শাঁওলি দে
জুলাই ২৯, ২০১৬
1
গায়ে -হলুদ
দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠা চিতার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে নিজেকে ভীষণ হালকা মনে হল প্রিয়মের।একটু আগেও তো বুকের ভেতর একটা অদ্ভুত চোরা কষ্ট অস্থির করে তুলেছিল ওকে।অথচ এখন তার অস্তিত্বও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।মনের অতলে ডুব দিল প্রিয়ম।কোথাও কোনো যন্ত্রণার লেশমাত্র নেই বরঞ্চ অনেক ভারমুক্ত লাগছে এখন নিজেকে।এ ক'বছরের অনেক দৌড়ঝাঁপ,অনেক ভাঙচুরের পর আজ একটু বিশ্রাম চাইছে শরীর ও মন।শশ্মানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বন্ধুবান্ধব-আত্মীয় পরিজনের নজর এড়িয়ে একটা সিগারেট ধরালো প্রিয়ম।সামনেই একটা পাকুড় গাছ ডালপালা ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে নির্বিকার।এখন শীতকাল;গাছের পাতাগুলো ঝরে পড়ে আছে নীচে।
হলদেটে পাতাগুলোর দিকে চোখ যেতেই মূহুর্ত আগে বিস্মৃতির অন্তরালে হারিয়ে যাওয়া নিশার কথা আবার মনের মধ্যে জাঁকিয়ে বসল।হলুদ রঙ ওর বড্ড প্রিয় ছিল।বিয়ের পর পর হলুদ রঙা শার্টের জন্য কম পিড়াপিড়ি তো করেনি!অজান্তেই নিজের শরীরে লেগে থাকা বাসি পাঞ্জাবির দিকে নজর গেল প্রিয়মের।আরে নিশাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তাড়াহুড়োতে আলমারি থেকে হলুদ পাঞ্জাবিটাই টেনে বের করেছিল ও!নিশাই হাতে করে কোনো এক মল থেকে কিনে এনেছিল ওর জন্য;কথা দিয়েছিল ওকে একদিন ঠিক রাঙিয়ে নেবে নিজেকে নিশার প্রিয় রঙে।কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।হঠাৎ নিশার অসুস্থতা সব রঙ উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল নিমেষে।তারপর কিভাবে এই দু বছর কেটে গেল সে কথা ভাবলে অবাকই হয় প্রিয়ম।এলোমেলো চিন্তায় অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে।এতক্ষণে নিশার দেহটা প্রায় অনেকটা পুড়ে গেছে।হাতে রাখা প্রায় নিভে যাওয়া সিগারেটটা পায়ে মাড়িয়ে দিল প্রিয়ম।এই শীতেও ওর কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।পকেটে হাত দিল প্রিয়ম।বা পকেটে হাত দিতেই পার্সটা হাতে ঠেকল ওর।তাহলে ঠিক ডান পকেটেই রুমালটা আছে।অন্যমনস্ক ভাবে ডান পকেটে হাত দিতেই রুমালের বদলে একটা কাগজ পেল প্রিয়ম।ওহ্ কাল তো রুমালটা আনেই নি ও।কিন্তু এটা কিসের কাগজ?হাসপাতালের কিছু?হবে হয়তো বা?নিস্পৃহ ভাবে কাগজটা ফেলে দেবার মূহুর্তেই কাগজটার দিকে ভালো ভাবে তাকাল প্রিয়ম।বেশ সুন্দর করে ভাঁজ করা একটা কাগজ. . .ভাঁজ খুলতেই একটা বহু পরিচিত মেয়েলি হাতের লেখা চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে উঠল।"প্রিয়ম,আমি থাকতে তোর গায়ে এই জামা উঠবে না।তবে আমার মৃত্যুর পর একদিন হলেও এটা তোর স্পর্শ পাবে আমি জানি।এও জানি তুই ভালো থাকবি।কাটিয়ে উঠবি এত এত বছরের তীব্র ঘোর।হলুদ রঙ তোর বড় অপছন্দের নারে?আর কোনদিন কেউ তোকে জোড় করবে না।শুধু একটা অনুরোধ এবার যেন তোর গায়ে হলুদটা হয়। আমাদের বেলায় নিয়মটা অধরাই থেকে গিয়েছিল . . ."আর কিছু পড়তে পারল না প্রিয়ম।কাগজটাকে বুকে জড়িয়ে এই প্রথম হু হু করে কেঁদে উঠল ও।নিশা চলে যাবার পর এই প্রথমবার।
Tags
বাহ্ শাঁওলি। ভালো লাগল।
উত্তরমুছুন