নির্মাল্য কুমার মুখোপাধ্যায়। - মায়াজম

Breaking

২০ জানু, ২০১৮

নির্মাল্য কুমার মুখোপাধ্যায়।

খুব দূরে নয় 







ঘুম ভাঙতেই দেখি একগাদা জঞ্জালে ইনবস্ক জ্যাম।

-হাই, হাও লং ইজ ইয়োর ডিক ? 
-হাই হ্যান্ডসাম , ফাক মি নাউ।
- কিস মি, বাডি। ফাক মি। উমমম্।

চান করে দু পিস ব্রেড, কালো কফি দু চুমুক খেলাম । ভুঁড়ি বেড়ে গেলে মিসেস রাই , এম ডি , বলেছেন ফায়ার করে দেবেন।
ঢুকতেই এম ডি’র ডাক। কাজ নিয়ে অভিযোগ। সঙ্গে তাড়িয়ে দেওয়ার প্রচ্ছন্ন হুমকি । অথচ একই কাজে মেয়েরাও ভুল করে। ওদের বলেন অন্য ভাবে ।
বকা শেষ করে পড়লেন আমার পোশাক নিয়ে। এই ভাবে কেন অফিসে আসি। এতটা শো করা চলবে না। বুকের বাটন গলা অবধি লাগাতেই হবে, না হলে লোম দেখা যেতে পারে।অফিসে মেয়েরা আছে। কিছু হয়ে গেলে উনি দায়িত্ব নিতে পারবেন না।
অথচ শরীরের খাঁজে খাঁজে এমন ভাবে তাকাচ্ছেন যে বিনবিন করে ঘাম হচ্ছে এসিতেও। যেদিনই এইভাবে তাকান সেদিনই ছুটির পর লিফট দিতে চাইবেন জানি।
উফ, এত কুৎসিত একজন মধ্যবয়স্ক বিবাহবিচ্ছিন্না মহিলার সঙ্গে ওইসব করা যে কি কঠিন!
ক্যান্টিনে বসতেই মিসেস গুলাটি এসে হাজির।
ইনি শুরু করেন এই ভাবে,
কি বললেন এম ডি? হুঃ , কেন যে ছেলেরা এখনও এত চাকরি চাকরি করে মরছে। ওদের জায়গা যে আসলে এইটা নয়, সেটা বুঝতে আরও সময় লাগবে।
যাই বল আর তাই বল, তুমি কিন্তু ভারি হ্যান্ডসাম। আমাদের সেকসনে তোমাকে নিয়ে যা আলোচনা হয় শুনলে তুমি ভিরমি খাবে ডিয়ার। উইক এন্ডে কি করছ? চল না , কাছেই একটা গাঁজা-প্লাজা খুলেছে। দ্দারুউউউউন ।

যদি না বলি, আমার নামে কুৎসা রটান শুরু হবে। কার কার সঙ্গে আগে গিয়েছি গাঁজা খেতে, এখন সৎ-পনা দেখাচ্ছি এই নিয়ে রসালো আলোচনা শুরু করে দেবে গুলাটি। বিবাহিতা মাঝবয়েসী , আরও ভয়ঙ্কর।
কমপ্লেক্সের সিকিউরিটি প্রধানা আপাদমস্তক এমন ভাবে দেখল যেন পারলে জামা কাপড় খুলে দেখে। ভদ্র ভাবে ছেলেদের দিকে তাকাতে হয় কি ভাবে এরা জানে না।
কিছু বলতে গেলেই বলবে--সিকিউরিটিকা মামলা হ্যায় সাব।
লিফটে সবকটা মাতাল একসঙ্গে উঠেছে। এঁদের ভেতর আবার কয়েকটা এল-জি-বি-টী আছে। এরা ষ্ট্রেটদের ঘেন্না করে, কখনো কখনো এ্যাটাক করে ফেলছে।
গত মাসেই একটাকে আমাদের কমপ্লেক্সের ভেতরেই রেপ করেছে ওরা । রেক্টাম দিয়ে দরদর করে রক্ত পড়ছিল ছেলেটার। কোনমতে তাঁকে বাঁচান গেছে। মিডিয়ার অত্যাচারে যদিও সে এখন রিহ্যাব-এ। তার গার্লফ্রেন্ড এই ঘটনার পর আর যোগাযোগ রাখছে না একদম। বলেছে , ভার্জিন বি এফ চাই।
কেউ নেই সঙ্গে আমার । একদম একা আমি এখন আমার ফ্ল্যাটে। স্নিসা আমাকে শেষ কবে ফোন করেছিল মনে আছে পরিষ্কার । ওর কিন্তু মনে নেই আমি জানি। ওর প্রত্যেকটা কিস্‌-এর গন্ধ আমি বুকের ক্লাউড ষ্টোরে ধরে রেখেছি । ধরে রেখেছি ওর স্তনের স্পর্শ পাঁজরের নিচে লুকিয়ে।
রাতে যখনি অনলাইন হই, ডিসপ্লে দেখায়, কারও না কারও সঙ্গে নিবিড় ভাবে ঘনিষ্ঠ ,হয় ক্লাবে না হয় বারে , না হয় কোন গাঁজা-প্লাজায়।
মদ আগে খেত পাগলের মত । আমার সঙ্গে যে কদিন ছিল একটু কন্ট্রোলে ছিল।আমার স্থির বিশ্বাস , আমার সঙ্গে থাকলে আমি ঠিক ওকে ভাল করে ফেলতাম।
আমাকে এখন আর পাত্তাই দেয় না স্নিসা । গত কয়েক মাস দেখছি শুকনো ধরেছে ।
প্রেম জিনিসটা কি সেটা মেয়েরা একদম বোঝে না । খালি বোঝে শরীর।

উফ, কাল আবার অফিস, মিসেস রাই, গুলাটি । আর পারিনা।
এসো সাদা বড়ি,এসো লাল জল। এসো সিগারেটের ছাই, সঙ্গে সিকিউরিটি থেকে প্রকাশ্যেই কেনা এক চিমটি ''বাদামি চিনি''। এই চারটে মেশালে তবে শ্রান্ত হয় আমার স্নায়ু । ডাক্তার বলেছেন 
-- আমিও আর বেশি দিন নেই।

বাঁচি , মরণ হলে বাঁচি। হে ঈশ্বর, এত লোক মরে , আমি কেন মরি না! 
---+++---





লেখক পরিচিতি-জন্ম, ১৯৫৬. ফুলিয়া, নদীয়া, পড়াশুনো.. বিজ্ঞান শাখার স্নাতক। বি এড। কর্মজীবন.. ভূমি সংস্কার বিভাগের স্পেশাল রেভিনিউ অফিসার। গ্রেড ১। এখন কনসালটেন্ট ল্যান্ড ডিসপিউট। লেখার শুরু ১৯৯৭. গল্প প্রকাশিত.. সাপ্তাহিক বর্তমান, তীব্র কুঠার, অন্য প্রমা, গল্প সরণি, আঁতুড়ঘর ও নানা পত্রিকায়
। কবিতা ও অণুগল্প - দেশ, তথ্যকেন্দ্র, সীরাত, অভিযান আরও নানা পত্রিকায়। প্রবন্ধ - ভূমি বার্তা, অন্যপ্রমা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র