অর্ঘ্য দত্ত

মায়াজম
0
                                   সম্পাদকীয়  



            
  দিল্লিতে দেখা হলে সোনালী প্রস্তাবটা দিয়েছিল। মানে মায়াজমের এই সংখ্যাটা সম্পাদনা করার প্রস্তাব। দু-চারবার দ্বিধা প্রকাশ করার পর সোনালী যুক্তি ও ভরসা জোগালে বলেছিলাম, ঠিক আছে। ঠিক আছে তো বলেছিলাম কিন্তু পরে যখন সম্পাদনার দায়িত্ব সত্যিই এসে পড়ল, হোক না তা ব্লগজিন, প্রথমেই ধূর্জটি প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের একটি কথা মনে পড়ে গিয়ে বেশ অস্বস্তি শুরু হয়েছিল। কোথায় যে পড়েছিলাম এখন আর তা মনে নেই, ওঁর কাছে লেখা চাওয়াতে কোনো ছোটো পত্রিকার সম্পাদককে লিখেছিলেন- '' আপনারা পড়াশুনা করেন, নাকি শুধু পত্রিকা বারই করেন? এ কথাটা মনে পড়াতে খুব ভয়ে ভয়েই কিছু কবি-লেখকের কাছে লেখা চেয়েছিলাম। একজন ছাড়া সবাই আমার অনুরোধে সাড়া দিয়ে লেখা পাঠিয়েছেন__ আমার পড়াশুনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আমাকে বিব্রত না করেই।ভাগ্যিস! এঁদের প্রতি সত্যিই কৃতজ্ঞ থাকলাম।

তবে পড়াশুনার কথাতে মনে হচ্ছে, এই যে সব নানান রকম নতুন নতুন ব্লগজিন, ওয়েবম্যাগ, ফেসবুক আরো সব কী কী আজকাল হয়েছে এর মাধ্যমে মানুষের পড়াশুনার অভ্যাসটা বোধহয় বাড়ছেই। বাড়ছে এমন বিষয়, এমন সব লেখক ও কবিদের লেখা পড়ার সুযোগ যা ক'বছর আগেও কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ না থাকলে পাওয়াই যেত না। সুযোগ বাড়ছে বলেই বাড়ছে পড়ার ইচ্ছাও। মূলধারার পত্রিকাগুলোর পাশাপাশি অন্য ধারার বা চরিত্রের পত্রিকার প্রতি সাধারণ পাঠকদেরও অনেক বেশি কৌতূহল তৈরি হচ্ছে।অনেক বছর ধরে যে সব পাঠকেরা, বিশেষ করে বহির্বঙ্গে যারা থাকেন, শুধুমাত্র সহজলভ্য বাজারি পত্রিকাই পড়ে আসছিলেন, এখন হঠাৎ করে তাদের সামনে এই আন্তর্জাল, ফেসবুক ইত্যাদিরা মেলে ধরেছে এক বিচিত্র পাঠ-সম্ভার। পাঠকেরা নিজেরাই নিজেদের পছন্দ অনুসারে লেখা বেছে নিতে পারছেন। তারা নানান নতুন ধারার লেখার সাথে পরিচিত হচ্ছেন। নতুন ধারার লেখা পড়ে বিস্মিত হচ্ছেন, ভাল লাগলে বা না লাগলেও তাই নিয়ে এই নতুন পরিসরে আলোচনা করছেন, সরাসরি পাঠ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন। মানে সনাতন পাঠকেরা বা নাতিসিরিয়াস পাঠকেরাও আজকাল ফেসবুকে পাওয়া লিংক- টিংকের মাধ্যমে গত পঞ্চাশ বছরের পারিবারিক সাহিত্য আড্ডায় নাম না শোনা হাংরি আন্দোলন সম্বন্ধেও জেনে যাচ্ছেন, জেনে যাচ্ছেন কবিতা নিয়ে নানা আন্দোলনের ইতিহাস। সে সত্য-মিথ্যা মিলিয়ে যতটুকুই হোক। তাদের চোখে পড়ে যাচ্ছে নতুন কবিতা, পুনরাধুনিক কবিতাও। ফলে এই আন্তর্জালে নতুন এক ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া পাঠক-প্রজন্ম তৈরি হয়েছে, প্রতিদিনই হচ্ছে, যারা ঠিক বুঝতে পারছেন না তারা কী লিখবেন, কীভাবে লিখবেন। এমনকি কোন কবিতা তাদের নিজেদের ভালো লাগছে সেটাও তারা ঠিক মতো বুঝে উঠতে পারছেন না। একদিকে স্কুল-কলেজ থেকে শিখে আসা শিক্ষা যা তাদের আজও মূলধারার কবিতার প্রতি প্রায়শই বিশ্বস্ত ও মুগ্ধ করে রাখে, অন্যদিকে হঠাৎ আলোর ঝলকানি-র মতো এখানে খুঁজে পাওয়া নানান রকমের নতুন লেখার প্রতি তৈরি হতে থাকা এক অবুঝ আকর্ষণ। সন্ধ্যাবেলা ঘাড়ে-বগলে পাউডার ছিটিয়ে বারমুডা-নাইটি পরে সোপ অপেরায় সময় না কাটিয়ে তারা কিন্তু নিয়মিত এখানে কবিতা পড়ছেন, কবিতা লিখছেনও, সে যেমনই হোক। পাঠক হিসাবে এরা গ্রাহ্যেয়বল্ নয় ভাবলে কিন্তু ভুল হবে।একদিন এদের মধ্যে থেকেই নিশ্চিত পাওয়া যাবে নতুন কিছু কবি-লেখক, কিছু পরিণত পাঠকও।

এমন একটা প্রেক্ষিত থেকেই মনে হল, এবারের সংখ্যায় এমন কারো সাক্ষাতকার নেওয়া যাক কবিতা নিয়ে যার ভাবনা ব্যতিক্রমী। যে কবিতা, যেমন কবিতা আমরা পড়ে অভ্যস্ত, তার থেকে সম্পূর্ণ সরে এসে এক নতুন পথে যার কবিতা সাধনা। যিনি নিজেই নিজেকে বাংলা কবিতার ভিলেন বলেন। আমার নিজের মধ্যেই জমে থাকা অনেক প্রশ্ন, অনেক কৌতূহল নিয়ে মুখোমুখি হলাম সেই ভিলেনের। তিনি হলেন কবি শ্রী বারীন ঘোষাল। কিন্তু আমার মতো অর্বাচীনকেও যে ভিলেন-সুলভ ধমক-ধামক দেননি তার জন্য বারীনদাকে আন্তরিক ধন্যযোগ।

এবারের কবিতার সূচিতে যারা অনেকদিন ধরে লিখছেন, পরিচিত নাম, তাদের কবিতার পাশাপাশি যারা সবে লেখা শুরু করেছেন এমন নবীন কবিদের কবিতাও রাখলাম। গল্পেও তাই। আমিতো অতিথি-সম্পাদক, সোনালীর সাহায্য ছাড়া একা সামলে উঠতে পারতাম না। সোনালীকে কৃতজ্ঞতা জানালাম। আর যা কিছু ভুল-ভ্রান্তি খুঁজে পাবেন জানবেন তার জন্য এই অনভিজ্ঞ অতিথি-সম্পাদকটিই দায়ী।


অর্ঘ্য দত্ত , সম্পাদক মায়াজম 
মুম্বাই , ৬ই মে , ২০১৬

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)