1.উমিয়াম লেকের লোককথা
আজ আমি আপনাদের মেঘালয়ের একটি লোক কথা শুনাবো। মেঘালয় ভারতের সুদূর পূর্বের একটি অতি মনোরম পাহাড়ি রাজ্য। এখানে সেখানে এর অনেক জলপ্রপাত আর লেক বা ঝিল দেখা যায়। এর মধ্যে কা উমিয়াম লেকটি প্রসিদ্ধ।গৌহাটি থেকে শিলং আসার পথে এই লেকটি পড়ে। উমিয়াম হাইড্রো ইলেকট্রিক এখানেই অবস্থিত। নীল আকাশের নীচে মেঘালয় পাহাড়ের মাঝখানে এই লেকটি। একটি অত্যন্ত মনোরম লেক এটি যার ধারে বসে অনেকক্ষণ কাঁটিয়ে দেওয়া যায়। লেকটি যেন সব সময় আকাশের নীল চাদরে আবৃত থাকে।সারা বছর ধরে পর্যটকেরা আসে এই অদ্ভুত সুন্দর লেকটিকে দেখতে।এটি ভূপৃষ্ঠ থেকে ৩১০০ হাজার উঁচুতে অবস্থিত। লেকের মাঝে একটি ছোট্ট পাহাড় আছে নাম তার লাংপেংডং। সকালে জলের গাড় নীল রঙ আর সূর্যাস্তের সময় যখন লেকের জল রক্তিম হয়ে ওঠে তা বর্ণনাতীত। এর আরেকটি নাম হচ্ছে বড়পানি লেক। কিন্তু স্থানীয় বাসীরা এটাকে কা উমিয়াম বলতেই ভালবাসে। এরা এটিকে একজন দেবীর চোখের জল ভাবে। তাই স্থানীয় বাসিন্দারা এই লেক বা হ্রদটাকে খুব সম্মান করে থাকে।
যা বলছিলাম, গৌহাটি থেকে শিলং যাবার পথে উপরের পাহাড়ি রাস্তার গাছ পালার ভেতর থেকে লেকটিকে দেখতে পেয়েই আর তর সইল না। গাড়ী ঘুড়িয়ে নেমে এলাম নীচে লেকটিতে। একটি বোট ভাড়া করলাম সেটা সারা লেক ঘুড়িয়ে আনবে। বোটে বসে জলের দিকে তাকাতেই কেমন যেন লাগলো যেন আকাশের মেঘের ভেতর ঘুরে বেড়াচ্ছি। লেকের জলটা ও নীল আকাশের চাঁদরে আচ্ছাদিত হয়ে আছে। হাত বাড়িয়ে লেকের জল ছুঁলাম । একটা অদ্ভুত অনুভূতি। এই জল নাকি সাধারণ জল নই। এটি নাকি কারো চোখের জল! এই উমিয়াম লেক সম্বন্ধে একটি লোককথা আজ ও ওখানকার বাসিন্দার মুখে মুখে ফেরে। কথিত আছে, বহুকাল আগে স্বর্গে দুই বোন ছিল। তাদের নাম ছিল কা ঙ্গট আর কা ইয়াম। তারা দুজনে একে ওপরকে খুব ভাল বাসতো। একে ওপরের বিনা তারা থাকতে পারতো না। দুই বোন সব সময় খুব ফুর্তি করে থাকতো। তাদের উচ্ছল উদ্যম স্বভাবের জন্যে সবাই তাদেরকে ভালোবাসতো। মা বাবা ও তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতেন না। একদিন হয়েছে কি, তারা পাহাড়ের চুড়োতে উঠে পুরো শহরটাকে দেখছিল। তাদের ইচ্ছা হল মর্তলোকে আসার। দু বোনই যাত্রা করলো মর্তের উদ্দেশ্যে।কিন্তু কালের প্ররোচনায় এক বোন মাঝ পথে পথ হাঁড়িয়ে আর মর্ত লোকে পৌঁছুতে পারে না আর তাই স্বর্গে ফিরে যায়। দ্বিতীয় বোন মর্তলোকে পৌঁছে বোনের অপেক্ষা করতে থাকে আর আফসোস করে অবশেষে কাঁদতে শুরু করে। আর তাঁর চোখের জল পড়ে পড়ে তৈরি হয় এই উমিয়াম লেক। আনমনা হয়ে আমি জলটা মুখে দিলাম দেখলাম জলটা সত্যিই চোখের জলের মতো নোনা নাকি।
2.দ্য লিজেন্ড অফ মাউন্ট সফেট বেনেং
আমাদের ট্যাক্সিটা সফেট বেনেং পাহাড়ে। অদ্ভুত সুন্দর পাহাড়টা। সারা বছর ই এখানে দূর দূরান্ত থেকে পর্যটকেরা এসে থাকেন এর সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হয়ে। এর সম্বন্ধে একটি লোককথা প্রচলিত আছে সেটা এরকম যে সৃষ্টির প্রাক্বালে এই সফেট বেনেং নামে রিক্ত গুম্বজের মত একটা পাহাড়টির সাথে স্বর্গের যোগাযোগ ছিল নাকি। পাহাড়টি এমন যে দূর থেকে দেখলেই মনে হবে যেন এর সাথে স্বর্গের যোগাযোগ আছে। কথিত আছে, সৃষ্টির প্রাক্কালে যখন দেবতারা মর্তকে তৈরি করছিলেন তখন একটি বিশাল গাছ এই পাহাড়ের উপর ছিল যার উচ্চতা স্বর্গ অবধি ছিল। দেবতারা এই গাছটিকে সিঁড়ি হিসাবে ব্যাবহার করতেন। যখন ইচ্ছে এই গাছ দিয়ে তাঁরা মর্তে নেমে আসতেন আবার নিজেদের কাজ কর্ম সেরে গাছ বেয়ে স্বর্গে পৌঁছে যেতেন। সেই সময় মর্ত লোকে মানুষের সৃষ্টি হয়নি। অপার গাছ পালা আর ফুলের সমাবেশ ছিল এখানে তাই দেবতারা মর্ত লোকে আসতে ভালবাসতেন। যখন তাঁরা দেখলেন যে এর জমি খুব উর্বর তখন তাঁরা এখানে তাঁদের সুবিধার জন্যে চাষ করতে শুরু করলেন আর রাত হলে সেই গাছ বেয়ে স্বর্গে চলে যেতেন। ভগবানের নির্দেশে ষোলটা পরিবার দেবতাদের সাথে মিলে জমি চাষ করতে মর্তে নেমে আসতেন। এঁদের মধ্যে একজন খুব প্রতিষ্ঠিত ছিলেন আর ভগবানের আদেশ অমান্য করে নিজের ভাইদের উপর প্রভুত্ব ফলাতেন। যা বলছিলাম ,একদিন হল কি সেই বিশাল স্বর্গের সিঁড়ি গাছটি বেয়ে শুধু সাতটি পরিবার মর্তলোকে নেমে এলো চাষ করার জন্যে আর বাকী নটি পরিবার রয়ে গেল স্বর্গে। এই সুযোগে সেই প্রতিষ্ঠাবান ব্যক্তিটি স্বর্গে যাবার গাছটিকে কেটে ফেললেন। ফলত চাষ শেষে ঐ সাতটি পরিবার আর স্বর্গে ফেরত যেতে পারলেন না তাঁরা মর্ত লোকে রয়ে গেলেন।এরা খাসি জাতি বলে মর্তে প্রসিদ্ধি লাভ করেন। এভাবেই মর্ত লোকে মানুষের আবির্ভাব হয় বলে লোক কথাটি প্রসিদ্ধ।
লেখক পরিচিতি-
রীতা বিশ্বাস পাণ্ডের জন্ম এবং লেখাপড়া শিলং পাহাড়ে । নেহু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক হন।বাবা একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন আর মা স্কুল শিক্ষিকা। মা বাবা দুজনের কাছ থেকেই তিনি বই পড়া আর লিখবার জন্য অনুপ্রাণিত হন। আজ প্রায় বিশ বছর তিনি দিল্লী বাসী। দিল্লিতেই তিনি প্রথমে স্কুলে আর তারপর মালটি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরী করেন । ছোট বেলা থেকেই লেখার একটা বাতিক ছিল । আজকাল তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকাতে গল্প কবিতা উপন্যাস লিখে থাকেন।
রীতা বিশ্বাস পাণ্ডের জন্ম এবং লেখাপড়া শিলং পাহাড়ে । নেহু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি স্নাতক হন।বাবা একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন আর মা স্কুল শিক্ষিকা। মা বাবা দুজনের কাছ থেকেই তিনি বই পড়া আর লিখবার জন্য অনুপ্রাণিত হন। আজ প্রায় বিশ বছর তিনি দিল্লী বাসী। দিল্লিতেই তিনি প্রথমে স্কুলে আর তারপর মালটি ন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরী করেন । ছোট বেলা থেকেই লেখার একটা বাতিক ছিল । আজকাল তিনি বিভিন্ন পত্র পত্রিকাতে গল্প কবিতা উপন্যাস লিখে থাকেন।
Nice
উত্তরমুছুন