"আকাশ আমার ঘরের ছাউনি পৃথিবী আমার ঘর সারা দুনিয়ার সকল মানুষ কেউ নয় মোর পর।।"
আত্মার আত্মীয়করণে অভ্যস্ত দেশ ভারত তার স্বভাব-গুণে ধর্মে কর্মে বিচিত্রতায় চিররঙিন। কিন্তু ভারতের লোককথা, লোকনৃত্য, লোকসংগীত নিয়ে যত আলোচনা, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, হইচই পাবলিকলি হয় ততটা শিল্পকলা নিয়ে হয় বলে মনে হয় না। অথচ ভারতের কোণে কোণে গ্রামেগঞ্জে একেবারে মূলস্তরে এত রঙ, এত রূপ, এত আঙ্গিক ছড়িয়ে আছে যে, সেসব কিছু বিস্তৃত রিসার্চ এর বিষয়বস্তু হতে পারে। ভারতে প্রাচীনকাল থেকে কথিত প্রজ্ঞা ও লিপির সাথে সাথে পরিবার ভিত্তিক শিল্পকলার চর্চা হয়ে এসেছে কোনও নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা অনুমোদন ছাড়াই।)
১) সেকাল- সকালের লোক ও শিল্প:
"মাটিরও পিঞ্জিরার মাঝে বন্দী হইয়া রে
কান্দে হাছন রাজার মনমুনিয়া রে--"
১) সেকাল- সকালের লোক ও শিল্প:
"মাটিরও পিঞ্জিরার মাঝে বন্দী হইয়া রে
কান্দে হাছন রাজার মনমুনিয়া রে--"
ভারতীয় লোকশিল্প প্রাচীনকাল থেকে স্বতন্ত্র, পরিবারভিত্তিক বা ঘরানা-ভিত্তিক। সনাতন হিন্দু বা সিন্ধু সভ্যতারও আগে থেকে এর যাত্রা শুরু। মাঝে অনেক নতুন সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের সাথে মিলিত হবার সুযোগ পায় যার মধ্যে রয়েছে বৌদ্ধ, জৈন এবং ইসলাম।
শিল্পের অসংখ্য শাখা প্রশাখা প্রয়োজন ও প্রাপ্ত উপকরণের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, তার সাথে জুড়েছে লোকায়ত স্কিল। যেমন, মৃৎশিল্প এবং ধাতু বা পাথরের ভাস্কর্য, চিত্রশিল্প, বুননকৃত সিল্ক, উল বা সুতো।
প্রাচীনতম প্রস্তরমর্ম
ভারতের পাথুরে শিল্পের মধ্যে রয়েছে পাথর কেটে তৈরিকৃত বস্তু, পাথরে খোদাইকৃত কাজ এবং পাথরের ওপর আঁকা ছবি।
ইন্দু ভ্যালি : পোড়ামাটি, পাথরের মূর্তি, পাত্র ইত্যাদি।
মৌর্য শৌর্য : উল্লেখযোগ্য শিল্প নিদর্শন পাথরে গড়া স্মৃতিস্তম্ভ ও কাঠে খোদাইকৃত শিল্প।
বৌদ্ধ শুদ্ধি : বেশিরভাগ শিল্প বিভিন্ন আকৃতির বৌদ্ধমূর্তি। পাথর, ধাতু অপেক্ষা কাঠের অতিরিক্ত ব্যবহার অত্যন্ত লক্ষণীয়।
গুপ্ত সুপ্তি : প্রচুর চিত্রকর্ম ও মূর্তি এই সময়ের অবদান।
অধ্যবসায়ী মধ্যযুগ : এই সময়ের লোকায়ত শিল্পে জুড়েছে বিভিন্ন চিত্রকর্ম, পাথর বা ধাতুর তৈরি মূর্তি বা ভাস্কর্য, প্রাচীর চিত্র ইত্যাদি।
প্রাক আধুনিক দিগ্বিদিক : রাজপুত, সুলতান, বিজয়নগর সাম্রাজ্য, গজপতি, মোগল সাম্রাজ্য, মাইসোর, মারাঠা, শিখ এবং ঔপনিবেশিক শাসন আমলের সময়কালের শিল্পকর্মকে নির্দেশ করে। এ সময়ের লোকশিল্পে বিভিন্ন জাতি, গোষ্ঠী ও ধর্মের ব্যাপক সংমিশ্রণ লক্ষ্য করা যায়।
আধুনিক চিত্রিক : আধুনিক ভারতীয় শিল্পে চিত্রশিল্প এবং ভাস্কর্যের আধিক্য লক্ষ্য করা যায়। ভারতের আবহমান বা চিরায়ত লোক ঐতিহ্যের পাশাপাশি আধুনিক প্রতিষ্ঠানলব্ধ ধারার মিলমিশ দেখা যায়।
২) একাল বৈকালের ফোক ও আর্ট :
"মোর পরান বঁধু নাই, পদ্মে তাই মধু নাই–নাই রে– বাতাস কাঁদে বাইরে– সে সুগন্ধ নাই রে–"
বিরহে মজে প্রেম, প্রেমে মজে মাধুরী, অধরা মাধুরী ধরা দেয় শিল্পীর স্বপ্নে বর্ণে ভাবনায়.... লৌকিক কাহিনী, প্রেম অপ্রেম মিশে যায় অলৌকিক ভক্তিতে -- ব্যক্তি পরিবার সমাজ ভবিষ্যতের জন্য রেখে যায় গান, নাটক, কবিতা ও শিল্পের বহমান ধারা --
লোকায়ত ছবি বা ভারতের ট্র্যাডিশনাল ( ঘরানা) পেইন্টিং এর ভাণ্ডার বিচিত্র ও বিশাল। মধুবনী থেকে কলমকারি অজস্র ঘরানা লোকচিত্র খুঁজে পাওয়া যায় ভারতে, অনেক ঘরানা কালের দাপটে মুছে গেছে, বেশকিছু টিঁকে আছে আবার বেশ কয়েকটি ঘরানা দিব্যি দেশে বিদেশে নিজের আধিপত্য জাহির করে বেড়াচ্ছে।
"অজ্ঞান মন, খুয়াইলায় মহাজনের ধন এবে কি লইয়া গমন? "
মধুবনী বা মিথিলা আর্ট : কথিত আছে সীতার বাবা জনক রাজার সময় থেকে চলে আসছে এই শৈলী নেপাল ( অধুনা বিহার) এ। মধুবনী ভারতের সবথেকে জনপ্রিয় লোকচিত্রশৈলী, সাধারণত মহিলারা আঁকতেন, যাঁরা তাঁদের আরাধ্য ভগবানের সাথে একাত্ম হতে চাইতেন। সাধারণত জ্যামিতিক গঠনে গড়ে ওঠা এই শৈলী ব্রিটিশরা পুরো পৃথিবীর নজরে আনেন। বিশেষজ্ঞরা পিকাসো ও মিরো'র ফিগার ফর্মের সাথে এই লোকচিত্রের মিল খুঁজে পান।
মিনিয়েচার ছবি : এই ধরনের সময়সাপেক্ষ ছবিগুলি আকারে খুব ছোট কিন্তু অসম্ভব দক্ষতায় ও ধৈর্যে অতিসূক্ষ্ম ডিটেলস, ভাব ও ভাবনা আঁকেন। মুঘল যুগে আকবর ও শাহজাহানের সময় থেকে এই ধরনের ছবি আঁকা শুরু হয়েছিল যাতে পারস্যের প্রভাব আছে। পরে রাজপুত লোকশিল্পী এই টেকনিক আত্মস্থ করেন এবং অনেকগুলি ঘরানার জন্ম হয়। অন্যান্য লোকায়ত শিল্পের মত, মিনিয়েচার পেন্টিং মূলত ধর্মীয় কল্পকাহিনী ও ধর্মীয় চিহ্ন আঁকাতে সীমাবদ্ধ। রাজপুত ঘরানার ছবিগুলির বৈশিষ্ট্য হল মানুষের বড় বড় চোখ, সরু নাক ও কোমর আর পুরুষদের মাথার পাগড়ি।
ফাড় পেইন্টিং : রাজস্থানে এই শৈলীর জন্ম। প্রধানত স্থানীয় দেবতা 'পাবুজী' বা 'দেবনারায়ণ' এর লৌকিক কাহিনী আঁকা হয়ে থাকে। ১৫ থেকে ৩০ ফুট লম্বা ক্যানভাস বা কাপড়ের স্ক্রোলে ভেজিটেবিল কালারে দেবতাদের জীবন ও বীরত্বের কাহিনী বর্ণনা করা হয়ে থাকে।
ওয়ারলি ছবি : প্রায় ৪৫০০ বছর আগে ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালার আদিবাসীরা এই ঘরানার জন্ম দেন। সেদিক থেকে ভারতীয় চিত্রের প্রাচীনতম লৌকিক ঘরানা ওয়ারলি'ই। বৃত্ত, ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ ও আরো অন্যান্য জ্যামিতিক ফর্মে আঁকা প্রতিদিনের মাছ ধরা, শিকার, নাচ গান, উৎসব ইত্যাদি প্রায় সবকিছু এই ছবিতে ধরে রাখা হয়। সাধারণত সাদা রঙে আঁকা হয়, কালচে লাল বা অন্য গাঢ় রঙের ব্যাকগ্রাউন্ডে। একটি বৃত্ত ও দুটি ত্রিভুজ দিয়ে বানিয়ে দেওয়া হয় আস্ত মানুষ।
গোন্দ উপজাতীয় ছবি : মধ্যপ্রদেশের গোন্দ উপজাতিদের প্রকৃতিপ্রেম প্রকট হয় এই শৈলির ছবিতে। মোটা ও স্পষ্ট বর্ডারে আঁকা দুর্দান্ত কালারফুল এইসব ছবির প্রধান বিষয় গাছপালা আর পশুপাখি। চারকোল, গোবর, গাছের পাতা ও বিভিন্ন রঙের মাটি দিয়ে তৈরী হয় রঙ। খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায় শুধু বিন্দু আর রেখা জুড়ে জুড়ে তৈরি হয়েছে আস্ত ছবি। আজকাল অবশ্য প্রাকৃতিক রঙের বদলে কৃত্রিম রঙ ব্যবহৃত হচ্ছে।
কলমকারি : কলমকারি শব্দের আভিধানিক অর্থ হল 'কলম দিয়ে আঁকা'। অন্ধ্রপ্রদেশের দুই জায়গায় দুই ঘরানার কলমকারি কাজ হয় -- মছিলিপত্তনমে মছিলিপত্তনম কলমকারি আর চিতুরে শ্রীকলহস্তী কলমকারি। প্রথমটিতে ব্লক প্রিন্টে বিভিন্ন ছবি আঁকা হয়, দ্বিতীয়টিতে কলম বা পেন দিয়ে আঁকার চল দেখা যায়। আজকাল শাড়ি বা এথনিক ড্রেসে কলমকারির চল খুব বেশি। দু'ধরনের কলমকারিতে সাধারণত প্রকৃতি, পশুপাখি বা রামায়ণ, মহাভারতের গল্প আঁকা হয়ে থাকে।
তাঞ্জোর বা তাঞ্জাভোর ঘরানার ছবি : ভারতের একেবারে দক্ষিণে এই ঘরানার শুরু হয়েছে ১৬০০ শতাব্দী তে। তাঞ্জোর ছবি সহজে চেনা যায় যেহেতু বড় বড় কাঠের গুঁড়িতে খাঁটি সোনার ফয়েল ব্যবহার করে আঁকা হয় দেবতা বা সাধু-সন্তদের ছবি। এদের স্টাইল মারাঠিদের বা দক্ষিণে র অন্যান্য লোকচিত্রের সাথে মেলে। কিছুটা আবার ইউরোপিয়ান ঔপনিবেশিক প্রভাবও লক্ষ্য করা যায়।
চেড়িয়াল স্ক্রোলস : এখনকার তেলেঙ্গানার একমাত্র একটা পরিবার চেড়িয়াল স্ক্রোল আঁকে। এই আঁকার স্টাইল বহু প্রজন্ম ধরে একটি পরিবারেই সীমাবদ্ধ থেকে এসেছে আর বর্তমানে প্রায় শেষ হয়ে যেতে চলেছে। কলমকারি আর লম্বা স্ক্রোলের ভারতীয় ঐতিহ্য এই স্টাইলকে উদ্বুদ্ধ করেছে।যদিও চেড়িয়াল স্ক্রোল অনেক বেশি স্টাইলাইজড ও জটিল। ৪০ থেকে ৪৫ ফুটের স্ক্রোলগুলিতে পুরাণ ও রামায়ণ - মহাভারতের গল্প লেখা ও আঁকা হয়। অনেকটা এখনকার কমিক বইগুলির মতো করে। খুব সাধারণ, বেসিক রঙের কিন্তু কল্পনাশক্তির তুখোড় ব্যবহার হয়, যা তাঞ্জোর বা মাইসোরের ছবি থেকে একেবারে আলাদা।
কালীঘাটের পট : লোকচিত্রের সবথেকে আধুনিক ঘরানা বোধহয় কালীঘাটের পটচিত্র। উনিশ শতকে মাত্র এই শৈলীর জন্ম। সেইসময়ে যখন ব্রিটিশের শাসনযন্ত্র থেকে বেরোতে বাংলা তথা ভারত উন্মুখ।কাপড়ে ও পটে আঁকা এই ছবিগুলির বিষয় প্রথমে দেব-দেবী হলেও খুব শিগগির তা সামাজিক হালচালের ছবিতে বদলে যায়। সস্তার কাগজ, কালি আর কাঠবেরালির লোম দিয়ে বানানো ব্রাশে খুব সরল কিন্তু শক্তিশালী স্ট্রোকে আঁকা হতে থাকে কলকাতার জমিদার বাবুদের মহিলাসঙ্গ ও সাথে ওয়াইন, বারবনিতাদের উদ্দেশ্যে সাধুর উপদেশ বা পুলিশ বাবুদের অলস সময় যাপন --
উড়িষ্যা ও বাঙলার পটচিত্র : কাপড়ের লম্বা স্ক্রোলে দেব-দেবী, পুরাণ ও মহাকাব্যের নানা কাহিনী এঁকে সাধারণত পটের গানের মাধ্যমে ছবির কাহিনীগুলি বর্ণনা করা হয়। এই ধরনের ছবি ও গানের দ্বৈত প্রদর্শন অন্য কোথাও দেখা যায় না বলেই জানি। পঞ্চম শতাব্দী পুরী ও কোনারকের ধর্মীয় আবহাওয়ায় এই পটচিত্রের সূচনা হয় কিন্তু বাঙলার মেদিনীপুরের বেশকিছু পরিবার এই পটচিত্র আঁকায় ও পটের গানে কয়েক প্রজন্ম ধরে পারদর্শী।
৩) সত্য সেলুকাস! :
"আমার কাদা মাখা সারা হ’লো। ধর্মমাছ ধরব ব’লে নামলাম জলে, ভক্তি-জাল ছিঁড়ে গেল।"
যদিও শিল্পের অন্যান্য শাখার মত লোকশিল্পীরা এখনও সেভাবে পুরোপুরি শিল্পীর মর্যাদা পান না। প্রধানত গ্রামে ও পরিবারভিত্তিক শিল্প ও শিল্পীদের অনেক ঘরানা কালের অতলে তলিয়ে গেছে। ঠিকমত পড়াশোনা এবং অন্যান্য সুযোগ সুবিধের অভাবে অনেক শিল্পী নিজেদের কাজের বাণিজ্যিক দিক সম্বন্ধেও ওয়াকিবহাল নন। সরকারি ( বস্ত্র মন্ত্রালয়) ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা যথেষ্ট উদ্যোগ নেওয়া সত্ত্বেও অধিকাংশ লোকশিল্পী অশিক্ষা ও দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করে টিকে আছেন। অথচ ভারতের লোকশিল্পের বৈচিত্র্য রীতিমতো মাথা ঘুরিয়ে দেবার মত।
"এই রাঙামাটির পথে লো মাদল বাজে
বাজে বাঁশের বাঁশি ও বাঁশি বাজে বুকের মাঝে লো
মন লাগে না কাজে লো "
কাজে না লাগা মন যখন অকাজ করে তখন জন্ম হয় রঙের, পাথর ফুঁড়ে, কাঠ ফেটে, পেতল গলে জন্ম নেয় ফর্ম। যা হাতের কাছে পাওয়া যায়, মোহ ও মায়ায় তাতেই নতুন কোনও রূপ গড়ে ওঠে। যুগে যুগে কালে কালে মনের গহনে লুকিয়ে থাকা অরূপকে মানুষ রূপ দিয়ে চলেছে, শাখানদীদের মত বয়ে চলেছে লোকশিল্পের ধারা, সর্বত্র।
উদাহরণস্বরূপ একটা রাজ্যভিত্তিক তালিকা দেবার চেষ্টা করলাম--
কাঠ খোদাই শিল্পে জম্মু কাশ্মীর, কর্ণাটক, কেরালা, উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন অঞ্চল আলাদা আলাদা আঙ্গিক নিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থিত।
বুনন ও এমব্রয়ডারিতে সব রাজ্যের নিজস্বতা আছে তবু মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, বিহার, উড়িষ্যার ভিন্ন ভিন্ন বুনন বিশেষভাবে উল্লেখ্যোগ্য।
সমুদ্র তীরবর্তী জায়গাগুলোয় স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে উঠেছে ঝিনুক, শঙ্খ ও অন্যান্য সামুদ্রিক অবশেষ ব্যবহার করে শিল্পসম্ভার। এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য রাজ্য গোয়া, উড়িষ্যা, তামিলনাড়ু।
রূপো বা মিনাকারী বা ফিলিগ্রিতে কটক ও তেলেঙ্গানা এগিয়ে।
মার্বেল কার্ভিং করে মূর্তি ও অন্যান্য ব্যবহার্য বা দর্শনীয় সামগ্রী প্রস্তুত করেন উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, নাগপুর, উড়িষ্যার নানান অঞ্চলের শিল্পীগোষ্ঠী।
কাগজও শিল্পসৃষ্টির মাধ্যম। এক্ষেত্রে এগিয়ে দিল্লি, রাজগীর, পাটনা, গয়া, লক্ষনৌ, আমেদাবাদ, এলাহাবাদ
পাটজাত দ্রব্য ও শিল্পবস্তুতে অবশ্যই অগ্রগণ্য পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, বিহার।
ডোকরা এক জটিল শিল্পমাধ্যম। মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উড়িষ্যা এই শিল্পে অগ্রণী।
পোড়ামাটির গয়না বা দেওয়ালচিত্র বা প্রয়োজনীয় সামগ্রীর চল ইন্দু সভ্যতা থেকে। আমাদের কৃষ্ণনগর, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া, বিকানীর, পুণে, লক্ষনৌ, হিমাচল প্রদেশ এইশিল্পে এগিয়ে।
এছাড়া পেতলের মূর্তি বানানোয় রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশের শিল্পীরা অতিদক্ষ।
বিভিন্ন পশুর শিং থেকে শিল্পবস্ত, গয়না ইত্যাদি তৈরিতে উড়িষ্যা, কেরালা কর্নাটক, উত্তরপ্রদেশ এগিয়ে।
বেলমেটালের ব্যবহার বেশ বেশি করেন মধ্যপ্রদেশ, বিহার, আসাম, মনিপুরের শিল্পীরা।
বেতের সামগ্রী বানাতে তামিলনাড়ু, আসাম, ত্রিপুরার শিল্পীরা পারদর্শী।
বাঁশ থেকে তৈরি হয় অসংখ্য রকমের প্রয়োজনীয় ও বাহারি সামগ্রী, প্রধানত পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরায়।
এছাড়া শিল্পীরা ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক, মেটাল, ঘাস, পাতা, ফলের বীজ বা খোসা, ধান, গম সবকিছুকেই শৈল্পিক দৃষ্টিতে দেখতে সক্ষম।
৪) শেষ নাহি যে :
"অন্ধকারে মায়া ধরে বেড়াস কেন ঘুরে ঘুরে জীবন প্ৰদীপ কখন নিভে যায় ফস কইরে।"
লোক সংস্কৃতির এক সহজিয়া রূপ আছে। রাজা বা সম্রাটদের আনুকূল্যপ্রাপ্ত পণ্ডিতদের তৈরি গ্রন্থ গ্রন্থ নিয়মাবলী, বুদ্ধিবর্দ্ধক ব্যাকরণের বাইরের এক প্রবহমান বোধের জগত, অজানা অচেনা অরূপের সাথে বোঝাপড়ার জগত। অসীম কাল ও তার পরিব্যাপ্ত হারিয়ে যাওয়া বা হারিয়ে ফেলার অন্ধকারের মধ্যে টিমটিম করে প্রাণের, আনন্দের, উদ্যমের আলো জ্বালিয়ে রাখেন লোকশিল্পীরাই -- সুর, কথা, রেখা, অবয়ব দিয়ে -- গড়ে তোলেন অরূপরতনের সাম্রাজ্য কোনও মুকুট বা অমরত্ব বা ব্র্যান্ডের আকাঙ্ক্ষা ছাড়া। কালস্রোতে কিছু ভেসে যায়, কিছু থেকে যায় পুরাতনী , কিছু নূতনী গড়ে ওঠে। সে রসময় চলমান ব্যপ্তিকে শুকনো কথার বাঁধনিতে বাঁধা যায় না কখনোই......
"যাহা পুরাতনী তাহাই নূতনী বিপুল বিপণীতে
রসে মজে মন হারালি যখন
ফিরিলি
ধরণীতে"
লেখক পরিচিতি
নাম মোনালি
জন্ম ১ লা সেপ্টেম্বর
পড়াশোনা কেমিষ্ট্রি অনার্স, মাস্টার্স ইন ইকোলজি
পেশা আর্টিস্ট (কনটেম্পোরারি পেইন্টিং)
নেশা বই পড়া
সুচিন্তিত মতামত দিন