থার্টিফোরের কেস
সন্ধেবেলা করে প্রায় সব থানা থেকেই একটা গাড়ি বেরোয়। সিভিল গাড়ি, অফিসার ফোর্সরাও সিভিল ড্রেসে থাকে। চলতি কথায় এটাকে ‘হল্লা গাড়ি’ বলে। কাজ হল, ওই সন্ধেবেলায় লাঠি সোঁটা নিয়ে যত মদ গাঁজার ঠেক ভাংচুর করা আর মাতাল, গুলিখোর, রঙবাজদের ধরে শহরটাকে শান্ত রাখা। ইয়াং অফিসার কনস্টেবলরাই এই দলে থাকে।
নতুন চাকরি, আমি তখন বাঁকুড়া শহরে। এক বিকেলে বেরিয়েছি হল্লাগাড়িতে।
গোবিন্দনগর বাসস্ট্যান্ডে লাঠিবাজি হল, মাতালদের একটা গ্রুপ ছিটকে পড়ল এদিক সেদিক; দুর্বল গোছের এক মাতাল ধরা পড়ল। ধরা পড়ে তো প্রচন্ড অনুনয়, খাই নি, আমি শুধু সঙ্গে ছিলাম, আর কক্ষনো এরকম করব না, কান ধরছি; ততক্ষণে ঠেলাঠেলি করে গাড়িতে তোলা হয়েছে।
গাড়িতে উঠে ওর অনুনয় তো কান্নায় রূপান্তরিত হল; আমার কী হবে, বৌটা না খেয়ে থাকবে, ছেলেগুলো বাবা বাবা করে কান্নায় গলা শুকিয়ে ফেলবে!
নতুন চাকরি, এহেন কান্নাকাটিতে আমার একটু মায়া হল; সঙ্গের এ.এস.আই. বাবুকে চুপি চুপি বললাম, “বড্ড কান্নাকাটি করছে; ছেড়ে দেওয়া যায় না?”
“স্যার, এরকম ঢ্যামনামি জীবনে অনেক দেখবেন। পাত্তা দিলে আপনাকে আর পুলিশের চাকরি করতে হবে না।” এ.এস.আই. বাবু বললেন, “তাছাড়া আরেকটা কথা জেনে নিন স্যার; কাউকে একবার গাড়িতে তুললে সাক্ষী ছাড়া ছাড়বেন না।”
গোটা পাঁচেক করে আমাদের টার্গেট থাকে। কাঠজুড়িডাঙ্গা মোড়ে আরেকজনকে পেলাম। খুব একটা বেগ পেতে হল না; গাড়িতে উঠল প্রায় নিজে নিজেই। প্রথম জন তথনও কেঁদে চলেছে। গাড়ি স্টার্ট হতেই দ্বিতীয়জন, প্রথম জনকে বলল, “কী রে? ফার্স্ট টাইম?”
প্রথম ফুঁপিয়ে বলল, “হ্যাঁ।” বলেই বৌ-ছেলে ইত্যাদি বিনুনি গাইতে লাগল।
দ্বিতীয় বলল, “ওরে কাঁদিস না। থার্টিফোরের একটা কেস হবে। মহুরিরা ছাড়াবার জন্যে বসে আছে। আড়াইশো টাকা ফাইন, ব্যাস।”
প্রথমজন বলল, “এবার থেকে তোমার সঙ্গেই বসব ভাই।”
দারোগা সাহেব , এটা কি কেস....?
উত্তরমুছুন