অশোক মজুমদার - মায়াজম

Breaking

২০ সেপ, ২০১৫

অশোক মজুমদার

                                                   বিয়ে – থা









        সাতসকালে ড্রেনের দিকে তাকিয়ে কি করবে ভেবে পাচ্ছেনা কেল্টু ।ড্রেনে যে যায়গাটায় এখনো একটা বুদবুদ ভেসে আছে সেখানটায় হাত ঢুকাবে?যা নোংরা কাদা ইসস।
সর্বজনীন কত কি যে দু একটা আলটপকা দাবী থেকে বাপের সম্পত্তি হয়ে যায়! যেমন লাইটপোষ্ট টা আলুরচপ ওয়ালার দোকানের একপাশের খুঁটি হয়েছে। মন্দিরের বটগাছটার গা ঘেঁষা ফালিটা বিন্দুবাসিনীর হয়েছে। তেমনই মিউনিসিপালিটির এই টাইমকল খানা কেল্টুদের হয়েছে।তারা নিয়মিত এ কলের চাতাল ঝকঝকে তকতকে রাখে।নতুন নতুন ক’টা দিন বাসন্তীদের বাড়ি থেকে ,এমনকি মোড়ের মাথার চক্রবর্তী বাড়ি থেকেও অকারণেই সে কলে পা ধোওয়া,বাড়ির পুরোনো ময়লা ফেলার বালতি ধোওয়া ইত্যাদি ছিলো।কেল্টুর মা-দিদিরাও বুঝত এ কল তাদের একার নয়;তাই তারা গজগজ যা করার ঘরের থেকেই করত।আর বাসন্তী ও পা ঘষতে ঘষতে চেল্লাতো ‘সকলের কল,কারো একার নয়’।
সে সব নিষ্প্রয়োজন দাবী দাওয়া শেষমেশ থিতিয়েছে,ক্কচ্চিৎ পথচলতি বাদ দিয়ে এখন আর তেমন দাবী সনদ নেই।কেল্টু ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ মুখে নিয়ে সোজা কলে এসে মুখে জল নিয়ে কুলকুলকুলকুল পুউউচ করতেই সব্বোনাশ!! সাড়ে ছ’শ দিয়ে দিয়ে বাঁধানো দাঁতখানা সোজা গিয়ে ড্রেনে টুউউপ।সামনের উপরের পাটির দিকে এইমাত্র ছিটকে পড়ে গিয়ে শূন্য ফাঁক ফোঁকরে সে জিভ ঢুকিয়ে মাড়ি চাটলো।তারপর যা গেছে তা যাক ভেবে বিমর্ষ মনে ঘরে এলো।
এ কদিন যে সে হাসছিলো,বেশ হা: হা: হিহি করে হাসছিল,হাসতে পারছিলো,হেসে দেখাচ্ছিল তা এক্ষন থেকে আর সে পারবে না । সে গম্ভীর হয়ে থাকবে যারপরনাই।যদি ভীষণ হাসি পায় তবে সে দ্রুত মুখে হাত চাপা দেবে।
হাসবে,বৈকুণ্ঠ দা।তার একটাও দেখা যায় না ,একটাই যে আছে তাও সে না দেখালে দেখা সম্ভব নয়।ঠিক কবে থেকে সে এমনটা হাসতে পারছে ? এমন ফোকলা দাঁতে?যবে থেকে সে যে ফোকলা তা সকলেই মেনে নিয়েছে? না সে নিজেই মনেমনে গুলি মেরেছে দাঁতের!আসলে চিন্তাটা হ’ত না যদি না কেল্টুর বয়স হ’ত বত্রিশ।
বৈকুন্ঠ দা বাঁধাবার দাম শুনে বলল ‘সে কিরে ভাই আমার মুখে সাড়ে ছ’শ টাকা খাড়রা? নে ভাই এটাও উপড়ে নে ,একশ কম দিস খন বৈকুণ্ঠ দা মস্করা করলে,কেল্টু ততোধিক গম্ভীর। ‘রাকেশ রোশনের একটাও চুল ছিলনা,স্রেফ পরচুলা পড়ে তিনি এত্তবড় হিরো’এমন সব আলটপকা কথায় বেশ একটা দীর্ঘশ্বাস পড়ছিল তার এই যা।
আসলে চিন্তাটা হ’ত না যদি না আসছে মাঘেই কেল্টুর বিয়ে ঠিক হত। সে না হয় আরো সাড়ে ছ-শ যাবে;কিন্তু নতুন বউ যখন টের পাবে? সে কি এখনকার মত শোবার আগে আধ-কাপ জলে দাঁত ডুবিয়ে ঘুমোবে!মানে পাশে শোবে? ...মানে চুমু ?
মাড়িতে দাঁত নাকি পুঁতে দেওয়া যায়,তবে তার যা খরচ!না: ,সে গুড়ে বালি। আচ্ছা তার যে একখানা নেই ;সেটা কি বিয়ের আগে সর্বমঙ্গলা কে বলে নেওয়া উচিত হবে না ?
বাব্বা ! নাম ও একখানা রেখেছে ‘সর্বমঙ্গলা’।পাকাদেখার দিন কেল্টু জানতে চেয়েছিল- ‘ইয়ে মানে কোনো ডাক নাম নেই?’
-না ,সকলে আমাকে সর্বমঙ্গলা বলেই ডাকে।
একবার সে উচ্চারণ করল আপনমনে ‘স্ শরবোমোংগলা’তারপর নিজের নাম দুখানাও ‘কেল্ টূ’ ‘প্ রোনোব’!ধুউউর,যা হয় হোক গে যাক।
এখন বিজ্ঞাপনে,প্রণব ভৌমিক সঃ চা: উঃবঃ,বত্রিশ, আর্থিক সচ্ছল, লম্বা সুস্বাস্থবানের যায়গায় কি লিখবে নাকি ;পাড়ায় বাড়িতে এমনকি বেপাড়ায়ও কেউ তাকে প্রণব বলে চেনে না,সব্বাই কেল্টু ডাকে? মিউনিসিপালিটির নর্দমা পরিষ্কারক?বত্রিশ বছর এগারো মাস? পাঁচ ফুট সাড়েচার? হাঁপানি আমাশা ভোগী,একটা দাঁত হীন? মুদির দোকানে ধারবাকির জন্য খেঁচানি খায়? কেউ লেখে? হুঃ।
না সর্বমঙ্গলার বাবা নেমন্তন্নের কার্ড বিলি করবার সময় এসব বলবেন? তিনি বলবেন, একমাত্র ছেলে, (সে যতই কেল্টুর দু বোন থাক ভাই তো নেই) নির্ঝঞ্ঝাট সংসার,নেশাটেশা করেনা ইত্যাদি ইত্যাদি। দোল এ পুজোর ভাসানে একটু হয় ,তা কি উল্লেখ করবার? জুয়ামদগাঁজা,ইয়ে বাড়ি যাওয়া ছাড়া আবার নেশা কি? খইনি কোনো নেশা হল?মাঝে মধ্যে দু একটার বেশি সিগারেট কক্ষনো সে টেনে দেখেনা।
সর্বমঙ্গলার ছবিখানা মানিব্যাগ থেকে একবার দেখে; কেল্টু গজগজ করল ,হুঃ নাকি এডিট ! কিসের এডিট ? বাসন্তীর মুখখানা এডিট করে এমন ধলা ,এলোকেশী করা যাবে ? হেএব্বি দেখতে সর্বমঙ্গলা কে।কেল্টু নামটাকে একটু কেটে ছেঁটে নেবে ‘সরবো’? নানা, সররবো আবার কি? ‘মোংগোলা’? তাতেও যদিও দাঁত না থাকার জ্বালা টা আছে। তবু মোংগোলা ই ঠিক।
বাকি কপাটির সাথে মিলিয়ে দাঁতের কালার,আর ওদিকে বেনারসির কালার চয়ন চলল। দিন এলো।
ধার দেনা থাক।ক্যাটারিং এর পয়সা কিস্তিতে দেওয়া যাবে।পুরোহিত মশাই তিল খুঁজে না পাক;তিনি সব সামলিয়ে শুদ্ধ করে নিতে জানেন। মাংসে টান পড়ুক। সানাইয়ের বদলে সি ডি বাজুক পাগলু ড্যান্স-ড্যান্স। মঙ্গলঘট ভরতে যাবার সময় এই প্রথম বিধবা পিসী, ব্যান্ড-পার্টির সাথে রাস্তায় নাচুক। খাবারের মেনুতে ডাঁটিওয়ালা বেগুনভাজার বদলে ডেভিল,পাঁচপাতের পাঞ্জাবী চাইনিজ ইত্যাদিতে ইত্যাদিতে ভরে যাক।পানের স্টল, হাতে হাতে একটার বদলে দুটো পান দিতে ভ্রু কোঁচকাক।কিলিক –কিলিক ফটো উঠুক... পিঁড়িতে করে পানপাতায় চোখ ঢাকা সর্বমঙ্গলা কে মালাবদলের সময় কেল্টুর চাইতে উঁচু তে তুলে ধরে খুনসুটি চলুক।বাসরঘরে রাত জাগার লোক না পাওয়া যাক ।বিয়ে হ’ল।
কালরাত্রি টা কাটিয়েই ওদের ফুলশয্যা। সিনেমাটিক দুধ ঢেকে রাখা ,ইঁচড়ে পাকা ছোট বোনটার কাজ নিশ্চয়ই। সর্বমঙ্গলা মাথা নিচু করে খাটে বসে।
কেল্টু এলো, দু হাত খাটে রেখে পা ঝুলিয়ে বসে ঘাড় কাত করে; সবে বলতে যাবে দাঁতের কথা। বাপের বাড়ির লোকজনেদের বিদায় দেবার পর ফুলোফুলো চোখে বসে থাকা সর্বমঙ্গলা হাত মুঠো করে কেল্টুর হাতে দিলো – আজ্ঞে ‘দাঁত’।
রিনিরিনিরিনি ঝংকারে বুকের বোঝাটা নেমে গেলো কেল্টুর। নিজেরটিও খুলে দু টিকে একসাথে আধ-কাপ জলে রেখে ,ওরা প্রাণ খুলে হাসল। এরপর ওরা চুমু খাবে নির্ঘাত

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র