সম্পাদকীয়
দম মারো দম
নেশা ! মানুষের আদিম প্রবৃত্তিগুলির মধ্যে অন্যতম । পুরাকাল থেকেই মানুষের রক্তের মধ্যে নেশার অযান্ত্রিক আলোড়ন বিদ্যমান । নেশা ও জীবন একই অক্ষে দু'টি গ্রহ যেন , প্রাণকে কেন্দ্র করে তাদের যাত্রাপথ । পৌরাণিক দেবতা-যুগ থেকে যে নেশার উদ্ভব হয়েছে , কলির শেষে সেটা হয়ে উঠেছে বৃহৎ বটবৃক্ষ । সোমরস পানের মধ্যে দিয়ে যে নেশার বিনোদন আমরা দেখি , কোকেন , হিরোইন সেবনের মধ্যে যেন সেই নেশায় এখন ঢুকে আছে নবীন ভবিষ্যৎ । নেশার উদ্ভব কি নিজেকে শুধু ভালো রাখার জন্য ? নেশা কেবলমাত্র একমাত্রিক নয় , বহুমাত্রিক ।যে মানুষটি ডাকটিকিট জমান , যে মানুষটি নিজের নখ বহু বছর ধরে না কেটে বাড়াতেই থাকেন , তারা কী চান ? যে মানুষটি সমস্ত কাজ ফেলে বই পড়েন , যিনি আমৃত্যু দেহাতি মানুষের সঙ্গে মিশে নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেন , তিনিই বা কোন নেশার টানে করেন ?আমাদের দেশে কবিতা লিখে এক পয়সা উপার্জন করা যায় না সেখানে কিছু সৃষ্টিপ্রেমী মানুষ অহরহ কবিতা লিখে সমাজ পরিবর্তন হবে না জেনেও কবিতা-শ্লোগান লেখেন , তিনিই বা কেন লেখেন ? নেশা বেঁচে থাকার একটা উপাদান যেন । কোন না কোন নেশা ছাড়া জীবন অচল । জীবনে বেঁচে থাকার বিভিন্ন নেশা নিয়ে এবার সাজছে মায়াজম । জীবনের এরকম অব্যক্ত ও অপ্রকাশিত নেশাদের নির্গমনের পথ করে দিতে এসেছে মায়াজম ।
মোটামুটি এই টাইপের একটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ পাওয়ার পরে বহু মানুষ ব্যক্তিগতভাবে জানতে চেয়েছিলেন,সব ছেড়ে নেশাতেই এবারে কেনো মজতে চাইলো মায়াজম! বিড়ি খাওয়ার নেশা এবং সাহিত্যচর্চার নেশা তো সমরৈখিক অবস্থানে আখ্যায়িত করা যায় না!কেউ বা বল্লেন,নেশা বলতে আপনি ঠিক কোন প্রেক্ষাপট মিন করতে চাইছেন বলুন তো সম্পাদক! বিজ্ঞাপন পড়ে কোথাও তো নেশার কুফলের ফুড়ুত গন্ধ নাকে সমাহিত হল না!তবে কি নেশাজাত সুফলে বিশ্বাসী মায়াজম!সকলের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে হাজির হয়েছে মায়াজম।ধীরে ধীরে ওল্টাতে থাকি প্রশ্নপত্র!আর প্রিয় পাঠকেরাও মন্দাক্রান্তা ছন্দে ঘুঙুর লয়ে উত্তরপত্রে দান করুন জ্ঞানগম্যির স্কোর।
ডুবা ডুবা ডুবা দিল ডুবা
নেশা নিয়ে চিরকাল আমার জব্বর কৌতূহল ছিলো।উদয়াস্ত সারা পৃথিবী নেশার দিকে খুলে রাখে তার রহস্যগহীন সাম্রাজ্য।ঈশ্বর অনুপাত মানুষগুলো কখনো সখনো নেশার সমুন্দরে মণিমুক্ত তুলে আনতে গিয়ে নির্বিবাদ আত্মায় জাগিয়ে তোলেন পুঙ্খানুপুঙ্খ শয়তান।আমার সুব্রাহ্মণ পিতা,মান্ধাতা গোঁড়ামি নিয়ে ধর্মীয় ধ্বজার দিকে খুলে রাখলেন নেশাজাত সম্পান।ঘরে ভরে যাওয়া জমানো ঈশ্বর আর ভিখারির অভুক্ত চোখের মধ্যে কোন পার্থক্য রেখা টানতে পারেননি বলেই তার সংসারে অনটনের ছাপ স্পষ্টভাবে ছায়াছবি হয়ে উঠেছিলো। ।বিদেশ বিভূঁই থেকে সংগৃহীত ঈশ্বরশালায় ওষ্ঠাগত তখন আমাদের গার্হস্থ্য কোলাহল।কেউ ডাক টিকিট জমান কেউ বা প্রাচীন মুদ্রা সংগ্রহের মোহে আবিষ্ট হয়ে তাজা খুনে রাঙিয়ে ফ্যালেন হাত।এ দৃষ্টান্ত থ্রিলার নভেলে ভুড়ি ভুড়ি প্রমাণ মেলে। কেউ বা চাঁদ -তারার পাশে বসিয়ে রাখেন কল্পনানগরীকে স্বপ্নবিভোর অবস্থানে।আমার প্রেমিক দাদার অবশ্য নেশা ছিলো প্রেমপত্র গচ্ছিত করে রাখার।অন্ধকার দেরাজের মধ্যে সেইসব সুগন্ধি গুলজার আলো হয়ে ফুটে থাকতো।তার প্রথম প্রেমিকা এক আদিবাসী রমণী ছিলো।তার কালো ডাইনামাইট শরীর থেকে গড়িয়ে আসতো বুনোফুলের ঘ্রাণ,কুন্দদাঁতে লেগে থাকতো পদ্মগোখরোর মাংসপোড়া ধোঁয়া ।মেয়েটি আমাদের বাড়িতে আসতো মায়ের বাতের ব্যথার উপশমে , নীলশেয়ালের তেল বেচতে।মেয়েটি ভাঙাচোরা হরফে দাদার চোখে রেখে যেতো শৃঙ্গারসিদ্ধ কামিনীদুপুর।সেই প্রথম জমানো শুরু প্রেম এবং নেশার।কলেজে পড়ার সময় এক সুন্দরী পারিজাত, স্বর্গীয় সরোবর থেকে ছিঁড়ে আনলো দাদা।মাঝরাতে বাড়িতে পুলিশ,দাদাকে মারতে মারতে কালোভ্যানে তুলে অজানা কুয়াশার মধ্যে অদৃশ্য হয়ে গ্যালো জীপটি।দাদার ডায়েরির ভাঁজে পারিজাতটি অক্ষত আছে গুঁড়ো গুঁড়ো বরফ হয়ে, যদিও তার শরীর থেকে উপচে পড়ে বাসিঘামের গন্ধ।দাদা এখন যুদ্ধবিমান ওড়ায়।ডানায় লেগে থাকে মেঘেদের বিচ্ছুরণ।তার ঠিক পাশের সিটেই থাকে বিদূষীণী এক মুসলিম জন্নত হুরি। ডাকবাক্স উপচিয়ে গড়াতে থাকে মধুমাস।
লোকে বলে ঠিক মায়ের মতো হয় মেয়ে।অথচ গুণোপনায় বা অগুণোপনায় কিছুতেই ছুঁয়ে দিতে পারিনি মাকে। মায়ের ছিলো নিত্য নতুন নক্সা এঁকে গয়না গড়াবার সে এক তীব্র নেশা।আর আমার ছিলো মাঠঘাট,ফল-ফুল,ঝড়-প্রেম সব ডিঙিয়ে এক দুষ্প্রাপ্য প্রতারণার।হয়ত বা তা ছিলো কিছুটা বংশজাত।আমার সংগ্রামী ঠাকুরদা ১৯৪৭ এর মঞ্চে দাঁড়িয়ে বিভেদকামী রক্তের বিরুদ্ধে ভরিয়ে দিয়েছিলেন স্লোগান তার সংযুক্ত মানচিত্র আঁকা খাতায়।যুদ্ধজয়ী হয়ে ফিরে এসেছিলেন প্রায় উন্মাদ হয়ে।নশ্বর শরীরকে অস্বীকার করে প্রাধান্য পেতো নির্বিবাদ আত্মার তখনই তিনি ফালা ফালা করে দিতেন তুচ্ছ শরীর। ব্লেডের দিকে গড়িয়ে যেতো আত্মহত্যাপ্রধান চনমনে রক্তের স্রোত।সেই ঠাকুরদাদা একদিন নিজেই কবিতা হয়ে গেলেন,আর আমার জন্য রেখে গেলেন বদ্ধ উন্মাদ হবার যথেষ্ট সরঞ্জাম।
ম্যায় প্রেম কা পেয়ালা পি আয়া
পৌরাণিক দেবতাযুগ থেকে যে নিশার উদ্ভব ঘটেছিলো,কলির শেষ যাত্রায় তাদের সগৌরবের আস্ফালন।নেশার গতিপ্রকৃতি অনুসন্ধানে চেনা অচেনা জীবনের পাশে নি:শব্দে বাড়িয়ে দিলাম মুখ।আমার প্রিয়ছাত্রটি নাক খুটে শুকনো সিকনি বের করে আঙুলে ঘষে দলা পাকিয়ে এক অদ্ভুত নেশা ছিল তার পৃথিবী বানাবার।যখন ছোটটি ছিলাম,দিব্য মনে আছে! আমার দশাসই ছোটামামা প্রতি কালীপূজায় আমাদের দুই বোনকে নিয়ে যেতেন শ্মশানকালীর মোচ্ছবে। মড়ার ছেঁড়া ব্লাউজ,মাথার তস্য নোংরা বালিশ আর একদিক ও দিক ছড়িয়ে থাকা ভাঙা কলসী ডিঙিয়ে শ্মশানকালীর ভোগ খাওয়াতে।সেও এক কম রহস্য বই নয়!আমরা দুই বোনে জড়াজড়ি করে হাঁটতাম অদ্ভুত এক ভয়ে,আর অবাক চোখে দেখতাম ভুখা পেটের শেয়ালের মাংস ছিঁড়ে খাবার গল্প।সেই শ্মশানকালীর আশ্রমের বিকরাল দেবী ভয়ঙ্কর জীবন্ত মূর্তি।সেখানের আবডাল ঘরে সকলেই যেন ঢুলে পড়তো এক নেশায় রাত বাড়তে চাইলেই।মামা আমাদের আগলে নিয়ে বাড়ি ফিরতেন,তার জবাফুলের মতো চোখ রঙিন হবার আগেই।বড় হয়ে জেনেছিলাম তামাম গঞ্জিকা অন্ধকার প্রলাপ ছড়িয়ে থাকতো সেই ছোটবেলার দেখা দৃশ্যে।
বড় হয়ে জেনেছিলাম এ ঠাকুমার আফিমের নেশার চেয়েও ভয়াবহ।ব্যোমভোলা বলে কলকের ছিলেমে টান মেরে যে নেশার সমুদ্দুরে ভসমান অবস্থান পাওয়া যায়,তেমনটি বোধকরি আর কোন স্রোত এমন জোয়ার আনতে পারে না।আসলে জাত নেশারুকেও জেনে দেখলে এক কথায় বলবেন,আজ্ঞে এ বাবা দেবতার পেসাদ।সে মহাকালীর কারণবারিই হোক বা শিবের ইন্দাশন(গাঁজা)ই হোক।গাঁজা সিদ্ধরা অবশ্য ভালবেসে বিভিন্ন নামে সম্বোধন করে থাকেন-হর্ষিণী ,বজ্রদারু,শক্রাশন,গজাশন,গঞ্জাকিনী ইত্যাদি।এই গাঁজা নিয়ে ১৮৩৯ সালে প্রকাশিত ট্রান্সজাকসন অব মেডিক্যাল সোসাইটির বুলেটিনে বেশ একটি মজার তথ্য জানানো হয়েছিলো,উত্তর কলকাতার বোসপাড়ার গাঁজার কলকেতে তা দেওয়ার সাথে সাথে চলতো তাদের মজলিস।সেই আড্ডার বিশেষত্ব ছিলো,২৫ ছিলিম গাঁজা টানতে না পারলে সেই দলের সদস্য করা হত না। আর সদস্যদের পাখির নামে ডাকা হতো।এই যেমন যে দিনে ১০০ ছিলিমের অধিকারী সেছিলো বুলবুল,যিনি ৫০ ছিলিম তিনি চটরস,আর ২৫ ছিলিম টানলে তিনি টুনটুনি।
গাজার আদি খোঁড়াখুঁড়ি করলে দেখা যাবে সংস্কৃতে যা ছিলো গঞ্জিকা তাই ই বাংলা বা হিন্দীতে হলো গাঁজা।আবার ওড়িয়া ভাষাতে সেটাই হলো গঞ্জা।দক্ষিণে যেতে যেতে নামকরণ ও ততবিধ চমকপ্রদ হতে থাকলো।যেমন তেলেগু ভাষায় হল কল্লম,তামিলে গঞ্জাইলাল।পাশ্চাত্যে গিয়ে সেই আবার মারিজুয়ানা,হাসিস নামে বিশ্ব মাতালো।
অমানুষ সিনেমার সে গানটা মনে আছে!আরে সেই গানটা!"বিপিন বাবুর কারণসুধা মেটায় জ্বালা মেটায় ক্ষুধা"।এই জ্বালা এবং ক্ষুধা মেটার বিষয় প্রসঙ্গে কিশোর কুমার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন,মদ খেলে গলা খারাপ হয় না ,যা খারাপ হয় সেটা হল লিভার।এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অভিনেতা কেষ্ট মুখার্জীর কথা মনে পড়ে যাচ্ছে।সারা জীবন মানুষটা এক বিন্দু মদ স্পর্শ না করেও অন স্ক্রীনে মাতালের চরিত্র প্লে করে মানুষের মনে পাকাপাকি অসন প্রতিষ্ঠা করে নিলেন।ঈশ্বরসিদ্ধ মহাপুরুষদের ্দেশীয় ভাষায় ক্ষ্যাপা বলা হয়ে থাকে,প্রাচীনতার দিকে তাকালে দেখতে পাওয়া যাবে বিশিষ্ট সাধকের সিদ্ধিলাভের জন্য কারণবারির কোন জুরি নেই। সৃষ্টির আদিতে গেলে পুরাণে পাওয়া যায় সমুদ্রমন্থনের সময়, সমুদ্রমন্থনকালে সমুদ্র থেকে একে একে উঠেছিলো দুগ্ধ, ঘৃত, চন্দ্রদেব, দেবী লক্ষ্মী, ঐরাবত , উচ্চৈঃশ্রবা , কৌস্তভমণি, অমৃতভাণ্ড হাতে ধন্বন্তরি, কালকূট বিষ আর সবশেষে উঠেছিলো সুরা বা মদ৷ সুরার ভাণ্ডটি দেবতারাই গ্রহণ করেছিলেন, দানবরা প্রত্যাখ্যান করলেন। তাই দেবতারা ‘সুর’ এবং দানবরা ‘অসুর’ নামে পরিচিত হল৷
পুরাণ,বেদ,মহাভারত,রামায়ণে বারংবার এই সুরা পানের দৃশ্যর পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা পেয়ে থাকি।বর্তমানে স্ট্যাটাস মেইনটেন করতে বা উৎসব উজ্জাপনে ড্রিংকস করেন ধনবানরা,আর গরিব আদমিরা দুঃখ যন্ত্রণা ভুলতে মাল খেয়ে থাকেন।
আর এক তৃতীয় শ্রেণী অবশ্য আছেন।শিল্পী শ্রেণী।বুদ্ধির গোঁড়ায় জল না ঢাললে বা ধোঁয়া না ছড়ালে কিছুতেই নাকি সৃষ্টিসুখে সমুদ্র হওয়া যায় না।
জয় জয় শিব শঙ্কর কাঁটা লগে না কঙ্কর ইয়ে পেয়ালা তেরে নাম কা পিয়া
এবার দৃষ্টি যদি দুনিয়াদারির দিকে ঘোরানো হয় তাহলে দেখা যাবে অদ্ভুত সব নজির,চমপ্রদও বটে।এনজিওর হয়ে রেলবস্তি অঞ্চল ভিজিটের সময় চোখে পড়েছে সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত বা কিশোর সন্ধিক্ষণযুক্ত ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে এক অপ্রকৃতস্থ দৃশ্য,পেনের খালি শিসে আগুন ধরিয়ে ধোঁয়া টেনে নিচ্ছে বুক ভরে।পকেটে রেস্তো থাকলে এরাই আবার ডেনড্রাইটের নেশায় বুঁদ হয়ে যাবে।কথায় আছে নারীর মনে তল দেবা ন জানন্তি ,আমি বলবো নেশার সীমা,পরিসীমা,ব্যপ্তি বা পরিধি অতলান্ত।যে জন এর তল খুঁজে পেতে ডুব দিয়েছেন সুখ সাগরে সে ডুব ডুব ডুব সাঁতারেই ভাসমান,তলাতল ব্যতিরেকেই।
জাদু হ্যায় ন্যাশা হ্যায়
আমাদের দেশে কবিতা লিখে এক পয়সাও উপার্জন করা যায়না।কলম নেশার কারণে কত দাম্পত্য যে তীব্র ঝড়জলে ধ্বসে গোধূলির শেষ আলো নিয়ে স্তিমিত যাত্রায় হেঁটে চলেছে তার ইয়ত্তা নেই।এই নেশাকে কুফল না সুফল কি নাম দেবো ভাবতেই দিগন্ত ছোঁয়া বর্ণমালা হিরন্ময় প্রকৃতির অজস্র রূপসুধা নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ায়।যেখানে ফলফল অবিচার্য একটি অধ্যায়।অথচ সৃষ্টিশীল মানুষমাত্রই নেশারুজীবন।খালাসীটোলার কোলাহল জারিত না হলে বোধহয় সুনীল,শক্তি কতশত নাম এমন সব মহার্ঘ্য মণিকাঞ্চন ঝরে পড়তো না পাঞ্জাবির খুঁট থেকে।
সৃষ্টিশীল মানুষ মাত্রই প্রেমিক।প্রেম অবশ্যই এক মন ও শরীর ভালো রাখার বিচ্ছিরি রকম নেশা।বার বার প্রেম পড়াও তেমনি এক নেশা।এক বিশিষ্ট কবি বন্ধুর কাছে শুনেছিলুম,প্রেমে পড়লে যত না কবিতা জন্ম নেয় ব্রেকাপে হুদো হুদো কবিতার বই হয়ে যেতে পারে।সে প্রেমে পড়েই ভাঙনের জন্য।
প্যহলা ন্যশা,প্যহলা হুয়া
ঘরের ছয় বছরের খুদে অভিভাবক স্মার্টফোন টিপে গুগুল খুঁচিয়ে বের করে ফেলেন যখন চাহিতা যাকিছু,তখন গর্ব হয় বৈকি!ওদিকে কৈশোরপ্রাপ্ত সুগন্ধি বাগীচারা যখন অন্তর্জাল মিডিয়ায় কোকেন পর্যবসিত হয় তখন কতশত অভিভাবক আড়ালে বখে যাওয়া সন্তান আলোচনায় দিবানিশি বেদনাতুর হতেও দেখি।ফেসবুক নেশা নিয়েই নরওয়ের বারগন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক এ সমীক্ষা করেন৷ ২০ জন আন্ডারগ্র্যাজুয়েট ছাত্রের উপর বিভিন্ন পরীক্ষা চালানো হয়৷ দু’ভাগে এই পরীক্ষা হয়৷ প্রথমে তাদের কিছু প্রশ্ন করেন গবেষকরা৷ যা থেকে নেশার নানা লক্ষণ পরিষ্কার হয়ে যায়৷ যেমন তাদের জিজ্ঞাসা করা হয়, ব্যক্তিগত সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেই কি ফেসবুক ব্যবহার করে তারা? কিংবা, ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করলে কি তারা অস্থির হয়ে ওঠে? গবেষকদলের প্রধান ডঃ সিসিলি অ্যান্ডারসনের মতে, যারা এ ধরনের অন্তত ৪-৬টি প্রশ্নের উত্তর ‘পজিটিভ’ দিচ্ছেন তারা আসক্ত৷ কেননা অনুরূপ প্রশ্ন যেকোনো নেশায় আসক্ত মানুষদেরই করা হয়৷
এর পরে তাদের কিছু ছবি দেখানো হয়৷ তাদের সামনে ‘পুশ’, এবং ‘নট পুশ’ নামে দুটো বাটন দিয়ে দেওয়া হয়৷ দেখা যায় ফেসবুক সংক্রান্ত ছবি, যেমন ফেসবুক লোগে ইত্যাদি দেখামাত্র কোনও ছাত্র পুশ বাটনে চাপ দিয়ে ফেলছে৷ দুই পরীক্ষার ফলাফল মিলিয়ে দেখা হয়, ফেসবুকের ছবি দেখেই যারা বাটন পুশ করেছে, নেশাসংক্রান্ত প্রশ্নত্তোর পর্বে তারাই সবথেকে বেশি নম্বর পেয়েছে৷ অর্থাৎ বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে নেশার লক্ষণ যাদের ক্ষেত্রে স্পষ্ট, তারাই বেশি পুশ বাটনে চাপ দিয়েছে৷ এ থেকে ফেসবুকের ব্যবহারও যে একরকম নেশা তা পরিষ্কার হয়ে ওঠে৷পরীক্ষা অবশ্য এখানেই থেমে থাকেনি৷ ছবি দেখে বাটন পুশ করার সময় ওই ছাত্রদের ব্রেন ইমেজও নেওয়া হয়৷ সেই ইমেজ পরীক্ষা করে দেখা যায়, কোকেনের নেশাগ্রস্তদের ক্ষেত্রে ছবিটি যেমন হয়, ফেসবুকে আসক্তদের ক্ষেত্রেও ছবিটি একইরকম৷
ছেলেটি হাতে নীলতিমি এঁকে ছিলো। ব্যাস এইটুকুই বলা বোধহয় কাফী একটা নেশার ভয়াবহতা বোঝানোর জন্য।এর থেকেও মারাত্মক চোরাস্রোতের মতো শিরায় শিরায় আমাদের দুঃখবিলাসী নেশা।মিতা ঘোষ,এম এ (বাংলা),বয়স ৩৬,দুই সন্তানের জননী।প্রতারিত ফেসবুক ফাঁদে।অদৃজা বিশ্বাস,বয়স ৩৮,হেলথকর্মী,ডিভোর্সি।প্রতারিত অন্তর্জালে। ঠিক এমন কতশত নাম যে উড়ে আসবে সমীক্ষায় তা হয়ত ফেসবুককারী সচেতন মুখেরাই জানেন।
আদপে তরঙ্গায়িত প্রতিটি জীবন ধারণ করে কিছু না কিছু নেশা।সব নেশাই যে হেঁটে যায় পতনের দিকে তা তো নয়।কিছু নেশা আমাদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সাথে যায়।আর কিছু নেশা আমাদের উত্তরণ ঘটায়।কিছু নেশা থাকুক তার সুফলগুলো সাথে নিয়ে,যা কিছু কুফল তাও থাকুক স্বল্প বিস্তর প্রভাব খাটিয়ে।আসলে বোধহয় পৃথীবি শয়তান শূন্য হয়ে গেলে ঈশ্বরের আর কোন অস্তিত্ব থাকবে না।
সর্বশেষে মায়াজমের তরফ থেকে বলতে চাই ধন্যবাদ মায়াজমের সকল লেখকদের যারা এই সংখ্যাটিকে তাদের অমূল্য নানা নেশার লেখনী দিয়ে ভরিয়ে তুলেছেন।আশা রাখছি পাঠককূলকে নিরাশ করবে না মায়াজম।অবশ্যই সকলে মায়াজম নেশায় জারিত হবেন।
ধন্যবাদ-সোনালী মিত্র
ফাটাফাটি
উত্তরমুছুন