বন্দনা মিত্র

মায়াজম
0

                                   বনসাই


মার ঘরের জানলাটা অনেকদিন হল বন্ধ । প্রথম যেদিন আমার চোখ ফুটল, দৃষ্টি পেলাম, কাঠের কপাটদুটো বাবা শক্ত হাতে খিল তুলে দিলেন, মেয়ে যেন না খোলা আকাশে মেঘেদের নিষেধ না মানা চলাফেরা দেখতে পায়। মেয়ে মানুষের বাঁধনছাড়া উড়ান তো ভাল কথা নয়। জানলার ওপারে যে মহা নিমগাছটা ঝড় উঠলে হু হু শব্দে ডাক পাঠাতো , শুনতে পেয়ে স্বামী আমার কানে ঢেলে দিল সীসার দলা। ঘরের বউ এর যখন তখন ঝড়ের ডাক শোনা সংসারে অমঙ্গল ।
আমি আস্তে আস্তে বেড়ে উঠছি অন্ধ ও বধির হয়ে, এক মাপমত বনসাই। ঘরের দেয়াল ছুঁয়ে ছুঁয়ে আমি অনুভব করছি আমার সীমাবদ্ধ পৃথিবী, আমার না দেখা আকাশ আমার প্রোথিত টবের কিনারা। এই ভাবে দিন কাটে, নিছক অভ্যাসে।

একদিন সন্ধ্যাবেলা কে জানে কোথা থেকে আমার বনসাই শরীরের কর্কশ ছালে গা রাখল এক ছোট্ট পাখি , তার নাম দিলাম ইচ্ছে। নরম ডানায় সে আমার গলা জড়াতেই দশদিক উতরোল করে কানে এল ঝড়ের আওয়াজ, চার দিগন্ত ছড়ানো আলো নেমে এল আমার চোখে। শক্ত কঠিন হয়ে উঠল আমার মুঠি, আমার দৃষ্টি , আমার চোয়াল। নিজের হাতে খিল ভেঙে জানলাটা খুলে দিলাম, আমার ইচ্ছেপাখি হাওয়া আলো বৃষ্টি মেখে রাজহংসীর মত উড়ান দিক খোলা আকাশের নীচে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)