ইন্দিরা দাশ - মায়াজম

Breaking

২০ জানু, ২০১৮

ইন্দিরা দাশ

                               পরিচিতি



ড়দিনের ছুটি পড়বে শিগগিরি। জ্যানিসদের ক্লাসে রচনা লিখতে দিয়েছে। দিদিমণি বলেছেন সুন্দর করে স্যাণ্টাক্লসের সম্বন্ধে লিখতে। সে কোথায় থাকে, কেমন তাকে দেখতে, কি উপহার সে নিয়ে আসে বড়দিনের সময়, এ সমস্ত ব্যাপার আর কি। ক্লাসের বাকি বাচ্চারা খাতা খুলে ভাবনাচিন্তা করতে বসল। দিদিমণি স্যান্টা’র ছবিও আঁকতে বলেছেন তো। ও হো, জ্যানিসের রঙপেন্সিলের বাক্সটার সব পেন্সিলই যে শেষ হয়ে গিয়েছে প্রায়। অল্প ক’টা পেন্সিলের রঙ দিয়েই সে স্যান্টা এঁকে ফেলল। এই স্যান্টাকে সে তো অনেকবার এঁকেছে, বেশীক্ষণ লাগল না তার। 
পাশের ডেস্ক থেকে রুবি ফিসফিস করে জিজ্ঞেস করছে অযাচিকে স্যান্টার বাড়ির ঠিকানা। কোন্‌ একটা বরফের দেশের নাম বলল সে। ওদিকে সরবজিৎ খাতায় এত্তবড় ছবি এঁকেছে স্যান্টা’র, টুকটুকে লালরঙের জামা-প্যান্ট পড়া। এমনটাই নাকি গল্পের বইতে দেখা যায়। সময় শেষ হয়ে এসেছে, সরবজিৎ ছবি আঁকতে এতই ব্যস্ত ছিল যে দু-লাইনও লেখার সময় পায়নি, তাই সে ভ্যাঁ করে কান্না জুড়ে দিয়েছে। ইংরিজি দিদিমণি বড্ড ভালো, উনি সরবজিৎ’কে কোলে নিয়ে ভোলাচ্ছেন, সাহস দিচ্ছেন যে চিন্তা নেই, পরে তাকে আবার লেখার সুযোগ দেওয়া হবে। অনেক কিছু লিখে চশমা সামলিয়ে রেশমা নিজের খাতা জমা দিল। এই ক্লাসে যে কোন নার্সারি-রাইম না থেমে একবারে গড়গড় করে ওই তো বলে ফেলতে পারে। কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে জ্যানিসেরও। খাতায় একটি পাতাতেই সুন্দর করে সব লেখা আর আঁকা হয়ে গেছে তার। 
পরদিন স্কুলের ফাংশনে বাচ্চারা এসেছে মা-বাবাদের সাথে। সবাই খুব খুশি। এরপর লম্বা ছুটি বড়দিনের। তাই আজ সবাই পাবে কাপ-কেক আর টফি। এছাড়া ছোট্ট স্কুলের রচনা-প্রতিযোগিতায় সেরা লেখা যে লিখেছে, সেরা ছবি যে এঁকেছে সে পাবে ছোট্ট একটি উপহার। গল্পস্বল্প করছে সব বাবা-মা’রা। জ্যানিসের মা বহু কষ্টে ছুটি নিয়ে এসেছে কয়েক ঘন্টার। একটু ছটফট করছে সে মাঝে মাঝে, আবার জ্যানিসের দিকে তাকিয়ে ফিক করে হেসে ফেলছে। কিন্তু এ কি ব্যাপার, প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘোষণা করার সময়ে জ্যানিসের নাম ডাকা হচ্ছে কেন! তার ক্লাসের ভালো ভালো ছেলেমেয়েরা কত কি লিখে পাতা ভরিয়ে দিয়েছে! মা তাড়াতাড়ি নিজের রুমাল দিয়ে মুখটা মুছিয়ে দিলেন। নিজের নাম শুনে একটু ইতস্তত করে উঠে দাঁড়ালো জ্যানিস।

কখন দু-চোখ জলে ভেসে গেছে তা তো বুঝতেই পারেন নি জেন, জ্যানিসের মা। জ্যানিসের খাতায় স্যান্টাক্লস পুরনো রঙ-ওঠা লম্বা গাউন পড়ে পুরনো ক্রিস্টমাস ট্রী’র পেছন দিয়ে উঁকি দিচ্ছে, সাবধানে সাজিয়ে দিচ্ছে সস্তা ময়দার তৈরি ক’টি মিষ্টি রুটি, দুটো নতুন রুমাল, ইস্কুলের জুতো এক জোড়া। স্যান্টা’র মাথার লম্বা চুল এলোঝেলো খোঁপায় ঘাড়ের কাছে বাঁধা, আর টেপা ঠোঁটে অদ্ভুত সুন্দর একটা হাসি। 
হ্যাঁ, বাবা মারা যাওয়ার পর এই স্যান্টাকেই তো প্রতি বছর উঁকি দিয়ে দেখেছে জ্যানিস রাত্রিবেলা। চার্চ ঝাড় দিয়ে পরিস্কার করে মা আজ কষ্ট করে এই অনুষ্ঠানে এসেছে, তাই জ্যানিস খুব খুশি, কিন্তু সে জানে খুব তাড়াতাড়ি মা’র ফিরে যেতে হবে কাজের জায়গায়, সেখানে সারাদিনের কাজ থেকে মাত্র দু’ঘন্টাই ছুটি পাওয়া গেছে। তার লেখা-আঁকা কিছুর সম্বন্ধে সব বলা হয়ে গিয়েছে, তাই হাসি মুখে স্টেজ থেকে নেমে মা’র কাছে ফিরতে চাইল জ্যানিস। কিন্তু বড়-দিদিমণি পেছন থেকে ডাক দিলেন যে আবার। একটু ভয় পায় জ্যানিস লম্বা ফরসা বড়-দিদিমনি’কে। অথচ আজ উনি হাতে করে উপহার নিয়ে এসেছেন জ্যানিসের জন্য! অবাক ব্যাপার, এ তো বিরাট বড় রঙ পেন্সিলের বাক্স! লাল, নীল তো বটেই, জ্যানিসের মা’র চুলের মতন হালকা বাদামী, তার চোখের তারা’র মত ধুসর ছাই রঙ’ও রয়েছে। এত রঙ’ও পাওয়া যায় বুঝি! এর পরের বার তাহলে আরও সুন্দর করে স্যান্টাক্লস’কে আঁকতে পারবে জ্যানিস! দারুণ খুশিতে উপহার নিয়ে দৌড়ে মা’র কোলের কাছটায় চলে এলো এবার সে। মা তখন আশ্চর্য হয়ে, হেসে, কেঁদে আনন্দে একাকার। খুশির হাততালির সঙ্গে শুরু হোল বড়দিনের গান।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র