রা'ধারা ও একা সত্য
~ কথিত আছে শ্রী কৃষ্ণের ১৬০০০ স্ত্রী। রুক্মিনী, জাম্ববতী, সত্যভামা সহ আরো ১৫৯৯৭ জন। প্লাস একম এবম অদ্বিতীয়ম রাধা। যিনি সকল কৃষ্ণপত্নীকে ঠেলিয়া এই মর্ত্যধামে সর্বক্ষণ তাঁহার প্রেমিকের বক্ষলগ্না হইয়া আছেন। যে তাড়নায় ভক্তগণ গুড মর্নিং / সুপ্রভাতম ইত্যাদিকে ডাস্টবিনে ফেলিয়া "জয় শ্রী কৃষ্ণ"র সহিত "রাধে রাধে" মিশাইয়া দিবসের শুরুয়াৎ করিয়া থাকেন।
স্বর্গের নন্দন কাননে , রুক্মিনী, জাম্ববতী সহ প্রধানা কৃষ্ণভামিনীগণ সকলেই প্রায় লক্ষিত হইতেছেন।
কেবল সত্যভামা ও রাধা অনুপস্থিত!
রাধা না হয় অমর সিন্ড্রোম হইয়া আপামর ভারতীয় নারীর অন্তরে ও কবিদের কলমে নির্ঝরের মত ঝরিতে থাকেন প্লাস তাঁহাকে মন্দিরে মন্দিরে কৃষ্ণের বাহুলগ্না হইয়াও অ্যাটেন্ডেন্স বজায় রাখিতে হয়, যদিও আজকাল পাশাড়ে, দাবাড়ের সহিত রাধাড়ের সংখ্যা কমিয়া যাইতেছে, তবু রাধা অতিব্যস্ততার কারণে স্বর্গলাভ হইতে বঞ্চিত বোঝা যাইতেছে। ( এক্ষণে কৃষ্ণের কিঞ্চিৎ হস্তক্ষেপ নিশ্চিত দেখিতে পাই, পত্নীর সহিত প্রেমিকাকে কোন আহাম্মক গুলিয়া ঘোল পাকাইতে চাহে!)
কিন্তু সত্যভামা! কৃষ্ণের অভিমানিনী, আদরিনী সত্যভামা কোথায় উধাও হইলেন!
অতিরিক্ত যেকোনো নেশাতে ঘোর লাগিয়া যায়, তাহা কোন পানীয় হইতে পারে ধূম্র অথবা দুষ্পাচ্য পুস্তক রাশি। নেশার গোড়ায় না গিয়া ঘোরের ফলাফল বিস্তারিত বলিতে চাহিতেছি। তুরীয় ঘোরের মধ্যে চলচ্চিত্র দর্শনের মত স্পষ্ট এক যুবতী ( যদিও পোশাকে প্রাচীনা) সত্যভামা ও বেশ কয়েকজন আধুনিকা রাধা'কে স্বগোতোক্তি করিতে শুনিয়াছি। স্পষ্ট। সবটা স্মৃতিতে নাই, যতটুকু আছে, শেয়ার করিতেছি.....
" বাঁ হাতের গোলাপ ফেলে দাও। ডান হাতেরও। নিজেকে ছুঁড়ে ফেলো স্মৃতি থেকে। তারপর, এসো "
তাহারা গুনগুন করিতেছিলেন । কিছু শব্দ ভাঙিয়া ডট আর লাইনে ফিরিয়া যাইতে চাহিতেছিল!গুনগুন বাড়িতে লাগিল
অহংকারী নিরলঙ্কার এক রমণী দাবি করিলেন, তিনি সত্যভামা....
সত্যভামা ঃ এই যে, বোকা বুদ্ধু কবি, শোনো, আমি তোমাদের আরাদ্ধ রাধা নই, আমি সত্যভামা। আমি যা বলছি, সেগুলো হয়ত তোমার গাঁজাখুরি স্বপ্ন মনে হতে পারে কিন্তু আমার কাছে এর থেকে বেশি বাস্তব আর কিছু নেই! যদি তুমি কৃষ্ণকে নিয়ে কিছু লিখে নামযশ করতে চাও, দুটো আলাদা কাব্য লিখো, বাপু। দ্বারকা আর বৃন্দাবনকে খবরদার একসাথে মেলাবে না। আমার সাথে রাধার তুলনা করবার ধৃষ্টতা যেন না হয়। আমার অশান্তির কারণ এমনিই অনেক আছে, আর বাড়িয়ো না, দয়া করে! কৃষ্ণের হয়ত রাধার কাছে ফিরে যাবার মনোবাসনা ছিলই, স্বাভাবিক ... কবি যখন, তখন তো জানোই হৃদয়ের কাছে শরীর বারবার হেরে যায়। কিন্তু কোনও তুলনা নয়। অকারণে কোথাও হেরে যেতে এক্কেবারেই আমি পছন্দ করি না! মনে থাকে যেন.... "
~ মানে! আমি তো কিছু লিখিতেই চাহিতেছি না, মহাশয়া!কোথা হইতে যে আসিয়া জুটিলেন এ মুখরা প্রাচীনা নারী! সর্বাঙ্গে সোঁদা লাইব্রেরি, পোকা মাকড়ের গন্ধ!
অন্য পর্দায় একাধিক রমণীর সমাগম.....তাহাদের সকলকেই রাধা বলিয়া মনে হইতে লাগিল!
রাধা ঃ সময় একটা ভারী সিসের বল, গড়াতে চায় না! সময়, ছাইচাপা আগুন, আমাকে আধপোড়া করে ফেলে রেখেছে। দরজার তালায় ছাইয়ের পরত। চোখে কালো কাপড়। তোমার রেখে যাওয়া টেলিস্কোপটা, ড্রয়িং রুমের একমাত্র শো পিস। প্রথম দিনের মতো এখনো বাবল র্যাপে রাখা। ওই টেলিস্কোপের সাথে ভদকা, সিগার, দুঃশ্চিন্তা আর খানিকটা সত্যি, খানিকটা মিথ্যে মিশে আছে। তুমি নিশ্চিত আমার পাশের ফ্ল্যটের কেরালাইট কাপল্'কে ভুলে গেছ! ওরা একরকম, আজও...ওদের সী - ফিশ আর পচা কোকোনাট বিয়ারের গা গোলানো গন্ধ, আমার চানে যাবার অ্যালার্ম । যাই হোক, আমার কাছে আমার জীবনটাই সবচেয়ে মূল্যবান। তবু তোমার পুরনো এয়ার টিকিট, ট্র্যাভেল ব্যাগ, জুতো, অন্য সবকিছুই ফর্মালিনে ভিজিয়ে তরতাজা করে রেখেছি"
~ হায় রে! রাধা!অন্যদিকে, একক নারী তাঁহার দুঃখের ঝাঁপ খুলিলেন ......
সত্যভামা ঃ দেখতে যুবতী হলেও আমি বৃদ্ধা! দেবমাতা অদিতির আশীর্বাদের এই চির যৌবন, অভিশাপের মতো। আসলে অতি প্রাচীন তো। যত প্রাচীন এই পৃথিবী, হয়ত তারও বেশি... আমি কোনও এক স্বপ্নলব্ধ উন্মাদের প্রথম উন্মাদনা... তার সাথে সাথে চলেছি ততদূর, যতদূর স্বপ্ন প্রশ্রয় দিয়েছে। নিজের মুখ দেখে চলেছি একই জলে... হাওয়ায়, আলোয় আর একই অন্ধকারের ভয়ের বারান্দাতে... রহস্যের হাজার হাজার দরজার ও'পারে..! কিন্তু কোত্থাও তাকে খুঁজেই পাচ্ছি না! স্বর্গবাস তার জন্য নয়। আমার জন্যেও না! ও! সত্যধনু! "
~ সত্যধনু! কৃতবর্মার সেই ভাইটি! যে নাকি গোলেমালে কৃষ্ণের হাতে মারা পড়িয়াছিল! এই মহিলা তাহার জন্য কাঁদিতেছেন!কিন্তু ইনিই তো তাহার মৃত্যুর কারণ! ঘোর কলি ! হে!
অন্য রাধা ঃ শহরের সবচেয়ে উঁচু বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়েছিলাম। হাসছিলাম। অল্প অভিমান। কিছু পুরনো না রাখতে পারা প্রতিজ্ঞাবাক্য। ঠিক পরের মুহূর্তে, পেছন থেকে ঠেলে দিলে.... প্রচন্ড শব্দে নীচে পড়লাম! রাস্তার লোকজন ফিরে তাকালো! পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স এলো... তুমিও সুযোগ পেলে, নীচে নেমে আসার... তোমার অ্যাপার্টমেন্ট এর লক খুললে, পড়ার টেবিলের কাছে গেলে.... পাশেই, কফি বানানোর জায়গা৷ তোমার প্রিয় কফি বীন গুঁড়িয়ে, কফি বানালে, তুমি! এরপর চশমা খুঁজবে, তোমার নিজের আরাম চেয়ারটা! আর খানিক পড়ে, তাড়াহুড়োয় ফেলে যাওয়া বইটা'তে আবার মনঃসংযোগ.... খেয়াল করো নি, আমি, তোমার পেছনে দাঁড়িয়ে! তোমাকেই লক্ষ্য করছিলাম আর তোমার প্রতিটি ছোট ছোট পদক্ষেপের খেয়াল রাখছিলাম।
না, না! আমার কোনও উঁচু নীচু আবেগই আর বেঁচে নেই....আমি , সুযোগের অপেক্ষায়! কোনও এক সময় আর জায়গার ফাঁকে, যদি আমার সপক্ষে আসার মতো একটা মুহুর্তও লুকিয়ে থাকে!"
~ ওহো !! অতি প্রেমিক আধুনিক কৃষ্ণ! রাধাকে ভাবসম্মিলনের প্রলম্বিত কষ্ট দিতে চাহে না! এক ধাক্কায় গল্প খতম!
সত্যভামা ঃ এদিকে মন দাও, দেখি! মন ছিল আমারও ! বিয়েটা নিজের মতে হয় নি। বাবা সত্রাজিতের বাধ্যবাধকতায়, জ্যাঠা প্রসেনের মৃত্যু - সামন্তক মণি হারানো, এসব গোলমালে আকস্মিকভাবে কৃষ্ণঘরণী.... অজস্র সপত্নী! তবু তো কৃষ্ণের গললগ্না ছিলাম। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধেও.... কিন্তু যে অজানা শূন্যতা গ্রাস করত, যেখান থেকে মুক্তি পাবার উপায় আজো জানিনা ! অপেক্ষার গহ্বর এত কালো, এত গভীর! প্রিয় যে কে.... সে বোধ ঝাপসা হয়ে যেত.... প্রেমিকের সংখ্যা বড্ড বেশি ছিল ! তাদেরই কয়েকজন মিলে সামান্য মণির জন্য বাবাকে মেরে ফেলল! কে যে দোষী আর কে নয়! সবথেকে লাজুক যে, সত্যধন্বা! সেই তো খুনী! প্রেমে মেরে ফেলেছিল আমায় আর সামন্তক মণির জন্য বাবাকে! এত স্মৃতি! আর্দ্রতায় সব ঘন হয়ে আসে! বৃষ্টি নেই! চাঁদও ওঠে না ! দুশ্চিন্তা শুধু প্রহরী হয়ে আছে! ভোলা যায় না!।
দ্বারকার ডুবে যাওয়া! একা শাম্ব'র ছেলেমানুষিতে, প্রধান প্রধান বীরদের সাথে দুধের বাচ্চাগুলোও ! নিজেরা মারামারি করে একসাথে শেষ হয়ে গেল সব। শেষে বলরাম, কৃষ্ণ! উফ! কী সাঙ্ঘাতিক অভিশাপ! মুষল!
সপত্নীরা, অনেকেই, কৃষ্ণের পিছু পিছু -- সহমরণে। আমি পারি নি! জানিই তো না, কে ছিল আমার ইহকালে আর পরকালেই বা কাকে চাই! "
~ সত্যি বলিতে আমার ঘিলু ঘাঁটিয়া বেজায় ঘুম পাইতে লাগিল! এক জীবনে এত জটিলতা কেন যে ! অন্য প্রস্থে,
অন্যতর রাধা ঃ ঘুম ভেঙে গেলে সবারই প্রায় গুচ্ছ গুচ্ছ মিথ্যে দিয়ে দিন শুরু হয়! আর দুধের প্যাকেটের সাথে তরতাজা খবরের কাগজ, সেসব মিথ্যে সাপ্লাই করবে! কিছু ব্রেকিং হেডলাইন থাকবেই থাকবে!
... মানুষকে ঝোলানো হচ্ছে, মারা হচ্ছে, জবাই করে পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে! ক্রমাগত ধর্ষণের মধ্যে টিকে আছে একাংশ... প্রতিটি নৃসংশ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ অজস্র টিভি চ্যানেলের অসংখ্য এপিসোডে... ধাপে ধাপে নির্বিকার প্রচারে.... আমার দিনও তো শুরু হয় মিথ্যেরই প্রস্তুতিতে!
গাদা গাদা মিথ্যের পাহাড় নিজের বন্ধুকে, বসকে, প্রতিবেশিনীকে, অচেনা অজানা বহিরাগতকেও.... কেই বা হৃদয় খুঁড়ে বেদনা দেখাতে চায়! কারই বা ফ্রন্ট পেজের খবর হতে ইচ্ছে হয়! যে কৃষ্ণ গেছে, তার ফেরবার খবর তো কোত্থাও নেই!"
~ আমার খেই হারাইয়া যাইতেছে! এবং একাকিনী.....
সত্যভামা ঃ আমি সত্যভামা। একগুঁয়ে, জেদি, অহঙ্কারী। আমাকে কৃষ্ণের অন্য ১৫৯৯৯ খানা পোষা বেড়ালের সাথে তুলনা করলে ভুল করবে। আমি ভয়ংকর ও সুন্দরতম যোদ্ধা, যখন কৃষ্ণকে অস্ত্র হিসেবে, নিজে হাতে তুলে নিই... শত্রু বিনাসের জন্য। ইন্দ্রপত্নীর দুর্ব্যবহারের প্রতিশোধ নিয়েছি৷ যুদ্ধে ইন্দ্রকে হারিয়ে স্বর্গ থেকে পুরো পারিজাতের গাছই উপড়ে এনে রেখেছি, আমার বাগানে, এই মর্ত্যে।
একমাত্র কৃষ্ণ-সোহাগিনী রুক্মিণীর কাছে আমায় হারতে হয়েছে, বার বার.... ওকেই জিজ্ঞেস করেছিলাম, কোন কৌশলে কৃষ্ণের মন জয় করে সর্বদা। নথ ঘুরিয়ে উত্তর দিয়েছিল, ' আমি তোমার মত যুদ্ধবাজ নই, তাই আমার হার জিতও নেই। আমি জানি, তোমরা সবাই আমার আপনজন, তাই আমায় তোমাদের সাথে মিলেমিশে থাকতে হবে, ব্যস।'
..আমি জানতাম ওর সাথে কোনো দিন পেরে উঠব না! ওর সাথে থাকলে, স্বর্গ ও নরকতুল্য। তারচেয়ে, এই ভাল... এই যে, এদিকে দ্যাখো, আমি সত্যভামা!"
~ রাধা' রা বাক্যসংযোজনে কম যাইতেছেন না....
ইনিও রাধা ঃ একা থাকার অজস্র কারণের প্রথম, আমি নিজেই। মনের মধ্যে লম্বা একটা দেওয়াল... অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে পারি না! অযোগ্য! বেঁচে থাকবার পদ্ধতি থেমে গেলে হয়ত মৃত সময়ের গল্পেরা ঘাড়ে এসে নিঃশ্বাস ফেলে! যেখানে অনন্ত আলোর মত তার'ই মুখ, পরমারাধ্য কৃষ্ণ!
যারা চলে ফিরে বেড়াচ্ছে.... সেই সব হাসি হাসি বা উদ্বিগ্ন মুখেরা৷ , ধীরে অথবা দৌড়ে হারিয়ে যাওয়া সময়গুলোকে দূর থেকে লক্ষ্য করি কিন্তু, তার মধ্যে ঢুকে যেতে একেবারেই ইচ্ছে করে না! বরং, অপেক্ষা। যদি সে একবার ফেরে..... "
~ জানি না কেন, রাধা আমার নিকট সর্বদা, ন্যাকা এবং বোকা বলিয়া প্রতীয়মান হন। ওনাকে আমার কিঞ্চিৎ অপছন্দ। আর এত গুঞ্জন! সুযোগ পাইলে, প্রথমে, ই-এন-টি স্পেশালিষ্ট এর নিকট যাইব!
সত্যভামা ঃ কৃষ্ণ আর আমার মধ্যে সবথেকে রহস্যজনক আড়াল, দূরত্ব্বের। সময়ও দায়ী। আমি অন্য কেউ হয়ে উঠতে পারি নি৷ অন্য মহলে, অন্য আড়ম্বরে, অন্য বশংবদ ঘরণীদের মতো, যারা সহমরণে স্বর্গলাভ করেছে কৃষ্ণের সাথে...
সে ধোঁয়ায়, সে আগুনে আমার দম আটকেছে.... বাস্তব এটা....এই অরণ্য... যেখানে আমি মিশে আছি হাজার হাজার বছর ধরে, ছিন্ন পুরাণের পাতায়, নব্য অনুসন্ধিৎসুর লেখায়.... অসংখ্য গল্প সৃষ্টির সম্ভাবনায়....
কৃষ্ণ... বহুদূরে... অজস্র সময় সারণী পেরিয়ে ... যুগে যুগে নানা উৎসবে, মন্দিরে, আদরিনী রাধার সাথে কোটি কোটি ভক্তের আরাধ্য হয়ে....
আমি বেঁচে থাকার জন্য, সহমৃতাদের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকি নি...কিন্তু সময়ের জটিল রাস্তা বেয়ে অন্য এক ছায়া নেমে আসে, আড়াল দিতে...বানানো সব গল্প - কাব্য - মিথ থেকে আমায় টেনে নিয়ে যেতে অন্য কোনও প্রান্তরে.... সময়ের অন্য পারে .... সত্যধন্বা!"
~ বুঝিয়াছি! বুঝিয়াছি!
যিনি রাধা ঃ তোমরা আমাকে পুজো করে ক্ষান্ত! সকাল সকাল লোকের মুখে মুখে 'রাধে রাধে' শুনতে শুনতে কানের পোকা বেরিয়ে যায়! আর প্রেমের প্রসাদ ভাগ বাটোয়ারা করতে করতে জীবন শেষ!"
~ এইবার আপনারা থামুন, প্লিজ। ইন্টারভ্যাল চাহিতেছি, অন্ততঃ!
সত্যভামা ঃ আমি আর কিছু বলতে চাই না। কিন্তু, সত্য শুনে রাখো.... তোমাদের পূজনীয় কৃষ্ণ! হায়!১৬০০০ রমণীর একজন করে যদিও রাখে নি আমায়, তবু কোনদিন আমার মন বোঝবার চেষ্টা করেন নি। বরং আমার সব আবদার, জেদ মিটিয়ে এক ধরনের দায় সেরেছে, আমারও জোর ছিল, ভালবাসবে না তো তোমার সময়, সামর্থ্য, বিদ্যা, শিরঃপীড়া সব আমার!
অনেক সময়ই আমার চোখের কালি'কে কৃষ্ণ সন্দেহ করেছে! খুঁটিয়ে দেখলে বুঝত, সেতুর মত কালো কালো রেখা আমার চোখের চারপাশ ঘিরে ফেলেছিল যারা প্রতিদিন মৃত স্বপ্নদের সাথে আমার যোগাযোগ করিয়ে দিতে চাইত...হয়ত পালিয়ে যাবার একটা রাস্তা....
কিছুই বোঝেনি সে! গুচ্ছের মৃত অলঙ্কারের মধ্যে ফেলে রেখে নিজে মেতে থেকেছে বাকি বউদের সাথে! যদি জানত, আমার সবথেকে প্রিয় অলঙ্কার আমাদের জিতে আসা যুদ্ধের স্মৃতিরা....যদি, সত্যিই ভালবাসতে পারত, হয়ত সত্যধনু' কে ভুলতে পারতাম!
তুমি বানিয়ে বানিয়ে কোনো কথা লিখবে না। সত্যি লিখো -- সত্যধনুকে খুন করিয়েছি আমি! আর তাকেই অাঁকড়ে ধরব বলে, এই পৃথিবীর অন্ধকার হাতড়ে বেড়াচ্ছি , আজ ও "
~ আহা! যদি কখনো লিখি, তাহাই লিখিব না হয়!
তিনি রাধা ঃ আমি জানিনা, আমি তার কে, বা সে অন্য রমণীর কে! হয়ত কোনও না দেখ রেশমের সুতোয় বাঁধা আছি আমি, সে আর তার অন্য হাজার হাজার প্রেমিকারা....এভাবে যখন থাকতেই হবে, তখন অন্য সৌভাগ্যবতীদের হিংসে করে লাভ কি! এত ঈর্ষা, এত যন্ত্রণা, এত সন্দেহ, এত গোয়েন্দাগিরি! এভাবে নিজেদের মেরে ফেলে কী হয় ! যখন শুধু ভালবাসাতেই বেঁচে থাকা যায়!"
.....
ব্যস। আর কিচ্ছু মনে নাই। ঘোর কাটিলে দেখিলাম, দ্বারকার আশ পাশ হইতে আসুমদ্র হিমাচলে 'জয় শ্রী কৃষ্ণ' নহে 'জয় শ্রী.. ম' এর গর্জন আছড়াইয়া পড়িতেছে!
ঘোর হইতে দ্রুতগতিতে শীঘ্রই আমরা সগৌরবে অতিঘোরে প্রবেশ করিতে চলিতেছি!
[ পুনশ্চ ঃ সত্যভামা রহস্যময়ী নারী। বিদগ্ধতা, ব্যক্তিত্ব, জেদ তাঁহাকে কৃষ্ণের অন্যান্য মহিষী হইতে অন্যতর করিয়া রাখিয়াছিল। বিষ্ণু পুরাণ, হরিবংশ পুরাণ ঘাঁটিয়া দেখিতে পাওয়া যায়, বিবাহের পূর্বে সত্যভামার অসংখ্য অসমবয়সী প্রেমাকাঙ্খী-- তাহাদের মধ্যে প্রবল পরাক্রমশালী মধ্যবয়সী অক্রুর যেমন, তেমন রসকষহীন চরম যুদ্ধবাজ কৃতবর্মা, আবার বাস্তববুদ্ধি রহিত নব্যযুবা সত্যধন্বাও ( সম্পর্কে কৃতবর্মার কনিষ্ঠ ভ্রাতা) । শেষোক্ত জন, ঘটনাক্রমে, প্রেমের বিনিময়ে সত্যভামার প্রবল রোষে পড়িয়া কৃষ্ণের হাতে প্রাণ হারান!
যে কৃষ্ণকে সর্বদা নিকটে পাইতে, যাহার অধিকার লইয়া সত্যভামা সদা যুযুধান.... কৃষ্ণের মৃত্যুর পর তিনি কৃষ্ণমোহ ত্যাগ করিয়া জঙ্গলে আশ্রয় লহেন! সহমরণের স্বর্গ লাভের বাসনা তাঁহার হয় নাই! আশ্চর্য!
কৃষ্ণ ও স্বর্গ স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করিয়া সত্যভামার অকস্মাৎ আরণ্যক হইয়া উঠিবার বাসনা .... এই বেঘোরে পাওয়া সত্যকৃত ডায়ালগ -সমূহের একমাত্র সূত্র......
নিকটে ছিল ঃ মহাভারতের নারী / ধীরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য
মহাভারতের অষ্টাদশী / নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ী ]
সুচিন্তিত মতামত দিন