জিনাত ইসলাম - মায়াজম

Breaking

৫ জুন, ২০১৫

জিনাত ইসলাম


বিবর্ণ  





আজ তিনদিন প্রতীক্ষার পর যে এলো তার নাম রীনা।ধনুকের মত নিখুঁত ভ্রু দু'খানি তোলা।চকচকে ফেসিয়াল করা মুখ।গা লাগা টাইট ফিটিংস এর সালোয়ার।মুখে মিষ্টি হাসি এনে বলল আমি কিন্তু মাধ্যমিক পাশ।একনিমেষে বাড়ীর সব্বার মন জয় করে ফেলল নবাগতা রাঁধুনি।রান্নাঘর সে ভালো দখলে নিলো দিন কয়েকের পরিশ্রমে।
একদিন পরে বিকেলে তার হাত ধরে এলো ছোট্ট এক পরী। গায়ে ছেঁড়া ছেঁড়া রঙচটা জামা।বসল ঠিক ঘরের দরজায়। কি অবিশ্বাস্য রকমের সারল্য। যেন একটা দলছুট নিরীহ খরগোশ। জিজ্ঞাসা করে জানা গেল এই বাচ্চাটি তার ভাই এর মেয়ে যাকে কিনা বাচ্চাটির মা ফেলে রেখে বিহার পালিয়েছে।
দিন সাতেক পর ঝুমা কে রীনা একা পেয়ে চুপি চুপি বলল আমায় একটি মোবাইল এর ব্যবস্থা করে দেবেন?কোন দ্বিধা না করেই ঝুমা বলল তোমার ছবি ও ভোটার কার্ড দিয়ে যেও। ঠিক দুইদিন বাদে রীনা দিয়ে গেলো কাগজ।
তারপর আর সে এলো না বাহাত্তর ঘণ্টা পার হবার পর খোজা শুরু হল নতুন কাজের লোক।
রীনা কে ঝুমা বেশ ভালবেসেছিল।তার পরিচ্ছিন্নতাবোধ ও পরিবারের প্রতি তার কর্তব্যবোধ তার নজর কেড়েছিল।তার বৌদির ফেলে যাওয়া সন্তান দের প্রতি দায় থেকে তার বিবাহ না করার সিদ্ধান্তটা রীনার প্রতি তার শ্রদ্ধা কে বাড়িয়ে তুলেছিল।কিন্তু এভাবে তার গায়েব হওয়াটা সে মেনে নিতে পারেনি।
মাস খানেক পর স্কুল সেরে বাড়ী ফেরার পথে রীনা কে দেখে ঝুমা চমকে উঠে। তার হাত ধরে আছে সেই পরী। অন্যমনস্ক ঝুমার বাড়ি ঢোকার মুখে দেখা হয়ে গেল ওর পাড়ার এক মেয়ের সঙ্গে।সরাসরি ঝুমা জিজ্ঞাসা করে বসে রীনার কথা। শোনামাত্র কয়েক সেকেন্ড মাথা ঘুরতে থাকল তার।সীমাহীন বিস্ময়ে চোখের সামনে লাল,নীল রঙ্গিন জাল জট পাকাতে থাকল।
ঘরে এসে পোশাক চেঞ্জ করে পাক্কা আধ ঘণ্টা মাথায় সাওয়ার ধরে থাকে ঝুমা। মনে পড়তে থাকে এক সামান্য দেহের বিচিত্র প্রাণীকে যে মায়ের সামনে বসে কখনো মা বলে মা কে ডাকেনি।নীরবে মায়ের কাজ শেষ হবার অপেক্ষা করেছে নিজের পরিচয় গোপন করে।আসলে যে পরী কে ঝুমার পরিবার এত্ত ভালবাসত যে কখনো কোনো সম্পর্কের ডাকও ডাকেনি রীনাকে সে আসলে রীনার ই নিজের মেয়ে এবং রীনা বিবাহিত ও স্বামী পরিত্যক্তা।
নিজেকে ও নিজের সন্তান কে বাঁচানোর এর চেয়ে বড় কৌশল মাথায় আসেনি মাধ্যমিক পাশ করা এই মুখোশধারী রাঁধুনির।ভালবাসার জালে সে ধরা পড়ে যাচ্ছে ,জেনে যাবে এ বাড়ীর সকলে তার মিথ্যার জীবন তাই সে নিজেই সরে গেছে।কিন্তু মুখোশ খুলে যাওয়ার পর যে বেরিয়ে এসেছে সে রীনার চেয়েও প্রিয় হয়ে উঠেছে ঝুমার কাছে।এবার সকাল হলেই ঝুমা তাকে খুঁজে বার করবে তার মেয়েকে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করবে।সারারাত শুধু ঘড়ির কাঁটার শব্দ গুনতে থাকে ঝুমা।এই বুঝি ভোরের আলো ফুটল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র