কৃতি ঘোষ - মায়াজম

Breaking

২৯ জুল, ২০১৬

কৃতি ঘোষ




                       স্নানঘর আর মেনির কাব্য



















জানু দেখতে দেখতে চাঁদ হয়ে গ্যালো তোমার স্থিতিসহ অভিযোজন। আমার যোনিদ্বার বরাবর খাঁজে খাঁজে বিঁধে যায় লালামুখ- ঘাম- শীত- শীতকাল। উঠে পড়ে পড়ে নেমে নেমে, নামতে নামতে নিঃশ্বাসের ধার বেয়ে আমি কোনদিনই দেখতে পারিনি দরজার ফাঁক দিয়ে কে রোজ প্রিয়সুখ মিটিয়ে ন্যায়, কে রোজ স্নানঘর থেকে সরিয়ে ফ্যালে আমার ব্রা-প্যান্টি-সায়ার দড়ি-চুলের গার্ডার। তোমার প্রতিদিনের প্রতিদিনের অভ্যেসে এত জল- এত নোনতা জল- এতকালের নোনতা জল, বহুদিন বহুদিন মিঠে পানিতে ময়লা ধুইনি। নোনতা জলে অনেক ক্ষার, নোনতা জলে ধুতে অনেক বেশি সাবান লাগে।
তোমার দ্রবণ থিতিয়ে গেলে, আমি স্নানঘরের চোর ধরতে যাব।
তুমি ভয় পাও বলো? আঁচলের খুট জড়িয়ে রাখো আঙুলের সাথে, চৌকাঠ পেরোতে গেলে চুল ছিঁড়ে নাও, হাঁচড়ে পাঁচড়ে জাহির করো ভালবাসা। ভালবাসায় বড্ড আলসেমি, ভালবাসা বড্ড কঠিন, আমার তরল আবেগ চাই। তরল আবেগ, আমার নাভিকূপে ভরে রাখলেও বাষ্প হয়ে উড়ে যাবেনা। তরল আবেগ, স্তনবৃন্তের কুঁচকানো চামড়ায়-গ্রন্থিতে আশ্রয় দিলেও সন্তান পরবর্তী সে মুছবেনা। তরল আবেগে কোনও প্রসব বেদনা থাকেনা, তুমি জানো? তরল আবেগে রাত কাবার হলে- সকালে পেচ্ছাপ করতে একটুও ব্যথা লাগেনা।
কেউ কি আমার মুখের বাঁধন খুলে ফেলেছে? কবে? আমার দাঁতের ফাঁকে কে মশাল গুঁজে দিল? কেউ কি তবে চড় মেরে বলল, পালাও- এখানে পিছন ফিরে দেখতে কেউ বাধা দেবেনা। পিছন ফিরে দেখতে কেউ বাধা দেবেনা। পিছন ফিরে দেখতে বড় মায়া লাগে। বড় সুখ । বড় পিছনের টান, তারপরেই আলগা ভাবে বলে, এত ভেবোনা – ডিম্বকোশে জং ধরে যাবে।
তুমি ঘুমাও ক্যান? আমার লিগা জিগাও না পাশের ঘরের কাকিরে-
প্রতিবাদী কম হওয়া হল, সাহসীর গায়ে কাপড় থাকা উচিত নয়। ইনাম মানে প্রশংসা নয়- আত্মস্তুতি। ক্ষমতা এবং জ্ঞানের গর্জন থাকেনা। ভয় আর বিনম্রতা এক নয়।
-এগুলো শুনতে শুনতে ঠোঁট ভারী হয়ে এল। এখন ওয়াক্সিং না করে হাঁটুর উপরে ফ্রক অবধি পড়তে পারিনা। বিনা প্রেমে কেউ চুমু খেলে মাঝরাতে অবসাদে ভুগি। আকাঙ্ক্ষিত পুরুষের সামনে সরু চোখে তাকাই, হতাশার ভান করি। পাহাড়ের ধারে গেলে আত্মহত্যার পরিকল্পনায় নিজের জন্য করুণা হয়, নিজের শিশুকালের জন্য আনন্দ।
কাঠের মিস্ত্রীটা রোজ কিছু না কিছু ফেলে যাচ্ছে, কোনদিন পেরেক, কখনও হাতুড়ি, ফিতে, বাটামের অতিরিক্ত অংশ, কাঠের গুঁড়ো, কাঠের খোসা, সানমাইকার টুকরো, হেল্পার। কাঠের মিস্ত্রী রাতে রোজ খায়, ভাত, দানাশস্য, সবজি, নিজের স্ত্রীয়ের ফোন। আমার বইয়ের তাক বানাচ্ছে লোকটা, সাথে একটা লকার। গতকাল শুনলাম আবৃত আমার জন্য কিছু একটা কিনেছে, মানে কোন জিনিস, ধরার মত, অবিমূর্ত। আমি ওই লকারে রাখব।
আবৃত, আমার পুরনো স্থাবর, একসাথে ঘুমনোটা বেশ উপভোগ করতাম, ও রাস্তায় হাঁটার সময় মাটির দিকে তাকিয়ে চলত। আমি রাস্তা পেরোতে ভয় পাই, ও রাস্তা পেরিয়ে ঘুরে তাকাতো পিছনে- আমি জানতাম ও খেয়াল রাখে। বাসে উঠলে ও টিকিটগুলো মুড়িয়ে মুড়িয়ে রাখত, আমি তুলে নিতাম। পকেটে পুরে নিতাম, জয়েন্ট রোল করতে এগুলোর খুব দরকার হয়। আমরা একসাথে ছবি তুলেছি অনেক। আমি আবৃত’র ছবি তুলেছি অনেক। আমি আবৃত’র লেন্সের আশেপাশেই থাকতাম। ঘূর্ণি দেখলেই আমার ভয় করে, আমি লেন্সের আশেপাশেই থাকতাম, ঘূর্ণি আর শাটারে বিশেষ পার্থক্য নেই।
-স্নানঘরের চোর কে? ধরতে পারলি শেষ পর্যন্ত?
-আমার ব্রা-প্যান্টিগুলো পাওয়া গ্যাছে
-আরে কে?
-ধৈর্য আছে?
-আরে বাল বলবি?
-আমাকে একদিন ইটভাটায় নিয়ে যাবি বর্ষাকালে?
-কি?
-অথবা গির্জায়?
-যাব, যেতেই তো পারি।
-আমরা ওখানে গিয়ে শোব, বিছানার চাদর পেতে, সেই সাদাটা- আগের মাসে...
-কি? শোব মানে?
-বহুদিনের ইচ্ছা! তারপর লোকজন জানতে পারলেই পালাবো, বিছানার চাদর জড়িয়ে পালাবো, উলঙ্গ আর বিছানার চাদর জড়িয়ে পালাবো।
-এটা ফ্যান্টাসি?
-এটা রোম্যান্টিসিজম।

পাহাড় এত প্রিয়। সরু সরু পাতাওয়ালা গাছগুলো। উউউফ, কি বেশ য্যানো নাম। খুব প্রিয়। সুড়সুড়ি দ্যায় গায়ে। ক্যামন হিলহিল করে। মানবিক শোক বুঝিনা, তবে খাদ বেয়ে দাঁড়ালে এত কান্না পায়, সোফার ধার ঘেঁষে বসলে এত কান্না পায়, পাহাড়ের রাতে এত নেশা লাগে। য্যানো এক দৃষ্টে তাকিয়ে আছি তার দিকে, য্যানো তার চোখ কখনও দেখিনি, য্যানো তার চোখ মানুষের নয়, য্যানো মণির ভিতর দেখতে দেখতেই আকাশগঙ্গাকে ভাগ করে ফ্যালা যাবে, য্যানো ভাঙতে ভাঙতে রাগমোচনের সমুদ্র খনন করব। আমি কখনও স্বমেহনের আনন্দ পাইনি, যোনিদ্বারের ভিতরে শুনেছি অনেকের আঙুল পৌঁছে যায়, আমার এত ভয় করে! আমার অর্গ্যাজমের প্রথম বারে আমি নীল দেখেছিলাম। য্যানো চোখমুখে কেউ নীল রং করে দিয়েছে, কানের শোঁশোঁ আওয়াজে আরব সাগরের লা-ইলাহা-ইল্লেলাহি শুনতে পাচ্ছিলাম বহুক্ষণ- তখন আমার বারো বছর হবে।
তখন আমার বারো বছর হবে। আমার বাবার বন্ধুর বাড়িতে প্রথম দেখেছিলাম ছেলেটাকে। ছেলেটা বাবার বন্ধুর জ্যাঠতুতো বা কাকাতো ভাই হবে। সরু-সরু পাতার মত আঙুল, চশমা, ধীরজ উচ্চারণের ঠোঁট, আঠালো গড়ন। তারপর বাজার-রাস্তায় কত্তবার-কত্তবার দেখলাম। ক্লাসরুমে দেখলাম-বিছানায় দেখলাম, জানলায় দেখলাম, বইয়ে দেখলাম, দেখলাম, দেখলাম, দেখলাম...
ভুলেও গেলাম, কবেকার কোন পীড়া, দু’-একটা প্যারাসিটামলেরও দরকার পড়েনি।
দপ্তরিয় দ্বিতীয়বার দ্যাখা বোধহয় কোনও এক আড্ডায়। তখন আমি বেশ ষোলো, আঠেরোর ভাণ করি। তার তরুণ গাছের ছালের মত কবিতা ডুবতে ডুবতে আমায় সিহর্স পোষার স্বপ্ন দেখিয়েছিল।
তারপর কবেকার দ্যাখা-শোনা ভুলে গেছি, ভুলে গেছি। ভুলে যাওয়াও স্বাভাবিক। কাগজি ফুলের রাজ্যে আমার পড়ুয়া পরিচয় ধান ফলিয়েছে, আম ফলিয়েছে, লিচুগাছে জাল বেঁধে দেওয়া হয়েছে গ্রীষ্মের আগে।
এতকাল পর পাহাড় চড়ার স্বপ্ন দেখলেই ধীরজ ঠোঁট মনে পড়ে যায়, ঠোঁটগুলো এখন বড় বাণিজ্যিক- আমি বরং ...
কেউ কখনও পদ্মফুলের প্রস্তাব রাখেনি বলে স্টেথোস্কোপের সামনে আমি বড্ড সাহসী। কেউ কখনও পদ্মফুলের প্রস্তাব রাখেনি বলে হলুদ রঙ দেখলেই আত্মসংবরণ করি প্রায়ই। কেউ কখনও পদ্মফুলের প্রস্তাব দ্যায়নি বলে কোনও নতুন পুরুষকেই আমি ভাইয়ের চোখে দেখিনা।
শীতকাল রোজ আসে তো অ্যাফ্রোদিতি, শুধু তুমিই ঘুমিয়ে পড়ছো বারবার

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র