উমাপদ কর - মায়াজম

Breaking

১১ আগ, ২০১৭

উমাপদ কর

                    কবিতার অতলান্ত

ঘুমের আগে অনেককেই বেশ কিছুটা কসরৎ করতে হয়। রাজ্যের চিন্তাগুলো বৃত্তাকারে এই সময়েই একবার বাগানবাড়ি বেড়াতে আসে। যান টি বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে তার গৃহে প্রবেশ। যানও বহুবিধ। পথ যেমন, ভূ-তল, জল-তল, তেমন অন্তরীক্ষ্যের মাঝে। কঠিনে তরলে বায়বীয়ে প্রত্যেকটিতেই অনেক রকমের যান, যার উদ্দেশ্য পৌঁছে দেওয়া। এখানে চিন্তা বয়ে নিয়ে যাওয়া। এবং চিন্তাসংকুল করে তোলা। স্বাভাবিকভাবেই প্রতিজনে ভিন্নচিন্তার খড়খড়ি খোলা। ব্যাপারীর ব্যাপার, আদার হলে হয়ত জাহাজ ঘেঁষা। চাকুরের চাকরি, মাগগিভাতার সঙ্গে আগামীকালের রসুন দরের তুলনামূলক গ্রাফ। বাড়তি হিসেবে কিয়া না-কিয়া পরকীয়া প্রকল্পে আড়ালের তরিকা অন্বেষণ। একইভাবে ছাত্র-ছাত্রী, ডাক্তার উকীল, নেশাখোড় জুয়ারী, প্রেমিক—সফল ও ব্যর্থ প্রত্যেকে নিজ নিজ। শিল্পীরা কী চিন্তার ফেরে পড়ে? কবি সাহিত্যিকরা কোন চিন্তায় খাবি খায়? আমি জানি না। অনুমান করতে পারি। ব্যাক্তিবিশেষে তা স্বতন্ত্র। কিন্তু কিছু সাধারণ উপসর্গ আছে কিনা তাই ভাবছিলাম। থাকতেও পারে। এই ‘থাকতেও পারে’ দিয়ে একটা গদ্য হতে পারে। অবশ্য আমি সেইসব মানুষদের কথা কীকরেই বা অনুমান করব, যারা শুলেই ঘুমপটাস, ইনক্লুডিং কবি শিল্পী সাহিত্যিক।
আমি তো লিখি, কবিতাই মূলত। কিছু হয় কি হয় না সে তো আলাদা তথ্য আর তর্ক। চেষ্টা একটা থাকে। সেখান থেকেই জন্ম নেয়, নানা চিন্তা ভাবনা, ভালো লাগা না-লাগা, কীভাবে ও কেন, সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টি, কী হচ্ছে আর না-হচ্ছে, আবিষ্কৃত অনাবিষ্কৃত, ইত্যাদি ইত্যাদি। তো, সন্তোষ তো পরম ধন। পরমে আবার আমার বিশ্বাস নেই। সেই অনুযায়ী, আপাত। অসন্তুষ্টিই অনাবিষ্কৃতে নিয়ে যায়। আমার অনাবিষ্কৃতে।




কসরৎ এর এপিসোড-১

শব্দে শব্দে ছবি আঁকি। শব্দেই ভেঙে দিই আবার। নির্বাচন, সাজানো, গাঁথা, ভাষাশিল্পসম্মত করা। ছবির ওপর আলো ফেলি, অন্ধকার মেশাই। ফেড আউট ফেড ইন। ছবিতে রঙ ঢালি, নানা রঙ। কখনও শুধুই সাদা কালো। খোলতাই হয়, হয়ও না। ভাবনার অনুসৃতিতে আঁকা, ক্যানভাস, ফাঁকা পরিসরও। শব্দ বিন্যাসের নিয়ন্ত্রনে আনতে হয় এসব। ছবি, হয়ে ওঠা আর না-হয়ে ওঠার মধ্যেও রাখি। কল্প ছবি, বাস্তব ছবি। আবার ছবির কোলাজও। স্বপ্নের, কল্পনার, বাস্তবের। আলাদা বা মেশামিশি। ঘটনাক্রমের ছবিও আঁকি মাঝেমধ্যে, তাতে কতটা কবিতা হয়, তা নিয়ে বেজায় তর্ক। দু-একটা শব্দে একটা ছবি হয়, আবার অনেক বাক্যেও ছবিটির চরিত্র তৈরি হয় না। ভাবতে গেলে কিছু মাধ্যম লাগে। ভাবনা প্রকাশেও কিছু টুলস্‌ প্রয়োজন। দুটো ক্ষেত্রেই ছবির ভূমিকা মূখ্য ও প্রত্যক্ষ। অনুভব সৃষ্টি বা সঞ্চিত হতে এবং প্রতিফলনে বা সঞ্চারণের মাধ্যম হিসেবে ছবির একটা ভূমিকা থাকেই। অভিজ্ঞতা, আমার বিশ্বাসে, ঘটনাক্রম মিথষ্ক্রিয়া কার্যকরণ ইত্যাদির প্রেক্ষিতে উঠে আসা এক পঙক্তির একটা বাণী নয়। অভিজ্ঞতাও বৃহৎ অর্থে অনুভবই। ফলে সেখানে ছবির একটা অপ্রত্যক্ষ হলেও ভূমিকা থাকে। শব্দে শব্দে অনেক সময় রেখচিত্রও আঁকার চেষ্টা করি। এই দু-একটা টানে রেখায় ফুটিয়ে তোলা। অনেকসময় এক ঝলকের একটা বাস্তবচিত্রও শব্দ শব্দবন্ধে তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়। কবিতায় ছবির এই অপ্রতিরোধ্য ভাবটি যদি প্রকৃতই ছবি দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা যায়, তাহলে কেমন হয়! একটা বাস্তবচিত্রের ঝলক হিসেবে আলোকচিত্র (Photograph), বা দু-একটি রেখার নকশা বা রেখচিত্র (Sketch) বা রঙে কল্পনায় ভাবনায় গড়া চিত্রাঙ্কন (Paintings) ভাবা যেতেই পারে। এতে দুটো সমস্যা হতে পারে। ১) কবিতা ভাষাশিল্প। কথ্য শ্রাব্য ও অনুভবযোগ্য। এখানে হয়ে যাবে দৃশ্য ও অনুভবযোগ্য। দেখা যাচ্ছে অনুভবযোগ্যতাটা সাধারণ। ২) কল্পছবির প্রতিস্থাপন বাস্তবের ছবি দিয়ে কতটা সম্ভব? না, সবসময় তা সম্ভব নয়। কিছু সময় সম্ভব। যেমন, আমাদের কল্পনারও কিছু ভিত্তিভূমি থাকেই। কল্পনা তাই, যা উড়ান অথচ পা টি মাটিতে। ফলে বাস্তবের সঙ্গে তার একটা যোগসূত্র থাকেই। তাই বাস্তবের ছবিতে এসে কল্পনার ছবি অনেক সময়েই মিশে যেতে পারে। আবার আমরা কল্পনা প্রসূত ছবি আঁকতেও পারি। তাই, ফোটোগ্রাফিই হোক আর আঁকা ছবিই হোক, কবিতায় তার একটা গ্রহণযোগ্যতা আছেই। একটা সাদা পৃষ্ঠায় ভাবনানুসারি বাছাই করা একটা ছবি (আঁকা বা ফোটোগ্রাফির, Sketch, Painting, Photography) বা ছবির কোলাজ, রঙিন বা সাদা-কালোর বসানো যেতে পারে। শুরু হতে পারে কবিতাকারি। কিন্তু তাতে কি একটা কবিতা হয়ে গেল? না, কখনই তা নয়। কেননা ছবিই কবিতা নয়, কবিতা আরও কিছু। অনেক কিছু।



এপিসোড-২

ঘুম নস্যাতি কবিতা লেখকের মাথায় গজগজ করতে থাকে। আচ্ছা, ভাষায় প্রতীক গড়া হয়। কেউ কেউ ব্যবহার করেন না, বা করতে চান না। কিন্তু আজও অনেকেই আকছার ব্যবহার করেন। আড়াল রাখার এক তরিকা যে। অনুষঙ্গগুলোকে সরাসরি উপস্থাপনা না করে একটা ছোট্ট প্রতীকে উপমায় বা কখনও রূপকে শিল্পসম্মত করার চেষ্টা। উদ্দেশ্য এখানে উন্মুক্ত হতে হতেও শেষাবধি তার জাল বিছিয়েই রাখে। প্রতীক মূর্তিও। তার একটা দৃষ্টি-সম্বন্ধীয় বা চাক্ষুষ রূপ আছে। সেটাও কবিতায় তুলে ধরার সদিচ্ছা থাকতেই পারে। আরও নানাভাবে কবিতায় প্রতীকের গতায়াত। এখন ভাষায় প্রতীক প্রতিষ্ঠিত না করে আমরা সরাসরি প্রতীকচিহ্নটি (Symbol) সাদা কাগজে বসাতেই পারি। এর একটা সুবিধা হচ্ছে যদি আন্তর্জাতিক মান্যতাপ্রাপ্ত (International Symbol) প্রতীকচিহ্ন বসানো হয় তবে তা রিলেট করার পক্ষে যথেষ্ট কার্যকরী। নিসন্দেহে বসাতে হবে প্রয়োজন ও ভাবনানুসারে। বাছাই করতে হবে নির্মাণের অঙ্গ হিসেবে। সাদা কাগজের কোথায় কিভাবে কেন, তা নিশ্চয়ই হতে হবে নির্মাণকৌশলের পরিকল্পনা অনুসারে। কথার ভার অনেক কমে যাবে বলেই মনে হয়। রিলেটেডও হবে সহজে। যেমন কাচের কাপ-ডিশ বা টিভি-সেট ভরা কোনও একটি পেটির ওপরে ছাপানো প্রতীকটি ভেতরের সামগ্রীর ভঙ্গুরতা বোঝাতে ভীষণই সক্ষম। তার জন্য ডজন খানেক শব্দের প্রয়োজন পড়ে না আর। এমনভাবেই এর যথার্থ প্রয়োগ কবিতার টুলস্‌ হয়ে উঠতে পারে।



এপিসোড-৩

ধ্যুস! কী সব ভাবনা! কবিতা লিখবে, না তো কবিতা আঁকবে! যত্তসব। একরাতে তো নিজেকেই নিজে ব্যঙ্গ করতে ইচ্ছে হলো। কিন্তু ভবি ভুলবার নয়। কড়া নাড়ার শব্দে ঘুম কী করে আসে? আজকের কড়া নাড়ায় চিহ্ন বা সংকেতের ঈঙ্গিত স্পষ্ট। আরে চিন্তাটা এগোওই না। প্রশ্ন করো, উত্তর দাও। শব্দ কী? – এক ধরনের চিহ্ন যা বস্তু অবস্তু প্রত্যেককে রেফার করে। শব্দের ব্যবহার কেন? – বস্তু বিশ্বের ও ভাব বিশ্বের তাবৎ বস্তু ও অবস্তুকে চিহ্নিত করার জন্য, যাতে সে একটা পরিচিতি পায়। ভাষা কী? – শব্দের বুননে একটা ভাবকে বা বলতে চাওয়াকে প্রকাশ করা, যা উদ্দেশ্যকারী প্রায় একইভাবে বুঝতে পারে বা রিলেটেড হতে পারে, যাতে ভাব বিনিময় হতে পারে বা যোগাযোগ ঘটানো যেতে পারে। কবিতায় এই শব্দচিহ্নের মাধ্যমে আমরা নানা ইঙ্গিত তুলে ধরি, এই শব্দচিহ্নে গঠিত ভাষাচিহ্নে অনেক ইশারার উপস্থাপনা করি। সরাসরি বা সোজাসুজি বলার চেয়ে এই ইঙ্গিত ও ইশারাধর্মিতা কবিতায় খুব মান্যতাও পায়। তো, সাদা কাগজে প্রয়োজন মাফিক বাছাই করা ও মান্যতাপ্রাপ্ত চিহ্ন বসালে ক্ষতি কী? নিসন্দেহে আগে পরে অন্য কিছু থাকবে যা একটা ভাবকে ভাবনাকে প্রকাশ করবে। এরকম বহু চিহ্নই আজ প্রতুল। ভান্ডারে রয়েছে সাংকেতিক, গানিতিক, জ্যামিতিক, ও প্রযুক্তিগত নানা চিহ্ন। এতে শব্দের ভার যেমন কমবে তেমনি তীব্রতা তীক্ষ্ণতাও বাড়বে। রিলেটেডও হবে অনেক সহজ পন্থায়। চিহ্নের আরেকটি বিশেষ ক্ষমতা আছে বলে আমি মনে করি। সেটি হলো তার কেন্দ্র থেকে ছড়িয়ে পড়ার আবার ছড়িয়ে পড়া থেকে কেন্দ্রের দিকে গুটিয়ে আসার ক্ষমতা। যেন নিস্তরঙ্গ জলে কোনও এক বিন্দুতে একটি টুকরো পড়লে ঢেউ আলোড়নে তার ছড়িয়ে পড়া, আবার অপরদিকে বিপরীবর্তভাবে সমস্ত ঢেউ গুটিয়ে এসে বিন্দুতিগ করে তোলা, এবং এটি চিহ্নের চরিত্র অনুসারে এককভাবে বা যুগ্মভাবে হতে পারে। অসুবিধাও হতে পারে, যেমন দেখছে যে তার সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে তা হবে প্রান্তিক। কিন্তু কবিতা তো প্রান্তিকই। ছিল, আছে, থাকবেও। সুবিধায় এই অনুবাদের ঝামেলা থাকবে না। ট্রান্সক্রিয়েশনেরও প্রয়োজন পড়বে না। খেয়াল করার বিষয় যেটা, সেটা হলো এর প্রয়োগ। প্রয়োগ হতে হবে নির্মাণের অনুসারি ও উপযোগি। নির্মাণকৌশলের সঙ্গে অঙ্গীভূত করে প্রয়োগের ক্ষেত্রটি প্রস্তুত করতে হবে।



এপিসোড-৪

কবিতায় ভাষাবোধে রঙ কল্পনা বা বর্ণনা, তাও করতে হয়। করিও। ভ্রমণের কথা বলি। ভ্রমণ রঙিন। জীবনের কথা বলি। জীবন বর্ণময়। যাপনের কথা বলি। যাপনে রঙের হেরফের। নানা রঙ, সাদা, কালোও। তো, যে রঙের মিশ্রনে এই অভিঘাত তুলে ধরতে চাই, তা অসম্পূর্ণ থেকে যায় বলায়। ভাবনার রঙটিকে, কল্পনার রঙটিকে কিছুতেই নামিয়ে আনা যায় না ভাষায়। আবার কিছুটা আনলেও তা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বোধগম্য হয়না পাঠকের কাছে। এক মহা অসন্তুষ্টি কাজ করতে থাকে। তো সাদা কাগজে চাহিদামত, ভাবনানুসারি রঙটিকেই তো ব্যবহার করা যায়! দু-একটা রঙের পোঁছ, টান, স্পট, বিন্দু। ছবি-রঙের বাইরে এর অবস্থান। কাঙ্খিত রঙটিকে হয়ত দৃশ্যতায় আনা যাবে, রিলেটও করা যাবে সহজে। কোনও পরিসরে মূলত রঙের যে কাজ, কোনও রঙ যা প্রতিভাত করে, এখানেও সরাসরি তাই করবে।





এপিসোড-৫

লেখচিত্রের (Graph) কথা জানি। তার চারটি পাদ (Quadrant)। দুটি অক্ষ (Axis), যা একটি বিন্দুতে পরস্পরকে ছেদ করে, আর ছেদবিন্দুটি হয়ে যায় শূন্য কল্পনার কেন্দ্রক (Zero Point)। বীজগাণিতিক প্রতীকী এই নকশাটির (Diagram) অংকশাস্ত্র-সম্বন্ধীয় সংযোগ বা সম্পর্ক প্রকাশে জুড়ি নেই। দুই-এর অবস্থান ও পারস্পরিক সম্পর্ক ও পরিবর্তন বোঝানোর ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অতুলনীয়। আছে ঋণাত্মক ও ধনাত্মক চিন্তার প্রতিফলন। বীজগণিতের বাইরেও এর প্রয়োগ দেখা যায়। বিশেষত পরিসংখ্যান-সংক্রান্ত (Statistical) বিষয়ে। এই সমস্ত কিছুই অনেক সময় আমাদের কবিতায় প্রয়োজন হয়ে পড়লে আমরা ভাষার দ্বারস্থ হই। আর সীমাবদ্ধতার সঙ্গে তাকে প্রতিভাত করার চেষ্টা করি। এখন এর বীজগাণিতিক মোড়কটিকে খুলে ফেলে জীবনের ছকে ফেলতে পারলে অনেক উদ্দেশ্যই সিদ্ধ হতে পারে। প্রকাশ করতে পারে জীবনের বহু সম্পর্ক আর তার মাত্রা। প্রকাশ করতে পারে যাপন-প্রকৃতির যথার্থ লেখচিত্র। এমনকি অনেক কল্পদ্বন্দ্বকেও ছোট্ট পরিসরে তুলে ধরতে পারে। তো, সাদা কাগজ়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বর্গহীন লেখচিত্রে আমরা বসাতেই পারি পরিকল্পনানুসারি সেই সব উপকরণ, উপলক্ষণ, অনুষঙ্গ যা পরস্পরের সংযোগ, সম্পর্ক, পরিবর্তনকে সূচীত করবে। প্রতিভাত করবে রাগ-অনুরাগ, প্রেম-প্রীতি, দ্রোহ-ক্ষোভ, ব্যথা-যন্ত্রণা, শোক-বিষাদ, হর্ষ-আনন্দ, আলো-অন্ধকার, চিৎ-চেতনা, লোভ-লালসা, সাহিত্যের নয় রস (শৃঙ্গার বা আদি, বীর, করুণ, অদ্ভুত, রৌদ্র, ভয়ানক, হাস্য, বীভৎস ও শান্ত), মানবমনের দশ দশা (অভিলাষ, চিন্তা, স্মৃতি, গুণকীর্তন, উদ্বেগ, প্রলাপ, উন্মাদ, ব্যাধি, জড়তা, মরণ) এবং আরও কত কী! অসুবিধাও আছে। রিলেটেড হতে গেলে অংক জানতেই হবে এমন কোনও মানে নেই, কিন্তু চাই বিজ্ঞান মনস্কতা। সুতরাং প্রান্তিকতার ছাপটি এর গায়েও পড়বে, স্বাভাবিক। তবে অসুবিধার চেয়ে সুবিধার পাল্লা ভারি।


এপিসোড- ৬

অংক! দুঃস্বপ্ন দুঃস্বপ্ন। ঘুমের আগেই এক প্রস্থ দুঃস্বপ্ন হোক তাহলে। রাত টা যে নির্ঘুম কাটাতে হবে তা নির্ঘাত। কতকাল অংকের সঙ্গে দেখাসাক্ষাৎ নেই, হাল হকিকৎও জানা নেই। সেই বিস্মৃতপ্রায় মাটিখোড়া বিষয়টা নিয়ে ভাবনার কসরতে যেতে হবে ভাবতেই ঘাম বেড়ে যায়। তবুও নিস্তার নেই। একবার যখন বুদবুদ দেখা দিয়েছে, তখন আর উপায় নেই। উপায়ন্তরে আমি ভাবনাকেই এগোতে দিই। তাই বলে অহিনকুলে সম্পর্ক স্থাপন চেষ্টা! কথায় আছে কলার কোনও ভাগে অংক যায় না। তায় আবার কবিতায়? তবুও…। অংকের কতগুলো মহিমময় ক্ষমতা আছে। অংক সম্বন্ধবিশিষ্ট বা অন্বয়ী। অজানাকে জানার এটি এক ক্ষমতাশালী তরিকা। রহস্যের মোড়ক আছে এর চলনে। জটিলতার মধ্যে থেকে সরলতার দিকে এর যাত্রা। এসবই কবিতার সঙ্গে খুব যায় বলে আমার ভাবনায় এলো। আবার অংকের চেয়ে যুক্তিনিষ্ঠ কার্যক্রম আর কিছু আছে কিনা আমার জানা নেই। যুক্তিই একে ধাপ থেকে ধাপে নিয়ে যায়। আর আছে এর প্রতিপাদ্যতা ক্ষমতা। শেষে একটা কিছু প্রতিপাদ্য করতে এর জুড়ি নেই। এখন কবিতায় যুক্তিক্রম কতটা সমীচীন বা কবিতায় আদৌ কিছু প্রতিপাদ্যতার আছে কিনা তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক উঠবে। যেমন আমার বিশ্বাসে কবিতায় যুক্তিক্রম বা বিন্যাস খুব জরুরি কোনও বিষয় নয়। আসলে যুক্তিক্রম একটা প্রতিপাদ্যতার দিকে নিয়ে যায়, যা আমার কাছে কবিতায় কাম্য নয়। কবিতা কিছুই প্রতিপাদ্য করে না বা কোথাও পৌঁছে দেয় না। এর পরেও যেহেতু বিতর্ক আছে তাই, যুক্তিক্রম সাজানো ও প্রতিপাদ্যতার প্রতি অনুরক্ত কবিতাও কিছু কম লেখা হচ্ছে না। বহু কবিই এই চিন্তাকে যথেষ্ট অগ্রগন্যতা দিয়ে কবিতা লেখেন। সেখানে অংকের একটা ভূমিকা থাকা আশ্চর্যের নয়। অপরদিকে যুক্তিক্রমকে ভাঙাও অসম্ভব কিছু নয়। আর প্রতিপাদ্যতাকে অভিজ্ঞতা হিসেবে আত্মস্থ করতে পারলে তা অনুভবে পরিণত হতে বেশি সময় নেয় না। অংকে রয়েছে একটা নিজস্ব পরিমন্ডল ও বিভিন্ন বিভাগ। পাটিগণিত (Arithmetic), বীজগণিত (Algebra), জ্যামিতি (Geometry), পরিমিতি (Mensuration), ইত্যাদি একদম গোড়াকার। পরে আছে ত্রিকোণোমিতি (Trigonometry), লগারিদম (Logarithm), সেট (Set theory), ক্যালকুলাস (Calculus & Analysis), প্রবেবেলেটি ও স্ট্যাটিকটিকস্‌(Probability & Statistics) ইত্যাদি। উচ্চস্তরে আছে আরও সব, যার নাম আমি হয়ত জানিও না। এই সুবিশাল অংশটিই বা কবিতার একদম বাইরে কেন? এর প্রয়োগওতো কবিতায় করা যেতে পারে। খুব বড় করে বা বেশি করে না ভাবলেও মূল অংক বিষয়ক (Basic Mathematics) চিন্তা চেতনা, সূত্র, সমীকর্‌ণ, চিহ্ন, সমাধান ইত্যাদি সাদা কাগজে এককভাবে বা সম্মিলীতভাবে বা অন্যকিছুর সঙ্গে, বাছাই করে, উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে, নির্মাণপ্রক্রিয়ার পরিকল্পনামাফিক বসানো যেতে পারে। এতে ভাষার বৃহৎকে সংহত করে একটা ভাবনাকে চারিয়ে দেওয়া যেতেই পারে, বা সেই প্রয়োগ কোনও ভাবনার অংশীদার হয়ে পড়তে পারে। অসুবিধা অনেক আছে। প্রথমত কবিতা করিয়ের সীমাবদ্ধতা। দ্বিতীয়ত পাঠকের সীমাবদ্ধতা। এবং তৃতীয়তও সীমাবদ্ধতা, এর চিরাচরিত বিকর্ষণ ধারাকে আকর্ষণে পরিণত করা। এ কথা ঠিক অংকের প্রতি একটা অংশের অকারণ বিভিষীকাও রয়েছে। আর সুবিধার দিকটি হলো এর স্লিম ফিগারটি, একের মধ্যে বহুকে দেখার সম্ভাবনাটি, আর আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে রিলেট করতে পারার সুযোগটি। বলা বাহুল্য, উচ্চতর অংকের (Higher Mathmatics) ক্ষেত্রে প্রান্তিকতার ছাপটি আরও বড় হয়ে দেখা দেবে।


এপিসোড-৭

বিজ্ঞান কোনওমতেই কবিতার অন্তরায় নয়, আজ একথা প্রায় স্বীকৃত। বিজ্ঞানের অনুসন্ধান প্রক্রিয়া বা পর্যবেক্ষণ (Observation), পরীক্ষা-নিরীক্ষা (Examination), আর সিদ্ধান্ত (Inference) কবিতার ক্ষেত্রেও আমরা দেখি। সেখানে হয়ত সিদ্ধান্ত কিছু হয় না, হয় অনুভব যা অভিজ্ঞতা প্রসূত। বিজ্ঞানে আরও আছে, যেমন, অনুমান (Assumption), কল্পনা (Hypothesis), প্রকল্পনা (Supposition) ইত্যাদি। এসবই কবিতা নির্মাণেও ভূমিকা গ্রহণ করে। এছাড়া আছে প্রযুক্তির (Technology) যাপনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি জড়িয়ে পড়ার মত অবশ্যম্ভাবী ঘটনা। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সভ্যতার ইতিহাসকে অগ্রসরমান ও নিয়ন্ত্রণ করতে একটা মূখ্য ভূমিকা পালন করে চলেছে। বিভিন্নভাবে কবিতায় এর অপ্রত্যক্ষ প্রয়োগও আমরা লক্ষ্য করে থাকি। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রটিও এক বিশাল জায়গা দখল করে আছে। আছে নানা বিভাগ, মূলত পদার্থ বিদ্যা ( Physics), রসায়ন (Chemistry) ও জীববিদ্যা (Biology)। এছাড়াও আছে নানা বিভাগ ও উপবিভাগ। পদার্থ বিদ্যার সঙ্গে কবিতার কী যেন এক অচ্ছেদ্য বন্ধন আমরা খেয়াল করে থাকি। অনেকসময়ই পদার্থবিদ্যার একটি সূত্রকে (Theory) আমার একটি কবিতা বলেই মনে হয়, যেটা অংকের ক্ষেত্রেও খাটে। এখন এই অপ্রত্যক্ষ উপস্থিতিকে প্রত্যক্ষতায় নিয়ে এলে আমার বিশ্বাস কবিতা এক নয়া মাত্রা পেতে পারে। সাদা কাগজে এককভাবে বা অন্যকিছুর সাথে আমরা বসাতেই পারি বিজ্ঞানের কোনও সূত্র, চিহ্ন, প্রতিজ্ঞা, আবিষ্কার ইত্যাদি। নিসন্দেহে বাছাই করে, চিন্তানুসারে, প্রকল্পের পরিকল্পনানুসারে, আর নান্দনিকতার দিকটি অস্বীকার না করে। বিজ্ঞানের সূত্রের সংহত রূপ, তার কল্পনার বিস্তার মূলক চিহ্ন, তার রসায়নের সমীকরণ, জীবনের সঙ্গে সংযোগকারী নানা টার্মস্‌ ও তার সংকেত আমাদের জন্য খুলে দিতে পারে এক অবরুদ্ধ দরজা। কবিতাকে মেলে ধরতে পারে নয়া এক পরিসরে (Space)। কল্পনা (Hypothesis) থেকে অনুসিদ্ধান্ত (Conclution) পর্যন্ত পৌঁছুনোর শ্রম মেধা আর ভ্রমণটিকে কবিতাতেও উপভোগ্য করে তোলা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সুবিধের দিকটি বেশি থাকলেও অসুবিধারও দিক আছে। সাধারণ বিজ্ঞানের চেয়ে বাইরে গেলে চিন্তনকে হয়ত প্রকাশ করবে সুযোগ্যভাবে, কিন্তু গ্রহণ করার ক্ষেত্রটি সংকুচিত হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অনুসন্ধান ও বিজ্ঞান মনস্কতা সেই অসুবিধা দূর করতে অনেকটাই সহায়তা করতে পারে।


এপিসোড-৮ 

চিন্তা যেমন আসে একবগ্‌গা, তেমনি বিরুদ্ধ চিন্তাও দানা বাঁধে। এতদিনের এতক্ষণের চিন্তা-ভাবনায় শুধু দৃশ্যতার (Visual) দিকটিই উঠে এসেছে। কিন্তু কবিতায় শ্রাব্যতাও (Hearing)একটি জরুরি বিষয়। বিশেষত যাঁরা কবিতায় ধ্বনিকে একটা বিশেষ মাত্রা দিতে চান। এই সাদা কাগজের ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছু ধ্বনি (Sound) বা সাংগীতীক অনুষঙ্গ (Music) রাখা সম্ভব নয়, কাম্যও নয়। সাদা কাগজেই সেই শ্রবণকে কিভাবে কিছুটা হলেও নিয়ে আসা যায়, সেটাই খোঁজা দরকার। এখানে কিছু শব্দের প্রয়োজন। ধ্বন্যাত্মক কিছু শব্দের প্রয়োগ করা যেতে পারে। না, বিচ্ছিন্নভাবে নয়, সমতা রেখে, প্রয়োজনানুসারে, উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে, পরিকল্পনাকেন্দ্রিক শব্দ, শব্দ-বন্ধ, শব্দমালা। উদাহরণ হিসেবে অনুকারমূলক শব্দ ব্যবহার করা যেতে পারে। আমরা বলি, ঝিপ-ঝিপ, বলি ঝম-ঝম, এই দুটি শব্দ বষ্টির আগে বসে শুধু তার শব্দকেই শোনায় না, তার প্রকৃতি ও মাত্রাও নির্দেশ করে। আমরা বলি গুট-গুট করে, বলি গট গট করে। আসা, চলে যাওয়া, বা হাঁটার পরে বা আগে বসে তা তার প্রকৃতিকে নির্দেশ করতে পারে। অনুকারমূলক ছাড়াও কিছু শব্দ আছে যা সাউন্ডকে প্রতিভাত করতে পারে। সংস্কারগতভাবে শব্দগুলোর সেই ক্ষমতা আছে। যেমন, কাড়া-নাকাড়া শব্দটি শুনলেই আমাদের কোনও বাদ্যির কথাই মনে পড়ে, এবং একটা শব্দ উত্থিত হয়। এছাড়াও আমাদের কিছু শব্দের প্রয়োজন হতে পারে, যা ভাবনাপ্রয়োগগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপন, পরিকল্পনার যথাযথ রূপায়ণ, ইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধিগত ফারাক (Perception Gap)কমানো, সমাযোজন ফারাক (Communication Gap) কমানো ইত্যাদি কাজে। মিউজিকের বিষয়টিও এরই মাধ্যমে করা যেতে পারে।
এপিসোড- ৯
বাকিটা সাদা কাগজ। যতটা থাকে থাকুক। উপরোক্ত প্রয়োগগুলির এককভাবে একটি বা যে কোনও দু-তিনটি বা আরও বেশি একত্রে অবস্থান করে কবিতা নির্মাণটি সমাধা করতে পারে। এর কোনও ক্রম থাকবে না, সম্ভবও নয়। ভাবনাপ্রয়োগ, গতি, বহুত্ব, সাবলীলতা ও পরিকল্পনা হিসেবে এরা যে কোনওভাবে, ক্রমে, বিন্যাসে প্রযুক্ত হতে পারে, যাতে কবিতার সুকুমার ভাবটি, নান্দনিক চিন্তনটি, ও চেতনার উন্মেষকে প্রতিভাত ও প্রতিফলিত করতে পারে। সর্বোপরী কবিতা হতে হবে। বাকি অংশ ফাঁকা থাকুক। ফাঁকারও কিছু ভূমিকা থাকে কবিতার ক্ষেত্রে। এখানেও থাকুক। আরেকটি বিষয়। কাগজটিকে কি শুধু সাদাই হতে হবে? না তার কোনও বাধ্যবাধকতা থাকতে পারে না এখানে। সে প্রয়োগকারীর বা কবির ইচ্ছানুসারে রঙিন হোক বা অন্য কোনওকিছু। যেন একটি ক্যানভাস, যা শুধু আঁকার কাজেই লাগবে না, একটি পরিসর হিসেবে রূপ পরিগ্রহ করবে। বা এটি শুধু ক্যানভাসও নয়, মাথায় থাকা কবিতার প্রতিলিপিকরণের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত কাগজটিই, যাতে মাথায় থাকা কবিতাটির প্রতিরূপিকরণ।


এপিসোড- ১০

এ পর্যন্ত ভাবনা কসরতে স্বাভাবিকভাবেই ঘুম নষ্ট করে দেবার মত আরও ভাবনা জন্ম নিতে থাকে। এখানে যে এপিসোডগুলো বর্ণিত বা আলোচিত হলো তার কিছু কিছু তো আমরা আগেই দেখেছি, শুনেছি। হ্যাঁ, এগুলোর কয়েকটা নিয়ে চর্চা হচ্ছে। যেমন ভিস্যুয়াল পোয়েট্রি (Visual Poetry), ছবিতা। যেমন গ্রাফিক্স পোয়েট্রি (Graphics Poetry), আর ম্যাথমেটিক্যাল পোয়েট্রি (Mathematical Poetry)। আমরা এসব কিছুকিছু জানি বা দেখেছি। বিশেষত নেট ঘাটলে এসবের অস্তিত্ব আরও বেশি করে মেলে। আমার ভাবনা বা প্রকল্পের সঙ্গে এর মূলগত পার্থক্য হলো এরা প্রত্যেকেই এককভাবে প্রতিভাত। ছবি, গ্রাফ, আর অংক এই তিনটি যথাক্রমে তিনটি কবিতাধারার মূল উপাদান। আমি প্রয়োজনানুসারে আরও সব মিলিয়ে সম্মিলনের পক্ষপাতি। একক থাকলে আমার মনে হয়েছে, রূপ খোলতাই হয় না, রস নিসৃত হতে চায় না, ওই একক বিষয়টিতে অধিক পারদর্শিতার প্রয়োজন হয়ে পড়ে, রিলেট করার ক্ষেত্রে একগামীতার নির্দেশিকা বহন করে। এও জানি এগুলি নিয়ে চর্চা জারি থাকবে। নিত্য নব বেশে আসবে। সেখানে এই প্রকল্পটির কথাও আজকের কবিরা ভেবে দেখতে পারে, প্রয়োগে আনতে পারে, চর্চা করতে পারে, আরও নতুন ভাবনাকে সংযোজিত করতে পারে যাতে এর কবিতা সৃষ্টিতে ভিন্নতা সত্তেও তীক্ষ্ণতা থাকে, বহুত্বের মধ্যে থাকে অভেদের সন্ধান, কবিতা হওয়াই এর মূল লক্ষ্য হয়ে শুদ্ধতা সূক্ষতা রহস্য আর রসের ভিয়েন হয়ে উঠতে পারে। শুধু মেধা এর অন্বিষ্ট নয়, শুধু বুদ্ধি এর চাহিদা নয়। চাই এসবের দীপ্তি। সর্বোপরি মজা আনন্দ যেন লেগে থাকে নির্মাতার মননে আর সমভাবে সমান্তরালে তা উপভোগ করে পাঠক, নিজস্ব পুনঃসৃজনে।
ভাবা সহজ, অপেক্ষাকৃত, প্রয়োগের তুলনায়। আর ভাবনাটা আগেই লেখাকারে আসেনি। সামান্য কিছু কাজকর্মের মধ্যেই এসেছে। সেই কাজকর্মের ডালাটি একটা সম্পূর্ণতার মোড়কে এনে রাখা ও সবার নজরে আনা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। রূপটি সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকলেও অনেক সময়েই প্রয়োগ ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার জন্য ভাবনাটিকে প্রলম্বিত করতে বা প্রতিভাত করতে অনেক অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। এর জন্য চাই চর্চা আর নিরন্তর অনুশীলন। চাই আরও অনেক কবির প্রশ্রয় আর ভালোবাসা।



লেখক পরিচিতি-জন্ম- ডিসেম্বর ১৯৫৫। স্থান- বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ।
বর্তমান ঠিকানা- ২৩ এ/৪ ডি, পি, পি রোড নাকতলা কলকাতা- ৭০০০৪৭
শিক্ষাগত অবস্থান- অনার্স গ্র্যাজুয়েট, ফিজিক্স।
পেশা- রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের কর্মচারী (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত)
ক্ষুদ্র পত্র-পত্রিকার সঙ্গে সম্পর্ক- যৌথ সম্পাদনা, ‘শ্রাবস্তী’ (অবলুপ্ত)। কর্মী, ‘রৌরব’ (আর প্রকাশ পায় না)।
অল্পদিনের জন্য হলেও একসময় পারফর্মিং আর্টের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। নাটক, থিয়েটার, আবৃত্তি, ভাবনাট্য, নৃত্যনাট্য । অংশগ্রহন করতেন বিতর্ক, সেমিনার, অপূর্বকল্পিত ভাষণ ইত্যাদিতে। একসময় এসব করা নিজেই বন্ধ করে দেন। মূলত কবিতা ও কবিতা বিষয়ক গদ্য লেখেন সামান্য গল্প ও অন্য গদ্য
প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ—  ঋতুপর্বের নাচ, কয়েক আলোকবর্ষ দূরে, পরিযায়ী চলো, ভাঙা পিয়ানোর পা, অপর বসন্ত, ধনুক কথায় স্বর, নদীতে সায়ং ভেসে যায়আলোর হাঁসুয়া, বালুমানুষের ঝুনঝুনাৎ (দীর্ঘ কবিতার সংকলন), নৈর্ঋতে বিষুবে
প্রকাশিত গদ্যগ্রন্থ- রিলেদৌড়ের অনিঃশেষ এবং রবীন্দ্রকবিতা, আজকের উঠোনে।
ভালবাসেন ঘুরতে, থিয়েটার দেখতে, গান শুনতে, চিনে বাদাম খেতে, ছোট মাছ খেতে, বন্ধুদের সঙ্গে দেদার আড্ডা সপান।
মনে করেন কবিতাই তাকে বাঁচিয়ে রেখেছে শত বিয়োগেও।


                                                   
                                              

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র