রীতা বিশ্বাস পান্ডে - মায়াজম

Breaking

১৪ জুন, ২০১৯

রীতা বিশ্বাস পান্ডে



অপ্সরা কথা  



০০৪ সালে হঠাৎ  দু দিনের জন্য অফিসের বন্ধুদের সাথে পুরী জেলার কোণার্ক শহরে ঘুরতে গেলাম সেই সময় কোণার্কের সূর্য মন্দির দেখে আমি স্তম্ভিত যাকে বলে কিঙ্কর্তব্যবিমুঢ় প্রায় সেকি ভাস্কর্য! তখনই ভেবে রেখেছিলাম এই অপ্সরাদের নিয়ে কিছু লিখবোকিন্তু অন্যান্য বহু লেখার মাঝখানে এটির কথা ভুলে গিয়েছিলাম প্রায়,আজ মনে হতে লিখতে বসলাম কথিত আছে পূর্ব গঙ্গ রাজ বংশের প্রথম নর সিংহ দেব ১২৫৫ সালে এটি নির্মাণ করিয়েছিলেন একটি বিশাল কারুকার্য করা পাথরের চাকার উপর মন্দিরটি স্থাপিত যা বিভিন্ন যক্ষ, নাগ মানুষ, মৃদঙ্গ করতাল বীণা, সমকামিতা ,ছয় হাতের শিব, মিথুন মূর্তি, নৃত্য রত নর নারী, হাতী শিকারের অপরূপ দৃশ্য অদ্ভুত কৌশলে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে পাথরের বুকে মূর্তি গুলোর মানবিক আবেদন , নিখুঁত গড়ন শিল্প কলার চরম নিদর্শন হিসাবে যুগ যুগান্তরে আদৃত হবে আমার বিশ্বাস
আর যা আমাকে বিশেষ ভাবে আকর্ষিত করেছিল তা হছে অপরূপ হস্ত-কলায় সমাদৃত সব দেবতা,অপ্সরা আর কিন্নরের অবয়ব যা বলছিলাম, এই শিল্প কলার মধ্যে একটি আকৃতি আমাকে যেমন তখনও ভাবিয়েছিল তেমনই এখন ভাবাই এই আকৃতিটি আর কেউ না আমাদের মতোই নারীর এই নারী হচ্ছেন অপ্সরা
এখন দেখা যাক এই অপ্সরারা কে ছিলেন কথিত আছে, দেবাসুরের সমুদ্র মন্থনের সময় সমুদ্রের ভেতর থেকে উঠে আসেন এই অপ্সরা জল এবং মেঘ উদ্ভূত নারী আত্মাই হচ্ছে অপ্সরা বা স্বর্গীয় কুমারী সংস্কৃত শব্দ অপ অর্থাৎ জল হতে এদের উৎপত্তি তাই এদের অপ্সরা বলা হয় মনুসংহিতায় তাদের মনুর সৃষ্টি বলা হয়েছে ঋগ্বেদ অনুযায়ী অপ্সরা হলেন গন্ধর্বের স্ত্রী পরবর্তীকালের অন্যান্য পৌরাণিক গল্পে ইন্দ্রের সভা নর্তকীদের সবাইকেই অপ্সরা বলা হয়েছে
এখন দেখা যাক তাদের কাজ কি ছিল ইন্দ্র দেবতাদের রাজা সেই ইন্দ্রের সভার গায়িকা আর নর্তকী ছিলেন এই অপ্সরারা তারা নাচে গানে পারদর্শী হতেন সারা ব্রহ্মাণ্ডে তাদের মত অপরূপা আর শিল্পকলায় নিপুণ নারী খুঁজে পাওয়া ভার ছিল এহেন অপ্সরাদের অধিপতি ছিলেন কামদেব তবে কি এই অপ্সরারা শুধু দেবতাদের মনোরঞ্জনের জন্যেই স্বর্গে অবস্থান করতেন? উত্তর হচ্ছে ,’না নাচ গান ছাড়াও দেবতারা এই অপ্সরাদের বিভিন্ন কাজে লাগাতেন যেমন বৈদিক যুগে কঠোর তপস্যার বলে কোন কোন ক্ষেত্রে মুনি ঋষিরা দেবতাদের চাইতেও বেশী শক্তিশালী আর ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতেন তাদের দাপটে দেবতারা সবসময়ই ভয়ে থাকতেন কাজেই মুনি ঋষিরা অধিক শক্তিশালী যাতে হয়ে না উঠেন সেইজন্যে দেবতারা অপ্সরাদের পাঠাতেন মর্ত্যলোকে তাদের ধ্যান ভঙ্গ করার জন্যে অপ্সরারা নৃত্য করে ভুলিয়ে ভালিয়ে মুনিদের ধ্যান ভাঙ্গাতেন ধ্যান ভঙ্গ হবার ফলে মুনিরা ভগবানের আশীর্বাদ থেকে বঞ্চিত হতেন ফলে তারা আর দেবতাদের চাইতে বেশী ক্ষমতাশালী হয়ে উঠতে পারতেন নাএর ফলে দেবতারাও নিশ্চিন্তে থাকতেনঅসুরদের দাপট থেকে ত্রাণ পেতে তারা যেমন ভগবানের দ্বারস্থ হতেন তেমনই মুনি ঋষিদের ধ্যান ভঙ্গ করার জন্যে তারা অপ্সরাদের কাজে লাগাতেন কামদেবের উপর দায়িত্ব থাকত উপযুক্ত অপ্সরাকে দিয়ে উপযুক্ত কাজটি করাবার
সব সময়ই দেখা যায় অপ্সরাদের সৌন্দর্য যৌন আবেদনকে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করে তাদের মায়াবিনী নারী হিসাবেই চিহ্নিত করা হয়েছে অথর্ববেদে আছে যে অপ্সরারা পাশা খেলাতে খুব পারদর্শী ছিলেন এবং তারা পাশা খেলতে খুব ভালবাসতেন আমরা ছোট বেলা থেকেই কয়েকজন উল্লেখ যোগ্য অপ্সরার নাম শুনে এসেছি তারা হচ্ছেন উর্বশী, মেনকা, রম্ভা, তিলোত্তমা, ঘৃতাচী, সুকেশী, মঞ্জু ঘেষা, অলম্বুষা, বিদ্যুৎপর্ণা, সুবাহু,সুপ্রিয়া,সরসা,পুঞ্জিকস্থলা আর বিশ্বাচীবিভিন্ন পৌরাণিক গল্পে তাদের সম্বন্ধে আমরা জানতে পারি আজ আমি এখানে কয়েকজন অপ্সরার কথা বলবো
. মেনকা- কথিত আছে ঋষি বিশ্বামিত্র একবার কঠোর তপস্যাতে মগ্ন ছিলেন তার উদ্দেশ্য ছিল স্বর্গের সিংহাসন ইন্দ্রের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া দেবরাজ ইন্দ্র সেটা জানতে পেরে যারপরন্যায় চিন্তিত হনযাতে ইন্দ্রের আধিপত্যের উপর আর কেউ বিরাজ করতে না পারে সেই জন্য ইন্দ্র সর্বদাই চিন্তিত থাকতেন তখন কামদেব অপ্সরা মেনকাকে পাঠান বিশ্বামিত্রের তপস্যা ভঙ্গ করতেমেনকা তার রূপ,রস, গন্ধ কলা নিয়ে বিশ্বামিত্রের সামনে উপস্থিত হলেন ধ্যানরত ঋষির সামনে মেনকা শুরু করলেন কামনা মদির নৃত্য সঙ্গীত কাম শৃঙ্গার একদিকে দেবরাজ ইন্দ্রের চক্রান্ত, অন্যদিকে কামনার মেনকা, মোহিনী সঙ্গীত, মোহনীয় নৃত্য আর সাথে কামদেবতার ফুলশর সব মিলিয়ে বিশ্বামিত্র তাদের জালে পড়ে গেলেন এতে কি হল? এতে করে অবশেষে মেনকার রূপ যৌবনে মুগ্ধ হয়ে বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভঙ্গ হয়ে যায় মেনকা তাতে সফল হন কিন্তু মেনকা আর বিশ্বামিত্র একে অপরকে ভালবাসতে শুরু করেন ফলত জন্ম নেয় শকুন্তলা অবহেলিত অবাঞ্ছিত কন্যাসে আর এক গল্প কালিকা পুরাণে আমরা অপ্সরা মেনকাকে পাই হিমালয়ের স্ত্রী রূপেদক্ষ কন্যা সতী যখন হিমালয়ে মহাদেব অর্থাৎ শিবের সাথে হিমালয়ে বসবাস করতেন তখন মেনকা ছিলেন সতীর সখি কিন্তু সতী যখন মারা যান তখন মেনকা কঠোর তপস্যা করতে আরম্ভ করলেন- যেন সতী তার কন্যা হয়ে আবার জন্ম গ্রহণ করেন তার তপস্যা ভগবতী সন্তুষ্ট হয়ে তাকে বর দেন- তার একশত পুত্র সন্তান একটি কন্যা সন্তান হবে বর লাভের পর মৈনাক প্রভৃতির জন্ম হয় এবং সতী পুনরায় জন্ম গ্রহণ করেন তার একশত পুত্র আর এক কন্যা সতী মহাভারতে দেখি মেনকা ছিলেন গন্ধর্ব রাজ বিশ্বাবসুর স্ত্রী তাদের এক কন্যা প্রমদবরা জন্ম নিলে পর মেনকা তাকে স্থুলকেশ মুনির আশ্রমের পাশে নদীর তীরে রেখে চলে যায় মহর্ষি সে কন্যাকে বড় করেন আর রাজা রুরুর সাথে তার বিবাহ দেন
. উর্বশী- এবার আসা যাক উর্বশীর গল্পে উর্বশী অসামান্য সুন্দরী লাবণ্যময়ী অপ্সরা ছিলেন পদ্মপুরাণে আছে নারায়ণের উরু ভেদ করে উর্বশী জন্মগ্রহণ করেন তাই তার নাম উর্বশী আবার আগেই বলেছি যে, সমুদ্র হতে উর্বশীর জন্ম কেউ কেউ আবার মনু কন্যা রূপেও উর্বশীকে জানেন কাজেই দেখা যাচ্ছে ঐতিহাসিক দিক দিয়ে এর কোন প্রামাণ্য তথ্য নেই যে উর্বশীর জন্ম আসলে কি ভাবে হয়েছিল উর্বশী আর পুরুরবার প্রেম কাহিনী সম্বন্ধে আমরা অবগত আছি ঋকবেদে তাদের প্রেমকাহিনী লিপিবদ্ধ আছে কি এমন প্রেম কাহিনী ,যেটা আমাদের পূর্ব পুরুষদের (মুনি) লিপিবদ্ধ করে রাখতে হল? সেটা জানতে হলে আমাদের ঋকবেদের পাতা উল্টাতে হয় আমরা দেখি একবার দেবতাদের রাজা ইন্দ্র পুরুরবাকে তার সভায় নৃত্য উপভোগ করতে আমন্ত্রণ করেন সেদিন উর্বশী তার নৃত্য পারদর্শীতায়  সবাইকে মুগ্ধ করছিল কিন্তু যেই তার দৃষ্টি অত্যন্ত সুপুরুষ পুরুরবার উপর পড়ে তার নৃত্য ছন্দ ভঙ্গ হয় রাগে অগ্নিশর্মা হয়ে ইন্দ্র উর্বশীকে অভিশাপ দেন কি সেই অভিশাপ? না, উর্বশীকে পৃথিবীতে সাধারণ মানুষ হিসেবে বসবাস করতে হবেতবে উর্বশীর ইচ্ছা অনুসারে সে পুরুরবার স্ত্রী হয় থাকবে ইন্দ্র শর্ত রাখেন যে, পুরুরবা দিনে তিনবারই শুধু উর্বশীকে আলিঙ্গন করতে পারবে আর উর্বশী পুরুরবাকে নগ্ন অবস্থাতে দেখতে পারবেন না কিছুকাল কাটার পর স্বর্গ বাসীরা উর্বশীকে ফিরিয়ে আনতে চাইলেন স্বর্গে কিন্তু কি ভাবে? দেবতারা দুইটি মেষশাবক উপহার হিসাবে উর্বশীকে দিলেন দেবতারা তারপর সেগুলিকে চুরি করার পরিকল্পনা করেনতারা যাবেন এই মেষশাবক চুরি করতে উর্বশী সেটা টের পেয়ে ভয়ার্ত হয়ে পুরুরবাকে ডাকলে পর পুরুরবা তড়িঘড়িতে বিনা বস্ত্রতে শয্যা ত্যাগ করবেন নিশ্চয়ই আর ঘটনাস্থলে সেরকমই হল উর্বশী মেষ শাবক দুটিকে শয়ন কক্ষেই রাখতেন দেবতারা চুরি করতে এলে উর্বশী সেটা টের পেয়ে যান উর্বশীর চিৎকারে পুরুরবা হন্তদন্ত হয়ে বিছানা থেকে নেমে চোর ধরতে গেলে পর উর্বশী রাজার উলঙ্গ শরীর দেখে ফেলে ফলে উর্বশী শাপমুক্ত হয়ে স্বর্গে ফিরে যানদেবতারা তাদের পরিকল্পনাতে সফল হলেন আবার আমরা মহাকবি কালিদাসেরবিক্রম উর্বশীনাটকে দেখি যে কেশী দৈত্য উর্বশীকে হরণ করলে পর পুরুরবা উর্বশীকে উদ্ধার করেন ফলে দুজনে দুজনার প্রেমে আসক্ত হয় এরপর একদিন স্বর্গে অভিনয়কালে ভুল করে উর্বশী পুরুরবার নাম উচ্চারণ করায় দেবতাগন তাকে অভিশাপ দিয়ে মর্তে পুরুরবার স্ত্রী করে পাঠিয়ে দেন ক্রমে তাদের এক পুত্র সন্তান জন্ম নিলে উর্বশী শাপ মুক্ত হন এবং স্বর্গে ফিরে যান পরে নারদের বরে উর্বশী পুরুরবার মিলন হয়
. ঘৃতাচী- মুনি ঋষিদের সাধনা ধ্যান ভাঙ্গাতে দেবতাদের চক্রান্তে অপ্সরাদের রূপ মাধুরীর সাথে সাথে ছল চাতুরীর কাহিনী পাওয়া যায় পৌরাণিক কাহিনীতে চ্যবন মুনি আর সুকন্যার পুত্র প্রমতির স্ত্রী ছিল স্বর্গের অপ্সরা ঘৃতাচী অপ্সরা ঘৃতাচীর পুত্র মহাভারতের অন্যতম রাজা রুরুআবার আমরা মহাভারতে দেখি যে ঘৃতাচীর মোহিনী রূপে ঋষি ভরদ্বাজ তার প্রেমে পড়েন ফলে ঋষির শুক্র স্খলিত হওয়ায় দ্রোণের জন্ম হয় তাই দ্রোণের মাতা না হলেও তাঁর জন্মের মূলে ছিলেন ঘৃতাচী কথিত আছে একবার ঋষি ভরদ্বাজ গঙ্গা নদীতে স্নান করছিলেনসেইসময় ঘৃতাচী অলক্ষ্যে ভরদ্বাজ ঋষিকে দেখছিলেন অকস্মাৎ তীব্র বাতাস এসে ঘৃতাচীর বসন উড়িয়ে নিয়ে গেল এই অকস্মাৎ ঘটনাতে ভরদ্বাজ চকিতে পেছন ফিরতেই নগ্ন ঘৃতাচীকে দেখতে পেলেন কামদেব এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন তিনি তৎপর হয়ে তাঁর ফুলশর নিক্ষেপ করলেন ঘৃতাচীর রূপে সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড প্রলোভিত হয়ে থাকতেন কখন তারা ঘৃতাচীকে পাবেন এই আশাতে তারা মগ্ন থাকতেন এহেন ঘৃতাচীকে দেখামাত্র ঋষি ভরদ্বাজের শুক্র স্খলিত হয়ে যায় উনি লজ্জিত হয়ে সেটাকে একটি দ্রোণীতে রেখে দেন আর দেখতে দেখতে সেই দ্রোণী মধ্যেই জন্ম নেন দ্রোণ দ্রোণীতে জন্ম বলে নাম হয় দ্রোণ
. রম্ভা- এছাড়া রামায়ণে এবং স্কন্ধ পুরাণে আমরা অপ্সরা রম্ভার কথা জানতে পারি উর্বশী সকলের থেকে নামী অপ্সরা হলেও অপ্সরাদের রানী ছিলেন কিন্তু রম্ভা কলাগাছের সুপুষ্ট সুন্দর ঊরুবিশিষ্টা নারী ছিলেন বলে তার নাম রম্ভা রামায়ণে আমরা দেখতে পাই যে, রম্ভা কুবেরের পুত্র নলকুবেরের নিকট অভিসার গমন কালে রাবণ তাকে দেখে কামমুগ্ধ হয়ে পড়েন তাই রাবণ তাকে ধর্ষণ করেন রম্ভা নলকুবেরকে এই ঘটনা বললে নলকুবের রাবণকে অভিশাপ দেন, রাবণ কোন নারীর অনিচ্ছায় তার প্রতি বল প্রয়োগ করে ধর্ষণ করতে গেলে রাবণের মাথা সাত খণ্ডে বিভক্ত হয়ে যাবে নলকুবের রাবণকে বলেন, তিনি যদি আর একজন নারীর অসম্মান তিনি করেন তবে মাথা ফেটে তিনি মারা যাবেনএই জন্যই সীতা রাবণ কর্তৃক অপহৃত হয়েও নিজের সতীত্ব রক্ষা করতে পেরেছিলেনঅভিশাপের ভয়ে রাবণ কখনও সীতাকে উপভোগ করার সাহস পাননি কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই শাপই সত্য হয় সীতার অপহরণ এবং রামের হাতে রাবণের মৃত্যু হয় স্কন্ধ পুরাণে আমরা পাই, একবার ইন্দ্র বিশ্বমিত্রের তপস্যা ভঙ্গ করার জন্য অপ্সরা রম্ভাকে প্রেরণ করেন কিন্তু বিশ্বমিত্রের অভিশাপে রম্ভা শিলাতে পরিণত হয়ে এক হাজার বছর অবস্থান করেন রম্ভা যখন বিশ্বমিত্রের আশ্রমে শিলারূপে বাস করছিলেন তখন অঙ্গকার নামে একজন রাক্ষসী সেখানে নানা উপদ্রব করতে আরম্ভ করেন তখন আশ্রমে তপস্যা রত শ্বেতমুণি বায়ব্য নিজের অস্ত্রে শিলাখণ্ড দুই ভাগে ভাগ করে রাক্ষসকে উদ্দেশ্য করে নিক্ষেপ করেন অস্ত্রের ভয়ে ভীত হয়ে রাক্ষসী পলায়ন করে কপিতীর্থে এলে তার মাথায় সেই শিলা খণ্ড পড়ে রাক্ষসের মৃত্যু হয় এই শিলাখন্ড কপিতীর্থে নিমগ্ন হলে রম্ভা আবার নিজের রূপ ফিরে পান আবার স্কন্ধ পুরাণে আমরা এও পাই যে, একবার ইন্দ্র সভায় নৃত্যকালে রম্ভার তালভঙ্গ হয় তখন ইন্দ্র ক্রদ্ধ হয়ে রম্ভাকে অভিশাপ দেন রম্ভা স্পন্দনহীন বিকলাঙ্গ হয়ে পৃথিবীতে পতিত হন পরে রম্ভা নারদের পরামর্শে দীর্ঘকাল শিবের পূজা করে নিজের দেহ ফিরে পান আর পুনরায় স্বর্গে ফিরে যান ইন্দ্রের আদেশে রম্ভা জাবালি মুনির তপোভঙ্গ করেন মুনির ঔরসে রম্ভার এক কন্যা জন্মগ্রহণ করে জাবালি এই কন্যার প্রতিপালন করেন; এই কন্যার নাম ফলবতী
. তিলোত্তমা- এবার বলি তিলোত্তমার কথা দৈত্যরাজ নিকুম্ভের দুই পুত্র সুন্ডও উপসুন্ড ব্রহ্মার কঠোর তপস্যা করে ত্রিলোক বিজয়ের জন্য অমরত্ব প্রার্থনা করেন কিন্তু ব্রহ্মা এদের অমরত্বের বরদান করতে সম্মত হন নি তবে তিনি বলেন যে, স্থাবর-জঙ্গমের কোন প্রাণী তাদের ক্ষতি করতে পারবে না যদি এদের মৃত্যু হয় তবে পরস্পরের হাতেই হবে এই বর পাবার পর তারা দেবতাদের উপর নিপীড়নে ব্যস্ত হয়ে পড়ল তখন দেবতারা প্রাণ রক্ষা করার জন্য ব্রহ্মার নিকট প্রার্থনা করেন এদের বধ করার জন্য ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র গুনের সম্ভার নিয়ে যে নারী অপ্সরাদের মাঝখানে রাজ করছিল সে হচ্ছে তিলোত্তমা মহাভারতে আমরা দেখতে পাই কিভাবে ব্রহ্মার নির্দেশে বিশ্বকর্মা তিল তিল করে তিলোত্তমাকে গড়েছিলেন অসম্ভব রূপবতী তিলোত্তমাকে যে দেখত সেই প্রায় মূর্ছিত যেত ইন্দ্র যখন অসুর সুন্ড উপসুন্ডের উপদ্রবে ভয়ার্ত হয়ে ব্রহ্মার দ্বারস্থ হন তখন সুন্ড,উপসুন্ডকে বধ করার অভিপ্রায়ে ব্রহ্মা বিশ্বকর্মাকে নির্দেশ দেন যে, এমন এক গুণসম্পন্না নারীকে তৈরি করতে যে অসুর দুজনকে তার রূপে মোহিত করে তুলবে আর সুযোগ বুঝে তাদের বধ করতে সমর্থ হবেবিশ্বকর্মা সমস্ত গুণের সম্ভার একত্র করে তৈরি করলেন তিলোত্তমা তিলোত্তমা পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়ে অসুর দুজনকে প্রলোভন জালে লিপ্ত করে তুললেন তিলোত্তমা তাদের সামনে যখন নাচ করছিলেন তখন দুই ভাই কে আগে তিলোত্তমাকে পাবে এই নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হন ফলত: দুজনেই দুজনের হাতে মৃত্যুবরণ করেন
কম্বোডিয়ার একটি বিখ্যাত নৃত্যকলা আছে যাঅপ্সরা ডান্সনামে পশ্চিমে পরিচিত চীনের বিখ্যাত বৌদ্ধ গুহাগুলি যেমন মোগাও কেভ, ইউলিন কেভ, গুহাচিত্রে বহু অপ্সরা অঙ্কিত রয়েছেএদেশে যারা অপ্সরা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় তারাই হলেনবিদাদরি সংস্কৃত বিদ্যাধরী থেকেই শব্দটি উৎপন্ন হয়েছে বলে পণ্ডিতেরা অনুমান করেন


সৌজন্যেপুরাণ মহাভারত














কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র