রঞ্জন ঘোষাল - মায়াজম

Breaking

৬ মে, ২০১৬

রঞ্জন ঘোষাল

                         আখ্খুটে








কারুর কারুর থাকে আখ্‌খুটে স্বভাব। এটা খুঁটছে, ওটা ভেঙে ফেলছে, দফা রফা করে দিচ্ছে হাতের কাছে যা পাচ্ছে সেটাকে। আমাদের অঙ্ক করাতে আসতেন যে মাস্টারমশাই তাঁর এ রকম বদ্‌ রোগ ছিল। মেজদাদু নস্যির ডিবেটা বারান্দায় ইজি চেয়ারের পাশে রেখে একটু ভেতর বাড়িতে গেছেন। মাস্টার মশাই আমাদের দু’ভাইকে অঙ্ক কষাচ্ছেন, আর দাদুর নস্যির ডিবেটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। করতে করতেই চোখ পড়ে গেল তক্তপোষের ওপরে রাখা তবলা, তবলার হাতুড়ি আর পাউডারের কৌটোর দিকে। উনি প্রথমে হাতুড়িটা তুলে নিলেন, মুখে বলছেন এ কিউব প্লাস বি কিউব প্লাস থ্রি এ স্কোয়ার বি প্লাস থ্রি এবি স্কোয়্যার এটা কীসের ফর্মুলা? সেজদা উত্তরটা বলতে না পারায় উনি হাতুড়িটা নস্যির ডিবের ওপরে প্লেস করে দড়াম দড়াম করে মারতে লাগলেন, আর মুখে বলতে লাগলেন, কিলিয়ে কাঁঠাল পাকানো কাকে বলে এইবারে দেখিয়ে দিচ্ছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই নস্যির ডিবের দফা রফা। আর উনি তখন পাউডারের কৌটোর ওপরে হাতের সুখ করে নিতে শুরু করলেন। অনেকটা পাউডার ভ্যাৎ করে বেরিয়ে এলো। উনি সেগুলো নস্যির ডিবেয় ভরতে ভরতে বললেন, তোদের মাথায় কী রে, খালি গোরব পোরা?
মেজদাদু এসে তাঁর নস্যির ডিবের এই হাল দেখে আর সামলাতে পারলেন না, বললেন, মাস্টার, এটা কী হচ্ছে?
মাস্টার অতীন শীল বললেন, কেন মেজোবাবু, বেয়াড়া ছেলেদের অঙ্ক শেখাতে গেলে চড়টা চাপড়টামারতেই হয়, এ নিয়ে অনুযোগ করলে তো আমি নাচার, এই বলে হাতুড়িটা দিয়ে পাউডারের কৌটোটিকে পিটিয়ে উনি ক্রমশ একটা চ্যাপ্টা চাক্‌তি বানিয়ে ফেলছেন। দাদুকে বলছেন, দুটোরই মাথা মোটা। এদের কিছ হবে না,। এদের ধর্‌ তক্তা মার পেরেক করে, বুঝলেন কিনা, তারপরেতে গুনছুঁচ দিয়ে সেলাই করে বেড়াল পার করার মত করে নদীর ওপারে ফেলে আসতে হবে - এই বলে মাস্টারমশাই উঠে পড়লেন। মেজদাদু বললেন কোথায় যাও অতীন মাস্টার?
উনি বললেন, একটা গুনছুঁচ পেলে এখনই এ দুটোকে বস্তায় পুরে - বলে পাউডারের কৌটো আর নস্যির ডিবের ভগ্নাবশেষ দুটো পকেট থেকে বার করে দেখালেন।
 মেজদাদু আজকাল আর স্তম্ভিত হন না। অতীন মাস্টার এ বাড়িতে দু জেনারেশনকে পড়াচ্ছেন, বাবা কাকারা অঙ্কে বরাবর ভালোও করে এসেছেন, ফলে অতীনমাস্টারকে কেউ কিছু বলে না।
 মাস্টার মশাই বেরিয়ে গিয়েও ফিরে এলেন। লজ্জিত কন্ঠে বললেন, দেখুন কাণ্ড মেজোবাবু, ভুল করে ব্ল্যাকবোর্ডটা পকেটে করে নিয়ে যাচ্ছিলুম। এই রইল ব্ল্যাকবোর্ড, বলে তবলার হাতুড়িখানা পকেট থেকে বার করে ময়নার খাঁচায় ঢুকিয়ে দিয়ে হন্‌হন্‌ করে বেরিয়ে গেলেন।
 আবার পরদিন সকালবেলা এসে মেজদাদুকে বলছেন, কালকের কাজটা মোটেই ভালো হয় নি। পার করে দিয়ে এলেই হ’ল? দুটো এঁড়েবাছুর বই ত নয় ! বাঘে যদি খায়? নজর রাখব বলে আমিও বসে রইলুম নদীর ওপারের সেই আঘাটায়।
 মাস্টারের মেয়ে এসে হাজির। বলছে, বাবা তুমি আমাদের ছাগলছানা দুটোকে নিয়ে সারারাত কোথায় গিয়েছিলে? আমরা ভেবে সারা।

 মাস্টারমশাই রাগতভাবে পকেট থেকে নস্যির ডিবে আর পাউডারের টিন বা তাদের ধ্বংসস্তুপদুটো বার করে বললেন এগুলোকে তোর ছাগলছানা বলে মনে হচ্ছে? বুদ্ধির ঢেঁকি একটি ! এরা তো ঘোষাল মশয়ের দুই নাতি – চন্দন আর রঞ্জন! বলি দু চোখের মাথা খেয়ে বসে আছিস নাকি রে সব

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র