ইমাম (শেষ দেখা) - মায়াজম

Breaking

২ নভে, ২০১৫

ইমাম (শেষ দেখা)

                                                      
                                                      গল্প কথা












মায়া দিদি আমাদের পাড়ার মেয়ে,বাবা নেই,খুব সাধারণ পরিবার,আপন বলতে শুধু মা আছে।তবুও দেখতাম দুঃখ যেন মায়া দিদিকে ছুঁতেই পারে না।সব সময় হাসিখুশি থাকে।ধুম করে কোথায় যেন, এক মধ্য বয়স্ক লোকের সাথে মায়া দিদির বিয়ে হয়।মাস ছয়েক পর মায়া দিদির সাথে দেখা,কিন্তু মুখটা আর আগের মত হাসিখুশি নেই,চোখের নিচেও কালো দাগ পড়ে গেছে।হাসি দিয়ে বললাম কি গো দিদি,বিয়ের পর দেখি আমাদের কথা ভুলে গেছ? কিছুক্ষন চুপ করে থাকার পর জাবাব দিলো,হ্যাঁ বিয়ের পর মেয়েরা এমনি হয়ে যায়।তো দিদি তোমার দিনকাল কেমন যাচ্ছে? ভালো ভাই,আমার দিকে একটু খেয়াল রাখিস,এই বলে চলে গেল।মায়া দিদির শরীলের অবস্থা দেখে বুঝলাম,মামা হবার মিষ্টি আমি খুব শীঘ্রই পেতে চলেছি।খুশির খবর, দেখে ভালো লাগলো।

এর পর থেকে মায়া দিদিকে বাপের বাড়ীতেই দেখতাম সবসময় ,প্রায় চার মাস পার হয়,মায়া দিদির বরকে একবারও দেখলাম না আসতে বা কোন খোঁজ খবর নিতে।মায়া দিদিকে এখন দেখলেই কেমন যেন লাগে,আগের মত নেই,অনেক বদলে গেছে,কেমন যেন মানুষিক যন্ত্রণায় ভুগছে, তাছাড়া শরীলের অবস্থাও তেমন একটা ভালো দেখায় না,কিছু জিজ্ঞাস করলেও, বলে না।এদিকে নতুন অতিথী আগমনের সময় ঘনিয়ে এলো।

আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে পাড়ার চায়ের দোকানের পাশে কেরাম খেলতেছি।পিছনে কে যেন হাউমাউ করে কান্না শুরু করলো,কে কোথায় আছ,আমার মেয়েটাকে বাঁচাও।আওয়াজ শুনে বুঝতে পারি, মায়া দিদির মা।আমরা কয়েক জন বন্ধু ছুটে যাই।তড়িঘরি করে মায়া দিদিকে হসপিটালে নিয়ে যাই।মায়া দিদিকে দেখার পর ডাক্তার খুব নিরাশ।রোগী এখন শেষ পর্যায়,জরুরী অপারেশন করতে হবে।যে কোন একজনকে বাঁচানো যাবে,আপনারাই বলুন কাকে বাঁচাবো..?প্রত্যেকটা মা চায় তার সন্তান বেঁচে থাকুক।মায়া দিদির মায়েরও এক কথা।ডাক্তার সাহেব আমার মেয়েকে বাঁচান,যে সন্তান পৃথীবির আলো দেখলই না তাকে বিসর্জন দিতে বুক কেঁপে গেলেও নিজের সন্তানকে হারাতে পারব না।

মায়া দিদিকে পাশে বিছানায় শুয়ে রাখা হয়েছে,গায়ে শক্তি নেই,কথা বলার ক্ষমতাও যেন নেই, মায়ের কথা কিছুটা বুঝতে পেরে দু'চোখ দিয়ে জল গড়াতে শুরু করে মায়া দিদির,ঠোঁট আর চোখ দিয়ে ইঙিত দিলো ডাক্তারকে,যেন কিছু বলবে,ডাক্তার কাছে যায়, কাঁপা কাঁপা ঠোটেঁ মায়া দিদি বললো,ডাক্তার সাহেব যে সন্তানের জন্য আমি দশ মাস দশ দিন কষ্ট করেছি।আমি মা হয়ে বলছি,আমার জীবনের বিনিময়ে আমার সন্তানকে পৃথিবীর আলো দেখান।ডাক্তার বলতেই আশাবাদী,ঠিক আছে এতো যখন আশা আমরা দুজনকেই বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করবো।এই বলে ডাক্তার অপারেশন শুরু করলো।
অপারেশেনের পরে, ডাক্তার এসে বললো,ছেলে সন্তানের জন্ম হয়েছে,কিন্তু রোগীর অবস্তা ভালো না,রোগীর আপন জন কেউ ভিতরে যান,রোগী যেন কি বলবে।নবজাত শিশুকে হাত বাড়িয়ে একটু আদর করেই পৃথিবী থেকে বিদায় নেয় মায়া দিদি।

খুব কাছ থেকে সেদিন দেখেছিলাম মায়া দিদির চলে যাওয়া,যাওয়ার সময় একটা কথাই বলেছিলো,আমি বেঁচে থাকবো আমার নবজাত সন্তানের মাঝে।শুনেছি একজন মানুষের কাছে সবছেয়ে প্রিয় নিজের জীবন,কৈ সেদিন তো মায়া দিদির চোখে তেমন কিছু দেখিনি,নবজাত সন্তানকে পৃথিবীর আলোর দেখানোর জন্য হাসি মুখে নিজের জিবন বিসর্জন দিলো।সত্যি তাই তো বিসর্জনে থাকে না কোন দুঃখ থাকে না কোন শোক,থাকে শুধু আগামীর প্রত্যাশা,মায়া দিদির হাসি মুখে মৃত্যুকে বরণ করে নেওয়াই তার প্রমাণ ...

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র