অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায় - মায়াজম

Breaking

৩০ সেপ, ২০১৬

অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়



            জ্যোতিষ না শাস্ত্র না বিজ্ঞান



প্রথম পর্বের পরঃ


জ্যোতিষীবাবুদের ভবিষ্যত বাণী যে বহুবার মিথ্যা হয়েছে তার ঝুড়ি ঝুড়ি প্রমাণ আছে। মানুষ সেসব ভুলে যাবে কেন ?! জ্যোতিষীবাবুরা অনেক সময় অনেক প্রমাণ-ট্রমাণ দিয়ে আমাদের বিশ্বাস  করতে বাধ্য করে যে আসলেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। যে যত যুক্তি দিক, আর না-দিক – সত্যি কিন্তু পৃথিবী একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। সেটা জ্যোতিষীবাবুরা বাণী না-ছাড়লেও হবে। এখন এমন দশটি ভবিষ্যৎ বাণীর কথা বলব যেগুলি বিশ্বজুড়ে আতঙ্কিত এবং আলোড়িত হয়েছে, অথচ মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়েছে।
(১) অপ্রামাণ্য রচনা (The Apocrypha), এই ভবিষ্যৎ বাণীটি করা হয়েছিল ১০০০ সালে। ইঞ্জিল শরিফের কয়েকটা লাইনের উৎস ধরে সবার মধ্যে আতঙ্ক ভাইরাল হয়ে যায় যে, ঈসার মৃত্যুর পর এক প্রজন্ম পরে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। কী ছিল ইঞ্জিল শরিফের সেই লাইনটি ? – “Christ would be back in generation and that the genetation shall not pass.” অর্থাৎ, “জিশু আবার ফিরে আসবেন আগামী প্রজন্মে। এবং সেই প্রজন্ম পরিত্রাণ পাবে না”। তৎকালীন সময়ে প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী চার্চ থেকে অর্থের বিনিময়ে মানুষেরা নিজেদের জন্য স্বর্গে জমি কিনে রাখতে পারতেন এবং মানুষজন সংশ্লিষ্ট চার্চে অর্থ প্রদান পাপ থেকে মুক্তি পেলেন বলে বিশ্বাস করতেন। যেহেতু সেসময় পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এমন ভবিষ্যৎ বাণী করা হয়েছে, সেইহেতু অনেকেই নিজেদের সর্বস্ব সম্পদ বিক্রিবাটা করে চার্চে অনুদান দিয়ে পাপমুক্তির হিড়িক পড়ে গেল। সেই সুযোগে এক লপ্তে চার্চগুলিতে কোটি কোটি টাকা রোজগার হয়েছিল, বলাই বাহুল্য। যেহেতু সেসময়ে ঘড়ি বা ক্যালেন্ডার সহজলভ্য ছিল না, তাই সাধারণ মানুষ ধ্বংসের দিন হিসাবের জন্য মহান চার্চের উপরই নির্ভর করত। তখনকার দিনে পোপ/পাদরিদের বাণী বা ঘোষণাই ছিল শেষ কথা। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পৃথিবী ধ্বংসের ভবিষ্যৎ বাণী শুনিয়ে প্রচুর অর্থ কামিয়ে নয়েছিল বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন। এখন ২০১৬ সাল, পৃথিবী যেখানে ছিল সেখানেই আছে।ধ্বংস যে হয়নি সেটা নিশ্চয় বোঝানোর জন্য প্রমাণ চাইবেন না !
(২) “The Watchtower Society” এক ধরনের অদ্ভুত সোসাইটি।এরা অনেকবার পৃথিবী ধ্বংসের তারিখ নির্ধারণ করছে। বারবার মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে, তবুও নিয়ম করে ভবিষ্যৎ বাণী আওড়াতে কখনো কার্পণ্য করেনি। আর এমন প্ররোচনাকারী সোসাইটিকে মানুষ বিশ্বাস করে এবং মানুষের এই অটুট বিশ্বাসের জন্য সোসাইটিটি আজও টিকে আছে।১৮৭৪ সাল, ১৯৪১ সালে পৃথিবী ধ্বংসের ঘোষণা দিয়েছিলেন, নির্দিষ্ট দিন-তারিখ উল্লেখ করেই। আর বারবার সেই ভবিষ্যৎ বাণী ভণ্ডুল হয়েছে।অবশ্য এখন আর দিন-তারিখ নির্দিষ্ট করে ঘোষণা দেন না, একটু সুর পালটে শুধু “পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে” – এটুকু বলে ছেড়ে দেন।এখন ২০১৬ সাল, পৃথিবী যেখানে ছিল সেখানেই আছে।ধ্বংস যে হয়নি সেটা নিশ্চয় বোঝানোর জন্য প্রমাণ চাইবেন না !


(৩) “Heavens Gate” বা স্বর্গের দরজা বলে পরিচিত এটি এমন একটি সংস্থা, যাঁরা মনে করত পৃথিবীটা সম্পূর্ণ ভিন গ্রহের বাসিন্দা বা এলিয়েন দ্বারা পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। এমন কি সরকারের বেশির ভাগ মনুষই নাকি এলিয়েন ! তারা মনে করেছিলেন, ১৯৯৭ সালে এক উল্কাকে অনুসরণ করে এলিয়েনরা পৃথিবীতে আসবে এবং পৃথিবীর সমস্ত মানুষদের ক্রীতদাসে পরিণত করবে। এই দাসত্ব থেকে মুক্তি পেতে একমাত্র উপায় হল আত্মহত্যা করা। এইসব ধারণা বিশ্বাস করে শতাধিক মানুষ আত্মহত্যা করেছিল সে সময়ে।না, ১৯৯৭ সালে পৃথিবীতে একজন এলিয়েন  এসেও একজন মানুষকেও দাস করতে পারেনি।এখন ২০১৬ সাল, পৃথিবী যেখানে ছিল সেখানেই আছে।ধ্বংস যে হয়নি সেটা নিশ্চয় বোঝানোর জন্য প্রমাণ চাইবেন না!
(৪) নস্ট্রাদামুস ছিলেন একজন বিখ্যাত গণক, যিনি তাঁর জীবনে অনেক ভবিষ্যৎ বাণী লিপিবদ্ধ করেছেন। তিনি অনেক বড়ো বড়ো ঘটনার ভবিষ্যৎ বাণী আগেই করে দিতেন অনেকে বিশ্বাস করেন। এনার লিপিবদ্ধ হেঁয়ালি পাঠ করে জ্ঞানীরা (?) মর্মোদ্ধার করেছিলেন, ১৯৯৯ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এখন ২০১৬ সাল, পৃথিবী যেখানে ছিল সেখানেই আছে।ধ্বংস যে হয়নি সেটা নিশ্চয় বোঝানোর জন্য প্রমাণ চাইবেন না! নস্ট্রাদামুসের তথাকথিত ভবিষ্যৎ বাণী মুখ থুবড়ে পড়ে।
(৫) ওয়াই টু কে (Y2K) মনে পড়ছে ? সালটা তখন ২০০০। ২০০০ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে এই আশঙ্কা এবং আতঙ্ক নিয়েই জন্ম হল Y2K ধারণা।কোন্ ভবিষ্যৎদ্রষ্টা এই ভবিষ্যৎ বাণীর ঘোষক ছিলেন মনে পড়ছে না। যেটা মনে পড়ছে সেটা হল তৎকালীন সময়ে কম্পিউটারে ৯৯ সালের পরে পরের সাল, অর্থাৎ ২০০০ সাল উল্লেখ করা ছিল ০০ দিয়ে। অনেকে ধরে নেন ২০০০ সালে পৃথিবীর সব কম্পিউটার আপনা-আপনি অচল হয়ে যাবে। সযত্নে গচ্ছিত রাখা নিউক্লিয়ার বোমাগুলি এই বিগরে যাওয়া কম্পিউটারের জ্য নিক্ষেপিত হতে থাকবে।এই আতঙ্ক এতটাই ছিল যে, সাধারণ মানুষ তো বটেই, খোদ আমেরিকা সরকার খাদ্য মজুতকরণ, অস্ত্র মজুত, বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, নিউক্লিয়ার বোমা দুর্ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার সরঞ্জাম মজুত, পর্যাপ্ত অর্থ জমিয়ে ফেলা যাতে পরবর্তীতে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা করা যায় ইত্যাদি। এত শ্রম সবই পণ্ড হল।২০০০ সাল অতিক্রান্ত হয়ে এখন ২০১৬ সাল, পৃথিবী যেখানে ছিল সেখানেই আছে।ধ্বংস যে হয়নি সেটা নিশ্চয় বোঝানোর জন্য প্রমাণ চাইবেন না!
(৬) ২০১৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বরে ধ্বংস হবে পৃথিবী। এমনটাই দাবি ছিল কন্সপিরাসি তাত্ত্বিকদের। তারা দাবি করছেন, তিন মাসের মধ্যেই ধ্বংস হতে চলেছে মানব সভ্যতা। ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৫ হয়ত আমাদের শেষ দিন। বিভিন্ন ওয়েবসাইট ও ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে পৃথিবী ধ্বংসের নতুন তথ্য। তাঁদের দাবি, ২০১৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর মহাকাশে পৃথিবীর সঙ্গে ধাক্কা লাগতে পারে একটি বড়ো গ্রহাণুর। আর এই আঘাতেই শুরু হবে প্রলয়। ধ্বংস হবে পৃথিবীর সাজানো বাগান। পৃথিবী ধ্বংসের এই খবর নাকি আছে পৃথিবীর শক্তিশালী রাষ্ট্রসমূহের কাছেও ছিল। এই বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচার জন্য সেইসব দেশের বেশকিছু ক্ষমতাবান ব্যক্তি ঘর গুছিয়ে নিচ্ছিলেন । এ বিষয়ে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রী লরেন্ত ফ্যাবিয়াস জানান, একটি বড়ো গ্রহাণু পৃথিবীকে আঘাত হানতে পারে। এর ধ্বংসযজ্ঞ হবে কল্পনাতীত। তবে এটি পৃথিবীতে আঘাত হানার আগেই এটিকে ভেঙে ছোটো ছোটো টুকরো করে ফেলার চেষ্টা করা হবে, যেন ক্ষতির পরিমাণ কমানো যায়। তিনি আরও জানান, এই গ্রহাণুটি আটলান্টিক মহাসাগরে আঘাত হানতে পারে।  তবে এই তথ্য সম্পূর্ণরূপে উড়িয়ে দিয়েছিলেন নাসা। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন – “তাদের কাছে পৃথিবীর সঙ্গে কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতুর সংঘর্ষ হওয়ার কোন খবর নেই। এমনকী আগামী একশো বছরেও এইরকম কিছু ঘটবে না।"এখন ২০১৬ সাল, পৃথিবী যেখানে ছিল সেখানেই আছে।ধ্বংস যে হয়নি সেটা নিশ্চয় বোঝানোর জন্য প্রমাণ চাইবেন না!
(৭) এই তো সেদিনের কথা, ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর – এ পর্যন্ত পৃথিবীর ধ্বংসের শেষতম দিন ঘোষণা হল। দামামা বেজে উঠল সমগ্র পৃথিবী জুড়ে।ফেসবুকের কল্যানে এমন একজনও মানুষ ছিল না যে জানেন না। পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এ সংবাদ ফেসবুকে ভাইরাল হয়ে গেল। সেকি তুলকালাম কাণ্ড !!! এ নিয়ে আবার অনেকে কোরান শরিফের সঙ্গে সংখ্যার গুণ/ভাগ করে কত কিছুই-না বানিয়েও ফেলেছিল। এ নিয়ে “২০১২ এবং ইসলাম তথা ইসলাম তথা ১৪৩৩ আরো কিছু অজানা তথ্য” শিরোনামের লেখায় বিস্তর আলোচনাও হল। সব দোষ কিন্তু ওই মায়ানদের । তাদের ক্যালেন্ডার ২০১২ পর্যন্তই ছিল, অর্থাৎ ২০১২ সালের পরে আর কোনো সাল নেই। ২০১২ সালে পৃথিবী নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবেই বলেই পরের সালগুলি নেই।অবশ্য মায়ানদের এই ভবিষ্যৎ বাণী নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিলই। অতএব এদের ভবিষ্যৎ বাণীও মিথ্যা প্রমাণিত হল।
(৮) ২০১৫ সাল। ‘কেয়ামতের ঘড়িতে (ডুমসডে ক্লক)’ পৃথিবী ধ্বংস হতে আর মাত্র তিন মিনিট বাকি রয়েছে – এমনই খবর ছড়িয়ে পড়ল সারা পৃথিবীতে। ওই ঘড়ির কাঁটা তিন মিনিট পার হয়ে মধ্যরাতে, অর্থাৎ ১২টায় পৌঁছালে মহাপ্রলয়ের মাধ্যমে নিশ্চিহ্ন হবে এ পৃথিবী! একই অবস্থানে রয়েছে কেয়ামতের ঘড়ির কাঁটাটি। সময়টা খুব কম, তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এ সময়ের মধ্যে পৃথিবীকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না-নিলে, ঘড়ির কাঁটা পেছনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয় বলে  জানিয়েছিল বিশেষজ্ঞরা। বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানে দুটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপের দুই বছর পর ১৯৪৭ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সাইন্টিস্ট’ ‘কেয়ামতের ঘড়িটি’ তৈরি করে। বুলেটিনের পরিচালক পর্ষদ এর দেখভাল করে। এ ঘড়িতে মধ্যরাত হতে যত সময় বাকি, সেটা দিয়ে পরমাণু অস্ত্র, পরিবেশ ও প্রযুক্তিগত হুমকির তীব্রতা বিবেচনা করা হয়। মধ্যরাত হওয়ার অর্থ পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়া। পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার ব্যাপারে ঐশ্বরিক কোনো প্রভাব এখানে বিবেচনা করা হয় না।ঘড়িটির নিয়ন্ত্রণকারীরা  জানিয়েছিলেন, ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতের দিকে এগিয়ে আসছে, যা মানবজাতির ধ্বংসকে নির্দেশ করে। এটা সত্যিই মানুষের কবর রচনার মতো সংবাদ। ‘বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সাইন্টিস্ট’-এর গবেষক লরন্সে ক্রায়াস বলেছিলেন, “আমরা যদি আমাদের পন্থা পরিবর্তন না করি, তাহলে আমরা মনে করি, মানবজাতি মারাত্মক বিপদের মধ্যে রয়েছে।” ওয়াশিংটন থেকে তিনি ঘোষণা দেন, ‘কার্যকরী পদক্ষেপ এসব হুমকি কমাতে পারে। কিন্তু আমরা যদি সেগুলোকে (হুমকিগুলোকে) স্বীকৃতি দিই, তাহলে সত্যিই আমাদের সেগুলোর মুখোমুখি হতে হবে অচিরেই।’ ‘বুলেটিন অব দ্য অ্যাটমিক সাইন্টিস্ট’-এর ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, ঘড়িটি স্থাপনের সময় মহাপ্রলয়ের সাত মিনিট বাকি ছিল। কিন্তু পরে পরমাণু ও মানুষের তৈরি হুমকি মোকাবিলায় বিশ্ব জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ায় এর অবস্থান পিছনে চলে আসে বেশ কয়েকবার। কিন্তু বিশ্বে পরমাণুশক্তির ব্যবহার ও জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় ‘কেয়ামতের ঘড়ি’র কাঁটা ফের সামনের দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে।ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, ২০১০ সাল পর্যন্ত ঘড়ির কাঁটা মধ্যরাতে পৌঁছাতে বাকি ছিল মাত্র পাঁচ মিনিট। কিন্তু ওই বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ পরমাণু অস্ত্র ধ্বংসের ব্যাপারে অঙ্গীকার ব্যক্ত করায় ঘড়ির কাঁটা এক মিনিট পিছিয়ে চলে আসে।তবে পারমাণবিক অস্ত্রাগার ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধ করতে না-পারায় ২০১২ সালে ফের আগের অবস্থায় ফিরে আসে এটি। ২০১৫ সালে জলবায়ু পরিবর্তন ও যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রের আধুনিকীকরণের ফলে ঘড়ির কাঁটা চলে আসে ১১টা ৫৭ মিনিটে।এখনও পৃথিবী যেখানে ছিল সেখানেই আছে।
(৯) ২১ মে ২০১১ সাল। পৃথিবীর আজই শেষ দিন। কারণ আজই পৃথিবী ধ্বংস হতে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সংখ্যালঘু খ্রিষ্টান ধর্মপ্রচারক বাইবেলের উদ্ধৃতি দিয়ে এই ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তাদের মতে ২০১১ সালের ২১ মে সন্ধ্যা ৬টায় পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। নিউইয়র্কজুড়ে ধর্মযাজক ও ধর্ম প্রচারকরা টি-শার্ট পরে ও ব্যানার-ফেস্টুন, বাইবেল, পোস্টার নিয়ে সমাবেশ করে সবাইকে সতর্ক করছেন। সমাবেশে অংশ নেওয়া ধর্ম প্রচারক ম্যানি বলেন, বাইবেলের ‘বুক অব রেভুলেশন’ অনুসারে ২১ মে সারা বিশ্ব প্রলয়ংকরী এক ভূমিকম্পে ধ্বংস হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বিশ্বের সব স্থানে একই সময়ে ভূমিকম্পটি আঘাত হানবে কি না সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই। কারণ, পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে সময়ের তারতম্য রয়েছে। তবে তা একই সময়ে সংঘটিত হওয়ার কথা রয়েছে। ওদিকে বাইবেলের নানা সংখ্যাতাত্ত্বিক বিষয় বিশ্লেষণ ও পর্যালোচনা করার পর হ্যারল্ড ক্যাম্পিং (৮৯) পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার ব্যাপারে এ ভবিষ্যদ্বাণীটি করেছেন। তিনি এর আগেও ১৯৯৪ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তবে সেবার তার গণনা ভুল হয়েছিল বলে ক্ষমা চেয়েছিলেন তিনি। হ্যারল্ডের অনুসারীরা আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে পৃথিবী ধ্বংসের প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর এ ঘটনায় বিশ্বাসীদের দলে যোগ দিয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজারেরও বেশি মানুষ। এদিকে পেশায় সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ক্যাম্পিং শেষ দিনটি তার উত্তর ক্যালিফোর্নিয়ার বাড়িতে স্ত্রীর সঙ্গে কাটানোর পরিকল্পনা করছেন। তিনি বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন জায়গার খবর দেখতে আমি টেলিভিশনে চোখ রাখব সেদিন। হ্যারল্ড ক্যাম্পিং ভবিষ্যদ্বাণীর পিছনে কিছু যুক্তি দাঁড় করিয়েছেন। যার মধ্যে আছে সংখ্যাতাত্ত্বিক বিশ্লেষণও। খ্রিস্ট ধর্মানুসারীদের ধর্মগ্রন্থ বাইবেলে একটি খণ্ড জেনেসিসে উল্লেখ রয়েছে, খ্রিস্টপূর্ব ৪৯৯০ অব্দে নূহের সময়কালে পৃথিবীতে একটি মহাপ্লাবন সংঘটিত হয়েছিল। ঈশ্বর সে সময় নূহকে বলেছিলেন, ৭ দিনে তিনি পৃথিবী ধ্বংস করবেন। এদিকে বাইবেলের অপর একটি খণ্ড ২ পিটার ৩:৮ এ বলা হয়েছে, পৃথিবীর এক হাজার বছর ঈশ্বরের এক দিনের সমান। ক্যাম্পিং এ যুক্তি দেখিয়ে বলেন, মহাপ্লাবনের সময় থেকে এ পর্যন্ত ৭ হাজার বছর পার হয়ে গেছে। আর ঈশ্বর ৭ দিনে পৃথিবী ধ্বংসের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সে হিসাবে ১ হাজার বছর ঈশ্বরের ১ দিনের সমান হলে ৭ হাজার বছর নিশ্চয়ই ৭ দিনের সমান হবে। খ্রিস্টপূর্ব ৪৯৯০ অব্দের সঙ্গে ২০১১ খ্রিস্টাব্দ যোগ করলে দাঁড়ায় ৭ হাজার বছর। আরও এক জটিল গণনার হিসাবে হ্যারল্ড ক্যাম্পিং আজই অর্থাৎ ২১ মে ২০১১ সালকেই পৃথিবী ধ্বংসের দিন বলে চিহ্নিত করেন। তবে বহু খ্রিস্টান ধর্মযাজক ও অনুসারীকে তার এ গণনাকে অমূলক বলে দাবি করেছিলেন।এখন ২০১৬ সাল, পৃথিবী যেখানে ছিল সেখানেই আছে।ধ্বংস যে হয়নি সেটা নিশ্চয় বোঝানোর জন্য প্রমাণ চাইবেন না!
(১০) সুদূরের জন্য একটি ভবিষ্যৎ বাণী উচ্চারিত হয়ে আছে। এতদিন আমি অবশ্যই বেঁচে থাকব না, যাঁরা ভবিষ্যৎ বাণী শোনাচ্ছেন তাঁরাও বেঁচে থাকবেন না। ৩৭৯৭ সাল। ধ্বংস হবে পৃথিবী! অন্য গ্রহে বাসা বাঁধবে মানুষ। এই ভবিষ্যদ্বাণীটি অবশ্য জনৈক ‘বাবা ভাঙা’-র। তাঁকে নাকি বলা হয় ‘এ যুগের নস্ট্রাদামুস’। ২০ বছর আগে তিনি মারা গিয়েছেন। কিন্তু আইএস-এর উত্থান বা টুইন টাওয়ারের হামলার কথা নাকি তিনি বলে গিয়েছিলেন। বাবা ভাঙা যা বলে গিয়েছেন, তার মধ্যে থেকেই তুলে ধরা হল কয়েকটি। মিলিয়ে নিন। (১) বারাক হুসেন ওবামাই হবেন আমেরিকার শেষ প্রেসিডেন্ট।(২) ২০১৬ সালেই ইউরোপ শেষ হয়ে যাবে। রাসায়নিক অস্ত্রে ইউরোপকে শেষ করে দেবে সন্ত্রাসীরা।(৩) ইউরোপ ছেয়ে ফেলবে মুসলিম জঙ্গিরা। আর এই সন্ত্রাসের সূত্রপাত হবে সিরিয়ায়।(৪) ২০১৮ সালের মধ্যে সুপারপাওয়ার হিসাবে উত্থান হবে চিনের। পর্যুদস্ত হবে আমেরিকা।(৫) ২০২৫ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে পৃথিবী থেকে ক্ষুধা দূর হবে।(৬) শুক্র গ্রহে বাসা বাঁধবে মানুষ।(৭) ২০৪৫ সালের মধ্যে মেরু অঞ্চলের আইসক্যাপ গলে যাবে।(৮) ২০৭৬ সালে কমিউনিজম ফিরবে পুরোদস্তুর।(৯) ২১৩০ সালের মধ্যে জলের তলায় বসবাস শুরু করবে মানুষ।(১০) ৩৭৯৭ সালে ধ্বংস হবে পৃথিবী। ততদিনে অবশ্য অন্য গ্রহে থাকতে শুরু করবে মানুষ।সত্য/মিথ্যার সাক্ষী থাকুন আপনি। সময় তো আছেই।
হাত দেখা বা হস্তরেখা বিচার সম্ভবত জ্যোতিষীবাবুদের মধ্যে সবচেয়ে জয়প্রিয়তম ব্যবস্থা। জাতকরাও কেউ হাত দেখতে জানে জানতে পারলে তার দিকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিতে এক সেকেন্ডও দেরি করেন না। অবশ্য এই ‘হস্তরেখা বিচার’ পদ্ধতির পুষ্টিলাভ খুব বেশিদিনের কথা নয়। পঞ্চদশ শতকে হস্তরেখা বিদ্যার উপর কিছু পরিমাণ বিক্ষিপ্তভাবে লেখালেখি হলেও মূলগতভাবে এই বিদ্যার রমরমা শুরু ঊনবিংশ শতাব্দীতে।মহাভারতের যুগেও অনুমান করেই ভবিষ্যৎ বাণী করা হত। শকুন্তলাকে দুর্বাসাও ভবিষ্যৎ বাণী দিয়েছিল, যা অভিশাপ বলেই বিদিত। দুর্বাসা জানতেন রাজা দুষ্যন্ত জন্ম-পরিচয়হীন শকুন্তলাকে স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করবে না। করার কথাও নয়।কারণ একজন বনবাসীকে কিছুতেই রাজপরিবারে জায়গা দিতে পারে না। সামাজিক অবস্থান তো ভিন্ন মেরুতে।
যাই হোক, হাত দেখার মহিমাই অপরিসীম।বন্ধুমহলে বেশ কদর পাওয়া যায়।অফিসের বসকেও খুব সহজে কবজা করা যায় হাত দেখে পজিটিভ বাণী শুনিয়ে। বিনা মূলধনে বিনা পরিশ্রমে টু-পাইস কামানোর সুযোগ হাতছাড়া করা যায় ! কী আছে হাতে ? কী দেখা হয় হাতে ? হাতে কী অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ লেখা থাকে ? জ্যোতিষীবাবুরা তো সেটাই বলে, হাতে লেখা থাকে ! শুধু হাতেই নয় -- কপাল, হাতের কবজি, শরীরের তিল, পায়ের রেখা সবেতেই নাকি অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ লেখা থাকে।গতকাল এবং আগামীকাল, ভূত এবং ভবিষ্যৎ -- যত গণ্ডগোল তো এখান থেকেই, আদিকাল থেকেই। ‘ভূত’ শব্দটি বস্তুত দুটি অর্থে ব্যবহৃত হলেও ব্যঞ্জনা প্রায় কাছাকাছিই। একটি অর্থ ‘অতীত’, অন্যটি হল ‘প্রেত-প্রতিনী’, ‘প্রেত-প্রতিনী’ তো যিনি অতীত বা মৃত হয়েছেন তার অশরীরী। আমরা ভূত জেনে অবাক হই, বর্তমান জেনে খুশি হই এবং ভবিষ্যৎ জেনে আতঙ্কিত হতে ভালোবাসি। পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে না হলেও অতীত আমাদের মনে থাকে অনেকটাই, আমরা তাই জন্য স্মৃতিচারণ করতে পারি।আমার অতীত জানতে আমি জ্যোতিষবাবুর কাছে যাব কেন ! জ্যোতিষীবাবুরা মানুষের সেই অতীতই বলে থাকেন, সেগুলি সকলের জন্য খুবই কমন (Common)।আপনার মনে হয় উনি আপনার ‘অতীত’ বলতে পারলেন। আপনি ভয়ে সিঁটিয়ে থাকলেন, এই বুঝি অতীতে করা আপনার অপকর্মগুলিও বলে ফেলল ! তবুও বারাবার জ্যোতিষীর কাছে যাই, গিয়ে একবার ঝালিয়ে নিই। আপনার মতে না মিললে সেই জ্যোতিষী খারাপ, অন্য ‘বিখ্যাত’ জ্যোতিষীর শরণাপন্ন হবেন নিশ্চয়।আর মতে মিললে তো ভগবান – আপনি সব উজার করে দিতে রাজি হয়ে যান। বস্তুত সব জ্যোতিষীর মধ্যে ওই ‘মেলানোর’ পারদর্শিতা বা অভিজ্ঞতা বা দক্ষতা থাকে না।
কীভাবে? বলব। আমি তো আমার কথা বলব, যুক্তিবাদীদের কথা বলব, বিজ্ঞানের কথা বলব। তার আগে জ্যোতিষীবাবুদের বক্তব্য শুনব না কি করে হবে ?
জ্যোতিষীবাবুরা বলেন – “জ্যোতিষ একটি ঐশ্বরিক ব্যাপার। আসলে এটা কোন মত পোষণ করা বা বিশ্বাসের ব্যাপার নয়।
জ্যোতিষে এমন কিছু বিষয় আছে, যা চট করে দেখলে একেবারেই মন-গড়া, বা বানানো মনে হয়। অথচ সেগুলিই বাস্তবে খুব ভালো মতো কাজ করে বা ফল দেয়। যেমন, রাশিচক্রের বিন্যাসের (Arrangement) ব্যাপারটি বলা যেতে পারে। জ্যোতিষে ৯টি গ্রহ বিশ্লেষণ করা হয়। এর মধ্যে আসল গ্রহ ৫টি - বুধ, শুক্র, মঙ্গল, শনি, এবং বৃহস্পতি। সূর্য ও চাঁদকেও ‘গ্রহ' নামে ডাকা হয়। এছাড়া রাহু ও কেতু নামে দুটো অবস্থানগত বিন্দুকেও (Positional Points) গ্রহ ধরে মোট ৯টি ‘গ্রহ' পাওয়া যায়। এদেরকে ‘নবগ্রহ' বলা হয়। এই নবগ্রহের মধ্যে সূর্য ও চাঁদের অবশ্যই একটা আলাদা অবস্থান বা গুরুত্ব আছে। কেন-না সূর্য আসলে গ্রহ নয়, বরং নক্ষত্র। সব গ্রহগুলির চেয়ে বহুগুণ বড়ো হওয়াতে এর একটা আলাদা প্রভাব আছে। সৌরজগতের সব গ্রহগুলি সূর্যকে কেন্দ্র করেই ঘুরছে। তাছাড়া পৃথিবীতে দিন-রাত, ঋতু পরিবর্তন ইত্যাদিতে সূর্যের এমন প্রভাব আছে, যা অন্য কারও নেই। আবার চাঁদ গ্রহদের থেকে ছোটো হলেও, পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে হওয়ার জন্য এর আলাদা এক রকম প্রভাব আছে, যা জোয়ারভাটা, মানুষের শরীরের বাত, আরও বিভিন্ন বিষয়ে কাজ করে। সুতরাং সূর্য ও চাঁদের এমন একটা অবস্থান বা প্রভাব আছে, যা বুধ, শুক্র, শনি ইত্যাদির নেই।রাশিচক্রে ১২টি রাশির প্রত্যেকটি রাশি কোন না-কোন গ্রহের মালিকানাধীন। আপনার যে রাশিই হোক না-কেন, তার একটি মালিক বা অধিপতি (Owner) আছে বলে রাশিচক্রের বইয়ে বা পত্রিকাতে পাবেন। রাহু-কেতু অবস্থানগত বিন্দু, তাদের আসলে কোনো দৃশ্যমান কাঠামো (Physical Structure) নেই। তাই তারা সেভাবে কোনো রাশির মালিক নয়। বাকি ৭টা গ্রহ এই ১২টি রাশির মালিক। আবার, রাহু-কেতু বাদে এই ৭টা গ্রহ, সপ্তাহের ৭টা দিনেরও মালিক। এবং সেই সেই দিনে সেই সেই গ্রহের প্রভাব, বাস্তব জীবনে খুব পরিষ্কারভাবে দেখা যায়। ১২টি রাশিকে কীভাবে ৭টি গ্রহের মধ্যে ভাগ করা যায় ? প্রত্যেক গ্রহ ২টি করে রাশি পেলে রাশি দরকার ১৪টি, আবার ১টি করে হলে ৭টি গ্রহের ৭টি রাশি পাওয়ার পর আরও ৫টি থেকে যায়। তাহলে ? জ্যোতিষে বিষয়টির সুরাহা করা হল এভাবে - সূর্য ও চাঁদ যেহেতু ৭টি গ্রহের মধ্যে একটু আলাদা (Special) , এদেরকে ১২টি রাশি থেকে ১টি করে রাশি দেওয়া হোক (মোট ২টি)। আর বাকি থাকল ১০টা, এই ১০টা রাশি বাকি ৫টি গ্রহের মধ্যে ২টি করে ভাগ করে দেওয়া হোক। তাহলে সূর্য ও চাঁদ = ১ + ১ = ২, আর বাকি ৫টি গ্রহ ২টি করে = ৫ x ২ = ১০, মোট ২ + ১০ = ১২, মিলে গেল। বিষয়টি খুব সাধারণ, মনে হয় কোন একটা ঘরোয়া আলোচনায় ভাগ-বাটোয়ারা করা হয়েছে। কিন্তু এটাই বাস্তব জীবনে খেটে যায়। কেন-না এটাই জ্যোতিষের ভিত্তি, আর সব হিসাব-নিকাশ এর উপর ভিত্তি করেই করা হয়। তাই এটা ঠিক না-হলে, কোনো কিছুই মিলত না।এখন, রাশির বিন্যাস (Positioning/Arrangement) কীভাবে করা হবে? এটাও এমন একটা ব্যাপার, দেখলে মনে হবে কারও বানানো বা কল্পনাপ্রসূত, কিন্তু এটাই বাস্তবে খেটে যায়। কিভাবে দৃশ্যমান ভৌত শরীর (physical body) না-থাকায় রাহু-কেতুকে রাশির মালিকানা না-দেওয়া, এরপর বাকি ৭টি গ্রহের মধ্যে সূর্য ও চাঁদকে আলাদা বিবেচনা করে ১টি করে রাশি দিয়ে এরপর দু-পাশে একই গ্রহের ১টি করে রাশি বসিয়ে বসিয়ে সম্পূর্ণ রাশিচক্রটি (Zodiac) সাজানো বা বিন্যাস করা (Arrange) একেবারেই মানুষ বা অন্য কারও বানানো মনে হয়, যা খুব সাধারণ বিবেচনা নিয়ে (Casually) করা হয়েছে। এতে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, গণিত, ইত্যাদির মতো কোনো জটিলতা নেই। তাই দেখে যদিও মন-গড়া মনে হয়, এই জিনিসটাই বাস্তবে মিলে যায়, বা খেটে যায়। এটা অবশ্যই একটা ঐশ্বরিকত্ব।” আধুনিক তত্ত্বের সঙ্গে জ্যোতিষের তত্ত্বকে মেলানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেছেন। ইনি বাংলাদেশে বসবাসকারী বহু প্রচারিত এক মুসলিম জ্যোতিষীবাবু। এনার একটি ওয়েব সাইটও আছে বটে, জ্যোতিষের সমর্থনে প্রবন্ধ-ট্রবন্ধও লেখেন লেখকের নাম-পরিচয় ছাড়াই।বস্তুত প্রাচীনকালে মানুষ আকাশের বিভিন্ন অংশের এলোমেলো নক্ষত্রগুলোর মাঝে তাদের ঘটমান জীবনের পরিচিত বিষয়ের সঙ্গে সাদৃশ্য খোঁজ করত বলেই কোনো নক্ষত্রমণ্ডলকে মেষের মতো আবার কোনো নক্ষত্রমণ্ডলকে কন্যা ইত্যাদি রূপে কল্পনা করেছিল। তাই বর্তমান সময়ে নক্ষত্রমণ্ডলগুলির নাম ও কল্পিত চিত্রগুলি তাদের মতোই থেকে গিয়েছে। আমরা চাইলে সেখানে অন্য কিছু খুঁজে পেতে পারি। তাই কোনো নক্ষত্রমণ্ডলকে সিংহ হিসাবে কল্পনা হয়েছে বলে তার প্রভাবে কারও বৈশিষ্ট্য তেজদীপ্ত, সাহসী হবে তা ভাবার কোনো কারণ নেই।
ভারত তথা হিন্দুধর্মের মানুষদের মধ্যেই জ্যোতিষচর্চা খুব বেশি প্রচলন। বস্তুত ব্রাহ্মণ তথা মুনিঋষিরাই ভবিষ্যৎ বলার কাজটা করতেন।ভারতে জ্যোতিষচর্চা মূলত প্রথমে গ্রিক পরে ব্রাহ্মণ্যবাদের হাত ধরেই বিস্তার লাভ করেছে। একটু নজর রাখলেই জানতে পারবেন জোতিষীদের একটা বড়ো অংশই ব্রাহ্মণসম্প্রদায়ের। একমাত্র ভারতেই ঘরে ঘরে জ্যোতিষী পাওয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গে তো জ্যোতিষ-ব্যাবসা কুটিরশিল্প পর্যায়ে চলে গেছে। যিনি হাত-পা দেখেন তিনিও জ্যোতিষী, যিনি হাত-পা দেখান তিনিও জ্যোতিষী। খ্রিস্টানদের মধ্যেও এ বিদ্যা চর্চা অল্পবিস্তর আছে। তবে মুসলিমদের মধ্যে ধর্মীয়ভাবে জ্যোতিষচর্চা নিষিদ্ধ।নক্ষত্র ও গ্রহ সংক্রান্ত গণনা অর্থাৎ জ্যোতিষচর্চাকে পূর্ববর্তী মুসলিম পণ্ডিতেরা সামগ্রিকভাবে ‘তানজিম’ বলে অভিহিত করেন। সমগ্র বিশ্ব যেহেতু জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর প্রভাবে প্রভাবিত, তাই ভবিষ্যতে ঘটবে এমন সব ঘটনাসমূহ সংঘটিত হওয়ার পূর্বে জ্যোতিষ্কমণ্ডলীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে প্রকাশ করা সম্ভব।এটা বিশ্বাস করা সর্বসম্মতিক্রমে বড়ো ধরনের কুফরি এবং ইব্রাহিম এর জাতির শিরকের মতো শিরক। “যে ব্যক্তি কোনো গণক তথা ভবিষ্যদ্বক্তার কাছে গেল, অতঃপর তাকে (ভাগ্য সম্পর্কে) কিছু জিজ্ঞেস করল অমনি ৪০ দিন পর্যন্ত তার সালাত কবুল হবে না।” (সহিহ মুসলিম ২২৩, মুসনাদ আহমাদ ৪/৬৭)। গণক বা জ্যেতিষীদের কথা বিশ্বাস করা আল্লাহর সঙ্গে কুফরি করার নামান্তর।জাদুবিদ্যা শিক্ষা করা, শিক্ষা দেওয়া কুফরি গোনাহ বা পাপ। যে সাতটি জিনিস মানুষকে ধ্বংস করে তার মধ্যে একটি হচ্ছে জাদু। আল্লাহ বলেন, “যে বিষয়ে তোমার নিশ্চিত কোনো জ্ঞান নেই, তার পিছনে ধাবিত হোয়ো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ ও অন্তঃকরণ এদের প্রত্যেকটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে।" (বনি ইসরাঈল ৩৬) । আল্লাহ আরও বলেন – “জাদুকর যেখানেই থাকুক সফল হবে না।" ( ত্বহা৬৯) । পক্ষান্তরে কেউ সত্যায়ন না করে, তাদের নিকট অভিজ্ঞতা লাভের জন্য বা পরখ করার জন্য গেলে এটা কুফরের পর্যায়ভূক্ত নয়, কিন্তু ৪০ দিন পর্যন্ত তার নামাজ ও ইবাদ কবুল হবে না। এ সম্পর্কে রাসুলাল্লাহ বলেছেন – “যারা গণক কিংবা এই জাতীয় লোকের নিকট গিয়ে কোনো কিছু জানতে চাইবে, ৪০ দিন পর্যন্ত তাদের নামাজ কবুল হবে না।" ( মুসলিম শরিফ)জ্যোতিষীর কাছে যাওয়া, হাত দেখানো তাঁর কথা বিশ্বাস করা একেবারে নাজায়েজ।
ইসলাম মতে, গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবে বৃষ্টি হওয়ার কথা বিশ্বাস করা যেমন কুফরি, তেমনি পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত রাশিফলের আশ্রয় নেওয়াও কুফরি। যে ব্যক্তি রাশিফলের উপর গ্রহ-নক্ষত্রের প্রভাবের কথা বিশ্বাস করবে, সে সরাসরি মুশরিক হয়ে যাবে। পত্র-পত্রিকা ও বইপত্রে  রাশিফলের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে সেগুলি পাঠ করা শিরক। তবে বিশ্বাস না-করে কেবল মানসিক সান্ত্বনা অর্জনের জন্য পড়লে তাতে শিরক হবে না বটে, কিন্তু সে গোনাহগার হবে।কেন-না শিরকি কোনো কিছু পাঠ করে সান্ত্বনা লাভ করা বৈধ নয়। তা ছাড়া শয়তান কর্তৃক তার মনে উক্ত বিশ্বাস জন্মিয়ে দিতে কতক্ষণ? তখন এ পড়াই তার শিরকের মাধ্যম হয়ে দাঁড়াবে।রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন – “গণকের নিকটে কোনো ব্যক্তি গমন করে যদি তাকে কিছু সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে, তাহলে ৪০ দিন ও ৪০ রাত পর্যন্ত তাঁর সলাত কবুল হবে না।” (সহিহ মুসলিম)।“যদি কেউ গণকের বা জ্যোতিষীর নিকট গমন করে তাঁর কথায় বিশ্বাস করল, তাহলে সে মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অবতীর্ণ বিষয়কে অবিশ্বাস করল।” (সুনান আবু দাউদ)। হাদিসগুলিতে দৈব জ্ঞানের দাবিদার, গণক, জাদুকর ও তদনুরূপ লোকদের কাছে আসতে এবং তাদেরকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস করতে ও তাদের বক্তব্য সত্য বলে বিশ্বাস করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং এ ব্যাপারে ভয় প্রদর্শন ও করা হয়েছে। সুতরাং শাসকবর্গ ও মানুষকে সৎ কাজের আদেশদানের এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ— যাদের হাতে ক্ষমতা ও শক্তি রয়েছে, তাদের প্রত্যেকেরই উচিত গণক, দৈব জ্ঞানের দাবিদার ও অনুরূপ পেশাজীবীদের কাছে আসতে লোকদের নিষেধ করা, হাটে-বাজারে ও অন্যত্র যেকোনো ধরনের দৈবজ্ঞান আদানপ্রদান নিষিদ্ধ করা, দৈবজ্ঞ ও তাদের কাছে যারা আসে সবার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।তাদের কথা কোনো কোনো ব্যাপারে সত্য বলে প্রমাণিত হওয়ার ফলে এবং এক শ্রেণির লোক তাদের কাছে বেশি আনাগোনা করার ফলে তাদের দ্বারা কারও প্রতারিত হওয়া ঠিক নয়। কারণ ওই শ্রেণির লোকেরা মূলত মূর্খ। তাই তাদের দ্বারা প্রতারিত হওয়া অনুচিত। কেন-না এতে গুরুতর পাপ, মহাবিপদ ও খারাপ পরিণতি থাকায় এবং যারা এসব কাজে লিপ্ত তারা মিথ্যাবাদী ও দুষ্ট প্রকৃতির লোক হওয়ায় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের কাছে আসতে, প্রশ্ন করতে এবং তাদেরকে সত্যবাদী হিসাবে প্রতিপন্ন করতে নিষেধ করেছেন।
অনুরূপভাবে আলোচ্য হাদিসগুলিতে এও প্রমাণিত হয় যে, গণক ও জাদুকররা কাফির। কেন-না তারা অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার দাবি করছে, যা কি না কুফুরি। তদুপরি তারা আল্লাহ্কে ছেড়ে জিনের সেবা ও ইবাদাতের মাধ্যমেই তাদের উদ্দেশ্য সাধন করছে। অথচ এ কাজও কুফুরি এবং আল্লাহর সঙ্গে শরিক করারই নামান্তর। যে ব্যক্তি তাদের অদৃশ্য জ্ঞানের দাবিকে সত্য প্রতিপন্ন করে সে ও তাদেরই অনুরূপ। আর যেসব ব্যক্তি এ বিষয়গুলি এমন লোকদের কাছ থেকে গ্রহণ করে, যারা তা পরস্পর আদানপ্রদান করে থাকে, সে সব ব্যক্তির সঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোনো সম্পর্ক নেই। এসব লোক যাকে চিকিৎসা বলে ধারণা করে থাকে, তাকে মেনে নেওয়া ও গ্রহণ করা কোনো মুসলিমের জন্য জায়েজ নেই। যেমন বিড়বিড় করে মন্ত্রোচ্চারণ কিংবা জলে ইস্পাত চুবানো ইত্যাদি আরও অনেক কুসংস্কার যা তারা করে থাকে, তার কোনোটাই জায়েজ নয়। কেন-না তা দৈবকর্ম চর্চা ও মানুষকে বিভ্রান্ত করারই নামান্তর। এসব ব্যাপারগুলোকে যারা মেনে নেয়, তারা মূলত এ লোকদেরকে তাদের বাতিল ও কুফুরি কাজে সহযোগিতা করল। অনুরূপভাবে কোনো মুসলিম ব্যক্তির জন্য জ্যোতিষী ও দৈবজ্ঞানের দাবিদারদের কাছে গিয়ে একথা জিজ্ঞেস করা জায়েজ নেই যে, তার ছেলে কিংবা তার কোন আত্মীয় কাকে বিয়ে করবে? কিংবা স্বামী-স্ত্রী ও তাদের উভয়ের পরিবারে ভালবাসা ও মিল-মহব্বত হবে নাকি শত্রুতা ও দূরত্বের সৃষ্টি হবে ইত্যাদি। কেন-না এসব সে গায়েবি ও অদৃশ্য জ্ঞানেরই অন্তর্গত যা শুধু মহান আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানে না।সকল মুসলিম মনীষীদের সর্বসম্মত মতানুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ বৈধ। আর যে কোনো মুসলিম ব্যক্তিরই অধিকার রয়েছে যে, সে অভ্যন্তরীণ রোগের ডাক্তার কিংবা শৈল চিকিৎসক অথবা মানসিক রোগের ডাক্তার কিংবা অনুরূপ যে কারও কাছে যেতে পারে, যাতে তিনি তার রোগব্যাধি চিহ্নিত করে চিকিৎসাশাস্ত্রে তার জ্ঞান অনুযায়ী শরিয়ত কর্তৃক অনুমোদিত পথ্য দ্বারা তার চিকিৎসা করেন। কেন-না এটা সাধারণ বৈধ পন্থাগুলিরই অবলম্বনেরই অন্তর্গত। উপরন্তু এ ধরনের পন্থাবলম্বন আল্লাহর উপর নির্ভরতার পরিপন্থী নয়। কারণ আল্লাহ রোগ দিয়েছেন এবং সে রোগ নিরাময়ের ঔষধও বাতলে দিয়েছেন। যার জানার সে তা জেনেছে এবং যে জানেনি, এ পথ্য তার অজ্ঞাতই থেকে গেছে। অবশ্য আল্লাহ বান্দার উপর হারাম করেছেন এমন কোনো বস্তুকে তার রোগ নিরাময়ের উপায় নির্ধারণ করেননি। সুতরাং অসুস্থ ব্যক্তির জন্য সেই সব গণক, জ্যোতিষী ও দৈবজ্ঞদের কাছে যাওয়া বৈধ নয়, যারা দাবি করে যে, তাদের কাছে অসুস্থ ব্যক্তির রোগ চিহ্নিত করার গায়েবি জ্ঞান আছে। অনুরূপ অসুস্থ ব্যক্তির জন্যও এসব গণক ও দৈবজ্ঞদের দেওয়া তথ্য ও সংবাদের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা বৈধ নয়। কেন-না তারা গায়েবি বিষয়ে অনুমানের উপর ভিত্তি করেই এসব বলে থাকে কিংবা তারা তাদের ঈপ্সিত বিষয়ে সাহায্য নেওয়ার জন্য জিনদের হাজির করে থাকে। তার মানে এই নয় যে মুসলিমরা জ্যোতিষচর্চা করেন না। জ্যোতিষীদের চেম্বারে মুসলিম জাতকরাও গ্রহশান্তির জন্য আসেন। রত্ন ধারণও করেন।মুসলিম দেশে হয় কি না আমার জানা নেই। তবে ভারতে প্রচুর মুসলিম জ্যোতিষী পাওয়া যায়। পিরবাবাদের আমি ভবিষ্যৎ বাণী শোনাতে দেখেছি। ধর্ম ধর্মের জায়গায় আছে, ব্যাবসা ব্যাবসার জায়গায়।জ্যোতিষশাস্ত্র চর্চায় মুসলমানদের বেশ সুনাম অদ্যাবধি কাল থেকেই আছে। পেশাগত জীবনযাপনের তাগিদে এবং স্থল ও জলপথে বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাদের প্রয়োজন হত আকাশের গ্রহ-তারকাদের অবস্থান জানার। মুসলমানদের বিজ্ঞানে অগ্রসরতা এবং সপ্তম শতক হতে পনেরো শতক পর্যন্ত যেসকল মুসলমান বিদূষী জ্ঞান-বিজ্ঞানের শাখায় প্রভূত অবদান রেখেছেন তারা আর যে বিষয়ই নিয়েই পড়ে থাকুন না-কেন, তারা সবাই কিছু না-কিছু অবদান রেখেছেন এই জ্যোতিষশাস্ত্র বিজ্ঞানে। তারা গবেষণা করে গেছেন আর লিখেছেন একের পর এক বই।
আত্মবিশ্বাসহীন মানুষ আত্মনিবেদন করতে শেখে। আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে গর্ব অনুভব করে, দুঃখ-যন্ত্রণা-বঞ্চনাকে ভুলে থাকতে শেখে। এরা লড়াই জানে না, লড়াই দেখলে ভীত হয়।এমতাবস্থায় অদৃষ্ট বা নিয়তির শরণাপন্ন হয়।জেগে ওঠে জ্যোতিষ এবং জ্যোতিষীবাবুরা। হাত বড়িয়ে দেয় – একপক্ষে জ্যোতিষীবাবুর হাত, অপরপক্ষে জাতকের হাত।কী আছে হাতে ? রেখা ? রেখায় কী আছে ? আছে স্বল্প রেখাযুক্ত পরিষ্কার হাত এবং বহু সূক্ষ্ম রেখাযুক্ত হাত।লালচে হাত, গোলাপি হাত, সাদাটে হাত, হলদেটে হাত। আছে চওড়া তালু, বেঁটে ও মোটা আঙুল, কুশ্রী নখ।আছে চৌকো হাত, চৌকো হাতে লম্বা আঙুল, দার্শনিক হাত, শিল্পী হাত, আধ্যাত্মিক হাত। আছে নমনীয় বুড়ো আঙুল, অনমনীয় বুড়ো আঙুল।খুব লম্বা নখ, খুব লম্বা ও সরু নখ, খুব লম্বা নীলচে অথবা মলিন বর্ণের চোখ, ছোটো নীলচে নখ, ছোটো গোলাকার নখ, ছোটো অথচ নখের তলার দিকটা চ্যাপটা, ছোটো অথটচ নখের তলার দিকে সাদা চাঁদ, শরীরের ভিতর গভীরভাবে চেপে বসা চ্যাপটা নখ, নখে সাদা দাগ ইত্যাদি।
এমন কোনো মানুষ নেই যাঁর হাতে ভাঁজ বা কোঁচকানো দাগ বা রেখা নেই। কারোর ঘন দাগ, কারোর-বা অনেকটা ফাঁকা ফাঁকা।এইসব দাগগুলি আবার বিভিন্ন নামে পরিচয় আছে। যেমন—আয়ুরেখা, হৃদয়রেখা, ভাগ্যরেখা, রবিরেখা, বিবাহরেখা ইত্যাদি।এছাড়া হাতের উঁচুনীচু অংশগুলিতে আছে গ্রহস্থল – মানে কোথায় রবি অবস্থান করছে, কোথায় মঙ্গল অবস্থান করছে, কোথায় রাহু অবস্থান করছে ইত্যাদি।হাতের রং দেখেও জ্যোতিষবাবুরা ভাগ্যগণনা করে থাকেন। আছে তারা চিহ্ন, ক্রশ চিহ্ন, চতুষ্কোণ, যব বা দ্বীপ চিহ্ন, বৃত্ত বা চক্র চিহ্ন, ত্রিশূল, জাল চিহ্ন ইত্যাদি – এইসব চিহ্নগুলিও অনেক ভবিষ্যৎবার্তা দেয় বলে জ্যোতিষবাবুরা নিদান দেন।
মানুষের হাতের তালুতে থাকা যেসব ছাই-ছাতার উপর জ্যোতিষবাবুরা ভূত-ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন বলে দাবি করেন সেগুলি আসলে কী ? মানুষই একমাত্র প্রাণী যারা হাতের তালু মুঠো করতে পারে। হাতের তালু মুঠো করতে পারার কারণ তালুর এই ভাঁজগুলি।এই ভাঁজগুলি (গভীর রেখা ও সূক্ষ্ম রেখা) প্রাথমিকভাবে মানুষের মাতৃগর্ভে থাকাকালীনই তৈরি হয়। শিশু মায়ের গর্ভে যখন থাকে তখন তার হাত মুষ্ঠিবদ্ধ অবস্থায় থাকে। ভ্রূণ অবস্থায় শিশুর চামড়া ও মাংসপেশি সাত/আট সপ্তাহ নাগাদ তৈরি হয়।এই অবস্থায় মাংসপেশিতে জলের পরিমাণ যথেষ্ট বেশি থাকে। এরপর আস্তে আস্তে যতই মাংসপেশিগুলিতে জলের পরিমাণ কমতে থাকে ততই সংকোচনের ফলে মাংসপেশির উপর টান হয়ে এঁটে থাকা চামড়া ক্রমশ শিথিল হতে থাকে এবং কুঁচকে যেতে থাকে। ফলে হাতের তালুর চামড়ার বিভিন্ন জায়গায় ভাঁজ পড়ে যায়। শিশুর বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিশুর মুষ্ঠিবদ্ধ হাতে এই কোঁচকানো চামড়াই দাগ হিসাবে দেখি।এ দাগ ব্যক্তির মৃত্যু পরও থাকে।পেশিতন্তুর সংকোচনে তৈরি হয় সূক্ষ্মরেখা এবং দুটি পেশি-অংশের সংযোগস্থলে সৃষ্টি হয় গভীর রেখা।বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাতের তালুতে চামড়ার নীচের মাংসপেশির সংকোচন-প্রসারণের উপর নির্ভর করে হাতের তালুতে ছোটো ছোটো রেখা তৈরি হয়। মানুষের শরীরের যে অংশ সবচেয়ে বেশি ফোল্ড হয় এবং নড়াচড়া হয়, তা হল হাতের তালু, সে কারণে হাতের তালুতেই এত ভাঁজ সৃষ্টি হয়। যদি হাতের তালুর মতো পায়ের তালুও ভাঁজ করা যেত, তাহলে পায়েও এরকম দাগ আমরা পেতাম।মানুষ ছাড়াও গেরিলা, বাঁদর, শিম্পাঞ্জী গোত্রীয় প্রাণীদের হাতের তালুতে ভাঁজ লক্ষ করা যায়।তবে মানুষের তালুর মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ নয়।এই রেখা মানুষের কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে না, করতে পারে না।নানা কারণে মানুষের হাতের কবজি বা আঙুল কেটে বাদ হয়ে যায়, কিংবা দুর্ঘটনায় দুটো হাতই বাদ চলে যায় – এই যে যাদের হাত বা কবজি বা আঙুল কেটে বাদ হয়ে যয়, তাদের ভূত-ভবিষ্যৎ কোথায় লেখা থাকে ভেবে দেখব না আমরা ! যেমন ধরুন, কোনো ব্যক্তির বুড়ো আঙুলটা যদি না থাকে, তবে তো তার আয়ুরেখাও নেই – আয়ুরেখা নেই মানে, মৃত্যুও নেই।তাই হয় নাকি ! জ্যোতিষবিদ্যার সবচেয়ে বেশি প্রচলিত হচ্ছে কিরোর বই। কিরোর বই আমিও পড়েছি। তবে কলকাতায় ভৃগু প্রণীত জ্যোতিষ শিক্ষার বইও পাওয়া যায়। এই ভৃগু একাধারে জ্যোতিষজ্ঞ, যৌনবিষয়ক লেখক, গোয়েন্দা গল্পকার। এই কিতাব পড়েও অনেকে জ্যোতিষী ফলায় গ্রামেগঞ্জে।যাই হোক, কিরোর বই আপনিও পড়ে দেখতে পারেন। হাতের রেখা কীরকম হলে সেই হাতের মালিক কেমন ভাগ্যের অধিকারী হবেন, সেগুলিই উল্লেখ করা আছে। কিন্তু কার্যকারণ নেই। কোনো সংগত তথ্য নেই। আশাও করবেন না। কোনো কেনর উত্তর নেই।কারণ হস্তরেখাবিদদের সেই দায় আছে বলে তারা মনে করেন না। বরং বেশি লাফালাফি করলে মাসলম্যানদের দিয়ে কিমা করে দেবে আপনাকে।
জ্যোতিষীদের আর-একটি ভাগ্যগণনার পদ্ধতি হল সংখ্যাতত্ত্ব বা নিউমেরোলজি। অনেকে সংখ্যা-জ্যোতিষ বা অংক জ্যোতিষও বলে। তা অংকটা কী ? অবশ্য বলার চেষ্টা করব।সংখ্যাতাত্ত্বিক বা জ্যোতিষ মতে, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি মূহূর্তেই মানুষ নিজেকে, নিজের পরিমণ্ডলকে, সময়কে এককথায় সবকিছুকে একমাত্র সংখ্যা দ্বারাই পরিচিত করে। আর তা করে প্রায় অসচেতন থেকেই। যেমন,- ব্যক্তি বা বস্তুর নাম, স্থানের নাম, বিষয়ের নাম বা দিন, তারিখ, সময় ইত্যাদি যা কিছুই বলি না-কেন সব কিছুর মাঝেই লুকিয়ে আছে সংখ্যা। সংখ্যার সেই আধিভৌতিক দিক নিয়েই আলোচনা করে সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যা। জগতের সকল কর্মকাণ্ডই সংখ্যা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সংখ্যার যে একটি আধিভৌতিক (Mistrious) ভূমিকা জীবনে ও জগতে আছে। সংখ্যার এই অতিন্দ্রীয় প্রভাবই আধুনিক সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যার (Modern Numerology) আলোচ্য বিষয়।
জ্যোতিষ মতে, সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যা বস্তুত জ্যোতিষবিদ্যার চেয়েও প্রাচীন। জগতের প্রাচীনতম ধর্মগ্রন্থসমূহে এর উল্লেখ আছে বলে দাবি করেন। বেদ, বাইবেল প্রভৃতিতে যেমন এর উল্লেখ দেখা যায়, তেমনি পবিত্র কোরান শরিফের সুরাগুলিতেও নাকি সংখ্যায়িত লিখন পদ্ধতি দেখতে পাওয়া যায়। তাবিজ-কবজ লেখকগণ প্রায়শ সংখ্যায়ন পদ্ধতিতে লিখে থাকেন। সংখ্যাতত্ত্বের আবিষ্কার মানুষকে জ্যোতিষবিদ্যা (Astrology) এবং জ্যোতির্বিদ্যার (Astronomy) প্রতি আকৃষ্ট করেছে। গ্রিক দার্শনিক পিথাগোরাসকে (খ্রিস্টপূর্ব ৫৮২-৬০৭) আধুনিক সংখ্যাতত্ত্বের জনক বলা হয়ে থাকে। অবশ্য তারও বহু পূর্বে ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যাবিলনীয় সভ্যতার যুগেও এই বিদ্যার অনুশীলন হত বলে প্রমান পাওয়া গেছে। জ্যোতিষবিদরা মনে করেন, পিথাগোরাসের অনুসারী ফিলোলাস, নিকোমাকাস ছাড়াও হেরোডোটাস,সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল প্রমুখ গ্রিক পণ্ডিতগণ, এমনকি আইনস্টাইন সহ অন্যান্য খ্যাতিমান পণ্ডিতগণ এই বিদ্যার অনুশীলন করেছেন।সংখ্যাতত্ত্বের সঙ্গে ফলিত জ্যোতিষের (Applied Astrology) সম্পর্ক অতি নিবিড়। ফলিত জ্যোতিষে ১২টি রাশি আছে এবং ৯টি গ্রহ তাদের অধিপতি (Ruling Planet)। অঙ্কের জগতে মৌলিক সংখ্যা ৯টি (১ থেকে ৯)। শূন্য কোনো সংখ্যা নয়, তবে সংখ্যার পাশে বসে তার মান বৃদ্ধি করে মাত্র। তা পৃথিবী  (Univers) এর প্রতীক। গাণিতিক অঙ্ক যত বড়োই হোক তার পারস্পরিক যোগফল মৌলিক একক সংখ্যায় রূপান্তর করা যায়। আর এই মৌলিক রূপান্তরই হচ্ছে সংখ্যাতত্ত্বের প্রতিপাদ্য বিষয়। যেমন ৯৮৭৬ সংখ্যাটি পরস্পর যোগ করলে হয় ৯ + ৮ + ৭ + ৬ = ৩০। আবার ৩০ কে পরস্পর যোগ করলে হয় ৩ + ০ = ৩। অর্থাৎ যতক্ষণ-না একক সংখ্যায় আসবে ততক্ষণ পরস্পরকে যোগ করতে হবে। এক সময় তা ১ থেকে ৯ এর মধ্যে আসবেই। আর এই ১ থেকে ৯ সংখ্যা হল ৯টি প্রধান গ্রহের আধিভৌতিক বা অতিন্দ্রীয় প্রতিভূ যার প্রভাব মানব জীবনে অপরিসীম।
সংখ্যাতাত্ত্বিকগণ (Numerologist) প্রতিটি ব্যক্তি, বস্তু বা নামকে ইংরেজি বর্ণমালার ক্রমানুসারে সংখ্যায়িত করে মূল্যায়ন করেছে। কিন্তু অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনো সংখ্যাতত্ত্বভিত্তিক গণনা পাওয়া যাবে না, পাওয়া যাবে ANIRBAN BANDYOPADHYAY নামে। প্রশ্ন দেখা দিতে পারে পৃথিবীতে এত ভাষা থাকতে ইংরেজি ভাষাকে বেছে নেওয়া হল কেন ? এ প্রশ্নের উত্তর সংখ্যাতাত্ত্বিকগণই দিয়েছেন, বলছেন -- প্রাচীনকালের বিভিন্ন প্রতীকই মূলত কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন প্রাচীন ভাষায় সংখ্যাতত্ত্ব বর্ণিত হলেও আধুনিক সংখ্যাতত্ত্ববিদ্যা ইংরেজিকে বেছে নিয়েছেন এর আন্তর্জাতিক আবেদনের কথা বিবেচনা করেই। কেন-না এটি একটি আন্তর্জাতিক ভাষা এবং পৃথিবীর সকল গোলার্ধে এই ভাষা কমবেশি চর্চা হয়। অপরদিকে অন্যান্য প্রধান ভাষাগুলির আ-কার, ই-কার প্রভৃতি অথবা অক্ষর সংখ্যার প্রাচূর্যে বর্ণমালা অত্যন্ত জটিল। তাই ইংরেজিকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।এছাড়া পৃথিবীর আলাদা আলাদা ভাষায় আলাদা আলাদা সংখ্যাতাত্ত্বিক ভাগ্যবিচার ভিন্ন ভিন্ন হয়ে যাবে । কারণ সর্বশেষ যোগফল সংখ্যা একেক রকম হবে। সে ব্যাপারটা হবে বড়োই বিভ্রান্তকর।
তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক আমাদের প্রত্যেকের সংখ্যাগুলি। সংখ্যা দুই প্রকারে নির্ণয় করা যায় -- একটি জন্মসংখ্যা, অপরটি নামসংখ্যা। সঠিক জন্মতারিখ জানা থাকলেই শুধু জন্মসংখ্যায় নির্ণয়, নতুবা নামসংখ্যাই ধরতে হবে। জন্মসংখ্যার মতো নামসংখ্যা অতটা ভূমিকা রাখতে পারে না বলে জন্মসংখ্যার গুরুত্বই বেশি। আবার জন্মসংখ্যাও দুই প্রকারের, একটি জন্মদিনের সংখ্যা, অপরটি জন্মতারিখের সংখ্যা। আমরা জানি একক সংখ্যা হল ১ থেকে ৯ । শূন্য কোনো সংখ্যা নয়। বাকি সংখ্যাগুলি এই ১ থেকে ৯ এরই পুনরাবৃত্তি শুধু বা যৌগিক সংখ্যা। অতএব পুনরাবৃত্তির সংখ্যাগুলিকে পরস্পর যোগ করে একক সংখ্যায় আনতে হবে যতক্ষণ-না একক সংখ্যায় আসে। যেমন, ২৪ জানুয়ারি ২০১৬ এর জন্মতারিখের সংখ্যা ৭ হল যেভাবে। ২ + ৪ + ১ (জানুয়ারি মাসের সংখ্যা) + ২ + ০ + ১ + ৬ = পরস্পর যোগ করে হয় ১৬। যেহেতু ১৬ কোনো একক সংখ্যা নয়, তাই এটিকেও পরস্পর যোগ করতে হবে। যেমন, ১ + ৭ = ৮ । আর জন্মদিনের সংখ্যা ৬ হল ২ আর ৪ এর যোগফল (২ + ৪ = ৬)। জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাসকে ১ থেকে ১২ ধরতে হবে। অর্থাৎ যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ১, ১০, ১৯ ও ২৮ তারিখে, তাদের ১ হল জন্মদিনের সংখ্যা। যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ২, ১১, ২০ ও ২৯ তারিখে, তাদের ২ হল জন্মদিনের সংখ্যা। যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ৩, ১২, ২১ ও ৩০ তারিখে, তাদের ৩ হল জন্মদিনের সংখ্যা। যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ৪, ১৩, ২২ ও ৩১ তারিখে, তাদের ৪ হল জন্মদিনের সংখ্যা। যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ৫, ১৪ ও ২৩ তারিখে, তাদের জন্মদিনের সংখ্যা ৫। যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ৬, ১৫ ও ২৪ তারিখে, তাদের জন্মদিনের সংখ্যা ৬। যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ৭, ১৬ ও ২৫ তারিখে, তাদের জন্মদিনের সংখ্যা ৭। যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ৮, ১৭ ও ২৬ তারিখে, তাদের জন্মদিনের সংখ্যা ৮। যাদের জন্ম যে-কোনো মাসের ৯, ১৮ ও ২৭ তারিখে তাদের জন্মদিনের সংখ্যা ৯।
নামসংখ্যা নির্ণয়ের সূত্র হল -- ইংরেজি বর্ণমালায় ২৬টি বর্ণ আছে। এই ২৬টি বর্ণকে ১ থেকে ৯ সংখ্যায় আনতে হবে এইভাবে --  
A, I, J, Q, Y এর মান হল ১
B, K, R এর মান হল ২
C, G, L, S এর মান হল ৩
D, M, T এর মান হল ৪
E, H, N, X এর মান হল ৫
U, V, W এর মান হল ৬
O, Z এর মান হল ৭
F, P এর মান হল ৮ এই হল ২৬টি বর্ণের মান।
এবার নির্ণয় করি কারও নাম। ধরুন ANIRBAN নাম হলে তার নামসংখ্যা কত ? A ১ + N ৫ + I ১ + R ২ + B ২ + A ১ + N ৫ = ১৭ অর্থাৎ ১ + ৭ = ৮ এবং B ২+ A ১+ N ৫+ D ৪+ Y ১+ O ৭+ P ৮+ A ১+ D ৪+ H ৫+ Y ১+ A ১+ Y ১= ৪২  ।অর্থাৎ ৪ + ২ = ৬। পূর্ণ নামের সংখ্যা ৮ + ৬ = ১৪ অর্থাৎ ১ + ৪ = ৫। তাহলে দেখা যাচ্ছে ৮ ও ৫ দুটি সংখ্যাই এক্ষেত্রে প্রভাব রাখছে। এভাবেই সমস্ত নামের সংখ্যা নির্ণয় করা হয়।
সংখ্যা তো হল। কিন্তু সংখ্যা দিয়ে কী হবে? সংখ্যা দিয়ে ভাগ্যগণনা কীভাবে হবে ? সব উল্লেখ করব না। কলেবর বৃদ্ধি না-করে দু-চারটে উল্লেখ করছি। যে জাতকের নাম সংখ্যাতত্ত্ব বিচারে ১ হয়, তাহলে তাকে ধীরস্থির ও গম্ভীর মনে হলেও দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে জানে, কর্মে সক্রিয়, তেজি, নির্ভীক, পরাক্রমশালী, আত্মবিশ্বাসী, অহংকারী, চতুর, বাস্তববাদী এবং উচ্চাকাঙ্খী। উচ্চাকাঙ্খা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকে। সহজে হার স্বীকার করে না। মনোবল প্রচুর বলে ভয় পেয়ে পিছু হটে না। প্রবল বিপর্যয়ের মধ্যেও ধীরস্হিরভাবে কুটিল বুদ্ধির দ্বারা এগিয়ে যেতে পারে। অন্যকে বোকা বানাতে পারে। নিজের অবস্থান দৃঢ় করার জন্য যা করা দরকার করতে পারে। চেহারায় আকর্ষণীয় শক্তি থাকায় সহজেই অন্যেরা আকৃষ্ট হয়। ব্যক্তিত্বসম্পন্ন বলে সবসময় নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করে। কথাবার্তায় শাণিতভাব প্রকাশ পায়। নিজের ঢোল নিজে পেটায়। চাটুকাররা মন জয় করতে পারে। কোন্ কাজ কখন করতে হবে তা বোঝে। সব বিষয়ে সূক্ষ্ম দৃষ্টি রাখে। একরোখা স্বভাবের জন্য নিজের পছন্দমত না-হলে কারও কথা শুনে না। সব বিষয়ে সবার উপর কর্তৃত্ব করতে চায়। কারও অধীনে থাকা পছন্দ নয়। যে-কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী। হঠাৎ রেগে যাওয়ার প্রবণতা আছে।সাংগঠনিক দক্ষতা থাকায় অন্যকে পরিচালনা করা, নেতৃত্ব দেওয়া এবং বড়ো বড়ো পরিকল্পনা ও চিন্তাধারার জন্য জনমনে প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে। সম্মান এবং উচ্চপদও পেতে পারে। আবার নিজেই সব ভালো বুঝে এই খামখেয়ালির জন্য অনেক সময় মাশুলও দিতে হতে পারে। গ্রহ অশুভ কালে বড়ো ধরনের পতনও ঘটতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী কাজে মন না দিয়ে যে-কোনো মুহূর্তে কাজে উৎসাহী। উদারতা, মানবতা, বিচক্ষণতা, ন্যায়পরায়ণতা, ধর্মভীরুতা এবং প্রতিভা যেমন আছে -- তেমনি ক্রুরতা, নিষ্ঠুরতাও অসম্ভব নয়।ভ্রমণে সদা উৎসুক বলে বন, জঙ্গল, শহর ও বিদেশ ভালোবাসে। সন্তানদের প্রতি স্নেহপ্রবণ। ভাবপ্রবণতা থাকলেও বাস্তবতার বাইরে যায় না। প্রেমের ব্যাপারে কোনো চিন্তা না-করেই হৃদয় দিতে পারে। আবার সামান্য আঘাতে ভালবাসার মানুষটিকে চিরতরে ত্যাগ করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করেনা। কারো ক্ষেত্রে একাধিক প্রেমে জড়িয়ে পড়াও অসম্ভব নয়।
আবার কোনো জাতকের নাম সংখ্যাতত্ত্ব বিচারে ২ হয়, তাহলে আবেগপ্রবণ, অনুভূতিশীল, কোমল হৃদয়, কল্পনাপ্রিয়, ভদ্র, নম্র, লাজুক, বৈচিত্র্যপ্রিয় ও শিল্পীমনা। তারা ভাবপ্রকাশে কুণ্ঠিত এবং তাদের মন ও চিন্তা দ্বি-ধারায় প্রবাহিত হয়। তাদের মনের স্থিরতা নেই বলে ভাবধারায় দ্রুত পরিবর্তন আসে। তাদের আত্মসম্মান জ্ঞান প্রচণ্ড। তাই আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে তারা কোনৈ কিছু করতে পারে না। তারা সামাজিক রীতি-নীতির প্রতি আকৃষ্ট। জীবন ও ঘর-সংসার তাদের কাছে প্রিয়। তারা আত্মত্যাগী বলে প্রিয়জনদের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে জানে। তাদের জীবনের ট্র্যাজেডি হল তবুও মানুষ তাদের ভুল বুঝতে পারে! তারা সহজেই ভুল স্বীকার করতে পারে। তারা খুব অল্পতেই কষ্ট পায় এবং খুব সহজেই ভেঙে পড়ে। অন্যের বক্তব্য শোনার জন্য আগ্রহী।
কোনো জাতকের নাম সংখ্যাতত্ত্ব বিচারে ৩ হয়, তাহলে এটি বৃহস্পতির প্রতীক। চাকরি, ব্যাবসা বা ধর্মীয় বিষয়ে তারা কর্মদক্ষতা প্রমাণ করতে পারে। তারা ধীর স্থির, নিয়মানুবর্তী, বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন ও ধার্মিক। সবার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে চেষ্টা করে। তাদের জীবনে উত্থান-পতনজনিত জীবননাট্যের ক্লাইমেক্স খুব কমই দেখা যায়। তবে অনেক ক্ষেত্রে লোভনীয় নেতা হওয়ার সুযোগ এলেও অনেকে অনাগ্রহ প্রকাশ করে থাকে। তাদের মধ্যে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে একটা আধ্যাত্মিক চেতনা বৃদ্ধি পায়। এরা বিশিষ্ট সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী, ধর্ম প্রচারক, শিক্ষক ও কর্মক্ষেত্রে বড়ো কর্তা হতে পারেন। কর্মক্ষেত্রে দ্রুত পদোন্নতির দৌড়ে তারাই এগিযে থাকেন। তাদের উচ্চাকাঙ্খা তীব্র, বুদ্ধি তীক্ষ্ণ এবং তারা পরিশ্রমী বলেই সাফল্য ধরতে তাদের দেড়ি হয়না। অনেক সময় টুকরো কথা দিয়ে তারা ঠাট্টা করতে পারে। অনেক সময় অনেক ক্ষেত্রে বেশি কথা বলার জন্য সব কথার মধ্যে সামঞ্জস্য নাও থাকতে পারে। কেউ কেউ আবার অন্তঃমুখীও হতে পারে। তাদের যারা শত্রু হয় তারা সবাই প্রায় বুদ্ধিমান শত্রু। অনেক ক্ষেত্রে ব্যর্থতার বোঝা তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলতে পারে ইত্যাদি।
সংখ্যাতত্ত্ব শুধু মানবজীবনেই নয়, সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা ক্ষেত্রেই সংখ্যার প্রভাব আছে বলে জ্যোতিষবাবুরা দাবি করেন। মনে করুন, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর।  বিশ্ব বিস্ময়ে হতবাক হয়ে দেখে যুক্তরাষ্ট্রের উপর হামলার এক মর্মান্তিক দৃশ্য । ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, অর্থাৎ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার টুইন টাওয়ারটি তাসের ঘরের মতো মাটিতে মিশে গেল। গোটা বিশ্ব কেঁপে উঠল। তারপর থেকে বিশ্বের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে যেতে থাকে। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামাজ্যবাদীদের সর্বাত্মক যুদ্ধের ঘোষণা হল। আর আমরা দেখতে পাই এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে বিশ্বজুড়ে এক সর্বগ্রাসী দানবের সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করতে।সবাই যখন নাচছে, তখন জ্যোতিষীবাবুরাই-বা বসে থাকবেন কেন !  তাঁরা নেচে উঠলেন, নেমে পড়লেন কোমর বেঁধে। ঘোলা জলে মাছ ধরার ফন্দি সম্বল করে। বললেন -- রাষ্ট্রপতি George W. Bush -এর মোট অক্ষর সংখ্যা হল ১১টি। ১১ সংখ্যাটি হল দারুণ অশুভ সংখ্যা। সমস্ত কিছুর মূলেই আছে এই ১১
এক নজরে তাহলে সেটাই দেখি : (১) হামলার তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর, (২) হামলার তারিখ ৯/১১, অর্থাৎ ৯ + ১ + ১ = ১১, (৩) ১১ সেপ্টেম্বর  হল বছরের ২৫৪ তম দিন = ২ + ৫ + ৪ = ১১, (৪) ১১ সেপ্টেম্বেরের পরে বছর শেষ হতে আর ১১১ দিন বাকি ছিল, (৫) টুইন টাওয়ার পাশাপাশি দাঁড়ানো, যা দেখতে ১১, (৬) প্রথম বিমান যেটি আঘাত হানে, সেটি ১১ নম্বর ফ্লাইট, (৭) American Airlines মানে AA, অর্থাৎ A হচ্ছে ইংরেজি বর্ণমালার প্রথম অক্ষর, মানে American Airlines = AA = ১১, (৮) নিউইয়র্ক স্টেট হচ্ছে ইউনিয়নে যুক্ত হওয়া ১১ নাম্বার স্টেট, (৯) New York City, এখানেও ১১টি অক্ষর, (১০) Afghanistan, এখানেও ১১ টি অক্ষর, (১১) The Pentagon, এখানেও ১১ টি অক্ষর, (১২) ফ্লাইট ১১ – ৯২ অন বোর্ড – ৯ + ২ = ১১, (১৩) ফ্লাইট ৭৭ – ৬৫ অন বোর্ড – ৭৭ = ১১ x ৭ -  ৬ + ৫ = ১১, (১৪) Air Force One = ১১ অক্ষর, (১৫) Saudi Arabia = ১১ অক্ষর, (১৬) ww terrorism = ১১ অক্ষর, (১৭) ইউ এস স্টেট সেক্রেটারি Colin Powell = ১১ অক্ষর, (১৮) ১১ নভেম্বর  হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের Remembrance day, আবার নভেম্বর হল ১১তম মাস, (১৯) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় আঘাত হানা বিমানের পাইলট ছিল Mohamed Atta, Mohamed Atta = ১১ অক্ষর।
উল্লিখিত আলোচনা থেকে আমরা কোন্ সিদ্ধান্তে আসতে পারি দেখা যাক -- সিদ্ধান্ত : ১১ একটি অলৌকিক সংখ্যা, তাই ১১ সেপ্টম্বরের ঘটনাটি একটি অলৌকিক ঘটনা।বাইবেল ও বিভিন্ন প্রাচীন মিথে শয়তানের চিহ্নের সঙ্গে ১১ সংখ্যার একটা যোগ পাওয়া যায়। নিউ টেস্টামেন্টে শয়তানের চিহ্ন ৬৬৬, যা ১১ দ্বারা বিভাজ্য।ধর্মক্থা শব্দটি ইংরেজি বর্ণমালা বা রোমানে লিখি, তবে দেখা যায় ‘dharmakatha’, গুনে দেখুন ১১টি অক্ষর।
১১ তে মিল পেলেন অনেক, ১১ তে অমিলও পাবেন অনেক। টুইন টাওয়ারের দুর্ঘটনায় এমন অসংখ্য বিষয়-পূর্বাপর পাওয়া যাবে যার সঙ্গে ১১ সংখ্যার বা অক্ষরের কোনো সম্পর্ক নেই। দেখুন -- (১) হামলার বছর ২০০১ = ২ + ০ + ০ + ১ = ৩ -- ১১ নয়। (২) এরোপ্লেনগুলি আঘাত হানে সকাল ৯টার দিকে -- ১১ টার দিকে নয়।(৩) ৪টি বিমান হামলা করেছে -- ১১ নয়। (৪) এরোপ্লেনে লোকের সংখ্যা ২৬৬ = ২ + ৬ + ৬ = ১৪ -- ১১ নয়। (৫) একটি এরোপ্লেনের নম্বর ৭৬৭ = ৭ + ৬ + ৭ = ২০ -- ১১ নয়।(৬) আরেকটি এরোপ্লেনের নম্বর ৭৫৭ = ৭ + ৫ + ৭ = ১৯ -- ১১ নয়। (৭) ৭৫৭ নম্বর এরোপ্লেনের ফুয়েল ক্যাপাসিটি ২০,০০০ গ্যালন  -- ১১ হাজার গ্যালন নয়।(৮) ৭৫৭ নম্বর এরোপ্লেনের ডানার দৈর্ঘ্য ১২৪ ফুট = ১ + ২ + ৪ = ৭ -- ১১ নয়।(৯) ৭৫৭ নম্বর এরোপ্লেনের ডানার দৈর্ঘ্য ১৫৬ ফুট = ১ + ৫ + ৬ = ১২ -- ১১ নয়।(১০) একটি টাওয়ারের উচ্চতা ১৩৬২ ফুট = ১ + ৩ + ৬ + ২ = ১২ -- ১১ নয়।(১১) অন্যটির উচ্চতা ১৩৬৮ = ১ + ৩ + ৬ + ৮ = ১৮ -- ১১ নয়।(১২) অন্য ফ্লাইটগুলি UA ৯৩ = ৯ + ৩ = ১২ -- ১১ নয়।(১৩) UA ১৭৫ = ১ + ৭ + ৫ = ১৩ -- ১১ নয়।(১৪) ফ্লাইট ১১ এর প্যাসেঞ্জার ছিল ৮১ জন = ৮ + ১ = ৯ -- ১১ নয়।(১৫) Boston = ৬টি অক্ষর -- ১১ নয়।(১৬) Massachusetts = ১৩টি অক্ষর -- ১১ নয়।(১৭) Pennsylvania = ১২টি অক্ষর -- ১১ নয়।(১৮) Washington D.C. = ১২টি অক্ষর -- ১১ নয়।(১৯) Los Angeles = ১০ অক্ষর -- ১১ নয়।(২০) হাইজ্যাকারদের সংখ্যা ১৯ = ১ + ৯ = ১০ -- ১১ নয়।(২১) Tony Balair = ১০ অক্ষর -- ১১ নয়।

একই ঘটনাকে অন্য সংখ্যা দিয়েও প্রমাণ করা যাবে আরেকটি  অলৌকিক সংখ্যা দিয়ে। ২ সংখ্যা দিয়েও কিছু ঘটনা মেলানো যাচ্ছে।দেখুন -- (১) হামলার তারিখ ১১/৯ = ১১ – ৯ = ২, (২) হামলার তারিখ ১১ সেপ্টেম্বর  = ১ + ১ = ২, (৩) ১১ সেপ্টেম্বর হচ্ছে বছরের ২৫৪ তম দিন = ২ + ৫ + ৪ = ১১ = ১ + ১ = ২, (৪) বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা => ২ টি টাওয়ার, (৫) World Trade Center কে আঘাত হেনেছে ২ টি বিমান, (৬) প্রতি বিমানে ২ টি ডানা আছে,(৭) প্রথম আঘাতকারী বিমানের ফ্লাইট নাম্বার ১১ = ১ + ১ = ২, (৮) New York = ২টি শব্দ, (৯) The Pentagon = ২ টি শব্দ।
অনেকে ১৯ সংখ্যাটিকে খুব গুরুত্ব দেন। অথচ অনেক কিছুই আছে যা ১৯ সংখ্যার সঙ্গে খাপ খায় না। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরানের সংখ্যা দেখা যেতে পারে। যেমন দেখুন -- (১) কোরানে পারা ৩০, যা ১৯ দিয়ে বিভাজ্য নয়।(২) কোরানে রুকু ৫৫৮ টি, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।(৩) সিজদাহ ১৫টি, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।(৪) মাক্কি সুরা ৮৬, মাদানি সুরা ২৬টি, কোনোটিই ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।(৫) নোকতা ১,০৫,৬৮৪টি, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।(৬) ‘আল্লাহ’ শব্দটি সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য ধরে নিলেও (আসলে নয়) -- রসুল, মোহাম্মদ সা, জিব্রাইল, মানুষ প্রভৃতি অসংখ্য শব্দ আছে যার সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।(৭) বিসমিল্লায় ১৯টি অক্ষর থাকলেও কলেমা তাইয়েবা (“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ…”), কলেমা শাহাদাত, আউজুবিল্লাহ, এমন অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ বাক্যের অক্ষর ১৯টি নয়।(৮) সুরা ৯৬ এর অক্ষর সংখ্যা ৩০৪টি, যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য হলেও সুরা ১, ২, .,  এমনকি ১১০ বা অন্য সুরাগুলি অক্ষর সংখ্যা ১৯ দ্বারা বিভাজ্য নয়।(৯) ১১০ নম্বর সুরায় শব্দের সংখ্যা ১৯টি, বাকি সুরাগুলির শব্দসংখ্যা ১৯ নয়।
৪ সংখ্যা দিয়েও অলৌকিক তত্ত্ব দেওয়া যেতে পারে। দেখুন -- (১) আল্লাহ শব্দটিতে অক্ষর ৪টি।(২) ৪ নম্বর সুরায় আয়াত ১৭৬ = ৪ x ৪৪ = ১৭৬।(৩) সুরা এখলাসের আয়াত সংখ্যা ৪।(৪) সুরা এখলাসের প্রথম আয়াত যেখানে আল্লাহর একত্ব সম্বন্ধে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে (কুলহু আল্লাহু আহাদ), প্রথম আয়াতটিতে শব্দ সংখ্যা ৪টি।(৫) সুরা এখলাস ১১২ নম্বর সুরা, যা ৪ দ্বারা বিভাজ্য = ১১২/৪ = ২৮ =  ২ + ৮ = ১০ = ১ + ০ = ১ অর্থাৎ আল্লাহ এক।(৬) কোরানে আয়াত সংখ্যা ৬২৩৬, যা ৪ দ্বারা বিভাজ্য।(৭) আসমানি কিতাবের সংখ্যা ৪টি।(৮) আসমানি কিতাব নাজিলকৃত রসুল ৪ জন।(৯) প্রধান ফেরেশতা ৪ জন।অতএব প্রমাণিত হল যে কোরান অলৌকিক এবং এই ৪ সংখ্যাটি একটি অলৌকিক সংখ্যা। প্রকৃতিতেও এরকম ‘অলৌকিক’ সংখ্যার উদাহরণ হাজার হাজার পাওয়া যাবে।

নিউমেরোলজিস্টরা ১ থেকে ৯ পর্যন্ত প্রতিটি সংখ্যার জন্য আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য লিপিবদ্ধ করে গেছেন। এই বৈশিষ্ট্য উল্লেখের ব্যাপারে নিউমেরোলজিস্টদের মতামতও ভিন্ন, স্ববিরোধিতায় ভরপুর।এ ব্যাপারে অবশ্য নিউমেরোলজিস্টদের কোনো ব্যাখ্যা নেই। নিউমেরোলজি বিজ্ঞানের কোনো শর্তকেই তোয়াক্কা করে না। সংখ্যা কীভাবে মানুষকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করলে নিউমেরোলজিস্টরা বলেন – “প্রত্যেকটি সংখ্যার একটি করে তড়িৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ আছে। সেই তরঙ্গই মানুষের ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করে”।মনে রাখতে হবে, তড়িৎ ও চুম্বকত্ব পদার্থের দুটি মৌলিক ধর্ম, এটি পদার্থের বিশেষ অবস্থায় প্রকাশ পায়।কিন্তু ‘সংখ্যা’ কোনো পদার্থ নয়, এটি একটি গাণিতিক ধারণা।অতএব সংখ্যায় তড়িৎ-চুম্বকীয় তরঙ্গ থাকার ব্যাপারটা হল একটি লোক ঠকানো উদ্ভট কল্পনা।আমি একজন কম্যুনিস্ট তথা বামপন্থী প্রাবন্ধিককে চিনতাম, যার পিতৃদত্ত নাম ছিল জ্যোতির্ময় ঘোষ – তিনি নিউমেরোলজিস্টের পরামর্শে নাম বদলে করলেন জ্যোতি ঘোষ। তিনি পেশায় ফিজিক্সের অধ্যাপক ছিলেন। নামের বানান থেকেই যদি ভাগ্য নির্ধারিত হয় তাহলে যে ব্যক্তিরা একাধিক নামেই বিখ্যাত, তাদের ক্ষেত্রে কোন নামটি সঠিক বলে ধরবেন ? দেখুন -- মানিক, সত্যজিৎ রায়; রীনা, অপর্ণা সেন; রমা, সুচিত্রা সেন; মোহর, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়; বুম্বা, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়; সুভাষচন্দ্র বসু, নেতাজি, নেতাজি সুভাষ; গান্ধিজি, বাপুজি, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি; মার্ক টোয়েন, স্যামুয়েল ল্যাংহর্ন ক্লিমেন্স; এপিজে আবদুল কালাম, আবুল ফকির জয়নুলাবউদ্দিন আবদুল কালাম; পিভি নরসিংহ রাও, পামুলাপ্রতি ভেঙ্কটনরসিমহা রাও; পিটি উষা, পিলাভুল্লাকান্দি থেক্কেপরম্বিল উষা; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথ টেগোর ইত্যাদি। নিউমেরোলজিস্টরা যদি এদের ভাগ্যগণনা করতে নামে তাহলে তো ন্যাজে আর গোবরে হয়ে যাবেন। নাম ভিন্ন, সংখ্যাও ভিন্ন – অতএব ভাগ্যবিচারও ভিন্ন হবে। তাহলে হলটা কী ! আর-একটা মোক্ষম উদাহরণ দিয়ে সংখ্যাতত্ত্বের আলোচনা শেষ করব। আডলফ হিটলার, এই ব্যক্তিকে চেনেন না এমন কোনো শিক্ষিত ব্যক্তি আছেন বলে মনে হয় না। সেই বিশ্বত্রাস হিটলার, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মহানায়ক হিটলার – জন্মেছিলেন ১৮৮৯ সালে ২০ এপ্রিল। হিটলারের জন্মসংখ্যা হল ২ + ০ + ০ + ৪ + ১ + ৮ + ৮ + ৯ = ৩২ = ৩ + ২ = ৫।নিউমেরোলজিস্টদের বিচারে ৫ জন্মসংখ্যা ব্যক্তিরা দয়া ও ন্যায়নিষ্ঠায় ভরপুর হয়ে থাকেন। ইতিহাস কাঁদবে, না হাসবে ?

জ্যোতিষীবাবুরা মানুষের ভাগ্য বলে দেওয়ার জন্য আরও একটি পথ খুঁজে পেয়েছেন। সেই পদ্ধতিটি হল ‘তিল’। আমি আগে কখনো শুনিনি যে মানুষের শরীরে যে তিল দেখতে পাওয়া যায়, সেই তিল দেখে নাকি ভাগ্য বলে দেওয়া যায়। বছর পঁচিশ আগে হাবড়ায় এক জ্যোতিষালয়ে বিশাল গণ্ডগোল এবং জ্যোতিষবাবুকে উত্তমমধ্যম কেলানো। জ্যোতিষীবাবু তাঁর খরিদ্দার এক তরুণীর ডান স্তনে তিল আছে বলে দাবি করেন।তরুণীটি যতই বলে তাঁর ডান স্তনে কোনো তিল নেই, জ্যোতিষবাবু ততই বলতে থাকেন তাঁর ডান স্তনে তিল আছে, থাকতেই হবে। লক্ষণ তাইই বলছে। তিনি আরও একবার স্তন খুলে যাচাই করতে বলে। তরুণীটি মেজাজ ঠিক রাখতে না-পারে জ্যোতিষীবাবুর ফর্সা টুকটুকে গালে সপাটে চড় কষিয়ে লাল করে দেয়। চেম্বারে নারীঘটিত গন্ধ পেয়ে বাইরে লোকজনও চলে আসে এবং জ্যোতিষীবাবুর চেম্বার তুলে দেয়। এরপর থেকে তিলের উপর আমারও বেশ আগ্রহ জন্মালো। কারণ আমার শরীরেও যে গোটা কয়েক তিল আছে ! বইপত্রও কিছু ঘাঁটাঘাঁটি করতে হল। যত্তসব !
প্রাচীন সমুদ্র শাস্ত্রে তিল দেখে ভাগ্য নির্ধারণের পদ্ধতি বর্ণনা করা আছে।মানুষের দেহে তিলের উপস্থিতি নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলে থাকেন। তিল দেখে ভাগ্য নির্ধারণের প্রথা প্রাচীনকাল থেকেই চলে আসছে। এখনও অনেকে এ প্রথাতে বিশ্বাসী। শরীরের বিভিন্ন অংশে তিলের উপস্থিতি, রং, আকৃতি প্রভৃতি দেখে মানুষের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা করা। বলা হয় -- পুরুষের শরীরে ডান দিকে এবং নারীদের শরীরে বাঁ দিকে তিল থাকা শুভ। আবার কোনো ব্যক্তির শরীরে ১২টির বেশি তিল হওয়া শুভ বলে মনে করা হয় না। ১২টার কম তিল হওয়া শুভ ফলদায়ক। দেশের একেক অংশে তিল একেক অর্থ বহন করে।
ভ্রু : যাদের ভ্রুতে তিল থাকে তারা প্রায়ই ভ্রমণ করেন। ডান ভ্রুতে তিল থাকলে ব্যক্তির দাম্পত্য জীবন সুখী হয়। আবার বাঁ ভ্রুর তিল দুঃখী দাম্পত্য জীবনের সঙ্কেত দেয়।
মাথা : মাথার মাঝখানে তিল থাকলে তা নির্মল ভালোবাসার প্রতীক। ডান দিকে তিল থাকা কোনো বিষয়ে নৈপুণ্য বোঝায়। আবার যাদের মাথার বাঁ দিকে তিল আছে তারা অর্থের অপচয় করেন। মাথার ডান দিকের তিল ধন ও বুদ্ধির চিহ্ন। বাঁ দিকের তিল নিরাশাপূর্ণ জীবনের সূচক।
চোখের মণি : ডান চোখের মণিতে তিল থাকলে ব্যক্তি উচ্চ বিচারধারা পোষণ করেন। বাঁ দিকের মণিতে যাদের তিল থাকে তাদের বিচারধারা ভালো নয়। যাদের চোখের মণিতে তিল থাকে তারা সাধারণত ভাবুক প্রকৃতির হন।
চোখের পাতা : চোখের পাতায় তিল থাকলে ব্যক্তি সংবেদনশীল হন। তবে যাদের ডান পাতায় তিল থাকে তারা বাঁ পাতায় তিলযুক্ত লোকের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল।
কান : কানে তিল থাকা ব্যক্তি দীর্ঘায়ু হন।
মুখ : স্ত্রী বা পুরুষের মুখমণ্ডলের আশপাশের তিল তাদের সুখী ও ভদ্র হওয়ার সঙ্কেত দেয়। মুখে তিল থাকলে ব্যক্তি ভাগ্যে ধনী হন। তার জীবনসঙ্গী খুব সুখী হন।
নাক : নাকে তিল থাকলে ব্যক্তি প্রতিভাসম্পন্ন হন এবং সুখী থাকেন। যে নারীর নাকে তিল রয়েছে তারা সৌভাগ্যবতী হন।
ঠোঁট : যাদের ঠোঁটে তিল রয়েছে তাদের হৃদয় ভালোবাসায় ভরপুর। তবে তিল ঠোঁটের নিচে থাকলে সে ব্যক্তির জীবনে দারিদ্র্য বিরাজ করে।
গাল : গালে লাল তিল থাকা শুভ। বাঁ গালে কালো তিল থাকলে, ব্যক্তি নির্ধন হয়। কিন্তু ডান গালে কালো তিল থাকলে তা ব্যক্তিকে ধনী করে। থুতনি : যে স্ত্রীর থুতনিতে তিল থাকে তিনি সহজে মেলামেশা করতে পারেন না। এরা একটু রুক্ষ স্বভাবের হন।
কাঁধ : ডান কাঁধে তিল থাকলে সে ব্যক্তি দৃঢ়চেতা। আবার যাদের বাঁ কাঁধে তিল থাকে তারা অল্পেই রেগে যান।
হাত : যার হাতে তিল থাকে তারা চালাক-চতুর হন। ডান হাতে তিল থাকলে ব্যক্তি শক্তিশালী হন। আবার ডান হাতের পেছনে তিল থাকলে তারা ধনী হয়ে থাকেন। বাঁ হাতে তিল থাকলে সে ব্যক্তি অনেক বেশি টাকা খরচ করতে পছন্দ করেন। আবার বাঁ হাতের পেছনের দিকে তিল থাকলে সে ব্যক্তি কৃপণ স্বভাবের হন।
বাহু : যে ব্যক্তির ডান বাহুতে তিল থাকে তারা প্রতিষ্ঠিত ও বুদ্ধিমান। বাঁ বাহুতে তিল থাকলে ব্যক্তি ঝগড়াটে স্বভাবের হন। তার মাথায়ও খারাপ চিন্তাভাবনা থাকে।
আঙুল : যাদের আঙুলের তর্জনীতে তিল থাকে তারা বিদ্বান, ধনী এবং গুণী হয়ে থাকেন। তবে তারা সব সময় শত্রুদের কারণে সমস্যায় থাকেন। বৃদ্ধাঙ্গুলে তিল থাকলে ব্যক্তি কর্মঠ, সদ্ব্যবহার এবং ন্যায়প্রিয় হন। মধ্যমায় তিল থাকলে ব্যক্তি সুখী হন। তার জীবন কাটে শান্তিতে। যে ব্যক্তির কনিষ্ঠায় তিল রয়েছে তারা ধনী হলেও জীবনে অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতে হয়। অনামিকায় তিল থাকলে ব্যক্তি জ্ঞানী, যশস্বী, ধনী ও পরাক্রমী হন।
গলা : গলার সামনের দিকে তিল থাকলে ব্যক্তির বাড়িতে বন্ধু-বান্ধবের আনাগোনা লেগে থাকে। গলার পিছনে তিল থাকলে সে ব্যক্তি কর্মঠ হন। কোমর : যে ব্যক্তির কোমরে তিল থাকে, তার জীবনে সমস্যার আনাগোনা লেগেই থাকে।
বুক : ডান দিকের বুকে তিল থাকা শুভ। এমন স্ত্রী খুব ভালো হয়। পুরুষ ভাগ্যশালী হয়। বাঁ দিকের বুকে তিল থাকলে স্ত্রীপক্ষের তরফে অসহযোগিতার সম্ভাবনা থাকে। বুকের মাঝখানের তিল সুখী জীবনের সঙ্কেত দেয়।
পা : যে জাতকের পায়ে তিল রয়েছে তারা অনেক ভ্রমণ করেন।
পেট : যে ব্যক্তির পেটে তিল আছে তারা খুব খাদ্যরসিক হয়। মিষ্টি তাদের অত্যন্ত প্রিয়। তবে তারা অন্যকে খাওয়াতে খুব একটা পছন্দ করে না।
হাঁটু : ডান হাঁটুতে তিল থাকলে গৃহস্থজীবন সুখী হয়। বাঁ হাঁটুতে তিল থাকলে দাম্পত্য জীবন দুঃখময় হয়।
উঃ, ভাবা যায় না। জ্যোতষীবাবুদের কী সৃজনশীলতা ! তিলকে তাল করা জ্যোতিষীবাবুদের তিল প্রসঙ্গে কী বলছেন চিকিৎসা বিজ্ঞান ? তিল কখনোই মানুষের ভাগ্য নির্ণায়ক ও নিয়ন্ত্রক নয়। মানুষের শরীরের তিল আদতে আপাতনিরীহ স্কিন ডিজিজ। তিল আমরা সবাই কম বেশি ফ্রিকেলস শব্দটির সঙ্গে পরিচিত। যার বাংলা প্রতিশব্দ হচ্ছে তিল বা ক্ষুদ্র চিহ্ন। এটি এমন ধরনের দাগ যার বর্ণ বাদামি, আকারে ২ থেকে ৪ মিলিমিটারের মত গোলাকার, ত্বকের সমান স্তরে অবস্থান করে এবং মূলত ত্বকের কোনো ক্ষতিসাধন করে না। তবুও সবাই এর থেকে পরিত্রাণ চেয়ে থাকেন। যদিও এটা কোনো রোগ বা শারীরিক সমস্যা নয়, এটি অনেকের কাছেই বিব্রতকর। ফর্সা ত্বকে এ দাগ বেশি পরিলক্ষিত হয়। এটা অনেকটাই বংশগত, পরিবারের কারও এ সমস্যা থেকে থাকলে আপনার হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। ফ্রিকেলস সূর্য রশ্মিতে আরও বেশি প্রকট আকার ধারণ করে তাই সান এক্সপোজড জায়গাগুলিতে বেশি হতে দেখা যায়। এছাড়া সারা শরীরেই ফ্রিকেলস হতে পারে। বাজারে অনেক ব্র্যান্ডের ফ্রিকেলস আউট ক্রিম পাওয়া যায়, যার সবই কম-বেশি ব্লিচিং উপাদান দিয়ে তৈরি। আর ব্লিচিং পদার্থ আমাদের স্পর্শকাতর ত্বকের জন্য হুমকি স্বরূপ।
তিল বা ফ্রিকেলস সাধারণত দুই ধরনের হয় – (১) এফিলাইডস এরা সমতল এবং লালচে বাদামি রঙের হয়ে থাকে। মূলত গ্রীষ্মকালে দেখা দেয় এবং শীত এলেই চলে যায়। এই রকমের ফ্রিকেলস বংশগত হতে পারে। (২) লেনটিজাইন্স লেনটিজাইন্স সম্ভবত ছোটো ছোটো ট্যানের দাগের মতো বাদামি বা কালো রঙের হতে দেখা যায়। এ ধরনের তিল এফিলাইডস থেকেও গাঢ় রঙের হয়। আর শীতকালে চলেও যায় না। সারা বছর ব্যাপী এটি আপনার সুন্দর ত্বকে রাজত্ব করে বেড়ায়। এটিও অনেকটা বংশগত সমস্যা। ফ্রিকেলস প্রধানত কালো বা বাদামি দাগ যা মুখের ত্বকেই বেশি হয়ে থাকে, বিশেষ করে নাকের দুই পাশের জায়গাগুলিতে। ফর্সা বা ফ্যাকাসে ত্বক এতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। রোদের আলোতে ফ্রিকেলস আরও স্পষ্ট ও তীব্রভাবে পরিলক্ষিত হয়। এর আসল কারণ জেনিটিকাল। কারও পরিবারে বাবা-মা দুই জনের তিল থাকলে তার হওয়ার সম্ভবনা ৮০ %। আর যে-কোনো একজনের থাকলেও এ মাত্রা ৬০ থেকে ৬৫ %। রোদ ফ্রিকেলসের প্রধান শত্রু । অতিরিক্ত সূর্য রশ্মিতে ঘোরাঘুরির ফলেও হতে পারে। অনেকে আছেন গাড়িতে চলাফেরা করেও ফ্রিকেলস কবলিত হন এবং ভাবেন গাড়িতে থাকার কারণে তার ত্বক হয়তো সূর্যরশ্মির দ্বারা আক্রান্ত হয়নি। এটা ভুল ধারণা। গাড়ির কাঁচ ভেদ করে খুব সহজেই সূর্যরশ্মি পৌঁছে যেতে পারে আপনার ত্বকে এবং তৈরি করতে পারে ফ্রিকেলস ।
এই তিল বা ফ্রিকেলস শরীর থেকে নিশ্চিহ্নও করে দেওয়া সম্ভব, প্রয়োজন হলে। মুখের অতিরিক্ত তিল দূর করার কতকগুলি উপায় – (১) প্রতিদিন টক দই ব্যবহার করুন। এটি ধুয়ে ফেলবেন না, ময়েশ্চারাইজারের মতো করে লাগান এবং রেখে দিন ত্বকে।(২) লেবুর রসে যদি আপনার এলার্জি না থাকে তবে নিয়মিত লেবুর রস লাগান। দিনে যতবার ইচ্ছা ব্যবহার করুন। দ্রুত ফল পাবেন।(৩) মৌসুমি ফল ও সবজি দিয়ে ফেসপ্যাক বানিয়ে ব্যবহার করুন। এতে থাকতে পারে আলু, শশা, গাজর, লাউ, বাঁধাকপি, এপ্রিকট, স্ট্রবেরি, টমেটো ইত্যাদি।(৪) দুধ দিয়ে মুখ ধুতে পারেন।(৫) মধু সামান্য গরম করে আক্রান্ত স্থানে লাগালেও উপকার পাবেন।(৬) পার্সলি রসের সঙ্গে লেবুর রস, কমালার রস এবং গাজরের রস মিশিয়ে নিন সমান পরিমাণে। এটি ব্যবহার করতে পারেন আপনার রেগুলার ক্রিম ব্যবহার করার ঠিক আগে। এতে ফ্রিকেলস দেখা যাবে না।(৭) চিনি ও লেবুর রসের স্ক্রাব ভালো কাজে দেয়।(৮) কাঁচা হলুদের রস ও তিলের গুঁড়ো একসঙ্গে মিশিয়ে নিন।জল দিয়ে পেস্টের মতো তৈরি করে আক্রান্ত জায়গায় লাগান।(৯) নিয়মিত তরমুজের রস ব্যবহারে ফ্রিকেলসের দাগ হালকা হয় অনেকটাই।
অতিরিক্ত তৈলাক্ত থাকা, বয়সের প্রভাব, রোদে পোড়া, ড্রাগ নেওয়া, হরমোনের প্রভাব বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে মুখের ত্বকে কালো বা ফ্যাকাশে অগণিত তিল দেখা যায়।এর কোনোটি সামান্য উঁচু হয়, আবার কোনোটি চামড়ার উপর অযাচিত তিলের রং ধরে। এই স্কিন পিগমেন্টেশন তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে বেশি দেখা যায়। লোমকূপের ফাঁকে ফাঁকে তেল জমে থেকে একসময় সমস্যাটি হতে পারে। এই সমস্যা সমাধানে নিজেই নিতে পারেন আরও কয়েকটি কার্যকরী ব্যবস্থার মাধ্যমে। শিখে নেওয়া যাক, প্রাকৃতিকভাবে স্কিন পিগমেন্টেশন সারিয়ে তোলার সহজ উপয়।(১) টমেটো মাস্ক : এক চামচ পাকা টমেটোর রসের সঙ্গে এক চামচ ভেজানো ওটস ও আধা চামচ টকদই ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। এবার মিশ্রণটি আক্রান্ত স্থানে ভালোভাবে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করুন। এরপর কুসুম গরম জলে মুখ ধুয়ে হালকা মশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। টমেটোর রস পিগমেন্টেশনের বিরুদ্ধে খুব দ্রুত কাজ করে থাকে। তাই সপ্তাহে কমপক্ষে ৪ দিন নিয়মিত ব্যাবহার করলে দ্রুত পিগমেন্টেশন দূর হবে।(২) হলুদের মাস্ক  : রোদে পোড়ার জন্য যে তৈরি পিগমেন্টেশন সারাতে হলুদ গুড়ো অনেক উপকারী। এক টেবিল চামচ হলুদ গুড়োর সঙ্গে এক টেবিল চামচ লেবুর রস দিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। এবার ঘুমানোর আগে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে কুসুম গরম জলে মুখ ধুয়ে নিন। এই প্যাকটি দিনেও ব্যাবহার করা যাবে। কিন্তু এটা লাগিয়ে কখনো রোদে মুখ শুকানো যাবে না, এতে করে স্কিন কালো হয়ে যেতে পারে।(৩) এলোভেরা জেল : শুধু এলোভেরা জেল সম্পূর্ণ মুখে ৩০ মিনিট অথবা সারারাত লাগিয়ে রাখুন। এরপর সকালে ঘুম থেকে উঠে অথবা লাগানোর ৩০ মিনিট পর কুসুম গরম জলে মুখ ধুয়ে নিন। যে-কোনো ধরনের পিগমেন্টেশনের জন্য এলোভেরা জেল খুবই উপকারী। সবচেয়ে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য এটি প্রতিদিন রাতে ব্যাবহার করতে পারেন। (৪) কমলার মাস্ক : স্কিন পিগমেন্টেশন থেকে মুক্তি পেতে আরেকটি প্রাকৃতিক পদ্ধতি হচ্ছে কমলার রস। এক্ষেত্রে ১ চামচ কমলার রসের সঙ্গে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস ও আধা চামচ গোলাপ জল মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন। ফ্রেশ কমলার রশ না-পাওয়া গেলে কমলার শুকনো খোসা গুড়ো করেও এই ফেসপ্যাকটি তৈরি করা যায়। এটা সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার করলে অনেক উপকার পাওয়া যাবে।
তিল বিশ্বাসীরা এবার নিশ্চয় খুব চিন্তায় পড়ে গেলেন ! ভাবছেন তিল ভ্যানিশ করে দিলে কী হবে ভাগ্যের ভবিষ্যৎ ? আপনি ভাগ্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবতেই পারেন, কিন্তু আমি ভাবব গবেষকদের নিদান। ব্রিটেনের প্রায় তিন হাজার জনের উপর সমীক্ষা চালিয়ে এ তথ্য পাওয়া গেছে।ব্রিটিশ জার্নাল অব ডার্মাটোলজিতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে, তিল বা আঁচিলের যে-কোনো অস্বাভাবিকতাই ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।গবেষকদের মতে, শরীরে তিল বা আঁচিলের সংখ্যা থেকে ত্বকের ক্যান্সারের বিষয়ে ধারণা করা যায়।কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষকেরা প্রায় আট বছর ধরে নারীদের ওপর গবেষণা চালিয়েছেন এবং সেসব নারীদের ত্বকের ধরন, তিল ও আঁচিলের সংখ্যা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য জোগাড় করেন।এর পাশাপাশি ত্বকের বিশেষ এক ধরনের ক্যানসার যেটিকে মেলানোমা বলা হয় ওই মেলানোমায় আক্রান্ত চারশোজন নারী ও পুরুষের ওপর গবেষণা চালান গবেষক দল।গবেষণা ফলাফলে দেখা যায়, যেসব নারীর ডান হাতে সাতটির বেশি তিল বা আঁচিল রয়েছে, তাদের ত্বকের ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি।আর যাদের ডান হাতে ১১টির বেশি তিল বা আঁচিল আছে এবং সারা শরীরে একশোটির বেশি তিল বা আঁচিল আছে, তাদের মেলানোমার ঝুঁকি অনেক বেশি।গবেষকদের মতে, শরীরে কোনো তিল বা আঁচিল দেখে অস্বাভাবিক মনে হলে বা ব্যথা হলে অবশ্যই তাড়াতাড়ি কোনো ত্বকের ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। প্রয়োজনে সতর্ক ব্যবস্থা নিতে হবে।
বর্তমানে জ্যোতিষবাবুরা জ্যোতিষকে শাস্ত্র বলে চালাতে চায়, অনেকে আবার একটু দুঃসাহসিক হয়ে বিজ্ঞানও বলে থাকেন। বেদে জ্যোতিষশাস্ত্রের কথা নেই।বৈদিক যুগে জ্যোতিষ বলতে বোঝাত দিন, বছর, ঋতু ইত্যাদির গণিতসিদ্ধ বিচার পদ্ধতি।সেখানে আছে গ্রহ-নক্ষত্রের অবস্থানের সঙ্গে বৃষ্টি ও কৃষি সম্বন্ধীয় বিষয়। এই গ্রহ-নক্ষত্রদের সঙ্গে মানুষের ভাগ্য যুক্ত করা হয়নি।এই জ্যোতিষে ভবিষ্যকথন নেই, ভাগ্যকথা নেই, গ্রহ-নক্ষত্রের অহেতুক রাগরোষের কথা নেই। শুভাশুভ বিচার মুখ্য নয়। সংখ্যার রহস্যে আরোপ নেই। এই জ্যোতির্বিজ্ঞান গ্রিস যাযাবরদের হাত ধরে জ্যোতিষ হয়ে গেল।বস্তুত ভারতে গ্রিক শাসনের অবসানের পর রেখে গেছে মূর্তিপুজোর ধারণা, গণিত এবং অবশ্যই জ্যোতিষ।গ্রিকদের এই জ্যোতিষের মধ্যেই যেমন জ্যোতির্বিদ্যা ছিল, ছিল ঋতুকাল নির্ণয়।তেমনই গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদি মানুষের ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণের আজগুবি বকওয়াস।এই বকওয়াসের জনক ছিলেন ব্যাবিলনের রাজারা, যাঁরা একইসঙ্গে পুরোহিত। তৎকালীন সমাজে ধর্মযাজকরাই শাসক হতেন। সম্ভবত ইরানের আয়াতোল্লা খোমেইনিই ছিলেন সর্বশেষ ধর্মীয় শাসক।যাই হোক, ব্যাবিলন থেকে গ্রিস, গ্রিস থেকে ভারতে সংক্রামিত হল জ্যোতিষ-ভণ্ডামি।আলেকজান্ডারের আগমনের পর থেকে ষষ্ঠ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দীর্ঘ সময়কাল ‘ফলিত-জ্যোতিষ’, অর্থাৎ মানুষের ভাগ্য গণনার বকওয়াস পদ্ধতি ভারতে টিমটিম করত -- যত দিন যাচ্ছে,  মানুষের চাহিদা বাড়ছে, না-পেয়ে হতাশ হচ্ছে ততই জ্যোতিষীবাবুদের রমরমা বাড়ছে। গলিতে গলিতে এখন জ্যোতিষী গড়াচ্ছে। হোর্ডিংয়ে ছড়াছড়ি। কত জ্যোতিষবাবু সরকারি চাকরিও করছেন, তৎসহ অতিরিক্ত রোজগার করছেন হাত দেখে, পাথর বেচে। অফিসের কলিগদের কাছেও পাথর বেচছেন। অথচ তৎকালীন সময়ে এইসব গ্রিক যাযাবর সম্প্রদায়ের মানুষরা ব্রাত্য বা পতিত বলে বিবেচিত হত (‘বৃহৎসংহিতা’ পড়ুন)।বৈদিক যুগে যে ভাগ্য বিচার ছিল ব্রাত্য, সেই ব্রাত্য সমাজের উঁচুস্তরে উঠে এসেছে এক শ্রেণির অন্ধ মানুষদের জন্য।

ক্রমশঃ

1 টি মন্তব্য:

Featured post

সোনালী মিত্র