শর্মিষ্ঠা ঘোষ

মায়াজম
0
                                    বাসনা




"রসগোল্লা খাবে" ? উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মীরা। " কেন , খাবেনা কেন, রাগ করেছ? কে কি বলেছে তোমায় ? আমি ওদের বকে দেব। নাও, এবার খেয়ে নাও তো দেখি লক্ষ্মী সোনা বাবা হয়ে " । জলের সিপার টা এগিয়ে ধরে তারপর। মুখ মুছিয়ে দেয় টাওয়েল দিয়ে। আজ একবার মার্কেটে যাবে। ওর জন্য কিছু ফল কিনতে হবে। কয়েকটা নতুন খেলনা। আগেরগুলো ধুলো পড়ে গেছে। ওসব নিয়ে খেললে ডাস্ট এলার্জি হবে। আর হ্যাঁ, কয়েকটা গরম জামা ও কিনতে হবে। শীত পড়ছে। আচ্ছা, ওর বয়স কত যেন? পাঁচ, নাকি সাত? নাকি আগে পিছে আরো কিছু দিন আর মাস কাটাকুটি হবে? কি রং পরতে ভালোবাসে ও ? কি রং মানাবে ওকে? বেবি পিঙ্ক না কি নেভী ব্লু? থাক গে, দু রকম ই কিনবে । মীরার পছন্দে পছন্দ হবে তো ওর? আগে মনে হয় নি ওকে জিজ্ঞেস করার কথা। ছোট ছিল। ছোটরা কি তেমনভাবে বলতে পারে? ও তো বড় হচ্ছে, পছন্দ অপছন্দ গড়ে উঠবে এটাই স্বাভাবিক। বাড়িতে তালা দিয়ে পথে নামল মীরা । পা চলছে দ্রুত। বেশীক্ষণ বাইরে থাকা যাবে না। মা কে না দেখলে ওর নিশ্চয় ভয় করবে। কান্নাকাটি করবে নিশ্চয় ও। মীরা বেরিয়ে যেতেই ড্রয়িং রুমের জানালাটার একটা পাল্লা দমকা হাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেল। সেদিন ও এরকম হাওয়া দিচ্ছিল। ডাক্তারবাবু সাদা রক্তমাখা গ্লাভস টা একটা বিনে খুলে ফেলে বেরিয়ে গেলেন। মীরা তখন অর্ধ চেতন। খুব ব্যথা পেয়েছিল মীরা। কিন্তু টু শব্দটি করে নি। ওর খুব কান্না পাচ্ছিল অবশ্য। তবে নিজের জন্য নয় । ওর জন্য। ও নিশ্চয় খুব ব্যথা পেয়েছে? মীরা আধো ঘুমে হাত বাড়িয়ে দিল, "আয়, বুকে আয়। মুখ গুঁজে থাক। আমি পিঠে হাত বুলিয়ে দি। " তারপর খানিকক্ষণ অন্ধকার। জ্ঞান ফিরলে আয়া মেয়েটা যখন ওকে প্যান্টি পরাচ্ছিল, মীরা লজ্জার মাথা খেয়ে জানতে চেয়েছিল ," কেমন ছিল গো ও? " মেয়েটা অদ্ভুত ভাবে তাকিয়েছিল। কোন উত্তর দেয় নি। মীরার খুব ইচ্ছে করছিল ওকে দেখে। কাউকে বলতে পারে নি। মীরা কে বাড়ি নিয়ে গিয়েছিল সুজাত । মীরা তন্দ্রাচ্ছন্ন বসে ছিল। বাড়ি ফিরে সিডেটিভ, টানা ঘুম। মাঝে মাঝে ঘুম ভাঙলে হু হু করে উঠছিল বুকটা। " কেমন আছিস রে তুই? আয়, আমার পাশে এসে শো । চুলে বিলি কেটে দি। ঘুমো সোনা। কতদিন ঘুমোস নি। আমরা দুজনে কথা বলে কত রাত পার করে দিয়েছি। কত শঙ্কা, কত দ্বিধা। এবার ঘুমো নিশ্চিন্তে " ।

পরদিন সকালে উঠে মীরা গামলায় জল গরম করে ওকে স্নান করালো। কাজল পরালো। দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়ালো। মীরার শরীর ও খুব দুর্বল। এসব করে না স্নান করে না খেয়ে মীরা আবার ঘুমিয়ে পড়ল। সন্ধ্যেবেলা অফিস থেকে ফিরে সুজাত দেখল, ঘুমোচ্ছে মীরা। চোখের নীচে কালি পড়া শুকনো মুখে ঠোঁটের কোণে একটা মৃদু হাসি লেগে আছে, অনেক দিন পর 




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)