অগ্নি বসু - মায়াজম

Breaking

৬ মে, ২০১৬

অগ্নি বসু

                         অবগাহন








নীলদিঘিতে অবগাহন সেরে নিয়ে ঘাটের দিকে পা বাড়লেন তিনি ।
 দেখতে পেলেন, ছায়ামাখা অশথগাছের নিচে
 মুখটি নিচু করে বসে আছে কে যেন । চৌদিক আলো করা রূপ ।
এগিয়ে গেলেন তিনি। নরম হাতটি তার পিঠে রেখে বললেন,
‘কে গো মা, তুমি?’
 ‘আমি কীর্তি । কীর্তিময়ী । এখানের জমিদার বাড়ির ছোটবউ।’
 ‘এত রাতে তুমি এখানে, মা?’
 ‘আমি যে এ সময়েই নাইতে আসি রোজই।
 সইয়েরা অপেক্ষা করছে ওই দূরে।’
 ‘এত রাতে নাইতে হয়? ঠান্ডা লেগে যাবে গো।
 শরীর খারাপ হবে যে !’
 ‘আমার হয় না। অন্য লোক থাকলে আমি নাইতে আসি না।
 এ দিঘি যদিও জমিদার বাড়িরই ।
 আমি নাইতে নামলেই কালো হয়ে যায় এ দিঘির জল।
 আমার চোখের কাজল ধুয়ে ধুয়ে।
 যদি আমার পাপ লেগে যায় অন্যের গায়ে!
তাই সবার শেষে আসি আমি ।
 অন্যের চোখের আড়ালে।’
 ‘কোনো পাপ করোনি তো তুমি।’
 ‘করেছি মা । তুমি তো জানো সব।
 ভারি খিদে আমার এ দু চোখে।
 তাই এত গাঢ় করে কাজল পরেছি আমি।
 হিরে জহরে মুড়ে ফেলেছি আমার চৌদিক।
 ঝনঝন করে বুকের ভেতর বাজে সে সব।
 সবসময় ।
 এতোটুকু খালি নেই কোথাও, আমার শান্তিটুকু থাকবে যেখানে ।
 তুমি আমার সব নিয়ে নাও মা।
 আমাকে শূন্য হতে দাও ।’
 ‘হরি হরি বলে আজ আমি যে অবগাহন সেরে নিয়েছি, মা।
 আর যে কিছু চাইতে নেই আমার কাছে আজ ।
 এতক্ষণ তো সবাইকে সব দিয়েছি, যে যা চায়।’
 ‘আমি যে কিছুই চাইছি নে মা। আমাকে না-চাইতে শেখাও ।’


 ‘তথাস্তু’ বললেন কমলা।
 ঘাটের পৈঠেয় পায়ের আলপনা ছাপ ফেলে চলে গেলেন দিগন্তের দিকে।
 জোছনা-আলো চিকচিক করছে কীর্তিময়ীর দুচোখে।
 কোজাগরী পূর্ণিমা আজ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র