ঝুমা চট্টোপাধ্যায় - মায়াজম

Breaking

৩ আগ, ২০১৫

ঝুমা চট্টোপাধ্যায়

                                                       লিনপিয়াও








সমীর একটা শব্দ লিখেছে । লিনপিয়াও । অ্যান্টি লিনপিয়াও নামে আরো একটা শব্দ একটু পরে লিখেছে । শব্দ দুটোর কোনোটারই মানে জানা নেই । লিখেছে মিলিটা দিন দিন লিনপিয়াও হয়ে যাচ্ছে । মিলিকে আমার ভাল লাগে আবার লাগেও না । এর মানে কি জানি না । ভালবাসার প্রথম ধাপে এইসব প্রবলেম কারো কারো হয় বলে শুনেছি । মন নানা রকম দ্বন্ধে ভোগে । অনেক ধরনের খুচরো ইচ্ছে সামনে হাত ধরাধরি করে এসে দাঁড়ায় । কিন্তু অপর পক্ষ কি মনে করবে ভেবে আবার নিজের খোলসে ঢুকে যাওয়া । বুনুকে এখনি ফোন করা যেতে পারে । গাছ ঝাঁকিয়ে যে কটা শিউলি ঝরে পড়বে , আঁচল ভর্তি করে কুড়িয়ে নেওয়া শুধু । বুনু ঠিক জানবে । আমরা রোজ কথা বলি । আমরা রোজ চুমু খাই । কিন্তু মুশকিল একটাই । কারণ আমরা দুজনে আজো দুর্ভিক্ষ পিড়ীত ।
সুতরাং শিউলির সঙ্গে কয়েকশো মাল্টি ট্রিগারেরও সম্ভাবনা । কেননা আবহে যখন তখন সাইক্লোনের সতর্ক বানী । আর এই বিপদকে নিজেরাই ঘরে ডেকে এনেছি । কি করে সে কথা পরে । আপাতত লিনপিয়াও এর মানে খোঁজা খুব জরুরী । এর মানে কি বদলে যাওয়া ? বা পালটে যাওয়া ? প্রাথমিক ধারণা অন্তত তাই বলে । মনেহয় খারাপ কিছুই হবে নাহলে সমীরের আক্ষেপ এভাবে ফুটে বেরোতনা । শব্দটা চোখে আটকে গেছে । করায়ত্ত না হওয়া অব্দি শান্তি নেই । কি করব ? শব্দটা সমীরের কাছ থেকে চেয়ে নেব ? দেবে সমীর ? না কি...... চুরি করে নেব । খুব কি ক্ষতি হবে ? অবশ্য আমি তো আর জিনিষ চুরি করছিনা । অনেকে স্বভাববশত অন্যের জিনিষ চুরি করে । জিনিষপত্র চুরির ভাল নাম ক্লেপটোমনিয়া । ওদিকে আমার কোনো আকাঙ্খা নেই । আমি চুরি করব একটা শব্দ । শব্দচোরকে কি বলে ?
ভিড়ে ঠাসা দোকানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি আর ভাবছি এসব ? আামার টার্ন আসতে দেরী আছে । ওদিকে বুনুর অস্থির এস এম এস । আর কতক্ষণ অপেক্ষা করব ?
ছেলেটা বলল , দিদি চুরানব্বই টাকা খুচরো দিন । ভাঙানী দিতে পারবনা ।

চুরানব্বই টাকায় একটা পাওয়ার কিনেছি আমি , এয়ারটেল টু এয়ারটেল । না কিনলে কথার দাম থাকছিলনা। সেনসেক্স কেবলই পড়ে যাচ্ছিল । এবার আর হবেনা । এইটায় এখন থেকে প্রতি মিনিটে দশ পয়সা এবং এইরকম পরপর একুশ দিন । এবারে মনের সুখে আরো পাপ করতে পারব । পাপকালীন যে সমস্ত শ্বাসকষ্ট , নিঃশ্বাসের ওঠাপড়া , অক্সিজেনের কমতি , বুনুকে কাল বলেছিলাম রাত্রে সাড়ে দশটা বাজলে তবে ফোন করব । অনেক সময় নিয়ে অনেক কথা বলা যাবে ।
যেন কি কি কথা বলব সব আমার নোখের নীচে নেল আর্টের মত জ্যামিতিক পদ্ধতিতে পরপর সাজানো আছে । যেন লুকনো সেই শব্দগুলো সকলের অলক্ষ্যে বুনুকে চুপি চুপি পাঠিয়ে দেওয়া । বুনু রাত জেগে অপেক্ষা করে । অফিসের টেবিলে অপেক্ষা করে । খুব তাড়াহুড়ো করে অলিগলি বেয়ে বাড়ী ফেরবার সময় পিছু ডেকে কেউ কিছু জিজ্ঞেসা করলে অকারণ বিরক্তি , কারণ বুনু বলে দিয়েছে ও নাকি কখনও সুখী ছিল না ।
অথচ ছেলেটা প্রশ্ন করছে , চুরানব্বই টাকা খুচরো নেই ? না হলে কিন্তু পাওয়ারটা অ্যাকটিভ করা যাবে না ।
কি করা যায় ?
মোর ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে ঢুকলে এখুনি কিছু খুচরো আমার হাতে চলে আসবে । সেই ভাল । ওখানে একমাত্র মুসুরি ডাল ছাড়া বাকি সব আইটেমই বাই ওয়ান গেট ওয়ান । বেশ । ঠিক করলাম বাই ওয়ানটা নিজের কাছে রেখে গেট ওয়ানটা হরিসভায় গিয়ে দান করে দিয়ে আসব । তাতে অনেক পরজন্ম পুনর্জন্ম প্রারব্ধ কর্ম উৎরে যাবে । আমারও , বুনুরও ।
কিন্তু মোর ডিপার্টমেন্টে এসে আমার পা থেমে গেল । কেউ নেই । তিনদিন বন্ধ থাকবে জানতাম না । এদিকটা সচরাচর তেমন আসিওনা । খুচরোর জন্য এখন তাহলে কোথায় যাই ? দলের মিছিল অথবা শান্তিনিকেতন ? ধূস্ ! ওসব আমার কোনোটাই পোষাবে না । ইতিমধ্যে বুনুর আর একটা এস এম এস ঢুকে পড়েছে । সৈকতভূমিতে ঢেউ আছড়ে পড়ার মত । তবে মেসেজের তলানিতে সোনার চাবিটা রেখে দিয়েছে ঠিকঠাক ।
অসম্ভব রাগ হচ্ছে ছোঁড়াটার ওপর । এতবড় দোকান অথচ খুচরো নেই , হয় এটা ?
ভাই চুরানব্বই টাকা খুচরো দিতে পারব না । হচ্ছে না ।
তাহলে দিদি অন্য দোকান দেখুন । এখানে হবে না ।
আপন মনে বিড়বিড় করতে থাকে ছেলেটা । এত আস্পদ্দা ? কাস্টমারকে অসন্মান করছে ?ইস্ মোবাইলে পাওয়ার অ্যাক্টিভেট না হলে সারারাত বুনুর সঙ্গে কথা বলব কি করে ? ছট্ফট করতে করতেই তো সকাল হয়ে যাবে । সেই আবার গিয়ে তখন খোঁয়াড়ে ঢোকো । অবিশ্যি ডিউটির ফাঁকে ফোকরে একটু আধটু বই টই পড়ি আমি । লিনপিয়াও শব্দটা তখনই চোখে পড়েছে । কে জানে চোখের ভাষা বা হৃদয়ের ভাষার মত লেখবার কোনো আলাদা ভাষা আছে কি না ! আলাদা ভাষা দিয়ে মানসিক অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ । বিরক্ত বা ক্রোধ জাতীয় । মানব শরীরে এর সাংঘাতক প্রতিক্রিয়া । বুনু এসব বলতে পারবে । হতচ্ছাড়া দোকানদার ছেলেটার ওপর এখন বেদম রাগ হচ্ছে । ওকে কি করে বোঝাই মোবাইল ছাড়া আমি অন্ধ । বুনুর সঙ্গে রাত্রে কথা না বললে পাগল পাগল লাগবে । আমার । কেমন একটা জেদ চেপে যাচ্ছে । মোবাইল সংক্রান্ত যে কোন ব্যাপারেই আমি দারুণ স্পর্শকাতর। অপমানে মাথাটা দপদপ করে ।
দিদি একটা ছোট ম্যাগীর প্যাকেট দিয়ে দেব ? পাঁচটাকার । তাহলে আর খুচরোর ঝামেলা থাকবেনা ।
ম্যাগী ? ঐটা এখনও বিক্রী করছ ? নিষিদ্ধ হয়ে গেছে না ?
দিদি ম্যাগী খেয়ে কটা লোক মরেছে দেখান তো ? কিন্তু সিগেরেট খেয়ে বিগত দশ বছরে অনেকেই মারা গেছে বা অসুখে ভুগছে । ওইটা আগে বন্ধ করুক।
বলতে বলতে ছেলেটা বাঁদিক ফিরে ম্যাগীর প্যাকেট ছিঁড়তে যায় আর আমি কথা না বাড়িয়ে টেবিলের আধখোলা ড্র্য়ারটায় যেখানে কুড়ি পঞ্চাশের কয়েকটা নোট অগোছালো পড়ে , তড়িৎগতিতে হাত ঢুকিয়ে একটা বার করে নিই । এবং মুহুর্তের মধ্যে আঙুলের চাপে দুমড়ে ছোট করে দিই ।
চোখ কুঁচকে ছেলেটা বলে , একি ? আপনি আমার ক্যাশ থেকে টাকা তুলছেন যে ? প্রথমে দেখে তো চোর বলে মনে হয়নি !
ছেলেটা চেঁচাতে শুরু করে ।
বুঝতে পারি লিনপিয়াও এর প্রতিক্রিয়া আমার মধ্যেও শুরু হয়ে গেছে ।

1 টি মন্তব্য:

  1. বোঝা গেলো, লিন পিয়াও ,শুধু শব্দ বা শব্দের অন্বেশনের আধার নয়- অন্য পরিক্রমায় এখনো বেশ আজকের মনে হয় ।প্রশ্ন , যদিও জানি শুধু জিইয়ে রাখলেও লিন পিয়াও কালজয়ীতা হারাবেনা, তবে গতি শিথীলতা আসতেই পারে - বোধ হয় কিছু পুরানো ড্যাম্প না পড়া বারুদের প্রয়োজন আছে । সুপ্রছেষ্টা। এক নতুন বন্ধুর সামান্য মতামত। ভা লো লাগবে যদি মতামতের উঁপর কিছু বক্তব্য জানতে পা রি।

    উত্তরমুছুন

Featured post

সোনালী মিত্র