পিয়াল রায়

মায়াজম
1





মধ্যরাতের মেয়েরা



স্বাধীন হওয়ার পর দেশ চালনার নীতি নির্ধারণের জন্য অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়ে সংবিধান রচনার। সংবিধানের
সার্থক রূপকার হিসেবে আমরা ড. ভীমরাও আম্বেদকরের নাম অত্যন্ত শ্রদ্ধার সঙ্গে নিয়ে থাকি। অথচ জানিনা
সংবিধান রচনার কাজে নিয়োজিত পনেরো জন মহিলার নাম। প্রথমে সংবিধান সভায় ছিলেন বারো জন মহিলা।
পরে আরো তিনজন এসে যোগদান করেন। পনেরো জন মহিলা সহ সবমিলিয়ে সদস্য সংখ্যা ছিল ২৯৯।  ডিবেট
চলে দু বছর এগারো মাস সতেরো দিন। তাঁরা ছিলেন ফ্রীডম ফাইটার, আইনজীবি, সমাজশোধক, নারীবাদী
এবং রাজনীতিজ্ঞ। এঁদের অনেকেই এসেছিলেন বিভিন্ন মহিলা সংঘ থেকে এবং ছিলেন ১৯১৭ থেকে চলে
আসা নারীবাদী আন্দোলনের সাথে সরাসরি যুক্ত। ডান্ডি মার্চ, সাইমন কমিশনের বিরুদ্ধাচার সহ নানা কারণে
কারাবরণ করেছেন বারবার। তাঁরা জোরদার কন্ঠ তুলেছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অধিকার রক্ষার জন্য,
সংরক্ষণের বিপক্ষে সর্বোপরি স্বাধীন আইন ব্যবস্থার স্বপক্ষে। দুনিয়ার সবথেকে বড় গণতন্ত্রের জন্য সংবিধান
রচনা মোটেই সহজ কাজ ছিল না। সেখানে দেশের মহিলাদের যোগদানও তাই স্বাভাবিক ভাবেই অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। অথচ আফসোস তাঁদের নাম হয়ত হাতে গোণা কিছু মানুষই জানেন। পুরুষের সাথে
কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমান তালে চলা এই মহিলারা ছিলেন --

আম্মু স্বামীনাথন
---------------------------------
                        আম্মু স্বামীনাথনের জন্ম কেরলের পালঘাট জেলার উচ্চবর্গীয় হিন্দু পরিবারে। ১৯১৭ সালে
অ্যানি বেসান্ত, মার্গারেট মালথী পটবর্ধন, শ্রীমতি দাদাভাই ও শ্রীমতি অম্বুজমলের সাথে মিলে গঠন করেন
মহিলা ভারতসংঘ। ১৯৪৬ সালে আম্মু স্বামীনাথন মাদ্রাজ নির্বাচন ক্ষেত্র থেকে সংবিধান সভার সদস্য হন।
আশাবাদী ও আত্মবিশ্বাসী আম্মু বলেন,

" বাইরের লোকেরা বলছেন ভারত কোনোদিনই তার মহিলাদের পুরুষের বরাবর অধিকার দেয়নি। এখন আমরা
বলতে পারব ভারতের মানুষ যখন স্বয়ং তাদের সংবিধান নির্মাণ করছেন তখন সে দেশের প্রতি দ্বিতীয়
নাগরিকের বরাবর অধিকার মহিলাদের দিয়েছে। "

১৯৫২ সালে লোকসভা ও ১৯৫৪ সালে তিনি রাজ্যসভার সদস্য হন




দাক্ষায়ণী ভেলায়ুধন
--------------------------------------
দাক্ষায়ণী প্রথম এবং একমাত্র দলিত মহিলা যিনি ১৯৪৬ সালে সংবিধান সভার সদস্য হন। ১৯১২ সালে জুলাই
কোচিনের বোলাগাট্টি দ্বীপে জন্ম। পুলয়া দলিত জাতির ইনিই প্রথম প্রজন্ম যারা পড়াশোনার সুযোগ পান।
 দাক্ষায়ণীর যে কাজটি মূলত মানুষের দৃষ্টি কাড়ে তা হল শরীরের ঊর্ধ্বাঙ্গ ঢেকে পোশাক পরার রীতি। এর
আগে এই জনজাতির মেয়েদের অধিকার ছিল না ঊর্ধ্বাঙ্গ ঢেকে রাখার। ১৯৪৬-৫২ ইনি রাজ্যসভা ও পরে
লোকসভার সদস্য হন। রাজ্যসভার সর্বকনিষ্ঠ সদস্য হিসেবেও দাক্ষায়ণীর নাম উঠে আসে।
ভারতের প্রথম দলিত মহিলা যিনি ব্যাচেলর ডিগ্রী পান তিনি হলেন দাক্ষায়ণী।  কোচিন সরকারের
স্কলারশিপের ভিত্তিতে তিনি বি.এসসি ও টিচার্স ট্রেনিং সার্টিফিকেট হাসিল করেন মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি থেকে।
সরকারী স্কুলের শিক্ষক হিসেবে বছরের পর বছর চলে আসা সোশ্যাল  স্টিগমা ও সংস্থাগত ভেদনীতির
মুখোমুখি হন বারবার। শিক্ষকতা করবেন কিনা এ চিন্তা তাঁকে গ্রাস করে। ভাই কে.পি ভাল্লানের পদানুসরণ
করে ১৯৪৫ এ কোচিন আইন পরিষদের জন্য নমিনেশন পান। পরের বছর সর্বকনিষ্ঠ (৩৪বছর) সদস্য
হিসেবে সংবিধান সভার জন্য তিনি নির্বাচিত হন।

দাক্ষায়ণী গান্ধীজী ও আম্বেদকরের দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত ছিলেন। সংবিধান সভায় পৌঁছে দুটো বিষয়ের
ওপর তিনি জোর দেন। প্রথমত সংবিধান রচনার মধ্য দিয়ে দেশের জনগণের জীবন নির্বাহের জন্য একটি
নতুন ফ্রেমওয়ার্ক গড়ে তোলা ও দ্বিতীয়ত অস্পৃশ্যতাকে আইনবিরোধী শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা।

স্বাধীন ভারতের সকল অধিবাসীর একটি শক্তিশালী সাধারণ জাতীয়তাবাদী পরিচিতি তুলে ধরার ওপর জোর
দিয়ে তিনি পরিষ্কারভাবেই সংরক্ষণের বিরুদ্ধে কথা বলেন। ১৯৪৭ এর ২৮ আগস্ট তিনি বলেন,

 As long as the Scheduled Castes, or the Harijans or by Whatever name they may be called, are
economic slaves of other people, there is no meaning demanding either separate electorates or
joint electorate or any other kind of percentage. Personally speaking, I am not in favour of any kind
of reservation in any place whatsoever. "

 দাক্ষায়ণী যে কত দূরদৃষ্টিসম্পন্ন মহিলা ছিলেন আজ স্বাধীনতার বাহাত্তর বছর পরেও আমরা হাড়ে হাড়ে
টের পাচ্ছি। মজার ব্যাপার হল তাঁর এই বলিষ্ঠ উচ্চারণের কোনো দাম সংবিধান সভা দেয়নি। রচিত
সংবিধানকে তাঁর মনে হয়েছে  " barren of ideas and principles. "
এরপর তিনি ডাইরেক্ট ইলেক্টোরাল পলিটিকস থেকে বেরিয়ে আসেন ও আজীবন ব্যয় করেন দলিত
জাতির উন্নতিকল্পে। তাঁর কাজ ভীষণভাবে প্রভাবিত করে তাঁর ভাইপো কে. আর নারায়ননকে। যিনি
পরবর্তীকালে ভারতের প্রথম দলিত রাষ্ট্রপতি হন।




বেগম এজাজ রসুল
----------------------------------
বেগম এজাজ রসুলের জন্ম মালারকোটলার সম্ভ্রান্ত পরিবারে। সংবিধান সভার জন্য মনোনীত একমাত্র
মুসলিম মহিলা সদস্য।  ১৯৫০ এ ভারতে মুসলিম লিগ ভেঙে গেলে বেগম এজাজ রসুল কংগ্রেসে যোগ দেন।
১৯৫২ সালে রাজ্যসভার সদস্য হন। শুধু তাই নয় ১৯৬৯ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত উত্তরপ্রদেশ বিধানসভার সদস্য
ছিলেন বেগম এজাজ। ২০০০ সালে বিভিন্ন প্রকার জনহিতকর কাজে অবদানের জন্য তাঁকে পদ্মভূষণ দ্বারা
সম্মানিত করা হয়।

দুর্গাবাঈ দেশমুখ
-------------------------------
১৯০৯ সালে রাজমুন্ডারিতে জন্ম নেন দুর্গাবাঈ। মাত্র বারো বছর বয়সে গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনে
যোগ দেন ও অন্ধ্রকেশরী টি. প্রকাশনের সাথে ১৯৩০ লবন সত্যাগ্রহে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৩৬ এ স্থাপন করেন
'অন্ধ্র মহিলাসভা'।  দেখতে দেখতে পরবর্তী কুড়ি বছরে এই সংস্থা মাদ্রাজের শিক্ষা এবং সমাজচেতনার মূল
কেন্দ্র হয়ে ওঠে। তিনি সেন্ট্রাল সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বোর্ড, ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর উইমেনস এডুকেশন ও
ন্যাশনাল কমিটি অফ গার্লস অ্যান্ড উইমেনস এডুকেশনের সভাপতি ছিলেন বহুদিন। লোকসভার সদস্য ও
প্ল্যানিং কমিশনের সদস্য হিসেবেও তাঁর নাম উজ্জ্বল অক্ষরে লেখা আছে। অন্ধ্র এডুকেশনাল সোসাইটির সাথে
যুক্ত ছিলেন।  ভারতবর্ষে শিক্ষা প্রসারে তাঁর অতুলনীয় কীর্তির জন্য ১৯৭১ সালে নেহেরু লিটারারি অ্যাওয়ার্ডে
সম্মানিত করা হয় তাঁকে। পদ্মবিভূষণও পান তিনি।

হংস জীবরাজ মেহতা
----------------------------------------
১৮৯৭ সালে হংস মেহতার জন্ম হয় সুরাটে। বাবা ছিলেন বরোদার দেওয়ান। সাংবাদিকতা ও সমাজবিদ্যা নিয়ে
পড়াশোনা করেন ইংল্যান্ডে। সেখান তাঁর আলাপ হয় সরোজিনী নাইডু ও রাজকুমারী অমৃত কৌরের সঙ্গে।
এরপরেই জাতীয় আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। শিশুদের জন্য অজস্র বই। ইংরিজি থেকে গল্প অনুবাদও
করেছেন তাদের জন্য। ১৯২৬ সালে নির্বাচিত হন বম্বে স্কুল কমিটির জন্য। ১৯৪৫-৪৬ এ প্রেসিডেন্ট হন
অল ইন্ডিয়া উইমেনস কনফারেন্সের। ১৯৪৫ থেকে ১৯৬০ পর্যন্ত বহু গুরুত্বপূর্ণ পদ তাঁকে অলঙ্করণ করতে
দেখা যায়, যেমন ---
এস.এন.ডি.টি উইমেনস ইউনিভার্সিটির উপাচার্য, অল ইন্ডিয়া সেকেন্ডারি বোর্ড অফ এডুকেশনের সদস্য,
ইন্টার ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট, মহারাজা সৈয়াজীরাও ইউনিভার্সিটি( বরোদা) র উপাচার্য তারমধ্যে অন্যতম।

কমলা চৌধুরী
-----------------------------
যদিও লক্ষ্মৌএর একটি গণ্যমান্য পরিবারে জন্ম হয় কমলা চৌধুরীর তবুও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য
তাঁকে যথেষ্ট লড়াই করতে হয়। রাজপরিবারের দেওয়ান হওয়ার কারণে পিতা ছিলেন রাজপরিবারের প্রতি
নিষ্ঠাবান। কমলা চৌধুরীর মন ও মানসিকতা ছিল পুরোপুরিভাবে জাতীয়তাবাদী। রাজপরিবারের প্রতি পিতার
অতিরিক্ত নিষ্ঠা তাঁকে বিচলিত করে ও পরিবার থেকে সরিয়ে দেয় দূরে।  দেশোদ্ধারকেই জীবনের ব্রত করে
তোলেন। গান্ধীজীর ডাকে সিভিল ডিসওবিডিয়েন্স আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।
 কংগ্রের ৫৪ তম অধিবেসনে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হন।  সত্তরের শেষের দিকে
লোকসভার সদস্য রূপেও নির্বাচিত হন। কমলা চৌধুরী তাঁর শক্তিশালী লেখনীর জন্যও বহুল পরিচিত।  
মেয়েদের অন্তর্জগতের কথা তিনি অত্যন্ত সুচারুভাবে ফুটিয়ে তোলেন গল্পের মাধ্যমে।




লীলা রায়
--------------------
লীলা রায়ের পরিচিতি একাধারে প্রসিদ্ধ সমাজশোধক, নিবিড় নারীবাদী ও অনন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব
হিসেবে। নেতাজীর অত্যন্ত কাছের মানুষ ছিলেন তিনি। লীলা রায়ের জন্ম আসামের গোয়ালপাড়ার
এক উচ্চমধ্যবিত্ত পরিবারে ১৯০০ সালের ২অক্টোবর।  পিতা ডেপুটি মেজিস্ট্রেট হলেও স্বদেশী
আন্দোলনের প্রতি ছিলেন যথেষ্ট সহানুভূতিশীল। ১৯২১ সালে বেথুন কলেজ থেকে স্নাতক হন লীলা।
বন্ধুদের সাথে মিলে ১৯২৩ সালে স্থাপন করেন 'দিপালী সংঘ'। 'দিপালী সংঘ'এর তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়
বারোটি স্কুল যেগুলি পরবর্তীকালে রাজনৈতিক কার্যকলাপের কেন্দ্র হয়ে ওঠে। বহু বিখ্যাত রাজনৈতিক
ব্যক্তিত্বের আগমন ঘটে সেখানে। পরে ১৯২৮ সালে আরো দুটি স্কুল নির্মাণ করেন ' নারী শিক্ষামন্দির' ও '
শিক্ষাভবন ' নামে। মুসলিম মেয়েদের শিক্ষার জন্যও ঢাকায় একটি স্কুল তৈরি করেন। স্কুলে ক্রমেক্রমে
ছাত্রীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে একটি লেডিস হোস্টেলেরও ব্যবস্থা করা হয়। 'জয়শ্রী' নামের একটি পত্রিকার
সম্পাদকও ছিলেন তিনি। লীলা রায় কংগ্রেসে যোগ দেন ১৯৩৭ সালে আর পরের বছরই ' বাংলা প্রান্তীয়
কংগ্রেস মহিলা সমিতি ' গঠন করেন। দেশ ছাড়ার আগে নেতাজী পার্টির পুরো দায়িত্ব দিয়ে যান লীলা রায়
এবং তাঁর স্বামী অনিল রায়কে। ১০৬১ সালে ফরোয়ার্ড ব্লক ( সুভাষিস্ট)  ও প্রজা সমাজবাদী পার্টির জোটে
গঠিত নতুন পার্টির সভাপতি হয়েছিলেন তিনি।

মালতী চৌধুরী
-------------------------------
১৯০৪ সালে পূর্ব বাংলার ( বর্তমান বাংলাদেশ) বেশ অবস্থাপন্ন পরিবারে জন্ম হয় মালতী চৌধুরীর।  ১৯২১ সালে
যখন তাঁর বয়স ষোলো বছর, তাঁকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় শান্তিনিকেতন বিশ্ব ভারতীর ছাত্রী হিসেবে।
             বিবাহ হয় শ্রীযুক্ত নবকৃষ্ণ চৌধুরীর সঙ্গে, যিনি পরবর্তীকালে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী হন।  ১৯২৭ সালে
স্বামীর সাথে মালতী চৌধুরী চলে আসেন ওড়িশায়। লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনের সময় স্বামীর সাথে তিনি যোগ
দেন ন্যাশনাল কংগ্রেসে এবং আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। সত্যাগ্রহ আন্দোলেন উপযুক্ত করে গড়ে তোলার
জন্য তাঁরা মানুষকে শিক্ষিত করতে থাকেন। ১৯৩৩ এ স্বামীর সাথে মিলে গঠন করেন ' উৎকল কংগ্রেস
সমাজবাদী কর্মী সংঘ ' যা পরে নাম বদল করে হয় ' ওড়িশা প্রোভিনশিয়াল ব্রাঞ্চ অফ অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস
সোশ্যালিস্ট পার্টি  '। ১৯৩৪ এ গান্ধীজীর সাথে পদযাত্রায় অংশ নেন। তাঁর উল্লেখনিয় বহুবিধ কাজের মধ্যে
একটি ছিল ওড়িশার অসুরিক্ষত জনজাতির জন্য ' বাজিরাও ছাত্রাবাস ' নির্মাণ। ইন্দিরা গান্ধীর ইমার্জেন্সী
ঘোষণার বিরোধিতা করে জেলে যান।

পূর্ণিমা বন্দ্যোপাধ্যায়
-----------------------------------------
পূর্ণিমা ব্যানার্জী ছিলেন এলাহাবাদের ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কমিটির সভাপতি।  উত্তর প্রদেশের বৈপ্লবিক
চিন্তাধারা পোষণকারী তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল ব্যক্তিত্ব।  ১৯৩০-৪০ একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে
লড়েছেন ভারতের স্বাধীনতা যুদ্ধ। সত্যাগ্রহ ও ভারত ছাড়ো আন্দোলনের মূখ্য নেত্রী  হিসেবে কারাবরণ করেন।

রাজকুমারী অমৃত কৌর
-----------------------------------------
কপূরথালার মহারাজার পুত্র হরনাম সিং এর কন্যা অমৃত কৌরের জন্ম ১৮৮৯, ২ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মৌতে
হয়। তিনি ভারতের প্রথম স্বাস্থ্য মন্ত্রী হন, শুধু তাই নয় এ পদে তিনি আসীন থাকেন দশ বছর। পড়াশোনা
 ইংল্যান্ডে। ' টিউবারক্যুলোসিস অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া ', ' সেন্ট্রাল লেপ্রসি অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট
' গড়ে তোলেন। মেয়েদের স্বাস্থ্য এবং খেলাধুলোর ওপর ছিল তাঁর প্রখর নজর। রেডক্রস সোসাইটির গভর্নর
বোর্ড ও সেন্ট জন অ্যাম্বুলেন্স সোসাইটির কার্যকরী সমিতির উপাধক্ষ্য ছিলেন। ' অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট
অফ মেডিকেল সায়েন্সেস ' ( AIIMS)  এর প্রতিষ্ঠাতা ছি্লেন তিনি। ১৯৬৪ তে তাঁর মৃত্যু হলে দ্য নিউ ইয়র্ক
টাইমস তাঁকে দেশের সেবার জন্য 'রাজকুমারী' উপাধীতে ভূষিত করে।

রেণুকা রায়
--------------------------
রেণুকার পিতা সতীশ চন্দ্র মুখোপাধ্যায় ছিলেন একজন আই সি এস অফিসার।  মা চারুলতা মুখোপাধ্যায়
ছিলেন একজন সমাজ সেবিকা এবং অল ইন্ডিয়া উইমেন্স কনফারেন্সের সদস্য।  লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স
থেকে বি.এ করেন তিনি। ১৯৩৪ সালে এ.আই.ডব্লিউ.সি এর লিগাল সেক্রেটারি হিসেবে তিনি ' লিগাল
ডিস্যাবিলিটিস অফ উইমেন ইন ইন্ডিয়া ; এ প্লি ফর এ কমিশন অফ এনক্যোয়ারী ' নামে একটি দস্তাবেজ
পেশ করেন। নারী-পুরুষ সকলের জন্য একই নিয়মবিধির কথা বলেন তিনি। ১৯৪৩ - ১৯৪৬ কেন্দ্রীয়
বিধানসভা, সংবিধান সভা ও সংসদসদস্য ছিলেন। ১৯৫২-১৯৫৭ পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার পূনর্বাসন মন্ত্রী
ছিলেন। ১৯৫৭ এবং ১৯৬২ মালদা লোকসভা কেন্দ্রের সদস্য থেকেছেন।

সরোজিনী নাইডু
--------------------------------
ভারতের নাইটিঙ্গেল সরোজিনী নাইডুর জন্ম ১৮৭৯ র ৩ ফেব্রুয়ারি হায়দ্রাবাদে। ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল
কংগ্রেসের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট এবং ভারতীয় রাজ্য গভর্নর।  লন্ডনের কিংস কলেজ ও কেমব্রিজের
গিরটন কলেজে করেছেন পড়াশোনা। ভারতীয়দের হিতসাধনে আফ্রিকা এবং আমেরিকা সফর করেন।
ব্রিটিশ বিরোধী কাজকর্মের জন্য তাঁকে বারবার জেলে যেতে হয়। কলমের জোর তাঁর কলজের জোরের
মতোই ছিল। নির্ভীক, আত্মবিশ্বাসী। তাঁর অমূল্য সাহিত্যকৃতির জন্য তাঁকে ১৯২৪ সালে রয়্যাল সোসাইটি
অফ লিটারেচারের ফেলো নির্বাচন করা হয়।

সুচেতা কৃপালনী
----------------------------------
 হরিয়ানার আম্বালায় ১৯০৮ এ জন্ম গ্রহণ করেন সুচেতা কৃপালনী। ১৯৪২ এর ভারত ছাড়ো আন্দোলনে তাঁর
অভূতপূর্ব অবদানের জন্য তিনি চিরকালীন শ্রদ্ধেয় হয়ে রয়েছেন। ১৯৪০ সালে ইনি কংগ্রেস পার্টির মহিলা
সংগঠন গড়ে তোলেন। স্বাধীনতার পর ইনি দিল্লীর সাংসদ ও ইউপি রাজ্য সরকারের মিনিস্টার অফ লেবার,
কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রী মন্ত্রী হন। সুচেতা কৃপালনীই ছিলেন ভারতের প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী।




বিজয়লক্ষ্মী পন্ডিত
-------------------------------------
ভারতের প্রথম প্রধান মন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর ভগ্নি বিজয়লক্ষ্মী পন্ডিতের জন্ম ১৮ আগস্ট, ১৯০০,
 এলাহাবাদে। বিজয়লক্ষ্মীর রাজনৈতিক জীবন শুরু হয় এলাহাবাদ মিউনিসিপাল বোর্ডের ইলেকশনের
মধ্য দিয়ে। ব্রিটিশ আমলে তাঁকে ভিন্ন ভিন্ন কারাগৃহে বারবার কয়েদ করা হয়। ১৯৩৭ এ স্থানীয় সরকার
গঠন হলে সার্বজনিক স্বাস্থ্য মন্ত্রী হন। ভারতের ইতিহাসে বিজয়লক্ষ্মী পন্ডিতই ছিলেন প্রথম মহিলা
ক্যাবিনেট মন্ত্রী। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতের পার্টিশনকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে কংগ্রেস
পার্টির অন্যান্য সমস্ত সদস্যের মতোই ১৯৩৯ এ তিনি পদত্যাগ করেন।  

অ্যানি মাস্কারেন
----------------------------

কেরলের তিরুবনন্তপুরমের এক ক্যাথলিক পরিবারে জন্ম হয় অ্যানি মাস্কারেনের। ত্রিবাঙ্কুর রাজ্য থেকে
যোগ দেন কংগ্রেসে। এই রাজ্য থেকে যেসব মহিলা প্রথম কংগ্রেসে যোগদান করেন অ্যানি ছিলেন তাঁদের
একজন। অ্যানিই প্রথম মহিলা যিনি ত্রিবাঙ্কুর রাজ্য কংগ্রেসের কার্যকরী সভাতেও অংশ নেন। ত্রিবাঙ্কুর
রাজ্যের স্বাধীনতা তথা ভারতে অন্তর্ভুক্তিকরণের জন্য আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা অনস্বীকার্য।  অতিরিক্ত
রাজনৈতিক তৎপরতার কারণে ১৯৩৯ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত বারবার তাঁকে জেলে ঢোকানো হয়। স্বাধীনতার
পর অ্যানিই ছিলেন কেরলের প্রথম এম.পি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

  1. ভাল লাগল না। স্কুলপড়ুয়াদের ইতিহাসের উত্তরপত্রের মত লাগল।

    উত্তরমুছুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন