বিদ্যুৎলেখা ঘোষ - মায়াজম

Breaking

৩ আগ, ২০১৫

বিদ্যুৎলেখা ঘোষ

                                          মালিনী ও তার বাগান






- থ্যাংকস
- কেন?
- আমাকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করার জন্য
- ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম smile emoticon 
ফেসবুকে এভাবেই শুরু অমিতাভ আর লাবনী প্রথম পরিচয় থেকে বানভাসি প্রেম। চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট অমিতাভ আর আই টি প্রফেশনাল লাবনী বছর খানেকের মধ্যেই বিয়ে করে নিলো। বালিগঞ্জের একটা সুন্দর ফ্ল্যাটে অমিতাভর বাবা মা মালদা থেকে এসে সংসার বসিয়ে দিয়ে গেছেন। ফ্ল্যাট সাজাবার জন্য নতুন দম্পতি পরিশ্রম করেছে খুব। বাহারি সব সুন্দর সুন্দর ঘর সাজাবার জিনিস কিনে এনেছে বিভিন্ন মেলা ঘুরে ঘুরে। বাথরুম রান্নাঘর শোবার ঘর সব মিলিয়ে ফ্ল্যাট এখন তকতকে এক সুখনীড়।
রবিবার সকালটা দুজনে বাড়ীতে কাটালেও বিকেলে ওরা সিনেমা নাটক একজিবিশান দেখে রাতে ডিনার করে ফেরে। এইসব রবিবারগুলোতে লাবনী নিত্যনতুন রান্না নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালায় আর অমিতাভকে অম্লানমুখে গলাধকরন করে বলতে হয়, লাব...উমমমমম...লা-জবাব হয়েছে। এর পারিশ্রমিক আবার উসুলও করে নেয় ভালো করে সময়মতো। উথালপাথাল সুখের চোটে কত রান্না যে পুড়ে গেছে তার ইয়ত্তা নেই। বাসন মাজতে এসে কাজের মাসি কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে,তোমরা আপিসে যাও চাগরি করো এসব কি তোমাদের কাজ দিদিমনি? বাসন সব ঝা কোরে পুইড়ে রেকোচো দাগ কদ্দিনে উটবে কে জানে বাবা। লাবনী আড় চোখে কটমট করে অমিতাভর দিকে তাকালে ও মিচকি হেসে চোখ টেপে আর লাবনী রে রে করে তেড়ে যায়, মাসি কিছু বুঝতে না পেরে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে থাকে। 

প্রোমোশনের পর অমিতাভর অফিসে কাজের চাপ বেড়ে গেছে। আজ দিল্লী কাল মুম্বই যেতে হচ্ছে মাঝে মাঝে। লাবনীর বাবা মা কাছেই গড়িয়াহাটের বাড়ীতে থাকলেও খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগে ওর। নিজের অফিসে পলিটিক্সের শিকার হচ্ছে আর একটু একটু করে অনুভব করে বিয়ের আগের লাবনীর পৃথিবী আর পরের লাবনীর পৃথিবীর যেন কত তফাৎ। জীবন ক্রমশ জটিল হয়ে উঠছে। দেড় বছর বিয়ে হয়েছে এরই মধ্যে বাবা মা, শ্বশুর শাশুড়ি নাতিপুতির জন্য তাগাদা আরম্ভ করে দিয়েছেন। সেও এক অমোঘ পরিকল্পনা যা বাস্তবায়িত না করলে দাম্পত্য জীবন বৃথা হয়ে যাবে যেন। 
অফিসট্যুরে সাতদিনের জন্য অমিতাভ পাটনায় গেছে। এবার খুব দমবন্ধ লাগতে থাকে লাবনীর। ওদিকে বইমেলা আরম্ভ হয়ে শেষ হতে চললো। একদিনও যাওয়া হয়নি। একা একা কারই বা যেতে ইচ্ছে করে। গতবছর কত মজা হয়েছিল পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়ায়। কেয়া এমনিতে তো লাজুক মেয়ে। চোখ তুলে কথা বলে না। কিন্তু নতুন বইগুলো নিয়ে অমিতাভ যখন উল্টে পাল্টে দেখছিল কেয়া কেমন খুশি খুশি নজরে ওকে দেখেই যাচ্ছিলো। সব ভালোলাগা মুহূর্তের মধ্যে ওইটুকুই বুকজ্বালা করা অনুভূতি হয়েছিলো কেবল। বুকশেল্ফের দিকে যেতে যেতে মনে করতে লাগলো কী কী বই ওরা কিনেছে , আর হ্যাঁ কেয়াও তো একটা বই উপহার দিয়েছে। কী যেন নাম...কোন বইটা যেন দিয়েছে...। টিভিটা চালিয়ে দিয়ে খুঁজতে থাকে। অফিস থেকে এসে ট্যারা অ্যাঙ্কারের ভাঁড়ামো দেখতে মন্দ লাগে না। নিন্দে করে কিন্তু সময়মতো বসেও পড়ে প্রোগ্রাম দেখতে। হঠাৎ আজ বইগুলোর খোঁজ পড়েছে। শিবরাম, সঞ্জীব, ঘনাদা, সুনীল...আরে এই তো সেই বইটা! কেয়া উপহার দিয়েছিলো। গীতবিতান । কেয়া খুব সুন্দর রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতে পারে। বইটা ও কিনে নিয়ে যাচ্ছিলো। অমিতাভ যেই বইটা চেয়ে নিয়ে দেখেছে ওমনি খস খস করে প্রথম পাতায় লিখে দিলো ‘ অমিতাভ আর লাবনিকে প্রীতি উপহার স্বরূপ – কেয়া’। এত রাগ হচ্ছিল তখন লাবনীর, বইটা হাতে নিয়ে যেন সেই তাপ এখনো বোধ হচ্ছে। পাতা উল্টাতে উল্টাতে যেখানে রবিঠাকুরের নিজের হাতে লেখা পৃষ্ঠা জুড়ে ছাপা আছে , দেখতে দেখতে রিমোট দিয়ে টিভি টা অফ করে দিলো। খুব কম গানই চেনা । গুন গুন করে গাইতে লাগলো সেগুলো। সুর ভুলে গেছে যে টুকু এমনিই পড়তে লাগলো। তারপর অচেনা গানগুলোকেও পড়তে পড়তে কখন যে গভীর রাত হয়ে গেছে লাবনী বুঝতে পারেনি।
পরের দিন অফিস থেকে বাড়ি ফিরে বই ধরবে না ভেবেছিলো। কিন্তু ফ্রেশ হয়ে চা নিয়ে টিভির সামনে বসতেই টেবিলে রাখা গীতবিতানটায় আবার চোখ চোখ আটকে গেলো। আগের রাতে যতটুকু দেখেছিলো তারপর থেকে পড়তে থাকলো। ঘটনাগুলো সবই প্রায় চেনা, সাধারন। তাকে নিয়ে এতো ভাবেও ভাবা যায়! এত সুন্দর করে লেখা যায়! তারমধ্যে এদের কোন মনোভাব নিয়ে গাওয়া হবে তা ও ভাগ করে দেওয়া আছে। শুধু পড়লেও তো কত তৃপ্তি, শান্তি অনুভব করা যায়। লাবনী পড়তে পড়তে ভাবতে ভাবতে ডুবতে থাকে... । এরপর অমিতাভকে যখন ফোন করার কথা মনে পড়লো ও তখন ঘুমিয়ে পড়েছে। সকালে ফোন করে অমিতাভ বললো:
- কি গো , আউট অফ সাইট আউট অফ মাইন্ড!
- হ্যাঁ তাই।
- প্রেম করছো নাকি দেবী?
- উফফ আমার এবারের লাভার সো ড্যাশিং ! সো গর্জিয়াস ! আমি টোটাল নক আউট...। এই তোমার কাছে কেয়ার নাম্বার আছে?
- মানে ? তোমার বন্ধুনীর নাম্বার আমার কাছে থাকবে কী ভাবে ? আর কেনইবা থাকবে ? তুমি ঠিক আছো তো ? আমি ফিরে আসবো ?
- না না তুমি কাজ সেরেই ফিরো। এখন বইমেলা চলছে। অফিস ফেরতা মেলায় গিয়ে পাগলীটাকে ঠিক খুঁজে নেব। বিশ্বভারতীর সামনে ওর দেখা পাবোই......।।



৪টি মন্তব্য:

Featured post

সোনালী মিত্র