রাবেয়া রাহীম - মায়াজম

Breaking

২৯ জুল, ২০১৬

রাবেয়া রাহীম

                                না বলা কিছু কথা





"কবিতাটিতে আবেগী ভাব বেশী লাগছে--
ভাষার গভীরতা রেখে যদি আরও একটু সংক্ষেপ করা যেত",
এই বলে কবিতার খাতায় কিছু একটা লেখার চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়তে চায় অনি।
পুরোনাম অনিকেত--
চশমার নীচে অনেকটা ঢেকে যাওয়া কালির রেখা,
প্রায় রাত্রি জেগে থাকা লাল দুটি চোখে
অবাক করা ভাল লাগা নিয়ে তাকায় সে,
শীতের মিষ্টি বিকেলের আবেশ
ছড়িয়ে থাকে যেন তাঁর অবয়বে সারাক্ষণ।
এক সময় প্রচুর সিগারেট খেত
তাই ঠোঁটে নিকোটিনের কালো দাগ
আলাদা একটা মাধুর্য এনে দেয় যেন।
চুপচাপ বিষাদী মেঘ আর অস্ফুট কিছু বিষণ্ণতায়
শেষ বিকেল গড়িয়ে পড়েছে সন্ধ্যার বুকে,
নিবু নিবু আলোতে এই আবছায়া সময়টা বড়ই অদ্ভুত--
আর আমি রন্ধ্রে রন্ধ্রে কেঁপে যাই অবাক শিহরণে!
অনি আর আমি একই কবিতা ক্লাবের মেম্বার
দুজনেই সমবয়সী, বয়সের হিসেব আর নাইবা করলাম;
তবে দুর্দান্ত--উচ্ছল যৌবন পেরিয়েছি অনেক আগেই সেটা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
কবিতার সাথে বন্ধুত্ব আমাদের দুজনের।
মাস খানেকের পরিচয়।
সন্ধ্যে নামছে ল্যাম্পপোস্ট ছুঁয়ে প্রাণোচ্ছল এই শহরে,
ধিকিধিকি শ্বাসে জেগে থাকা এই আমি
নিজেকে ছুঁড়ে ফেলি চাওয়া পাওয়ার হিসেবের ভেতরে
তারপর কেটে যায় কিছু বিনিদ্র রাত;
পোড় খাওয়া দুজনের জীবনে
আর গদ্য আনতে সাহস করি না কেউ।
চেপে যাই----অনেক না বলা কথা।
বহুদিন আবৃত্তি শুনেছি তাঁর ভরাট কন্ঠে
"বাতাসের ওপারে বাতাস--আকাশের ওপারে আকাশ"
অনি কবিতা ভালোবাসতো, আর আমি অনি কে।
কবিতা ক্লাবের পাশেই তির তির করে বয়ে যাওয়া স্বচ্ছ জলের শান্ত নদী,
দুজনেই নিজেদের গাড়ী চালিয়ে আসি--দু'কিলোমিটার পথ মাত্র।
দুজনের ভেতরেই যেন না বলা অনেক কথা গুমরে উঠে,
একদিন অকারণেই দুজনেই নদীর তীর ধরে হাঁটতে থাকি
অনি কি কিছু বলতে চায়?
আমি কি কিছু শুনতে চাই?
হঠাত সে আমার হাতটা নিজের হাতে তুলে নেয়,
শেষ রাতের কয়েক পশলা বৃষ্টি নামার প্রশান্তি অনুভূত হয়,
কেমন যেন ভিজে গেলাম আমি--ঘোর লাগা আমি
তাঁর ঠোঁটে আঙ্গুল ছুঁয়ে বুঝলাম
তাঁর বুকেও ডাকছে মেঘ, এবার বুঝি বৃষ্টি নামবে।
সেদিন উচ্ছল চোখে তাঁর মুখের দিকে মুগ্ধ চেয়ে বলেছিলাম
"তোমার চোখে সময়কে যদি আটকে দিতে পারতাম"
অনি হেসে বলেছিলো--- "পাগলী--সময়কে কিভাবে আটকাবে!"
---হ্যাঁ সে ঠিক বলেছিলো, সময় কে আটকানো যায় না,আমরা পারিনি
মোহাবিষ্ট আমি আপন মনে শুধু বলতে পারলাম তুষার ঝরুক
সূর্য উঠুক হিমেল হাওয়ায় ধরণী কেঁপে যাক
তাতে কি বা আসে যায় যদি তোমাকে পাশে পাই,
আত্মসমর্পণ অনিবার্য ছিল বুঝেছিলাম
তাঁর গভীর আবেগীয় দৃষ্টিতে।
আচমকা শহর ছেড়ে চলে যেতে হলো,
অনির সাথে দ্যাখা নেই প্রায় দশ বছর।
মানুষের জীবনের পরিসীমা খুব সামান্য
আরও কি দশ বছর কেটে যাবে বা
তারও বেশী কিছু বা জীবনের শেষ সময়!
তাকে বলা হয়নি কখনো--তাঁর ভরাট গলায় আমি আবিষ্ট হয়ে পড়তাম,
তাকে বলা হয় না---
তাঁর অসাবধানতাবশত শার্টের বোতাম খোলা থাকলে
তাঁর রোমশ বুক দেখে আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়তাম
কিংবা কি যেন!
আমার কাছেই কেবল অদ্ভুত লাগে তার সব কিছু!
মাঝে মাঝে আমার সন্ধ্যেগুলো এতোটা বিমর্ষ হয়--
বিস্তীর্ণ আকাশ জুড়ে যেন এক গাঢ় শূন্যতার হাহাকার!
তখন মধ্যরাতের এই বিশাল নিঃসঙ্গ নিস্তব্ধ আকাশটাকে
খুব আপন মনে হয়!
ইচ্ছে করে দু'হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে ধরি!
বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে মিশিয়ে ফেলে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র