- সুইটহার্ট কাল তাহলে মিট করছি আমরা। 5 ইভনিং এট সাউথসিটি মল।
- ওহ সিয়োর মাই সান্টা ! একটু দেরি হল রাগ কোরো না প্লিজ। সি ইউ, চাউ...
প্রথম দেখা হল একজোড়া সদ্য নতুন প্রেমিক প্রেমিকার। এতদিন প্রোফাইলপট দর্শন ও চ্যাটিঙাদিজা -র ফলে প্রেমে একেবারে মাখো মাখো। ফুঁ দাও ফুঁ দাও উথলে পড়ে বুঝি। এবার সাক্ষাতে ও স্পর্শনে আর ধরে রাখা যায় না। দু’পক্ষের গার্জিয়ান কেলেঙ্কারির ভয়ে শেষে উপায়ান্তর না দেখে বিয়ে করিয়ে দিলেন। বেশ সুখী সুখী কিছুদিন। দুজনেরই প্রোফাইল পিকচারে আতান্তরে পড়ে খামচে জড়িয়ে ধরা ছবি। যেন ছেড়েছো কি অমনি পাখি ফুড়ুৎ হতে পারে। সাধের জিন্স টপ পরা যাচ্ছে না। আদ্দিকালের শ্বশুরকূলের আত্মীয় স্বজন। এটলিস্ট চুড়িদার পর্যন্ত ছাড় আছে। কিন্তু জিন্স প্যান্ট নৈব নৈব চ। যাক তাও মন্দের ভালো। সবসময় শাড়ি পরে থাকতে হলে হয়েছিলো আর কি। আচ্ছা, এখনি কি বিয়েটা করা দরকার ছিল? ক’দিন পরে করলে হত। মাত্র ২৫ বছরের বর আর কনে ২৪ বছরের। সবে ক্যাম্পাস ইন্টারভিউতে চাকরী জুটেছে। কেরিয়ারটার দিকে আরেকটু নজর দিলে হতো। কনের ভেতরে এমন সব ভাবনারা ঝিলিক দিতে শুরু করেছে।
প্রথম বিবাহবার্ষিকী ধুমধাম করে হচ্ছে। ফেসবুকের বন্ধুরাও এলো। কিন্তু ওরা ওদের মতোই এনজয় করছে। কেমন যেন সব আগের মতো নেই আর। এখন তফাৎ তো একটাই । ফ্রেন্ডস টিমের মধ্যে দুজন বিবাহিত, অন্যরা অবিবাহিত। ওদের মধ্যে দম্পতি দুজন যেন এলিয়ন। তবু এরই মধ্যে বর একটু সরে আলাদা করে দু’জন বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলছে। আর কনেটির এক বন্ধু এসে কানে কানে কী যেন বলে যাচ্ছে। বর কথা বলতে বলতে লক্ষ্য রাখছে কনের উপর। কনে তার বন্ধুর কথায় হেসে গড়িয়ে পড়তে পড়তে লক্ষ্য রাখছে বরের উপর।
কনে পোস্ট করে শাশুড়িমা ভোগ গুছোচ্ছেন, শ্বশুরের হাতে পায়েসের বাটি,দামী শাড়ি-গয়না-বাড়ি-গাড়ি, প্যান্টশার্ট ডিজাইনার পোশাকে অন্য ফিমেল কলিগদের মাঝে চুড়িদার পরা বোগো মাছের মত নিজের সেল্ফি। বর পোস্ট করে দারুন সমস্ত ট্যুরিস্ট স্পটে বেড়ানোর ছবি, স্মিতমুখে কোলে মাথা রেখে সুখী দম্পতির ছবি, ড্রাইভিং সিটে বসে কেতাওয়ালা সেল্ফি। লাইক কমে যাচ্ছে । বেড়ে যাচ্ছে ত্যাড়া কমেন্টের ঝাঁক, ‘ কি গুরু ছবিটা কে তুলেছে ? বউ বাড়ীতে না ?’, ‘বাব্বা এতো রস! পরে কষ ’ এই ধরনের। জীবনটা কেমন জোলো হয়ে যাচ্ছে। ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসার বহরটাও কমে গেছে । ধুস শালা! কেন যে সাত তাড়াতাড়ি...যাক কী আর করা যাবে। বরের ভেতরে এমন সব ভাবনারা ঝিলিক দিতে শুরু করেছে।
কনের ফোন বাজলো রাত একটায়। ওরা তখন ব্যাস্ত সুখে। তারই মধ্যে ফোনটা সুইচ অফ করলো কোনোমতে ক’দিন পরে বার বার বাজলো। ব্লক করে দিলো নাম্বারটা । বর কিছু বলেনি। ক’দিন পরে বরের ফোন বাজলো রাত দুটো যথারীতি ব্লক। কনে কিছু বলেনি।
অফিস থেকে থেকে ফিরে চায়ের কাপ হাতে নিতে না নিতে বরের মা এসে নালিশ করলেন, ‘ সাধ করে বউ এনে কী লাভ হোল । হয় অপিস করে না হয় ফেসবুক করে। ঘর দুয়ারের দিকে একদম মন নেই ’। কোনোরকম টিফিন করে বেডরুমে ঢুকে ফোনটা হাতে নিলেই কনে বললো,
- না। একদম নয়। সারাদিন পর আমারা দুজনে একটু সময় কাটাবো না! এসেই অমনি ফেসবুকে মুখ গুঁজে থাকবে ? বুড়ো হচ্ছেন বাবা, তাকে তো একটু সাহায্য করতে পারো।
- তুমি আমার বুড়িমাকে সাহায্য করো ? জ্ঞান দিতে এসো না যাও যাও।
- তোমার মা বুড়ি কোথায়? ৫৫ বছরে কেউ বুড়ি হয় নাকি? আশ্চর্য কথা বলো।
বলাবাহুল্য দুজনে সেই ফেসবুকেই পুনর্মূষিক । বরের কাছে নতুন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এলো। কনের কাছে নতুন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট এলো । অ্যাকসেপ্ট করার আগেই চ্যাটবক্সে কী সুন্দর একটা মেসেজ! বাঃ এমন মানুষও থাকে এই পৃথিবীতে! দিনে দিনে জমে গেলো সখা সখী। মধুরে মধুরা রতি সকলই বিলীন। আহা! অদেখা রুপোলী ডানাজোড়া পিঠে লেগে গেছে। কোথাও হারিয়ে যাবার নেই মানা। বর জানে না বউয়ের মনে কোন সুখের তুবড়ি। বউ জানে না বরের মনে কে জ্বেলে দেয় দিন রাত্তির ফুলঝুরি। দম্পতিদের মধ্যে কথা বন্ধ।
একদিন দুজনের ঝগড়ায় এলাকার সব কাক চিল সব উড়ে পালালো। বরের প্রেমিকা সমস্ত চ্যাট সিলেক্ট করে কনের চ্যাটে দিয়ে বললো। দেখো কেমন তোমার বর। কনের প্রেমিক সমস্ত চ্যাট সিলেক্ট করে বরের চ্যাটে দিয়ে বললো, দেখো কেমন তোমার বউ। এই দুজন হল সেই ব্লক করে দেওয়া বন্ধু । ব্লক করার শোধ নিলো। এরপর বরকনে কনভার্ট হয়ে ছেলে মেয়ে হয়ে যে যার বাড়ীতে ব্যাক টু দ্য প্যাভেলিয়ান।
ভাবলেন কী শেষ হয়ে গেলো ? বোকা নাকি ওরা ? ফেক আই ডি হয়ে ওরাও রাতের পর রাত গল্প করে ভোর অবধি একে অন্যকে ব্যাস্ত রাখে...প্রেমে !?
সত্যি বাস্তব ঘটনাগুলকে তুলে ধরেছেন .....যদিও রম্য রচনা বলছেন বাস্তবে social site গুলো মানুষের জীবন কে কী ভবে প্রভাবিত করছে তার চমত্কার পর্যবেক্ষণ আছে রচনাটির মধ্যেই ....... I appreciate .
উত্তরমুছুন