রঞ্জন রায়

মায়াজম
0

                     আঁচলের গন্ধ






( এক )
সেই দিনটির কথা খুব মনে পড়ে ! কতই আর বয়স ! বড়জোর দশ কী এগারো ! মাকে ছেড়ে প্রথম আশ্রমে যাই ! অনাথ আশ্রম ! একটা সরকারী নাম ছিল ! নিরাশ্রয় নারী ও শিশু সেবা ভবন !বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে ! আমাদের বাড়ি বলতে একটা খড়ের ঘর ! আর বেড়াশূন্য চাল উড়ে যাওয়া রান্না ঘর ! একখণ্ড জমির চারপাশে বাঁশের ওপর কলাপাতা দিয়ে ঘিরে প্রাচীর ! অনেকটা হাড় জিরজিরে মানুষের মত ! মা আঁচলে চোখ মুছে বলেছিল ,' সাবধানে থাকিস বাবা '!
আশ্রমের মেঝেতে শুতে হয়েছিল প্রথম দিন ! বিছানা বলতে চটের বস্তার ওপরে একটা রং চটে যাওয়া চাদর ! গায়ে একটা কাঁথা ! লেপ জিনিসটা কেমন তার অনুভব স্মৃতি কিছু ছিল না !
খুব কেঁদেছিলাম ! মাকে ছেড়ে সেই প্রথম রাত কাটানো ! অথচ কী অদ্ভুত জীবন ! মাকে নেই অনেক দিন ! দিব্যি দিন কেটে যাচ্ছে ! কেমন যেন সিঁড়ি ওঠার মত অনেক দূরে এসেছি !
সিঁড়ি গুলো ধুলো মাখামাখি হয়ে জেগে থাকে ! আমি কেমন বেঘোরে ঘুমোই !
মাথার কাছে মা বসে থাকে ! তপ্ত কপালে নরম হাত টের পাই ! আবার ঠাণ্ডা জলপট্টির স্পর্শ ! দূর থেকে বহুদূরে মিলিয়ে যাচ্ছে একটি মুখ ! ভালো করে দেখতে পাচ্ছি না ! ছায়া ছায়া সেই শরীর থেকে আঁচলটা লুটিয়ে পড়েছে মাটিতে !
এবার দেখতে পাচ্ছি ! সেই আঁচল আমার মায়ের !
খুব ভোরে ঘুম ভেঙ্গে যায় ! প্রার্থনার কলরবে !
দিন শুরু হত সেই প্রার্থনা দিয়ে !
আশ্রমের ছোপ ধরা দেওয়া রেখে এসেছিলাম একটা অব্যক্ত ব্যথা !
ব্যথাটা এখনো টের পাই !
জল কেটে কেটে গেলে একটা সরুপথ তৈরি হয়ে যায় !
আবার মিলিয়ে যায় !
দিগন্তের পারে সূর্যডোবা রং দেখি মায়ের সেই আঁচল জুড়ে !
...... ....... ....... .......
( দুই )
দু দিন পরে বিছানা পেয়েছিলাম ! খুব করুণ তার অবয়ব ! এখনো ভুলতে পারি না ! ঘুণে ধরা তক্তপোষ ! ছারপোকার আনাগোনা ! নোংরা কম্বল ! কুঁচকে যাওয়া মশারি ! আর প্রায় বোবা আমার বিছানার সঙ্গী !একই ক্লাসে পড়তাম ! বেশ নাদুস নুদুস চেহারা ছিল ছেলেটির ! চেহারার সঙ্গে মানানসই নাম ! গোপাল ! মা ছিল না ওর ! বাবা ছিল মাতাল !
গোপাল আজ কোথায় ? জানি না ! জানবার কোনও উপায় নেই ! পুরনো ক্যালেন্ডারের পাতা গুলো যেভাবে হারিয়ে যায় ! বর্ণমালা সাজিয়ে সাজিয়ে কি মনের সব কথা বলা যায় ? এতদিন পরে সাজাতে গিয়ে দেখি খণ্ডিত ছবি ফুটে ওঠে !
আশ্রমে রাতে রুটি দিত ! পুড়ে যাওয়া সেই রুটি আমার আকাশ জুড়ে ! কেবল ঘন মেঘ তাদের ঢেকে রাখে ! গোপালের পাংশু মুখের মত বিকেল থমকে থাকে ! ঝিঁঝিঁর ডাকে নীরবে হয়ত সন্ধ্যা নামে আজও ! আশ্রমের ভাঙ্গা প্রাচীর টপকে কুকুর গুলো এঁটো খাবারের লোভে এখনো আসে নিশ্চয়ই !
ঘুমের ঘোরে একদিন দেখি ,গোপাল ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে !ওর কান্না আমাকে বিহ্বল করে দিয়েছিল !
অনেক বলেও ওর মুখ থেকে কোনও শব্দ উচ্চারণ করাতে পারি নি !
কোনও কোনও দিন মাঝরাতে গোপাল বিছানা ছেড়ে কোথায় যেন চলে যেত !
পরে জেনেছি ঘুমের মধ্যে ওর হেঁটে চলে যাওয়া অভ্যেস ! ওর মা নাকি রোজ রাতে ডাকতে আসে ! গোপাল ! গোপাল আমার ! আয় বাবা !
সেই ডাকের হাতছানি এড়াতে পারে নি গোপাল !
একদিন বেরিয়ে আর ফেরে নি !
ওর ছেড়ে যাওয়া প্যান্টে আর বিছানার অংশে দেখেছিলাম চাপ চাপ রক্ত !
দু ' তিনদিন গোপালকে নিয়ে একটা চাপা উত্তেজনা টের পেয়েছিলাম !
তারপর সব শান্ত !
মা না থাকলে গোপালরা এভাবেই হারিয়ে যায় !
কতজন যে হারিয়ে গেছে তার হিসেব কে রাখে !
আমিও রাখি নি !
শুধু গোপালের রক্তমাখা প্যান্টটা এখনো চোখের সামনে ভেসে ওঠে !
মায়ের চিতার আগুন আর গোপালের ফেলে যাওয়া রক্তের দাগ আমাকে এখনো হতাশ করে !
মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে দেখি ঘেমে নেয়ে উঠেছি !
...... ....... ....... .......
( তিন )
মা যেদিন প্রথম মূর্ছা যায় ,সেদিন আমার পৃথিবী অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল ! স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষার আগে বাড়ি এসেছিলাম ! পরদিন পরীক্ষা ! সকালবেলা মা অচৈতন্য হয়ে গেল ! বাড়িতে আর কেউ নেই !শুনেছিলাম এমন অবস্থায় মাথায় জল দিতে হয় ! ছুটোছুটি করে জল এনে মায়ের মাথায় ঢালছি আর কাঁদছি ! কিছুক্ষণ পরে মায়ের জ্ঞান ফেরে ! পরে জেনেছি মায়ের মৃগী রোগ ছিল ! আমার জন্মানোর সময় নাকি মা এভাবে অচৈতন্য হয়ে সাতদিন হাসপাতালে পড়ে ছিল !
সদ্যজাত আমাকে ডাক্তার মৃত বলে দিয়েছিলো !নার্সরা সেই মৃত শিশুকে ফেলে রেখেছিলো বেডের তলায় ! তুলোয় জড়িয়ে ! তার বাবা এলে দেখাবার জন্যে !
বাবা নাকি তখন কাজের সূত্রে বাইরে ছিলেন !
হাসপাতালে এসেছিলেন মায়ের বাবা ! আমার প্রিয় দাদু ! এসেই দেখেন ট্রেতে তুলোয় মোড়ানো একখণ্ড মাংসপিণ্ড ! পিপড়ে ঘিরে রয়েছে ! সেই মাংসপিণ্ড একটু একটু নড়ছে !
দাদুর চিৎকারে নার্সরা ছুটে এসেছিল ! তুলো ছাড়িয়ে সেই মাংসপিণ্ডকে ইনজেকশন দিতেই চিৎকার করে কেঁদেছিলো !
সেই ফেলে দেওয়া শিশুটি বেঁচে আছে !
মাঝে মাঝে মায়ের কথা খুব মনে পড়ে !
আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মায়ের সেই অবর্ণনীয় কষ্ট অনুভব করার চেষ্টা করি !
মায়ের হারানো ধন !
নার্সরা এমন নামই দিয়েছিল !
সেই নাম হারিয়ে গেছে !...
উনুনের পাশে বসেই পরীক্ষার পড়া করছিলাম !ডাল আর কচু পাতা ! সেদিনের মেনুতে ! আমার প্রথম ভালো রান্না !
মা ! মাগো ! ওঠো !
মাকে খাইয়ে পাশের বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সেই পথটা চোখ বন্ধ করলেই আজো দেখতে পাই !
কেমন পরীক্ষা দিলিরে ?
দিনান্তে ঘরে ফিরে দেখি মা আবার স্বাভাবিক কাজকর্মে লেগে গেছে ! বাবা ফেরি করে ফিরতেন ! ভাঙ্গা চোরা লোহা তিন পুরানা বই খাতা কাগজ ! ঘরের পাশ দিয়ে ফেরিওয়ালা হেঁকে গেলে বাবার মুখটা দেখতে পাই !
পরীক্ষায় যথারীতি প্রথম হয়েছি ! ঐটি ছিল আমার বাঁধা স্থান ! ছুটতে ছুটতে এসে মাকে জড়িয়ে ধরেছি ! মায়ের হাতে তখন ঘুঁটে দেওয়া গোবর লেগে আছে !
খুব খিদে পেয়েছে মা ! খেতে দাও !
এমন কথা যখন ছেলে স্কুল থেকে ফিরে ওর মাকে বলে ,সেটা শুনে আর ওর মায়ের ব্যস্ততা দেখে বুকের ভেতরে মোচড় দিয়ে ওঠে !
চোখের কোনটা নিজের অজান্তেই চিকচিক করে ওঠে !
কেমন সব কিছু ওলোট পালট হয়ে যায় ! জীবন বড়ই অদ্ভুত ! এসব ভেবে কোনো কিনারা করতে পারি না !
মা আর ছেলে ঘুমিয়ে পড়লে একা একা ছাদে উঠে যাই ! অন্ধকার আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকি ! কিছু একটা খুঁজে ফিরি ! কী খুঁজি নিজেই জানি না ! তবু খুঁজি !
মেঠোপথের শেষ প্রান্তে দিগন্তরেখার কাছে আমার ফেলে আসা শৈশব ! আমার কবিতার পাণ্ডুলিপি !আমার গল্পের চরিত্রেরা ভিড় করে অপেক্ষা করে !আমার সাথে একটিবার দেখা করতে চায় !
আমার যাওয়া হয়ে ওঠে না !
ব্যস্ত জীবনের নাগপাশে আমার শ্বাসকষ্ট হতে থাকে !
রসুন তেল গরম করে মা বুকে পিঠে মালিশ করে দিত !
হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গেলে মায়ের সেই হাতটা দেখতে পাই !
ডান হাতের আঙুলে মায়ের একটা তিল ছিল !
সেই তিলটিও ভেসে ওঠে !
আমি মোবাইলে বর্ণগুলো টিপে টিপে মায়ের মুখটা আঁকবার চেষ্টা করি !
পেরে উঠি না !
বারবার ব্যর্থ হই !.....
...... ........ ....... ........
( চার )
কলেজ ম্যাগাজিনে প্রথম রাজনীতি বিষয়ক গল্প লিখি ! আশ্রম থেকে হারিয়ে যাওয়া গোপাল ! আসলে আমাদের ভেতরেই একটা করে গোপাল থাকে ! আমরা চারপাশে জীবনে নিজেকে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করি ! সব সময় পারি না ! তখনই আমাদের ভেতরের গোপাল রক্তাক্ত হয় ! ভেতরের ক্ষরণ নিজেরাই সব সময় বুঝতে পারি না !
অথচ এই অনিবার্য রক্তের ছোপ জমে থাকে ! ঘুমিয়ে গেলে বালিশের তলায় সেই শুকিয়ে যাওয়া রক্তগুলো ভিজে ওঠে !
এমনই একটা বিষয় নিয়ে লিখেছিলাম !
অনন্ত স্যার ডেকে নিয়ে পিঠ চাপড়ে দিয়েছিলেন ! লেখালেখিটা ছেড়ো না ! তুমি পারবে ! ক্ষুধা তৃষ্ণা না থাকলে লেখা আসে না ! তোমার কষ্ট গুলোই তোমাকে দিয়ে লিখিয়ে নেবে !আরও কত কী বলেছিলেন , মনে নেই !
স্যারের কথাগুলো হাতড়ে ফিরি !
আসলে ভালো যা কিছু সব খুব দ্রুত জীবন থেকে সরে সরে যায় !
সমুদ্রের ঢেউ এসে তীরে আছড়ে পড়ে ! সেই ঢেউরাশি আর তীরভূমির মাঝে একটি বক্ররেখা তৈরি হয় ! সেই রেখাটুকুই বোধহয় আমাদের জীবনে নির্ভেজাল সুখের মুহূর্ত ! বাকি অংশে অনন্ত দুঃখ !তীরের বালুকারাশি দুপায়ে সরিয়ে যদিও বা এগোনো যায় কিন্তু সমুদ্রের গভীর দেশের অন্ধকারে চলতে হয় অনিশ্চয়তাকে সম্বল করে !
ঘুম থেকে উঠেই যখন রাতের ভেবে রাখা গল্পের প্লটটা শব্দের মুখোমুখি আনার চেষ্টা করি ,তখনই শুনতে পাই ,ঘরে কোনো বাজার নেই ! কলেজে যাবার আগে বাজার ছুটি ! সবজি মাছ হাতের কাছে যা পাই কিনে নিই !
দামদস্তুর করা হয়ে ওঠে না ! জানি দোকানি ঠকাচ্ছে ! কিন্তু কিছু বলার প্রবৃত্তি হয় না আজকাল !
প্রতিদিন তো সবাই ঠকাচ্ছে !
ডাক্তার ! হাসপাতাল ! ব্যবসায়ী ! ইমারত কারবারি ! প্রিয় নেতা ! শিক্ষক ! কে নেই এই তালিকায় ! আমরা নিজেরাই কি নিজেদের ঠকাই না ! নিজের ভেতরের মানুষকে বাইরের মানুষটা দিব্যি ঠকায় ! ডানহাত বাম হাতকে বুঝতে দেয় না ! পাশে যে মানুষটি ঘুমিয়ে আছে সেও তো আমাকে কোনোদিন ঠকিয়েছে ! কিম্বা আমিও তাকে ঠকাই নিজেরই কোনো ভুল কর্ম করে !
চুলচেরা হিসেব করলে কি জীবন চলে !
মাকে দেখেছি কীভাবে না খেয়ে বাবার জন্যে বসে থাকতে ! অথচ বাবা হয়ত বাইরে কোথাও খেয়ে বাড়ি ফিরেছেন !....
একটা গল্পের প্লট আমাকে কয়েকদিন থেকে খুব ভাবাচ্ছে ! কীভাবে শুরু করব বুঝতে পারছি না !
আমার খুব পরিচিত একজন কবির পারিবারিক সমস্যা ! ওদের ছেলেটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে ! হঠাত ছেলেটিকে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছে ! স্কুলের অনুশাসন ভেঙেছে ছেলেটি ! কী অপরাধ করেছে সেটা বন্ধু খুলে বলে নি ! ছেলের সমস্যা নিয়ে ওদের স্বামীস্ত্রীতে খুব অশান্তি চলছে !
কী করা যায় ভেবে কুলকিনারা করতে পারছি না ! এই সময় মায়ের কথা খুব মনে পড়ছে ! মা থাকলে একটা রাস্তা বাতলে দিত ! পড়াশোনা কিছুই জানতো না মা ! কিন্তু ছেলেকে ভোর রাতে পড়তে বসার জন্যে জাগিয়ে দিতে হবে বলে নিজে জেগে থাকত ! ঘড়ির কাঁটা চিনতো না মা ! কিন্তু কাঁটার অবস্থান গুলো আন্দাজে স্থির করে সময় ঠিক করতে পারতো !..
আমরা ঘড়ি দেখতে পারলেও সঠিক সময়টা বুঝতে পারি না !
সময় গোলমেলে হয়ে যায় !
কবি বন্ধুর সংসার যেমন একটা গোলমেলে স্তর অতিক্রম করছে ! অথবা কাঁটাগুলো থমকে আছে !
...... ....... ....... ......
( পাঁচ )
শেষপর্যন্ত সমস্যাটির কিনারা করা গেছে !
বন্ধু কবির কবি আর কবিতা প্রীতি থেকেই ইচ্ছে মাকড়শা জাল ছড়িয়েছে ! প্রতিদিনের বিষাদ থেকে যে কবিতার জন্ম তা পড়লে অদ্ভুতভাবে মন ভালো হয়ে যায় কখনো ! অনেকটা নাটকীয় ক্যাথারসিসের মত ! কবিতা পাগল বন্ধু কবিতার কাছাকাছি আসতে গিয়ে সংসার থেকে দূরে সরে গেছে ! অথচ বাইরে তার কোনো প্রকাশ টের পায় নি ! স্বামী কাজের সূত্রে প্রায়ই বাইরে যায় ! বন্ধু কবির প্রিয় কবি তখন শূন্যস্থান পূরণ করেন ! তুমি একটি কবিতা আমায় উপহার দিলে তোমাকে একটি রাত দিতে পারি ! নিয়ত ব্যবহার্য বস্তুরাশির মত চেনা ঠোঁটের চুম্বনে কোনো উত্তেজনা অনুভব করি না ! তারচেয়ে বরং অজানা পথের বাঁকে অচেনা ভীরু চুম্বন অনেকবেশি ভালো লাগে ! তোমার রোমকূপের ভেতরে আমার অনুভবি ঘামগুলো জেগে থাক সারারাত !
এমন সব শিরশির করা শব্দের কংকাল জড়ো করেছিল ছেলেটি ওর স্কুলের খাতায় !..
কবি আঙ্কেলের মুখ থেকে শোনা প্রতিটি শব্দ আড়াল থেকে শুনে নিতো ছেলেটি ! কবি বন্ধু তখন ওর প্রিয় কবির খোলা বুকের রোমগুলো টেনে টেনে পরীক্ষা করে দেখত ! কতটা তার শেকড়ের গভীরতা !...
বড় বিচিত্র আমাদের এই বেঁচে থাকা !
ছেলেটির জন্যে খুব কষ্ট হয় ! বেচারার কী দোষ ! ওকে যদি আমার মায়ের গল্প শোনাতে পারতাম ! মা কীভাবে ঘুম পাড়ানি গান গাইতো ! ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়োলো ! ...
ওরা সেদিন মাকে তেল আর ঘি মাখিয়ে নিয়েছিল আমাকে দিয়ে ! চিতায় তোলার আগে হরিবোল ধ্বনিতে রাতের আকাশের পাখিদের ভয় দেখিয়েছিল ! আগুন দাউ দাউ করেন জ্বলে ওঠার সময় মায়ের পুড়ে যাওয়া আঁচলটুকু টেনে এনেছি ! ওরা আমাকে বাধা দিয়েছে ! কোনো বারণ শুনি নি !
কবি বন্ধুর ছেলেটি কি মায়ের আঁচলের কোনো গন্ধ কোনোদিন পেয়েছে ? পায় নি !
ওর মা কখনো শাড়িই পড়ে নি! তাই ওর জীবনে আঁচলের কোনো অনুভব নেই ! ওর শৈশবের ভগ্ন স্মৃতির কথা ভেবে খুব কষ্ট হবে যখন ও বড় হবে !
ভাবছি আমার মায়ের খন্ড আঁচল টুকু ওকে দিয়ে দেব ! ভারী সুন্দর মুখ ছেলেটির ! ওকে দেখলে আশ্রমের গোপালের কথা মনে পড়ে !

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)