রুখসানা কাজল - মায়াজম

Breaking

১৪ জুন, ২০১৯

রুখসানা কাজল

বাংলা মায়ের বীরকন্যারা
 



ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী বলেছিলেন,
“যুদ্ধের শিকার হয়েছে যে নারী তার তো নিজের কোনো লজ্জা নেই।”
আমাদের উদয়পদ্ম মা, অসম সাহসী এই নারীই প্রথম বীরাঙ্গনা যিনি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর  নির্মম নির্যাতন সম্পর্কে মুখ খোলেন। যদিও মনে বড় আশা পুষেছিলেন, তার দেখা-দেখি অনেকেই হয়তবা মুখ খুলবেন। কিন্তু তিনি তেমন কাউকে পাশে পান নি। বীরাঙ্গনাদের জন্যে মুক্তিযোদ্ধা  খেতাব অর্জনের লড়াইয়ে তিনি ছিলেন একা লড়াকু।
মঙ্গলবার, ৬ মার্চ, ইহলীলা সাঙ্গ করে চলে গেলেন একাত্তরের বীরাঙ্গনা, খড়কুটোর ভাস্কর এই  নারী, ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী । জন্মেছিলেন দেশভাগ মাথায় নিয়ে, ১৯৪৭ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী খুলনা শহরে। বেড়ে উঠেছিলেন ঢাকায়। তার নানা অ্যাডভোকেট আব্দুল হাকিম ছিলেন কংগ্রসী। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের শাসনামলে তিনি স্পীকার নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভাই ছিল মুক্তিযোদ্ধা। মা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সরাসরি সাহায্যকারী।    
বঙ্গবন্ধু একাত্তরের ধর্ষিতা নারীদের নাম দিয়েছিলেন, দোয়েল। রাজাকারদের সাহায্যে আট থেকে সত্তর বছর বয়সের প্রায় তিন লক্ষ বাঙ্গালী নারীকে নির্যাতন ধর্ষণ করেছে পাকিস্তানী বাহিনী। যুদ্ধের পর  সমাজ সংসার, আত্মীয় স্বজনের দ্বারা ব্রাত্য অধিকাংশ ধর্ষিতা নারীদের নাম তালিকাভুক্তির সময় বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ওরা এই বাংলার দোয়েল। ওদের পিতার নামের স্থানে লিখে দাও আমার নাম আর ঠিকানা দাও আমার বত্রিশ নম্বর, ধানমন্ডির বাসার।
পরবর্তিকালে তালিকাটি পাওয়া যায়নি। ধর্ষিতা বীরাঙ্গনারা অসন্মানের শিকার হতে পারে এই ভেবে নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল।  
ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণীকে যখন পাকিস্তান আর্মিরা তুলে নেয়, তখন তার বয়েস মাত্র তেইশ বছর। খুলনার দৌলতপুরে একজন শান্তি কমিটির সদস্য হত্যায় অংশ আছে বলে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। অস্থায়ী ক্যাম্পে আনার পথেই তাকে একাধিক পাকিস্তানী সৈন্য নির্যাতন করেছিল। তারপরের দিনগুলো কেবল নির্যাতনের কালিতে ছাওয়া।
তিনি জানান, “ অই সময়ের কথা আমি ভাবতেও পারিনা। গভীরভাবে যখন আমি উপলব্দি করতে যাই, তখন আমার সকল স্নায়ু শিথিল হয়ে যায়। আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। আবার সুস্থ হয়ে উঠতে আমার অনেক সময় লেগে যায়।”
দৃশ্যমান যুদ্ধ এক সময় থেমে যায় ঠিকই কিন্তু নির্যাতিতদের হৃদয়ে তার ক্ষত থেকে যায় আজীবন। ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী যখন নিজের  উপর করা নির্যাতনের ইতিহাস তুলে ধরলেন অসীম সাহসিকতায়, তখন অনেকেই রুষ্ট, বিরক্ত, কি দরকার ছিল গোছের হেয় দেখালেও রাষ্ট্র সমাজ আর আমরা স্বাধীন বাংলাদেশের নবপ্রজন্ম বিনীত হয়েছিলাম, শ্রদ্ধায়, ভালোবাসায়, আদরে। উনি হয়ে উঠেছিলেন আমাদের শত শত সন্তানের মা।   
তিনি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির হয়ে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির বাহন রাজাকারদের বিরুদ্ধে  সাক্ষ্য দিয়েছেন। এক সাক্ষাতকারে ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিণী বলেছিলেন, অপরিণত বয়সে যে বিষয়টি আমি সবার কাছ থেকে লুকাতে চেয়েছিলাম; ভাবতাম আমার ছোঁয়া লাগলে সব কিছু   অপবিত্র হয়ে যাবে। এই সমাজ আমাকে আঙুল তুলে কথা বলছে আর আমি সেই অপমানগুলো সহ্য করেছি। আমার মনে হয় আমার সেই দিনের অপমানই আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে আজ মুখ খুলে সত্যটি বলতে।
আর পরিবার ?
তার সাহসী মা একজন বান্ধবীকে নিয়ে যশোর রেল রোডের এক বাড়ির চিলেকোঠায় মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার সরবরাহ করতেন। ভাই শিবলী ছিল মুক্তিযোদ্ধা।  তারাও বিব্রত হয়েছিলেন। প্রথমদিকে অনেক পারিবারিক সদস্যরা তাকে গ্রহন করতে চায়নি।
সবচে বড় কথা, তিনি নিজের কাছে নিজে ছোট হয়ে থাকতেন। আক্ষেপ করে বলেছেন, “খুব  অবাধে বাড়িতে যেতে পারিনি আসলে। আমার মধ্যেও সংকোচ ছিল যে! আসলে আমি বিশাল কলঙ্কের বোঝা নিয়ে কারো সামনে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারতাম না । যদিও আমার মা কোনো কালেই এসব নিয়ে কোনো প্রশ্ন করেননি।”
সেই কলঙ্কের বোঝা তার মাথার মুকুট হয়ে গেছিল বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায়। জীবনের পরিণত সময়ে তিনি শাহবাগের উন্মুক্ত চত্বরে হাজার হাজার ছাত্র জনতার সাথে একাত্ম হয়ে রাজাকারদের বিচারের দাবীতে আন্দোলন করেছেন। দিন নেই রাত নেই তিনি জেগে থেকেছেন দাবি আদায়ের বাস্তবায়নে।  
তিনি নিজে কমিশনের সামনে সাক্ষ্য দিয়েছেন, কিভাবে হায়েনার উল্লাসে তাকে এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধরে আনা নারীদের গণধর্ষণ করা হয়েছে।  স্তন কেটে নিয়েছে, পাছাড় মাংস কেটে কুকুর শকুনদের খেতে দিয়েছে, বাঙালী নারীদের দীর্ঘ চুল সিলিংয়ে বেঁধে ঝুলিয়ে রেখেছে, ঝুলন্ত নারীদের যোনিতে বেয়নেট ঢুকিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে।
ইসলামের দোহাই দিয়ে বাঙালী নারীর গর্ভে সাচ্চা মুসলিমের সন্তান দেওয়ার মিশনে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তের নারীদের লাগাতার ধর্ষণ করে চলেছে।
কমিশনের সামনে একাই প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ ধর্ষিত নারীর কথা বলেছেন অকলঙ্কিত মুখে, অসীম সাহসে। তিনি আমাদের সাহসের উদয় পদ্ম। প্রতিটি দিন আমরা অপেক্ষায় থাকতাম তার জন্যে শাহবাগের উন্মুক্ত চত্বরে। অনেকের সাথে তিনিও নির্যাতিত নারীদের মুক্তিযোদ্ধার পরিচয়  পেতে দাবী করেছেন। আজ ধর্ষিত, নির্যাতিত নারীরা মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদায় ভূষিত হয়েছে তার একান্ত সাহসি ভূমিকায়।  এছাড়াও বাংলাদেশের ইশকুল পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই নারীদের বীরত্ম কাহিনী, আত্মত্যাগের করুণ ইতিহাস। প্রত্যাশাহীন জীবনে ২০১০ সালে তিনি  তার শিল্পকর্মের সুখ্যাতির জন্যে পেয়েছেন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার, স্বাধীনতা পদক। জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের ৩৫তম সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০১৬ সালে তাকে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেওয়া হয়।     
   
                                                                                                       পিরোজপুর। বরিশাল। ১৯৭১, জুনের কোন একদিন। 
মহাদেবের জটা থেকে জন্ম হয়নি সাহসি নারী ভাগীরথীর। বিধবা। এক সন্তানের জননী ভাগীরথীর জন্ম বরিশালের পিরোজপুরে। রাজাকারদের সহায়তায় তাকে ধর্ষণ করে পাকিস্তানী শয়তানরা। প্রতিশোধের আগুনে জ্বলে উঠে বাংলামায়ের এই মেয়ে । মৃত্যু সুনিশ্চিত জেনেও ধর্ষিত ভাগীরথী মাতৃভূমির শত্রুদের মেরে মরার পণ করে দুর্বার সাহসে।  
পাকিস্তানী হানাদারদের সাথে ভাব গড়ে তোলে।  জুনের কোনো একদিন ৪৫ জনের একটি গ্রুপকে দাওয়াত করে নিয়ে আসে তার গ্রাম  বাগমারা কদমতলীর বাড়িতে। তৈরি ছিল মুক্তিবাহিনী। সেদিন বুলেটের ক্ষত নিয়ে ক্যাম্পে ফিরে যেতে পেরেছিল মাত্র ৪/৫ জন পাকিস্তানি সৈন্য মাত্র।  পাকিস্তানী আর্মি আর রাজাকাররা বুঝেছিল কে করেছে এই কাজ। পলাতক ভাগীরথীকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য এক হাজার টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। বাংলামায়ের কুসন্তান রাজাকাররাই  ধরিয়ে দেয় ভাগীরথীকে। তাকে নিয়ে আসে পিরোজপুর সামরিক ক্যাম্পে।
সেদিন ছিল হাটবার। শহরের চৌমাথায় উলংগ করে দুটি পা সামরিক জীপের সাথে বেঁধে নির্লজ্জ মহা উৎসবে সমস্ত শহর জূড়ে ভাগীরথীকে টেনে হিঁচড়ে বেড়াল পাকিস্তানী হানাদাররা।
এক ঘন্টা পরে চৌমাথায় ফিরে এসে দেখে তখনো বেঁচে আছে ভাগীরথী। এবার  নরপশুরা আরও উন্মত্ত উল্লাসে দুই পা দুই জীপের সাথে বেঁধে চালিয়ে দিল উল্টো দিকে। দু টুকরো হয়ে গেল ভাগীরথী। টুকরো দেহাংশ  দুটি নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে আবার চৌমাথায় ফেলে রেখে গেল ছিন্নবিচ্ছিন্ন ভাগীরথীকে। বাংলামায়ের বীর কন্যার দেহ মাটি হয়ে মিশে গেল বাংলা মায়ের বুকের সাথে।
কুড়িগ্রাম। ১৯৭১ সাল। শংকর মাধবপুরের ১১ নং সেক্টরের মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প। সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের বীর উত্তম।
তের কি চৌদ্দ বছর বয়সের এক সাহসী কিশোরী তারামনবিবি  মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে আসে গৃহাস্থলি কাজে সাহায্য করার জন্য। যে হাতে রান্নার কাজ করেছে সেই হাতেই তুলে  নেয় অস্ত্র। শক্তিমতি মেয়ের সাহসে মুগ্ধ হয়ে মুক্তিযোদ্ধা হাবিলদার মুহিব অস্ত্র চালানোর ট্রেনিং এর সাথে দেশকে শত্রুমুক্ত করার শপথ করায়।
তারামনবিবি ১১ নং সেক্টরে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধা সৈনিকদের সাথে সমান পারদর্শিতায় কুড়িগ্রাম জেলার নদী-তীরবর্তী  অঞ্চল মোহনগঞ্জ, তারাবর, কোদালকাটি ও গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়িতে অগ্রবর্তী দলের হয়ে কয়েকটি সশস্ত্র যুদ্ধে বীরত্বের সাথে অংশগ্রহণ করেন।
কেবল যুদ্ধ করেই এই কিশোরী ক্ষান্ত হয়নি। রাজিবপুর  খাড়িয়াভাঙ্গা ও ভেলামারি খাল এলাকায় ভিখেরী, পাগল, পঙ্গুর সাজে গোয়েন্দাগিরি করে পাকিস্তানী শত্রুদের সঠিক অবস্থান এনে দিত মুক্তিযোদ্ধাদের। কতখানি রণ কৌশলী জ্ঞান থাকলে অই এতটুকু মেয়ে এমন অসম সাহসী কাজ করতে পারে ভাবা যায় ! ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবির এই দৃপ্ত সাহসীকতা ও বীরত্ব পূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে “বীর প্রতীক” উপাধিতে ভূষিত করেন।  
কিশোরগঞ্জ জেলার ইসরাইল মঞ্জিল। ১৯৭১ ।
এই পরিবারের সেতারা বেগম নামের মেয়েটি সবে মাত্র পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ডাক্তারি কোরে ক্যাপ্টেন হিসেবে যোগ দিয়েছে।  বড়ভাই এবং ছোটভাইও পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত। তিন ভাই বোনই সমস্ত পিছুটান আর ভয়কে তুড়ি মেরে মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন । ক্যাপ্টেন সেতারা বেগম বিশ্রামগঞ্জে বাংলাদেশ হাসপাতালে কমান্ডিং অফিসার হিসেবে কাজ শুরু করেন। পাঁচশত বেডের এই হাসপাতালটি সম্পুর্ণভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের দ্বারা পরিচালিত ছিল। যে সময়ে সামরিক বাহিনীর অনেকেই ভয়ে নির্লিপ্ত ছিল সেই সময়ে এই নারী সবরকমের বিপদকে অগ্রাহ্য করে  আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে গেছেন। প্রতিদিন আহত রক্তাক্ত মুক্তিযোদ্ধাদের হাহাকারের ভেতরে সাহসের অগ্নি প্রদীপ হয়ে ক্যাপ্টেন সেতারা বেগম তাদের সুস্থ করে মাতৃভুমির স্বাধীনতার জন্য ফের রণাংগণে যেতে উদবুদ্ধ করেছেন।
পাবনা। ১৯৭১ । ২৫ মার্চ তারিখেই পাকিস্তানী বাহিনী ঢুকে পড়ে শহরে। প্রতিরোধ গড়ে উঠে শহরের ঘরে ঘরে। মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। হাতা, খুন্তি, ছুরি , দা, কুড়াল, বটি, গরম জল নিয়ে প্রস্তুত পাবনা শহরের নারীরা। তাদের প্রতিজ্ঞা, মেরে তবে মরবো। এক সময় প্রতিরোধ ভেঙ্গে পড়ে । পাকিস্তান বাহিনী দখলে করে নেয় শহর।
সেই সময় পাবনার দুই সাহসী মায়ের সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে ছুটে গেছে রণাঙ্গনে। এর মধ্যে একজন মেয়ে। পাবনা জেলা ছাত্র ইউনিয়নের সভানেত্রী শিরিণ বানু মিতিল। দেশ মাতৃকার বিজয় ছিনিয়ে আনতে ভাইদের সাথে ছেলেদের পোশাক পরে যুদ্ধ করেছেন রণাঙ্গনে। আকাশবাণী থেকে এই অসম সাহসী নারীর কথা প্রচার করা হয়েছে বার বার । অনুপ্রেরণায় উদ্বেল হয়ে উঠেছে মুক্তিকামী বাঙালি । আছে আছে আমাদের অমিত তেজি ছেলে সন্তানের পাশে আমাদের অমিত সাহসিনী কন্যারা আছে ।
কাঁকন হেঞ্চিলিয়াত । খাসিয়া নারী। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের সাহসি মেয়ে কাঁকন।  আমবাড়ি, বাংলাবাজার, টেবলাই, বলিউরা, মহব্বতপুর, বেতুরা, দুরিনটিলা, আধারটিলা সহ প্রায় নয়টি সন্মুখ যুদ্ধে তিনি অংশ নেয়। ধরা পড়ে পাশবিক অত্যাচারের শিকার হয়ে, নারীত্বের চরম অবমাননায় ধর্ষিত লুন্ঠিত হয়েও ভেঙ্গে পড়েনি কাঁকন । কমান্ডার মীর শওকত আলীর নির্দেশে বেছে নেয় গুপ্তচরবৃত্তি । আবার ধরা পড়ে। নির্মম অত্যাচারে মৃত ভেবে ফেলে যায় শত্রুরা। কিন্তু না বেঁচে উঠে খাসিয়া কন্যা কাঁকন। বার বার মৃত্যুর মুখে  গিয়ে দেশরক্ষার জন্য তিনি উঠে দাঁড়িয়েছেন ।কেবল দেশের জন্য নারীর পরম ধন ইজ্জত লুটে নেওয়ার পরেও কাঁকন মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এই দেশ বাঁচলে কাঁকনের সম্প্রদায় খাসিয়ারাও স্বাধীন স্বদেশ পাবে। দেশ তো সবার। একই মায়ের সন্তান যে সবাই।
টাংগাইল, মধুপুরের জানজালিয়া গ্রামের সন্ধ্যা রাণী সাংমা মৃ।  ১৯৭১ এ
নার্সিং পড়ছে হালুয়াঘাট জয়রামকুড়া মিশনারী হাসপাতালে। সেই সময় মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসার ডাঃ প্রেমাংকুর রায় এবং ক্যাপ্টেন আব্দুল মান্নান ১১ নম্বর সেক্টরে ৪৫ শয্যার একটি অস্থায়ী বাঁশের বেড়ার  হাসপাতাল গঠন করে। পাকিস্তানী শয়তানদের ভয়ে সন্ধ্যারাণীরা তখন ভারতের মেঘালয়ে শরনার্থী। ডাঃ প্রেমাংকুরের আহবানে সন্ধ্যা খালাতো বোনসহ হাসপাতালের মেডিকেল ও সার্জিক্যাল ওয়ার্ডে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায় যোগ দেয়। সার্জইক্যাল যন্ত্রপাতি বলতে ছিল ছুরি, কাঁথাসেলাইয়ের সুঁচ, দাঁড়ি কাটার কাঁচি। চিকিৎসার জন্য রাতে ভরসা ছিল কেবল হারিকেন বা টর্চলাইট। দেশের সেবা ছাড়া সেই সময় আর কিছুই ছিল না সন্ধ্যা রানীর মনে।
ঢাকা , এলিফ্যান্ট রোড। ১৯৭১। ছেলে রুমি মুক্তিযুদ্ধে যাচ্ছে। মা জাহানারা ঈমাম বুকে পাষাণ বেঁধে অশ্রুসিক্ত কন্ঠে বল্ল , যা রুমি, তোকে  দেশ মায়ের রক্ষার জন্য কোরবানী দিলাম। মায়ের কথা মিথ্যে হয়নি। রুমি শহীদ হয়ে হাজার লক্ষ শহীদের সাথে মিশে আছে এই মাটির বুকে।
প্রীতিলতা, ইলা মিত্র, বেগম রোকেয়া, সুফিয়া কামালের এই মানস কন্যাদের মত আরও কত শত কন্যাশ্রীরা জেগে উঠবে দেশের প্রয়োজনে ! আপাত ধর্মের জালে জড়িয়ে পড়া বাংলাদেশ। সময় হলেই প্রতিবাদ বিস্ফোরণে ঝাঁপিয়ে পড়বে। ইতিহাস উদাহরণ হয়ে আছে।   

                             -----------------




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র