বারীন ঘোষাল - মায়াজম

Breaking

৬ মে, ২০১৬

বারীন ঘোষাল

                        সাক্ষাৎকার 








অর্ঘ্য দত্তকে দেয়া বারীন ঘোষালের সাক্ষাৎকার ___ ‘মায়াজম’-এর জন্য... ১৯/৪/২০১৬। দিল্লী।


অর্ঘ্য :- 

বারীনদা,মনে আছে নিশ্চয়ই মাসখানেক আগেই দিল্লিতে বহির্বঙ্গের কবিদের একটি আলোচনাসভায় আপনার সঙ্গে সাক্ষাতের সম্ভাবনা তৈরি হওয়াতে আমি ফোন করে আপনার সঙ্গে আড্ডা মারার আবদার করেছিলাম। আসলে আপনার মুখ থেকে আপনার কবিতা ভাবনা নিয়ে দু-চার কথা শোনার লোভটাই ছিল মূল কারণ। দিল্লির সেই অনুষ্ঠানে আপনি উপস্থিত না থাকাতে সে সুযোগ আর হয় নি। বছর দুয়েক আগেও আপনার নামই না শোনা, আপনার লেখা পড়া তো দূরের কথা, এই আমি, মূলধারার পত্রিকা পড়েই যার কবিতা চেনা ও ভালোবাসা , বহির্বঙ্গের সেই মুখ হাঁ করা পাঠকটির যখন এখানে একটা সুযোগ মিললোই তখন আপনার সঙ্গে বাকি থাকা সেই ইনফর্মাল আড্ডাটাই বরং হোক। তাছাড়া, আপনার লেখালিখির সঙ্গে দীর্ঘ পরিচিত কোনো প্রাজ্ঞ আলোচকের মতো করে ফর্মাল সাক্ষাতকার নেওয়া আামার পক্ষে সম্ভবও নয়।
যেটুকু পড়েছি তাতে আপনার নাম বললেই যে দুটি কথা প্রথমেই মনে আসে তা হল 'নতুন কবিতা' এবং 'অতিচেতনার কথা'। এই বিষয়দুটি নিয়ে যদি আপনি কিছু বলেন -- বিশেষ করে লিটল্ ম্যাগাজিন না হাতে পাওয়া আমার মতো অজস্র বাঙালি পাঠকদের কথা মনে রেখে।

বারীনদা :- 
মাত্র দেড় বছর আগে তোমার সাথে আলাপ ফেসবুকে। তুমি বহির্বঙ্গ কবিতা সংকলনের জন্য কারো পরামর্শে আমার কবিতা চাইলে। সেই প্রথম তোমাকে জানলাম। পরে বইমেলায় সাক্ষাৎ। এবার দিল্লী বইমেলায় আমার সঙ্গে আড্ডা মারার জন্য তোমার আগ্রহ আমাকে বিস্মিত করেছে। আমার আসা হল না। তারপরই সাক্ষাতকারের এই প্রস্তাবে পুলকিত হলাম আবার। আমি যে বাংলা কবিতার ভিলেন, টের পেলে আবার পিছিয়ে যাবে না তো ? তোমার মূল প্রশ্ন দুটি নিরসন করি আগে।
“অতিচেতনার কথা” --- “কৌরব”-এর আমরা সবাই সত্তর দশকে প্রতি সপ্তাহে কবিতার আড্ডায় বসতাম কারো না কারো বাড়িতে, প্রায়ই স্বদেশ সেনের বাড়িতে। কবিতা পাঠ ছাড়াও আলোচনা হত কবিদের নিয়ে এবং হাল আমলের পত্রিকায় লেখালিখি নিয়ে। ক্রমশ আমরা বিরক্ত হচ্ছিলাম আমাদের গতানুগতিক কবিতার ছিরিতে। চারপাশে চেয়ে দেখলাম আবহমান বাংলা কবিতায় সবাই প্রভাবিত ও প্রবাহিত। রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, সুভাষ মুখোপাধ্যায় থেকে শুরু করে হালের সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বিনয় মজুমদার --- এভাবে নতুনতর প্রভাবের অভাবে বাংলা কবিতায় রিমেক রিমিক্স আর নকল ও প্লাগিয়ারিজম চলছে। আমরাও তাই করে চলেছি। বোর হয়ে ঠিক করলাম হয় মৌলিক কবিতা লিখব যা কেউ কোনদিন লেখেনি নয়তো কবিতা লেখা ছেড়ে দেবো। এর চেয়ে বাজারে বসা বা বাগান করা অনেক ভাল কাজ। কিন্তু চাইলেই তো আর মৌলিক কবিতা আসবে না কলমে। স্বপ্নেও আসবে না। কবিতার ইতিহাসের পরম্পরায় যে মূলধারা বা মেইন স্ট্রিম কবিতা তার যে কোন শাখাধারা বা উপধারা তৈরি হতে পারে কিন্তু বিচ্ছিন্ন হওয়া সম্ভব নয় মনে হয়েছিল। কিন্তু মৌলিক কবিতার জন্য তো চাই একটা নতুন পরিসর। ভিন্ন নির্মাণ পন্থা এবং সেই সঙ্গে পাঠক তৈরি করা। খুব চিন্তায় ছিলাম।
অবশেষে আমরা সবাই মাসে একবার পরিবার অফিস সংসারের নিত্যদিন ছেড়ে বই খাতা রেশন ব্যাগ নিয়ে পাড়ি দিতাম দূরে কোথাও, পাহাড়ে জঙ্গলে নদীতিরে সমুদ্র-প্রান্তে। তিনদিনের কবিতার ক্যাম্পে চলে যেতাম। সেখানে রাতদিন পড়া শোনা তর্ক বিতর্ক কবিতার ইতিহাস, বিশ্বকবিতার পরিপ্রেক্ষিত, বাঙালি তরুণ কবির পোটেন্সিয়াল সব মদ্য সহযোগে আলোচিত হত এবং মূলধারা থেকে বাইরে বেরোবার উপায় অন্বেষণ করা হতো। সেই সময় ষাট দশকের আমেরিকান কবি নিকোনার পায়রার প্রতি-কবিতা আকর্ষণ করেছিল আমাদের। ১৯৮২তেই স্বদেশ সেন লিখলেন তার যুগান্তকারী কবিতার বই ‘রাখা হয়েছে কমলালেবু, কমল চক্রবর্তী লিখলো ‘মিথ্যে কথা’। ১৯৮৪তে আমি লিখলাম ‘মায়াবী সীমূম’ --- কবিতার বইগুলো। ১৯৮৭তে শঙ্কর লাহিড়ী লিখেছিল ‘মুখার্জি কুসুম’। বইগুলো ব্যতিক্রমী এবং খুব আদৃত হয়েছিল। সবাই মনে করলাম মৌলিক কবিতা পেয়ে গেছি এবং তৈরি পাঠকও উপস্থিত। নতুনতর খোঁজ থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
আমি তা মনে করলাম না। ভাবনা চলতে থাকল। কবিতার ক্যাম্প চলেছিল ১৯৮৯ পর্যন্ত রেগুলার। ১৯৮৮তে একবার ক্যাম্পে কমল চক্রবর্তী ‘চেতন-কল্প’ শব্দটি প্রয়োগ করেন চেতনার মধ্যে কল্পনার প্রয়োগ বোঝাতে, যা ঠিক চেতনা নয়, চেতনার কল্পনা। কিন্তু আমি পড়লাম আতান্তরে। ‘চেতনা’ শব্দটা আমাতে জেঁকে বসল। সুররিয়ালদের স্মরণ করলাম। অবচেতনার কবিতা লিখেছেন জীবনানন্দ দাশ যা পরবর্তী কয়েক দশকের কবিদের প্রভাবাচ্ছন্ন রেখেছিল। আমি চেতনা-অবচেতনার পাকে পড়ে কেন্দ্রাভিগ চেতনার বদলে কেন্দ্রাতিগ চেতনা নিয়ে ভাবতে শুরু করলাম। যাই ভাবি না কেন তা অন্তর্মুখী না হয়ে বহির্মুখী হোক। ভাবনা জড়তা কাটিয়ে নিঃসারিত হোক বৃহতে। শব্দ যেভাবে ছড়িয়ে পরে, বাতাস, আলো, বিদ্যুৎ, সেভাবে চিন্তা ছড়িয়ে পড়ুক, চেতনা বিকশিত হোক। আর সেভাবে অক্ষর শব্দ বাক্য বিশ্বাস সিদ্ধান্ত সব ছড়িয়ে পড়ুক, সব সব। এই বিশ্বে অতিচেতনা দিয়ে খুঁজি আমার কবিতা। জল বাতাস আলো বিদ্যুৎ চেতনা হাই পোটেন্সিয়াল থেকে লো পোটেন্সিয়ালের দিকে এগোয়, ছড়িয়ে পড়ে। আমার কবিতা ভাবনাও তেমনি আলো থেকে অন্ধকারের দিকে এগোবে, কোয়ার্কের দিকে, এই বিশ্বসংসারে ৯৯%-ই তো অন্ধকার, আমার চেতনার স্পর্শ সেই সব অন্ধকারকে উজ্জ্বল করুক। এটাই আমার ‘অতিচেতনার কথা’। আমাদের শরীরে আবর্তিত হয় বিদ্যুৎ এবং তাই আমরা বেঁচে থাকি। ইলেক্ট্রিক কারেন্টে করোনা তৈরি হয় যা বলয়াকারে ছড়িয়ে পরে। যখন আমার অতিকেন্দ্রিক চেতনার ভাবনা সেই করোনাকে স্পর্শ করে, ভাবনাটা নিমেষে উজ্জ্বল হয়। এটাকেই বলেছি অন্ধকার থেকে আলোয় যাওয়া। সেই ভাবনা অপার্থিব কবিতার আভাস দেয়। কবিতা গড়ে উঠতে চায়। কালি কলম আর সময়ের প্রশ্রয়ে কবিতা প্রকাশিত হয় যা ভিন্ন ভাষার, নতুন নির্মাণ। এই আমার অতিচেতনার কবিতা। ১৯৮৯ সালে লিখি আমার প্রথম অতিচেতনার কবিতা “সৎকার” যেটি দীর্ঘ এবং ঐ নামের একটা বইও ছিল। ‘অতিচেতনা’ শব্দটা ক্যাজুয়ালি অনেকে ব্যবহার করেছেন, যেমন বিনয় মজুমদারের একটা সাক্ষাতকারেই আছে, কিন্ত কেউ তার বিস্তার বা প্রয়োগ করেননি।
“নতুন কবিতা” --- ১৯৯০ সালে কলকাতার কবি অভী সেনগুপ্তের বিশেষ আগ্রহে এপ্রিল মাসে কৌরবের শেষ কবিতার ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয় এক নদীতিরে। সেখানে তারই উৎসাহে ধীমান চক্রবর্তী ক্যাম্পে যোগ দেয়। আমাদের পাঠ আর আলোচনায় ধীমান বিশেষ আগ্রহ দেখায় ও প্রীত হয়। সেসময় ধীমান চক্রবর্তী তার বন্ধুবান্ধব সহ একযোগে মূলধারা কবিতা থেকে নিষ্ক্রমণের পথ খুঁজছিল। তাদের প্রত্যেকের নিজস্ব পত্রিকা থাকা সত্ত্বেও ‘কবিতা ক্যাম্পাস’ নামে একটা গ্রুপ তৈরি করে পথ খুঁজছিল। আমাদের সাথে তাদের পরিচয় ছিল না, বা তারা কৌরবের কবিতার ক্যাম্পের কথাও জানতোনা। এবার ১৯৯১-এ ১ নং কবিতা ক্যাম্পাস পত্রিকা নিয়ে জানুয়ারি মাসে আমার বাড়ি এসে আর ফিরে যেতে পারেনি সংস্রব ছেড়ে। আমরা আবার শুরু করি কবিতার ওয়ার্কশপ। তাদের নিজস্ব পত্রিকা তুলে দিয়ে কবিতা ক্যাম্পাস চালাতে থাকে আর ওয়ার্কশপের কথা এবং গদ্য, কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে নব্বই দশকে। খুবই নাড়াচাড়া পড়ে যায় তরুণ কবিদের মধ্যে।
আমরা সবাই প্রথমে অতিচেতনার কথাটা বুঝি দিনের পর দিন ওয়ার্কশপে। আট বছর ধরে জামশেদপুরে আমার বাড়িতে, রাসবিহারী, শালকিয়া, খড়গপুর, টিপু সুলতান রোড ... এসব জায়গায় আমাদের বাড়িতেই চলতে থাকল আড্ডা অতিচেতনার ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের সমস্যা নিয়ে। তার জন্য আমাদের ভাষাকেও প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করা দরকার আমরা মেনে নিলাম। আমরা ভাষার উৎস ধ্বনির কাছে গিয়ে বোঝার চেষ্টা করলাম আমাদের মৌলিক কবিতার বাহক ভাষার স্বরূপ কী হবে। অনেক বাদ প্রতিবাদ-এর মধ্য দিয়ে আমরা আবিষ্কার করেছিলাম আমাদের নবচেতনা প্রকাশের জন্য প্রচলিত ভাষাকে লিপ ফরোয়ার্ড করাতে হবে। এভাবে স্বপন রায়, প্রণব পাল, রঞ্জন মৈত্র, ধীমান চক্রবর্তী, অলোক বিশ্বাস ইত্যাদিরা এবং আমি যে কবিতা লিখছিলাম ১৯৯৩ সালে তাকেই বলেছিলাম ‘নতুন কবিতা’। ঐ নামে ২০০১ সালে শুরু হয় নতুন কবিতা নামের পত্রিকা। ভাষাকে প্রত্যেকে নিজের ভাবনা মতো পালটেছে, পরীক্ষা করেছে পাঠকের প্রতিক্রিয়া, গদ্যের মাধ্যমে আগ্রহী করেছে পাঠককে, কিন্তু সবাই লিখেছে নিজের কবিতা। নতুন কবিতার কোন মডেল নেই। ক্রমশ তরুণরাও লিখতে শুরু করল। মূল কথা হল আবহমান বাংলা কবিতার মূলধারার কবিতা বাদে বাকি সব কবিতাই নতুন কবিতা। মূলধারা কবিতার চিহ্ন ও গুণ সম্পূর্ণ বাদ দেয়া হয়েছিল। দেখা গেল কবিতার পৃথক পরিসর তৈরি করে দিলে কবিরা নিজেদের মনোমত কবিতা নির্মাণ করতে পারবে সেখানে। বাংলা কবিতা জগতে মাঝে মাঝেই ব্যতিক্রমী কবিরা এসেছিলেন। তাদের নিয়ে আমরা আলোচনা করে বুঝতে চেয়েছিলাম কেন তারা প্ররোচনায় সফল হননি।

অর্ঘ্য :- 

আপনি বলেছেন__ 'খোঁজ করার দার্শনিক পদ্ধতির বদলে আমাদের ছিল বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি। আপনি বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন। এই আপনাদের বৃত্তের অনেকেই তাই। আর্যনীলকেও কোথাও বলতে শুনেছি__ 'একজন ইঞ্জিনীয়র হিসেবে নতুন উৎপাদনে বিশ্বাস করতে যে স্বপ্ন, সাহস ও সদিচ্ছা লাগে, সেই একই প্রবণতা ও গুণ পরীক্ষা কবিতার কাছে নিয়ে যায়।' আচ্ছা, কবিতা লেখার সঙ্গে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সম্পর্ক কি পুরুষের ভালো প্রমিক হওয়ার সঙ্গে গায়নোকোলজিস্ট হওয়ার সম্পর্কের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূ্ণ?

বারীনদা :- 

জানা জিনিষ বা ব্যক্তিকেও খুঁজতে হয়। অজানা অজ্ঞাত আভাসকেও খুঁজতে হয়। এই খোঁজের বিশেষ পন্থাকে বলে বিজ্ঞান। আপেলটা বা কম্পুটার বিজ্ঞান নয়। দর্শনে আমরা ওই আপেল, কম্পুটার, মানুষের কাজ, ভাবনা, চরিত্র, ব্যবহার, সমাজ সম্পর্ক দেখে বা ভেবে বুঝতে পারি। মানুষের কর্তৃত্বের লোভ, রিপু, ঈশ্বর চেতনার লাভ, সবই দর্শনের আওতায় পড়ে। অকস্মাৎ আভাস থেকে তার উৎস খোঁজাটা বৈজ্ঞানিক। তার জন্য বিজ্ঞাবের ছাত্র হবার প্রয়োজন হয় না। রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দ বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন না। কবিতাকে লেখা যায় না। কবিতা কবির চেতনাতেই থেকে যায়। কারণ শব্দের মানে হয় না। নেই। অভিধানে উঠে আসার আগে তা মানুষ বহুরূপে ভেবেছিল এবং অভিধানে শব্দের সেই বহুরূপ থাকে। সেগুলো অর্থ নয়। তাই শব্দে লিখিত কবিতারও কোন অর্থ হয় না। এই ধরো ‘ভালো প্রেমিক’ কাকে বলে বোঝাতে তুমি একশটা শব্দ বলবে কারণ সেটা বিশেষণ। আর ‘গাইনোকোলজিস্ট’ বোঝাতে হয় না কারণ ওটা একটা সংজ্ঞা, বিশেষ্য। ফলে তুলনা হয় না।
তুমি নিশ্চয়ই অনেককে দেখেছো শিশুদের খেলা ভালবাসতে, গাছপালা, পাহাড় জঙ্গলে, নদী সমুদ্রের দিকে বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে, বারে বারে সেই সব জায়গায় বেড়াতে যেতে, অভুক্ত রাস্তার মানুষের দিকে তাকিয়ে থাকতে, কোন মা তার সন্তানের গমন পথে চেয়ে আছে দেখছে মানুষ, তার ভাল লাগছে। গান শুনছে সে, অশ্রুত নতুন গান বা পুরনো সিনেমার গান গাইছে নিজে গায়ক না হয়েও --- এরা সবাই কবি। তারা চোখে কানে যে আন্দাজটা পাচ্ছে তাই কবিতা। সে লিখতে জানে না। এদের মধ্যে মাত্র কয়েকজন শব্দ সাজিয়ে কবিতা প্রতিমা বানাতে পারে, রবীন্দ্রনাথই কথাটা বলেছিলেন, সেই কাব্যপ্রতিমাতে আমাদের আস্থা নেই। ফলে আমরা কবিতালিপি তৈরি করি। যেমন সঙ্গীতের জন্য স্বরলিপি রচনা করা হয়। কবিতালিপি থেকে পাঠকের মনে কবিতা ট্রিগার করার ব্যবস্থা রাখা হয়। সেই উচ্চারণ থেকে পাঠকের মনে এক অন্য কবিতার বোধ উদ্ভুত হয়। কবিতাটি পাঠকের ভাল লাগে। এই সব যোগাযোগগুলির খোঁজ করা, পাঠকের মনে তার প্রভাব পরীক্ষা নিরীক্ষার খোঁজ করার পন্থাটি বিজ্ঞান। সবাই কবির মতো সবাই পাঠক। কিন্তু কবিদের মতোই পাঠকের শ্রেণীবিভাগ আছে, বিশেষ কবির প্রতি পক্ষপাক্ষিকতা আছে। ফলে কবিদের আর পাঠকদের সাধারণীকরণ সম্ভব না। কিন্তু সব কবিরই আছে কিছু দীক্ষিত পাঠক। কবির মতো পাঠকেরও খোঁজ আছে। আছে হঠাৎ মিলন। আশা করি ‘খোঁজ’-এর নিরসন হয়েছে এতক্ষণে।

অর্ঘ্যঃ- 

আপনি বলেছেন__'সব শিল্পের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিল্প হল কবিতা। সবচেয়ে বেশি আক্রান্তও।এবং এই আক্রমন মূলত অভিমানী পাঠকের, কখনো বা পরাক্রান্ত শাসকের। আপনার কি মনে হয় না এই আক্রমন বরং বেশি এসেছে কবিদের কাছ থেকেই? বাংলা কবিতা নিয়ে গত ছ'সাত দশকে যত পরীক্ষা হয়েছে,অন্তত আমাদের দেশে অন্য কোনো শিল্পের ক্ষেত্রে তা হয় নি, ।

বারীনদা :- 
আমার বলা –“সব শিল্পের মধ্যে শ্রেষ্ঠ শিল্প হল কবিতা” --- বুঝতে হবে এই আলোতে। কবিতা শিল্প নয়। কবিতা একটি শিল্পিত উপস্থাপনা। কবিতা লেখার প্রসেসটার মধ্যে শিল্প থাকে। যেমন মোনালিসা নিজে শিল্প নয়। তা একটা শিল্পকর্ম। কবিতালিপি তৈরি করাটা শ্রেষ্ঠ শিল্পকর্ম। কারণ তার নমুনা বা উদাহরণ নেই। মুর্তি গড়ার মতো শ’য়ে শ’য়ে বানাতে হয় না। একটি কবিতালিপি যে কোন পাঠকের ভাবনায় একটিই কবিতার জন্ম দেয়। বিভিন্ন পাঠকের মধ্যে বিভিন্ন কবিতার উদ্ভব হয়। বিচিত্র, না ? সমস্ত গঠন শিল্পের স্কুল আছে, আছে নির্দিষ্ট পাঠক্রম। কেবল কবিতারই নেই। নীরেন্দ্রনাথ লিখলেন ‘কবিতার ক্লাস’। তাঁকে নিয়ে ‘কবিতা পাক্ষিক’এর প্রভাত চৌধুরি নিজের গ্রামের লাইব্রেরিতে স্কুল চালানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন। আসলে সেই স্কুল হচ্ছে খোঁজের ক্রমান্বয়, যেটা বিজ্ঞান। তা কোন স্কুলে শেখানো হয় না। মূলধারা কবিতা অনুসরণ না করে আমি ও আমরা নতুন একটা পরিসর তৈরি করেছি কবিতার যেখানের উৎপাদন অর্থাৎ কবিতাকে অপরিচিত মনে হবে। ভাষাকে অচেনা মনে হবে। তরুণরা নতুন রোমাঞ্চে, উৎসাহে নতুন কবিতা লেখা শুরু করলে “গেল গেল” রব উঠেছিল। মূলধারায় প্রতিষ্ঠিত কবিরা, অদীক্ষিত কবিরা আমাদের আক্রমণ করেছিল বইকি শব্দ দিয়ে। সে সব মিডিয়া পত্রিকায় প্রকাশিতও হয়েছিল। নতুন যুগকে মিসলিড করার জন্য তারা ভাবেন এবং আমি বলি --- আমি কবিতার ভিলেন। কবিতার ধারণাটাই আমার কাছে ভিন্ন।

 অর্ঘ্যঃ- 

 আপনি কবিতা সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বলেছেন-- 'কবিতা কবির চেতনাতেই থেকে যায়' বা 'সেই ভাবনা অপার্থিব কবিতার আভাস দেয়'৷ এই অপার্থিব কবিতা আপনার বলা কবিতালিপির মাধ্যমে কীভাবে পাঠকদের মধ্যে সঞ্চারিত হবে? গানের স্বরলিপি গায়কদের জন্য, তা শ্রোতাদের কোনো কাজে লাগে না, তারা স্বরলিপি থেকে সুর উদ্ধার করতে পারে না। । নতুন কবিতার পাঠকদের কাছ থেকে আপনি কী আশা করেন? তারা কবিতালিপির সংকেত উদ্ধার করে ঐ অপার্থিব কবিতাটিকে ছুঁতে পারবে? স্বরলিপির সংকেততো নির্দিষ্ট সুর চিহ্নিত করে, কবিতালিপি-র সঙ্গে তার তুলনা চলে?

বারীনদা :- 
স্বরলিপি থেকে গায়ক বা বাজিয়েরা সুর ও ব্যঞ্জনা টের পায়। সাধারণ শ্রোতারা নয়। বাকিরা শোনে শুধু। অসাধারণ শ্রোতারা বা অন্য গায়করা মুর্ছনা ধরতে পারলে তাদের শরীর জাগে। সাধারণ শ্রোতাদের তা হয়না। যারা পারে তারা শিল্পী। তেমনি কবিতালিপি থেকে দীক্ষিত পাঠক তার নিজস্ব কবিতার আভাস পায়, মনে মনে সেটা গড়ে উঠতে থাকে ভিন্ন শব্দে ভিন্ন পরিবেশে ভিন্ন ভাষায়, সন্তুষ্ট সে একটি ভিন্ন কবিতালিপি রচনা করে। নতুন ভাবে প্রকাশিত হয়। এটাই কবিতার প্ররোচনা নতুন কবিতার কবির প্রতি। কবি গ্রহণও করে পুলকিত হয়, লেখে নতুন কবিতা। স্বরলিপির স্বর কোন নির্দিষ্ট সুর নয়, তা সুরের প্রস্তাবনা করে এবং গ্রহীতাকে নিজের মতো করে বিস্তার করার সুযোগ দেয়। কবিতাও তাই। আমি আগেই বলেছি কবিতা নানা রকমের হয়, পাঠকও নানা বর্গের হয়। তুমি জেনারালাইজেশন করছো। আমি মূলধারা কবিতার বাইরের কথা বলছি। কবিরও যেমন সেই খোঁজ আছে, পাঠকেরও আছে। কবি ও পাঠকের মিল হয়ে যায় সেখানে।
কবিতা সর্বদাই অপার্থিব। ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সাধারণত কথা, গল্প, রূপক, প্রতীক, উপমা, উপদেশ, দর্শন, বিপ্লব, রাজনীতি, সংসার, বাজার নিয়ে ব্যাখ্যা বা সারাংশ-সম্ভব কবিতা যা তুমি অহরহ চারপাশে লিখিত পঠিত উচ্চারিত হতে দেখো, সেসব সাধারণের বিশ্বাসের কবিতা। অথচ তার মধ্যে আমার কবিতা নেই। কবিতা আছে কবির অনুভবে এবং সেখানেই থেকে যায়, এমনকি লিখিত হবার পরেও।

অর্ঘ্যঃ- 
'..সেই কবিতালিপি থেকে আপনি আপনারই একটা কবিতা পেলেন'... তার মানে আপনার কবিতালিপি পাঠকটিকে তার নিজের কবিতা পেতে সাহায্য করলো। ব্যাস? পাঠকতো তার নিজের কবিতা পেতে পারে একটি পাহাড় দেখে, সমুদ্র দেখে বা একটি নীরস গদ্য পড়েও, তাহলে নতুনকবিতা নতুন কী করলো? পাঠকের কবিতা পাওয়ার পথটি না হয় নতুন হল, কিন্তু সে যা পেলো তাও কি নতুন কিছু?
আজকের কিছু তরুন কবিকে, যারা হয়তো নতুন কবিতা লিখছে না, আবার মূলধারার মতোও লেখে না, আমি তাদের প্রিয় এমন পাঁচজন কবির নাম জানাতে বলেছিলাম যাদের কবিতা ওরা এখনো অবসর পেলেই পড়তে ভালোবাসেন। সেই সাতজনের একজন শুধু অর্জুন বন্দোপাধ্যায়ের নাম করেছিলেন, একজন মলয় রায়চৌধুরীর।বাদবাকি সেই জীবনানন্দ, শক্তি, ভাস্কর চক্রবর্তী, উৎপল কুমার বোস, মনীন্দ্র গুপ্ত....এঁরাই কমন ছিলেন প্রায় প্রত্যেকের তালিকায়। আরো বেশি করে নতুন কবিদের নাম আসছে না কেন?

বারীনদা :- 

আমি তো আগেই বলেছি কারা কবি। কারা পাঠক তা বলিনি কিন্তু। সেই কবিদের মধ্যেই কেউ কেউ পাঠক। এ ছাড়া পাঠকের অস্তিত্ব নেই। কবিদের মধ্যে কেউ কেউ লিখতে পারে কারণ সে জানে কবিতা লেখার শিল্প। সবাই জানে না। নতুন কবিতায় আমরা বলি সব কবিতাই অপার্থিব। তা বোধ করা যায়। কখনো দেখে, কখনো পড়ে বা শুনে। সব কবির ভাবনায় থাকে সেই অপার্থিব কবিতার আভাস। জনতার মধ্যে যারা পাঠক তারা আমার মতো ভাবে না। তুমি যাদের ওপর সমীক্ষা করেছো তারা কেউ নতুন কবিতার অস্তিত্ব জানে না বা স্বীকার করে না। তারা বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয় মিডিয়া আশ্রিত প্রচারিত কবিদের নামই জানবে, যাদের নিয়ে প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করে থাকে। এ তো স্বাভাবিক। ব্যতিক্রমী লেখককে প্রতিষ্ঠান পছন্দ করে না। আমরাও প্রতিষ্ঠানকে পছন্দ করিনা। মলয় রায়চৌধুরিকে পুলিশ ধরে কেস করেছিল জানো তো ? কেন, জানো ? অর্জুন ছোটবেলা থেকেই আমার প্রিয় লেখক, সে ব্যতিক্রমী বলেই।

অর্ঘ্যঃ-

 'ক্লাস টু-এর ছেলে অংক লিখে ডাঃ রজার পেনরোজকে বলে, মশাই সহজ করে বলুন, নাহলে আপনি অংক জানেন না।'__ আপনিই বলেছেন পঠকদের করা দুর্বোধ্যতার অভিযোগ প্রসঙ্গে। ঠিক কথা। পাঠককেও শিক্ষিত হতে হবে। কিন্তু একজন উঁচু ক্লাসের মেধাবী ছাত্র যথেষ্ট কঠিন অংকও চেষ্টা করলে সমাধান করতে পারে, কিন্তু অনেক রসিক ও মেধাবী পাঠক, যারা নিয়মিত কবিতা পড়েন, আপনাদের নতুন কবিতা অনুভবই করতে পারছেন না বা আপনাদের কবিতালিপি তাদের মধ্যে কোনো বোধ ট্রিগার করতে পারছে না। এটা কেন হচ্ছে?

বারীনদা :-
 কবিতালিপিটি নয়, সেটির মধে কবির অনুভবটি বিস্তৃত থাকে। যে পাঠকের অতিচেতনা আছে সে তার করোনা বলয়ে সেই অনুভবের স্পর্শ পায়, একে ট্রিগার বলে, এখন পাঠকের মনে তার নিজস্ব কবিতাটি জারিত হয়। যে কবিতা তাকে এই জারণে সহায়তা করেছে সেই কবিতা এবং সেই কবিকে স্মরণে রাখে। কবি অতি সতর্ক ভাবে তার ভাষার মধ্যে নিজস্ব কবিতার অনুভবটি প্রোথিত করে। ব্যাপারটা হঠাৎই হয়না। যে এসব পারে না তাদের নিয়ে আমার কোন মাথা ব্যথা নেই। রবীন্দ্রনাথের কটি কবিতার অন্তরে পাঠক প্রবেশ করে তাঁর অনুভবটি উদ্ধ্বার করেছে, আমার সন্দেহ আছে।

অর্ঘ্যঃ- 
 কবিতা থেকে তার সব প্রচলিত গুণ বাদ দেওয়ার কথা বলছেন, তাহলে নতুন ভাষায় লেখা কবিতালিপিটি যে শুধুমাত্র স্বরলিপির মতো একটি সংকেত মাত্র নয়, তা কী করে পাঠক বুঝবে? মানে, নতুনকবিতা কে কবিতা বা শিল্প বলে কী ভাবে চিনতে পারবো?

বারীনদা:-
কবিতার পরিসর পাবার জন্য জীবনানন্দ-আচ্ছন্নতা কাটিয়ে ওঠার প্রয়োজন ছিল। প্রতিষ্ঠান যাকে মূলধারা কবিতা বলে, তার গুণাবলী মুছে, অর্থাৎ শ্লেটটি নতুন মুছে শুরু করতে হয়েছিল আমাদের। সমস্ত লিখিত আছে গদ্যে। তোমাকে পড়তে হবে। আমার ২০ বছরের সাধনা এরকম দুটো কথাতে সম্পূর্ণ হবেনা অর্ঘ্য।

অর্ঘ্যঃ- 

 যদিও প্রশ্নটা ক্লিশে তবুও জানতে চাইব__ কাঠামো না আধেয়? আপনার পক্ষপাতিত্ব কি কাঠামোরই দিকে?

বারীনদা :- 
কাঠামো, আধেয় দুইই অবান্তর নতুন কবিতার কাছে। ভাবনা আর অনুভূতিই আসল।

অর্ঘ্যঃ-
 আপনি তো গল্পও লেখেন, এবং আমার নিজের আপনার অনেক গল্প বেশ ভালোও লেগেছে। দুর্বোধ্য নয় অথচ ভাষা ও শৈলীতে নতুন স্বাদ। আপনার প্রবন্ধতো অবশ্যপাঠ্য বলেই মনে করি। আপনি নিজে কী লিখতে ভালোবাসেন? ভবিষ্যতের পাঠক আপনাকে মনে রাখবে আপনার কবিতা না গদ্যের জন্য, আপনার নিজের কী মনে হয়?

বারীনদা :- 
লেখার সময় আমি পাঠকের কথা মনে রাখিনা। আরো প্রচারিত হবার জন্য প্রতিষ্ঠানের মুখাপেক্ষী হই না। আমার কোন আত্মপ্রচার নেই। আমি কবিতা লিখতে ভালবাসি। প্রবন্ধ প্রয়োজনে লিখি নতুন কবিতার বক্তব্যকে তুলে ধরতে। তা কেবল লিটল ম্যাগাজিনের মধ্যেই সীমিত। আগে গল্প লিখতাম। এখন কমে গেছে। পাঠক আমাকে আদৌ মনে রাখবে কিনা তা নিয়ে আমি ভাবিত নই। মনের আনন্দে লিখি।


অর্ঘ্যঃ- 
 এইযে আপনার নাম বললেই, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের মতো অতটা না হলেও, অনক গালগপ্পো উঠে আসে। আপনার কবিতার চেয়ে আপনার দলবেঁধে আড্ডা, হুল্লোড়, মদ্যপান এসব নিয়ে বেশি আলোচনা হয়, এটা কি আপনি জানেন? তরুণ কবিদের কি এটাও আপনার প্রতি আকর্ষণের একটা কারণ?

বারীনদা :-
 ছোটবেলা থেকেই আমরা গ্রামে গঞ্জে বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়াতাম কবিসঙ্গ করতে। বছরের পর বছর, আজও তারা আমাদের ভালবাসে, আড্ডা মারতে চায়, কবিতার আড্ডা। ছোটবেলায় দেখেছি সিনিয়ার কবিরা আমাদেরকে, আমাদের লেখালিখি এবং বইকে আমল দিতেননা। আমাদের স্বপ্ন এবং কষ্টকে গ্রাহ্য করতেন না। আমি বয়সকালে একেবারে উল্টো পথে চলি। শহর গ্রাম গঞ্জ যেখান থেকেই হোক তরুণ কবি আমাকে পত্রিকা বই দিলে আমি সবাইকে উত্তর দিতাম, আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া জানাতাম। তাই তরুণরা আমাকে বন্ধু ভাবে। আমার সাথে আড্ডা মারা পছন্দ করে, আপন মনে করে। আমি এর মধ্যে খারাপ কিছু দেখিনা। শক্তিদা মদ্যপান, গান আর কেচ্ছা, মাতলামি করতেন। আমার সে স্বভাব নেই। শক্তিদা স্বনামধন্য মানুষ। আমি কোন ছার।

অর্ঘ্যঃ- 
এই যে কবিতার একটি নতুন পরিসর তৈরি করার জন্য আপনার দী্র্ঘ সময়ের প্রচেষ্টা, কতটা সফল হয়েছেন বলে আপনি মনে করেন?

বারীনদা :-
 নতুন কবিতার উন্মেষ স্থায়ী হয়েছে। নব্বই দশক থেকে অনেক তরুণ ক্রমশ আগ্রহী হয়ে নতুন কবিতা লেখার চেষ্টা করেছে। প্রথম ও দ্বিতীয় দশকে সংখ্যাটি আরো বেড়েছে। মূলধারা কবিতার বাইরে যে কোন কবিতাই নতুন কবিতা। ক্রমশ তারা প্রতিষ্ঠান ও মিডিয়া থেকে দূরে চলে গেছে। তাই বলে প্রতিষ্ঠানও চুপ করে বসে নেই। অজস্র বেনোজল ঢুকে যাচ্ছে সেখানে। আমি ঠিক জানি না। গত ৩০ বছর হল আমি সন্ধান রাখিনা প্রতিষ্ঠানের।

অর্ঘ্যঃ- 
 মূলধারার কারো কোনো কবিতাই কি আপনার ভালো লাগে না?

বারীনদা :-
 মূলধারার কারো কবিতাই আমার আর ভাল লাগে না। জীবনানন্দ দাশের পরে কিছুটা শক্তি চট্টোপাধ্যায়, বিনয় মজুমদার ও উৎপলকুমার বসুর প্রথম দিকের ... ব্যাস।

অর্ঘ্যঃ- 
আপনার নতুন লেখালিখি, বা প্রকাশ হতে চলেছে এমন বই সম্বন্ধে কিছু জানান।

বারীনদা :- 
রোজের লেখালিখি বাদ দিয়ে বলি --- ২০১৬ জানুয়ারিতে আমার তিনটে বই প্রকাশিত হয়েছে --- ‘হারাতে হারাতে একা’ (অ্যাশট্রে প্রকাশনী), ‘আমার সময়ের কবিতা-২ (নতুন কবিতা প্রকাশনী), ‘প্রণয়ধ্বনির সফ্‌ট্‌ওয়্যার’ (এখন – বাংলা কবিতার কাগজ প্রকাশনী)। এবছর আমার একটি ‘নির্বাচিত গল্পসমগ্র’ আর ‘অন্য প্রবন্ধ’ বইদুটি প্রকাশের জন্য তৈরি হচ্ছে। এসব বই নিয়ে আমার কিছু বলা শোভা পায়না কারণ আমি আত্মপ্রচার বিমুখ মানুষ।
এত সব কচকচির মধ্যে কোথাও কবিতা তো নেই অর্ঘ্য। মায়াজম্‌-এর পাঠকদের কোন উপকারে লাগলে আমি ধন্য হবো। সোনালী এবং তুমি আমার ভালোবাসা নিও। এই বৈশাখে এই আলোচনায় আমি আনন্দ পেলাম।
                                                                                                                  বারীনদা।

২টি মন্তব্য:

Featured post

সোনালী মিত্র