জয়া চৌধুরী

মায়াজম
0
পেলব

Image result for wallpaper of facebook




বাজারে গিয়ে মেজাজ খিঁচড়ে গেল। এরকমই যায় মীরণের। শালা বিয়ে মানেই ঝামেলা। সকাল থেকে ক্যালোর ব্যালোর। সকাল থেকে ঠিকঠাক বলতে গেলে কাল রাত থেকে একটা আইডিয়া মাথায় ভনভন করছে। লিখবে কিন্তু ঠিকমত রূপরেখা পাচ্ছে না। পকেট থেকে দু হাজার টাকার নোটটা আলুর দোকানির হাতে ধরিয়ে দিয়ে পকেট থেকে ফোনটা বের করল। খুচরো দিতে সময় লাগবে সেই ফাঁকে একবার স্টেটাসটার রেসপন্স দেখে নিই। আসলে চা খেতে গিয়ে পেপারে ছবিটা দেখেই মেজাজটা টং এ চড়ে গেল। জুতসই গালি না দিলেই নয়। আরো ভাল লাগে সম্মিলিত গালাগালি দিতে। একটা গালি পোষ্ট আর হাজার লোকের দাঁতের বিষ সেখানে। শালা গণ পিটুনি দেওয়া তো লেখাপড়া জানলেই দেওয়া যায় না গণ হেনস্থা করার সেরা প্ল্যাটফর্ম এই ফেসবুক।  এই যেমন ‘ট’ বাবুর মত লিখতে পারি না। অথচ হর দিন হাজার পোষ্ট। ‘ট’ এখানে পুরষ্কার পাচ্ছে ওখানে নেমন্তন্ন পাচ্ছে লেকচার দেবার জন্য ... শালা চোখের সামনে তরতর করে গাছ বেয়ে উঠে গেল ব্যাটা। মীরণ আর ও তো এক সময়ই শুরু করেছিল লেখালিখি। কপাল বলবে? না না কপাল ফপালে বিশ্বাস করে না আগমার্কা আধুনিক মীরণ। আসলে লাইন লাগানো। সরল বলে মীরণ লাইন লাগাতে পারে না ঠিক জায়গায়। কত হরিদাস এভাবেই কোথায় উঠে গেল! এখন চেয়ে চেয়ে তাদের ডম্ফাই দেখ! হবে না সব মা-এর দোষ। ছোট থেকে হিরণ হিরণ... সব কিছু হিরণের জন্য। কেন মীরণ কি ফ্যালনা? এই তো একুশটা লাইক একটা ওয়াও আর পাঁচটা হি হি সাইন। দিল তর হয়ে গেল মীরণের । আলুর দোকানির কাছ থেকে চেঞ্জ নিয়ে পকেটে পুরতে পুরতে একটা সিগারেট বের করল। মোবাইল পকেটে। ঈশারায় রিকশাওয়ালাকে কাছে ডেকে মুখাগ্নি সিগারেটে। ... আহ্‌ আজ ছুটি। বাড়ি গিয়ে বাজার ফেলে দিয়েই নিজের ঘরে সেঁধিয়ে যাবে মীরণ। এইবার সময়টা ওর।
দুপুর দুটোর সময় কাউকে ফোন করা যায়? মানে যদিও অফিস টাইম এটা কিন্তু ফোন যাকে করছি সে তো অফিসের কেউ নয়। হয়ত সে বাড়িতে আছে। হয়ত খেয়ে দেয়ে বিছানায় বালিশ নিয়ে উপুড়। বিচ্ছিরি ম্যাক্সি গুলো নয়  হয়ত শাড়ি ব্লাউজ পরে থাকে সে। উপুড় হওয়াতে এলোমেলো ভেজা চুল আর ব্লাউজের প্রথম হুকটা হয়ত খোলা। ঠিক ছোটবেলায় মার যেমন থাকত। ইসস এত স্পষ্ট দেখতে পায় এসব মীরণ... কিন্তু সত্যি কী সে এমন করেই আছে সে? মীরণের জন্য! হ্যাঁ একমাত্র মীরণের জন্য! ফেবু ইনবক্স থেকে কি এতকিছু জানা সহজ নাকি! তার মধ্যে মীরণের মত সরল মানুষের পক্ষে আরওই কঠিন। নেট অন করা থাকে তার বাড়িতে যতক্ষণ থাকে। ওয়াইফাই লাগানো এমন কিছু চাপের নয়। ছেলের কোচিঙের জন্য যা পয়সা বেরোয় তার তুলনায় এসব কিছুই নয়। ঘ্যানোর ঘ্যানোর করে কম তো টাকা খেঁচে না প্রতি মাসে মা ছেলে। শালার একটা বাঁধা শোয়ার বন্দোবস্ত করতে গেলে এত যে খরচ কে জানত! ইস ছি ছি না না এমন খারাপ ভাবে বলা উচিৎ না। মীরণ লেখাপড়া করা সাহিত্য করা মাঝবয়সী লোক। হতে পারে প্রাইভেট ফার্ম কিন্তু সেখানেও ম্যানেজারের পোষ্টে আছে। শোভন সুন্দর সুললিত ভাষায় অধস্তনদের সঙ্গে কথা বলে কাজ বের করে আনতে তার জুড়ি নেই। এই তো গত মাসেই ওর সুপার বস একটা পে হাইক করে দিল ওর কাজে খুশি হয়ে। কী সুন্দর খুশি হয় লোকটা! কত কম আয়াসে ওকে খুশি করা যায় ওকে। মাড়োয়ারি হলে কী হবে ব্যাটা মোটেই চশমখোর নয়। আর মীরণ লেখে বলে বঙ্গালিবাবুর খুব খাতির করে থাকে। সময়মত বান্ধবী যোগাড় করে দিলে আর ব্যবসায়ে মাসের টার্গেট পুরণ করে দিলে লোকটার একটা গলার স্বরও কেউ শুনতে পায় না। অথচ দেখো! মীরণের মা- টা! শালা সারাজীবনেও খুশি করা গেল না মহিলাকে। যাই করা যাক না কেন মীরণ নাকি সেয়ানা! মীরণ না কি চামার! মীরণ না কি হারা... ধ্যার শালা, মার কথা মনে পড়লেই তিতকুটে লাগে জিভ। সিগারেট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর।  হরলিকসের দশ টাকার প্যাকেটটার কোনা ছিঁড়ে মুখে ঢালল মীরণ। একটু। আহ, কোষে কোষে ছড়িয়ে পড়ল স্বাদ। সমানে টুং টাং মেসেজের শব্দে ইনবক্স তারকেশ্বর মন্দিরের তামার থালাটার মত ধ্বনি ছড়াচ্ছে। কালকের পোস্টটায় পাবলিক খুব আগ্রহ দেখায় নি। আসলে ভারি ভারি কথা ফেবুতে লিখলেই দেখেছে বেশি একটা কমেন্ট পড়ে না। আসলে কোনো শালা পড়েই না সেসব। সবকটা বাঞ্চোত না পড়েই এড়িয়ে যায়। লাইক দিলে ঠিক পোষায় না মীরণের। ছোটবেলায় রেজাল্ট আনবার পড়ে যখন ফিজিক্সে দারুণ নম্বর পেয়ে বুক ফুলিয়ে মার কাছে দাঁড়াত, মা হয়ত হেসে একটু মাথায় হাত বুলিয়েই হিরণকে নিয়ে পড়ত। কেননা তার অঙ্কে লাল দাগ এসেছে। তাকে কি করে তরী পার করবে পাস সাগরে সেসব নিয়েই মা ব্যস্ত। হিরণ যেন মুষড়ে না পড়ে এটা এত জরুরী যে ওর নম্বর পাওয়াটা যেন কোনো ব্যাপারই না। হ্যাঁ হয়ত রাতে পোলাও রাঁধত সেদিন মা। পোলাও মীরণের প্রিয় কিন্তু খাওয়া কী এমন ব্যাপার? আসল তো খুশি লাগে পিঠ চাপড়ানোয়। যখন পাশের লোকটাকে ফেলে তুমি এগিয়ে যাচ্ছ তখন যে আনন্দ তা কী কোন পোলাও কম্পেনসেট করতে পারে? মীরণ শালা বঞ্চিত, মীরণ শালা সরল মানুষ, সারাজীবন ঠকেই গেল। এখন এট্টু দেখা যাক মেয়েটা কোনো পোষ্ট দিল কী না। কে জানে হয়ত দুপুরে কোনো গান শুনতে শুনতে শেয়ার করতে ইচ্ছে হল তার। অন দেখলেই মীরণ হামলে পড়বে ইনবক্সে। আসলে হামলে পড়ে অনেক কিছুই ইচ্ছে করে তবে আজ ছুটির দিন, ছেলে ও মা দুজনেই বাড়িতে আছে। এসময় কোন অ্যাডভেঞ্চার করার সুবিধা নেই। এখনকার কবিতায় কোন নতুন কিছু পায় না মীরণ। সেই এক জ্যাবজ্যাবে আন্ডারওয়্যার ভেজানো কটা লাইন স্রেফ। ন্যাচারালিজম আর মডারনিজমের তফাত এই গান্ডু কবিগুলো জানে না। ন্যাচারাল মানে নেচারাল এই বোধটা যদি থাকত তবে কবিতা এলিতেলি সবাই লিখতে পারত। এ মাসে আমাজন থেকে নামিয়েছে যে লেটেস্ট বইটা সেটায় এ বিষয়ে বিশুদ্ধ জ্ঞান পাচ্ছে মীরণ। ওর যত জ্ঞান আছে সব ও রেখে দিচ্ছে সন্তর্পণে গুছিয়ে। ছেলেটাকে দিয়ে যাবে সেসব।  
ছেলে আবার বাপ অন্ত প্রাণ। পাড়া প্রতিবেশি সবাই জানে মীরণ আর তার ছেলে যেন মানিকজোড়। বউটা মনে হয় দুঃখ পায় ওর ছেলের প্রতি আগ্রাসন দেখে। কিন্তু সেটা আগ্রাসন এমন ব্যাখ্যা ওই ছোটলোক মেয়েছেলেটাই দিতে পারবে। আর কেউ না। এই যে ছেলেকে কাছে নিয়ে রাতে শোয় মীরণ তার মধ্যে যে কত আরাম কে বুঝবে? ওর যত জ্ঞান সব দেওয়ার সময় তো রাতের বেলাই। হ্যাঁ শরীরের প্রয়োজন থাকে। কিন্তু সেসবের জন্য ছেলে হাতছাড়া করবে না কি সে? ইচ্ছে হলে ছোট ঘরের দরজাটায় টোকা দেয় মীরণ। শান্ত সুললিত সে টোকা। তারপর খিদে মিটলে চলে আসা বিছানায়। যেদিন ঘেন্না করে মাগীটার সঙ্গে রাগারাগিতে সেদিন নিজের বিছানায় সাউন্ড অফ করে চ্যাট করে মোবাইলে। তারপর রাতের বাথরুম।  আহ্‌ শালা কারো কাছে মাথা নোয়ানোর বান্দা না কি মীরণ? তাছাড়া শরীর ছাড়া আর কীইই বা দিতে পারবে সে মীরণকে? পারবে তার ইন্টালেক্টের কাছাকাছিও আসতে? ইস্কুলে বাচ্চা ঠেঙিয়ে কিছু বাসনকোসন আর শাড়ি জামা কেনা ছাড়া ওকে দিয়ে কী হয়? ছেলেটার জন্য বিয়েটা রেখে দিয়েছে মীরণ। না হলে কবে ডিভোর্স করত। অবিশ্য আজকাল খোরপোশে খরচা আছে। কিন্তু বউ চাকরি করে বলে সেটাও দিতে হত না। কিন্তু ছেলেটা হয়েছে মুশকিল। মীরণ সমাদ্দারের বংশধর সে, তাকে তো দেখভাল করার একটা লোক চাই। মা ছাড়া এতটা যত্ন কে করবে আর? সে কথা বুঝেই মীরণ সহ্য করে বউটাকে। এসব কিছুর জন্য মা দায়ী। মা যদি বারণ করত তাহলে ওকে বিয়েই করত না। হ্যাঁ বান্ধবী তার সঙ্গে একটু চটকাচটকিও হয়ত করেছিল ক বছর, তা বলে মীরণ চাইলেই তার সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যাবে মা? একবারও বাধা দেবে না? দু বাড়ির স্ট্যাটাসের কথাটাতো একবার ভাবতে পারত? শালা লোকের যেন এমন মা কক্ষনও না হয়।
বিকেলে রোটারি ক্লাবের একটা সভায় যেতে হল। দুপুরেও মেয়েটা অন হয় নি। ট্যাক্সির পিছনে বসে মোবাঁইলের ইনবক্সে নতুন দুটো মেয়ের সঙ্গে রঙ্গ রসিকতা করছিল মীরণ। আসলে যেসব দিনে ফ্রাস্ট্রু বেশি থাকে সেসব দিনে ওর খুব দরকার পড়ে নারীসঙ্গ। টাকা দিলে পাওয়া যায় না তা নয়।তবে স্বাস্থ্যের ব্যাপারে মীরণ খুঁতখুঁতে। কার না কার কী অসুখ থাকে! তাছাড়া লেখক মানুষরা তো যার তার সঙ্গে শুতে পারে না। একটু ইন্টালেক্ট থাকলে সুবিধা হয় ওর। তাই ভার্চুয়াল রসে মজে বাকীটা নিজের মত করে সারে সে। কিন্তু এত কিছুর ফাঁকে ফাঁকেও মেয়েটাকে খুব মনে পড়ছে আজ। গত সপ্তাহে যে গানটা শেয়ার করেছিল ও ওটা ওর মায়ের গলায় কতবার শুনেছে ছোট থেকে। ভাল করে খুঁটিয়ে দেখলে মুখের গড়নটাও ওর মার মতই। কপালটা চওড়া, চোখদুটো একটু ছোট  কিন্তু চিবুকের তিলখানি একদম মন ভোলানো। এমন প্রেরণা পেলে কত কীই যে লিখে ফেলতে পারবে মীরণ। আজ সকালেই নিজের ফোন নম্বরটা দিয়ে রেখেছে মীরণ। মাত্র পাঁচটা মিনিট সময় চেয়েছে সে। মেয়েটিও ওকে ফোন করতে পারে কিংবা সে নিজেও। আসলে আরও জানা দরকার মীরণের। মেয়েটাকে সামনাসামনি দেখা দরকার। মেয়েটা হাসলে কী সামনের পাটির ওপরের ভাঙা কোনো দাঁত দেখা যায়? গলার স্বর কি একদম আঠারোর কচি মেয়ের মত? ও কি বাদল সরকারের থিয়েটার কখনও দেখেছে? ওর কি শান্তিনিকেতনী শাড়ির অনেক স্টক? ওর কি বাঁ বাজুতে ছোটবেলায় বেঁধে দেওয়া রুপোর মাদুলিটা সেরকমই কালচে হয়ে গেছে? মেয়েটার ব্লাউজ সরালে চাপা জায়গাটাকি ঠিক মার মতই ফরসা আর বাহুর খোলা অংশ সেরকম একটু বাদামি? সেরকমই? সেরকমই? ঠিক সেই রকমই? ...
*******  *****************************************

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)