঙন আসে। ধ্বংসের পাশাপাশি আরেক নতুন নির্মাণের জন্ম হয়।  
আজকের প্রজন্মের কাছেও সমস্যা আছে, সংকট আছে। ভেসে যাবার অনেক রাস্তা আগেও ছিল, এখন তা আরো বেড়েছে। আমারা যারা পুরোন দিনের মানুষ তাদের হয়ত মনে হবে আজকের বিশ্বায়িত প্রজন্মের চ্যালেঞ্জটা অনেক বেশি। সত্যি-সত্যি এখন আধিপত্যবাদের ভোল-ভাল একেবারে বদলে গেছে। নগ্ন সাম্রাজ্যবাদী রূপে এখন আর সে আক্রমণ করে না। সে আসে বন্ধুর রূপ ধরে, বাজার-অর্থনীতির হাত ধরে, উন্নত জীবন-যাপনের নামে মানুষের ভোগের ইচ্ছাকে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে লাগাম ছাড়া করে। তার মানুষ পরিচয় ভুলিয়ে দিয়ে তাকে নিছক এক উপভোক্তাতে পরিণত করতে চায়। চারপাশে অহরহ এসবেরই ব্যাপক আয়োজন। আজকের প্রজন্মকে নিজেদের বিচার-বুদ্ধি প্রয়োগ করে তাকে চিনতে ও বুঝতে হচ্ছে। নিজস্ব শক্তিতে তার মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আশার কথা ভোগের এত প্রলোভন থাকার পরেও প্রতিদিন নতুন নতুন ছেলেমেয়েরা কবিতা লিখতে আসছে। সুতরাং বাংলা কবিতার ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা বা দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই। যুগে যুগে মানুষ নিজের গরজেই কবিতার কাছে এসেছে, ভবিষ্যতেও আসবে। মনে রাখবে এভাবেই বাংলা কবিতা বেঁচে আছে হাজার বছর। বেঁচে থাকবে আরো সহস্র বছর। 

মায়াজম- 
 শিল্প বাঁচিয়ে রাখে দুই ধরনের মানুষ , এক বোদ্ধা দুই সাধারণ মানুষ , শিল্প বেঁচে থাকবার জন্য কি কি উপাদান  থাকা উচিত বলে আপনি মনে করেন ? সাধারণ মানুষের জন্য লেখা উচিত না বোদ্ধাদের জন্য লেখা উচিত ?

মুরারি সিংহ-
 আগে শিল্প তৈরি হয়েছে, তারপরে তৈরি হয়েছে তার বোদ্ধা। বানিয়েছে তত্ত্ব ও ব্যাকরণ। সুতরাং সাধারণ মানুষই শিল্প তৈরি করে। যদিও নাগরিকতার সৌজন্যে তার বেশিরভাগটাই এখন দক্ষ ও কুশলী ও বিশেষজ্ঞদের দখলে। উচিত অনুচিতের কোনো বাঁধা-ধরা শাস্ত্র-লিখন নেই। থাকলেই বা তা মানছে কে। লেখালিখির ব্যাপারটা এখন একেবারেই ব্যক্তিগত। যিনি যা ভাবেন তিনি সেভাবেই লেখেন। তবে ভাবনা যাই হোক কারো লিখিত বয়ানের মধ্যে যদি নিজস্ব প্রাণশক্তি জন্ম নেয়, এবং তা যদি পাঠককে দিয়ে তার উপর পাঠকের আপন বয়ান তৈরি করিয়ে নিতে পারে, তবে তা পাঠককুলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয় বা টিকে থাকতে পারে। 
মায়াজম- 
 আপনি দীর্ঘদিন কবিতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আছেন , '' কবিতা পাক্ষিক '' দীর্ঘদিন  ধরে চালাচ্ছেন , অনেক ভাল ভাল কবির জন্ম হয়েছে আপনাদের পত্রিকায় , তবুও তথাকথিত দামী ও বাজারি পত্রিকায় নাম লেখাতে না পারলে এখনও কবিরা কবি হিসাবে কলকে পায় না , এ ব্যাপারে আপনি কি বলেন ?

মুরারি সিংহ-
ভালো প্রশ্ন করেছ। ভেবে দেখো, বাংলা কবিতায় এই বাজারি পুঁজির অনুপ্রবেশ আবার গত শতকের সেই ছয়ের দশকেই। যখন বাংলা কবিতার আধুনিক পর্বকে বিদ্যায়তনিক সিলেবাসের গণ্ডিতে বেঁধে ফেলা হল, এবং দেখা গেল সেই কবিতা নিয়ে আলোচনা করিয়ে বা কবিতা লিখিয়ে, কবিতাকে নিয়েও ব্যবসা করা যায় তখন কবিতার পিছনেও মূলধন ঢালা হল। 
এটা যে খারাপ তা বলছি না। লেখালেখি করে কেউ যদি অর্থ উপার্জন করে তাতে আপত্তির কী আছে। কিন্তু আপত্তি করার ব্যাপারটা ঘটল তারপরে। যখন বাজার চেষ্টা করল এবং সফল হল তাদের প্রতিষ্ঠানের অনুগত কিছু কবির পিছনে আগমার্কা তকমা লাগিয়ে, বাকিদের লেখা যত ভালোই হোক তাকে পাত্তা না দিয়ে, নিজেদের খাড়া করা কবিদেরই আদর্শ হিসেবে দেখিয়ে বাজার দখল করে একচ্ছত্র আধিপত্য জারি রাখার। এখনো সেই ট্র্যাডিশন চলছে। 
তবে বিপরীত প্রতিক্রিয়ায় বাকিরাও থেমে থাকল না। ওই ছয়ের দশক থেকেই কলকাতা ও তার আশেপাশে অজস্র ছোটো ছোট পত্র-পত্রিকা প্রকাশের প্রচেষ্টা শুরু হয়ে গেল। রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে তখন অতি-বামপন্থীরা ডাক দিয়েছিল গ্রাম দিয়ে শহর ঘিরে ফেলার। তাঁরা সেটা না-পারলেও সাহিত্য-পত্রিকাগুলি কিন্তু ক্রমে ক্রমে সেটাই করে দেখাল। এখন তো আবার সোশাল নেটওয়ার্কের সৌজন্যে বৈদ্যুতিন দেয়ালে ও পাতায় কবিতা পোস্ট করার অফুরন্ত সুযোগ। সেখানে পত্রিকা-সম্পাদকের শাসন বা উপেক্ষাও চলে না। সুতরাং কে কাকে কলকে দেয়। এখন তাই ছেলেমেয়েরা মনের আনন্দে এবেলা-ওবেলা সেখানে কবিতা পোস্ট করছে। এই ট্রেন্ড লেখালিখিতে এক নতুন যুগের জন্ম দিয়েছে। 

মায়াজম - 
 আপনার কি কখনও মনে হয়েছে এক কিলো চালের দাম একটা কবিতার চেয়ে ও বেশি ? কবিতা থেকে কিছু পাওয়ার নেই এটা ভেবে ও অনেকে কবিতা লিখতে আসছেন , লিখছেন , আপনার কি মনে হয় না যেকোনো শিল্পের দায় থাকে শিল্পীকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেওয়ার ?

মুরারি সিংহ-
দেখো তুলনা কখনোই স্বাস্থ্যপ্রদ হয় না। আর শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রে দরাদরির ব্যাপারটা গৌণ, সেখানে সবার আগে সৃষ্টি। তবে লেখালিখি করে অনেকেই কিছু কিছু পাবার আশা করেন না যে তা নয়।অর্থ-যশ-প্রতিপত্তি অনেকেই পেতে চেয়। সেটা খারাপ কী। আজকের দিনে লেখালিখিকে কেউ যদি কেরিয়ার বানাতে চায়, বানাতেই পারে। তবে সেখানেও যে কথাটা এসে যায় - বাজারের চাহিদা পূরণ করতে গেলে একটা দক্ষতা অর্জন করতে হবে এবং বাজারের শর্তগুলিও মানতে হবে। কেউ যদি তাতে রাজি থাকেন অবশ্যই সে পথে হাঁটবেন।
মায়াজম- 
 এবার আপনার কাছে ফিরে আসি , দীর্ঘদিন আপনি কবিতা লিখছেন , কবিতা লিখছেন কেন ? কবিতার কাছে দায়বদ্ধতা থেকে না নিজের কাছে দায়বদ্ধতা থেকে ?

মুরারি সিংহ -
সত্যি কথা বলতে কী, কারো কাছে আমার কোনো দায়বদ্ধতা নেই। না নিজের কাছে, না কবিতার কাছে। কোনো রাশ-গম্ভীর ভাব মাথায় রেখে নয়, আমি কবিতা লিখি একটা ভালো লাগা ও ভালোবাসার জায়গা থেকে। 

মায়াজম- 
 মুরারি সিংহকে নামের পেছনে ছুটতে দেখিনি তেমন , নিভৃতে নিজের কাজ করে গেছেন , আপনি কি মনে করেন না নিজেকে ঠিকঠাক বিজ্ঞাপিত না করতে পারলে এই সময়ে প্রতিষ্ঠা পাওয়া খুব কঠিন ব্যাপার ? নাকি মনে করেন শিল্পের বিচারক মহাকাল তিনি যা বাঁচানোর বাঁচিয়ে রাখবেন ? 

মুরারি সিংহ- 
 ধন্যবাদ। না কোনো রকম ছোটাছুটির মধ্যে আমি কখনো ছিলাম না। এখনো নেই। চেষ্টা করি বেশি হইচই না করে নিজের মতো ভাবতে, নিজের কাজটা নিজের মতো করতে। আমি মনে করি বিজ্ঞাপন ব্যাপারটা পণ্যের বেচাকেনার সঙ্গে যুক্ত। আমি তো নিজের লেখালিখিকে পণ্য করতে চাইনি কোনোদিন। তবে নিশ্চয়, যখন বই লিখি তখন তার কিছু প্রচার দরকার হয় বইকি। কিছু বই বিক্রি হলে পরের বইয়ের জন্য প্রকাশকের যেমন আগ্রহ থাকবে, তেমনি আমার লেখা যাঁদের ভালো লাগে, আমার লেখা যারা পড়তে চান, তাঁদের কাছে খানিক পৌঁছানোও যাবে। আর শিল্পের বিচার-মহাকাল এই সব ভারী ভারী শব্দ নিয়ে ভাবতে বসলে আমার বেদম অস্বস্তি হয়। তাই ওসব নিয়ে ভাবি না।
মায়াজম- 
 -  আপনি যখন লেখালেখি শুরু করেন সেই থেকে আজ পর্যন্ত বাংলা কবিতায় কি কি পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন আপনি ? কোন দিকেই বা এগিয়ে যাচ্ছে বাংলা কবিতা ? বাংলা কবিতার ভবিষ্যৎ ই বা কি ?

মুরারি সিংহ- 
আমি কিন্তু লেখালিখি শুরু করেছি বেশ অনেকটা পরে। নয়ের দশকের শেষের দিকে। তারপর থেকে কবিতা লেখার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড়ো পরিবর্তন যেটা দেখছি তা হচ্ছে কবিদের লেখালিখি ও প্রকাশের ব্যাপারে ক্রমশ স্বাবলম্বী হয়ে ওঠা। অর্থাৎ কোনো দাদা-দিদি-কাকা-মামা না ধরে নিজেদের কাজটা নিজেরাই করা। কারণ অন্যের উপর নির্ভর করার দরকার হবেই বা কেন। কারণ তাদের হাতের মুঠোয় অন্তর্জাল যেখানে অনায়াসেই লেখা প্রকাশ করা যায়। আর বই প্রকাশের পরিকাঠামোও এখন অনেক সহজ ও অনায়াসলভ্য। 
তার সঙ্গে আরো একটা কথা। এখন সব শিল্পই পারফরমেন্স-নির্ভর। আমোদ-গেড়ে। বাংলা-কবিতায় কেউ কেউ তার প্রচলন চাইছে। আমাদের কাব্যধারায় এটাও কোনো অভিনব প্রয়াস নয়। ব্রিটিশ-পূর্ব বাংলা কবিতাও কথকতা-সুর-তাল-ছন্দ এই সবকিছুর মিশেলে এক জনমনোরঞ্জণের প্যাকেজ ছিল। এবং তা  সেকালের গণ-বিনোদনের প্রধান উপায়ও। ঔপনিবেশিক পর্বে তার পরিসমাপ্তি ঘটেছে। এখন দেখা যাক তা আবার নতুন কোনো রূপে ফেরৎ আসে কিনা। 
আগেও বলেছি এখনো বলছি বাংলা কবিতা এখন বহুমুখী। তার নানা স্বর, নানা ভঙ্গিমা, নানান উচ্চারণ। যদিও বাংলা কবিতার মুখ্য বিষয় এখনো সেই চিরন্তন প্রেম। আমি মনে করি এসব প্রশ্নের উত্তরে এর চেয়ে বেশি কিছু বলার এক্তিয়ার আমার নেই। 

মায়াজম -
  আপনার কথা কিছু বলুন , কবিতা লেখেন কেন ? কবিতা কি শুধুই নিজের জন্য ? নিজের জন্যই নিজের সঙ্গে কথা বলা ? সমাজ পরিবর্তন ছেড়ে দিন মানবিক কিছু পরিবর্তনের কোন ক্ষমতা কি কবিতার আছে ?

 মুরারি - 
  নিজের কথা যত কম বলা যায় ততই স্বস্তিকর। কবিতা লিখি ভালো-লাগা ও ভালোবাসার জন্য। অবশ্যই নিজের জন্য। কারণ আমি নিজেই তো আমার কবিতার প্রথম পাঠক। কবিতা আমার কাছে বেঁচে থাকার প্রধান অবলম্বন। রোজকার সংসার-জীবন যখন প্রতি মুহূর্তে কড়ায়-গণ্ডায় আমার কাছ থেকে তার মাসুল উসুল করে নিতে চায়, তখন একটু আনন্দ, একটু সুখ, একটু সুখ, একটু স্ফূর্তির জন্য আমার কবিতার কাছে বার বার ছুটে আসা। দুলাইন নতুন কিছু লিখতে পারলে কাঁধের উপর থেকে অনেকটা চাপ কমে যায়, টেনশন লঘু হয়, ক্লান্তি কমে, অবসাদকে জয় করতে পারি। মনটা ফুরফুরে হয়ে যায়। 
তুমি সমাজ পরিবর্তন বা মানবিক পরিবর্তনের কথা বলছ। কবিতা সরাসরি সেটা না পারলেও একটা ইন্ধন তো দেয়। রঙ্গলাল-মুকুন্দদাস-রবীন্দ্রনাথ-দ্বিজেন্দ্রলাল-অতুলপ্রসাদ-নজরুল এঁদের কবিতায় তো আমরা তা দেখেছি। সাম্প্রতিকেও তো দেখলাম আমেরিকার অকুপাই ওয়াল-স্ট্রিট বা প্রতিবেশী বাংলাদেশের শাহবাগ আন্দোলন বা নিজেদের ঘরে হোক কলরবে উদ্দীপনা যোগাতে কবিতার একটা বড়ো ভূমিকা ছিল। 
পাশাপাশি আমি বলছি একটা অন্য পরিবর্তনের কথা। সে পরিবর্তন ভাষার পরিবর্তন। এটা আমাদের অগোচরে খুব নিঃশব্দে ঘটে যায়, আমরা ততটা খেয়াল করি না। ভাষার ক্রমবিকাশে একটা বড়ো ভূমিকা থাকে কবিতার ও কবিদের। কারণ কবিদের কাজ ভাষার প্রয়োগ নিয়ে। বাংলা ভাষার জন্মলগ্নের রূপ বা বিভিন্ন পর্বে তার ক্রমবিকাশের রূপ কিন্তু আমারা জেনেছি নানা সময়ের কবিতার মাধ্যমেই। আজ দুশো বছরের কিছু বেশি গদ্যের পথ চলা শুরু হয়েছে। কিন্তু গদ্য বিষয়ীদের ভাষা। ভাষা পরিবর্তনটা তাই ঘটে কবিদের হাত ধরেই। কবিরা ভাষা-শিল্পী। নানা ভাবে নানা পরিসরে তারা ভাষার চর্চা করে। কবিরাই পারে ভাষার ব্যবহারকে আরো উদার, আরো নমনীয়, আরো সম্প্রসারিত করতে। যাতে সে আরো বেশি ভাব বহনে সক্ষম হয়। আরো ক্ষমতাশালী হয়। 
এটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ।কারণ সমাজ পরিবর্তনের এই উন্নত ভাষা ব্যবহারের একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা থাকে। মধ্যযুগের ভাষার বিবর্তনের সূত্র ধরে আমরা সেই সময়ের সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলিও বুঝতে অনেকটা সক্ষম হই। ভাষার নতুন ও অভিনব ব্যবহার মানুষের মনে এক ঝলক টাটকা বাতাস নিয়ে হাজির হয়। আর মানবমনের উপর ভাষার কী অপরিসীম প্রভাব তা নিভৃতে রবীন্দ্রনাথের গান শুনলেই উপলব্ধ হয়। সুতরাং প্লেটোর চ্যালারা যতই ভাবুন সমাজে কবিদের কোনো কাজ নেই, তাতে কবিদের ভূমিকা এতটুকু ছোটো হবে না।

মায়াজম- 
 মোহানাপ্রান্তে এসে নদী কী  মনে করে আরও কিছু বয়ে আনা বাকি রয়ে গেল ? তেমন কি আপনার ও মনে হয় এমন কিছু লিখতে চেয়েছিলেন এখনও লেখা হয়ে উঠলো না ?

মুরারি - 
 দেখো মনে তো হয় অনেক কিছুই। লেখালিখির জন্যে আরো বেশি সময় দিতে পারলে ভালো লাগত নিশ্চয়। কিন্তু জীবিকা-অর্জনের তাগিদে আপাতত সেই আংশিক সময়ের সাহিত্যকর্মী হয়েই থাকতে হচ্ছে। এটাও মেনে নিয়েছি। পরে অবস্থার পরিবর্তন হলে চেষ্টা করব লেখার পিছনে আরো বেশি সময় দেবার। 

মায়াজম -
কবি যখন কোন কবিতা আন্দোলন বা কোন পত্রপত্রিকার সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়েন  তখন  বৈষয়িক ঘানিকলে পড়ে শিল্পের থেকে কিছুটা সরে যান না কবি  ? দীর্ঘদিন কবিতা পাক্ষিক চালাচ্ছেন আপনি , আপনার কি এমন কিছু মনে হয়েছে ?

মুরারি সিংহ -
এই প্রসঙ্গে কবি প্রণবেন্দু দাশগুপ্তের বলা একটা কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। প্রণবেন্দুদা বলেছিলেন একজন কবি যখন নিচু হয়ে জুতোর ফিতে বাঁধে তখনো সে কবি। সুতরাং আমরা যারা কবিতা লিখি, যখন যাই করি না কেন, মনটা পড়ে থাকে সেই কবিতার কাছেই। সুতরাং সরে যাবার কোনো প্রশ্ন নেই। বরং যে কোনো বৈষয়িক সমস্যা বা জটিলতার মোকাবিলা করতে কবিতাই আমার অনুপ্রেরণা, আমার প্রধান শক্তিদাতা।   

মায়াজম : 
- আজ থেকে ১০০ বছর পড়ে বাংলা কবিতাকে আপনি কোথায় দেখতে চান ? তখন কি আদৌ কবিতা বলে কিছু থাকবে ? তখন কি মানুষ আর কবিতা পড়বেন ?

মুরারি সিংহ-
 এসব নিয়ে আমি কিছুই ভাবি না, ভাবতে চাই না। শুধু এইটুকু বিশ্বাস করি,  কেউ চাক বা না চাক বাংলা কবিতা টিকে থাকবে। সেটা কারো দয়ায় নয়, তার নিজস্ব জীবনীশক্তির জোরো। আর নিজের গরজেই মানুষকে কবিতার কাছে আসতে হবে।  

মায়াজম 
: শেষ প্রশ্ন ,  সোশ্যাল মিডিয়ায় এই যে এত এত কবি কবিতা লিখে চলছেন , এই যে তাজা তাজা সদ্য প্রসব কবিতা পড়তে পারছেন পাঠক এটাকে আপনি কি চোখে দেখেন ?

মুরারি সিংহ 
এটাকে আমি খুব ভালো চোখেই দেখি। চুরি-ডাকাতি-রাহাজানি-ছিনতাই-মানুষ খুন না করে দলে দলে নতুন ছেলেমেয়েরা যে কবিতা লিখতে আসছে, তার মান ভালো খারাপ যাই হোক না কেন, তাকে আমি নেতিবাদী দৃষ্টিতে দেখব কেন? মন্দ বলব কেন? বরং বিখ্যাত মনীষীর কথা উদ্ধৃত করে বলব- শত ফুল বিকশিত হোক।  
মায়াজম - 
 আপনি আমাকে এইযে সময় দিলেন তার জন্য অজস্র ধন্যবাদ । আপনি আগামী দিনে আরও আরও লিখুন  , সুস্থ থাকুন , সুন্দর থাকুন ।

মুরারি সিংহ -
  তোমাকেও ধন্যবাদ। তোমার সঙ্গে কথা বলতে পেরে আমারও বেশ ভালো লাগল। আমিও কামনা করি তোমার  ব্লগজিন দীর্ঘস্থায়ী হোক।ভালো থাকো। আমার পক্ষ থেকে তোমাকে ও মায়জমের পাঠকদের অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা। সকলেই ভালো থাকুন। কবিতার মধ্যে থাকুন। 


1 টি মন্তব্য:

  1. সৎ-অসৎ এসব ফেলে আসা সময়ের তৈরি করা ধারণা। পুরোন অভ্যাস থেকে সৎ-অসৎ প্রশ্ন যারা এখনো তোলেন তাঁদের ভেবে দেখতে অনুরোধ করি সেই মাপকাঠিতে তাঁরা নিজেরা কতটা সৎ। মূল্যবান কথা বলেছেন..অসধারণ.. অনেক কিছু যানতে পারলাম...অনেক অনেক ধন্যবাদ মায়াজম..

    উত্তরমুছুন

Featured post

সোনালী মিত্র