সায়ন্তন ঠাকুর - মায়াজম

Breaking

২৬ সেপ, ২০১৯

সায়ন্তন ঠাকুর

ভোজবাজি



ণপতি জাদুকরের ঘরে অন্ন নাই। অনেকদিন খেলা দ্যাখানোর ডাক আসেনি, সেই শেষবার চকডাঙার রাজবাড়ির দালানে দেখিয়েছিল বায়ুবন্ধনের কৌশল। তাও হল আজ বহু কাল। শুক্ল পক্ষের নির্মেঘ আকাশ, অষধা নক্ষত্র প্রবেশ করেছে বৃষরাশিতে, নাটমন্দিরে লকলক করে জ্বলছে মশাল। নিশুত রাত্রি, চারপাশে কুয়াশার মতো আঁধার। দর্শক বলতে শুধু আছেন কুমার এবং তার বৃদ্ধপ্রপিতামহ কালীকিঙ্কর, চিকের আড়ালে দোতলার বারান্দা থেকে অপলক চোখে গণপতির দিকে চেয়েছিল আরও একজন। বিধবা প্রিয়বালা দাসী, পাহাড়ি নদীর মতো যৌবনবতী। সে-কথা জাদুকর জানে না, জানার কথাও নয়! তখন শুরু হয়েছে ভোজবাজি, স্তব্ধ হয়ে গেছে বাতাসের গতি। যেন কোনও মুখবন্ধ কৌটোর ভেতর বন্দি করা হয়েছে তাকে। নিষ্কম্প অগ্নিশিখা, সেও নির্বাপিত হবে আর কিছুক্ষণের মধ্যেই। বায়ু অগ্নির মিত্র, তাকে ছেড়ে একমুহূর্তও থাকতে পারে না হব্যবাহ ! বায়ুবন্ধনের খেলা বড় শক্ত, স্বয়ং মহামায়া অপ্রসন্না হন, তাঁর ক্রোধ ধেয়ে আসে জাদুকরের দিকে।

মলিন সংসারের প্রান্তে বসে সে-সব কথাই আজ ভাবছে গণপতি। বর্ষণক্ষান্ত আকাশে অপরাজিতার পাপড়ি বাটা রঙ লেপে দিয়েছে কে যেন! বেশিক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থাকলে চোখে আঠা লেগে যায়। বাতাসের গতি পুব দিক থেকে ঘুরে যাচ্ছে ক্রমশ উত্তরের মহালের দিকে। একফালি জানলা বেয়ে কোন সুদূর হতে কুসুম আলো এসে পড়েছে জাদুকরের মুখে। চাল বাড়ন্ত, আনাজপাতি, সরিষার তেল কিচ্ছু নাই ঘরে। কালীকিঙ্কর দিয়েছিলেন দুটি আশরফি মোহর, তাই ভেঙেই চলেছে এতদিন। এবার জঠরের অতিকায় দৈত্যটিকে কীভাবে সামলাবে জানে না গণপতি। স্ত্রী এবং শিশু পুত্র মুখ চেয়ে বসে আছে তার। একটিও নতুন জামা হয় নাই এবছর শিশুটির। আধো স্বরে সে সারাদিন বলে চলেছে, তাকুরের দসতা হাত,দসতা হাত,দসতা হাত...মাচু কাব মানসো কাব মিত্তি কাব ভাতু কাব...তাকুরের দসতা হাত দসতা হাত!
গতকাল রেলবাজার পার হয়ে ছোটফিঙা বিলের দিকে গেছিল গণপতি। ভাঙা নড়বড়ে সাইকেল চেপে প্রায়ই যায় ওদিকে। কোলাহলমুখর রাস্তা বাড়িঘর দোকানপাট ছাড়িয়ে দুধারে জেগে ওঠে উঁচু নিচু ধানি জমি, দূরে লি লি করে কাঁপছে দিকচক্রবাল রেখা, জংলা গন্ধ ভাসে বাতাসে। ছলছল বিলের পাশে বসে থাকে অনেকক্ষণ, মাথার ওপর আকাশ আর সেখানে লেগে থাকা কাপাস তুলোর মতো মেঘের ছায়া পড়েছে সদা চঞ্চল জলস্রোতে। মাছ চাষ হয়, আঁশটে গন্ধ, দু একটা ডিঙি নাও শান্তভাবে কোথায় যেন চলেছে। এখানে এলেই ঝুঁটিপঞ্চার কথা মনে পড়ে জাদুকরের। খেলার শাকরেদ ছিল, লেগে ছিল কালবন্ধনের কৌশল শেখার জন্য! কিন্তু সে বিদ্যা যে বড় শক্ত, দাস ভাব না থাকলে ছারখার হয়ে যায় জীবন। কতদিন দেখা হয়নি পঞ্চার সঙ্গে। আজকাল নিজের অধীত বিদ্যাও আর তেমন মনে পড়ে না গণপতির। কিছুই ভেসে ওঠে না, নিভে গেছে মন। বুঝতে পারে, ভোজবাজি আসলে একরকমের পালানোর রাস্তা! কী হবে পালিয়ে, মুখোমুখি না হলে আসল খেলা জানবে কেমন করে!
ছোটফিঙা বিলে থইথই করছে পদ্মকুঁড়ি। এসময় পদ্মের খুব চাহিদা, একশো আট’টা কুসুম কেনার জন্য কাড়াকাড়ি পড়ে যায় বাজারে। চড়া দামে বিকোয়। একটি বালক, খালি গায়ে কোমর অবধি জলে নেমে ছিঁড়ে নিচ্ছে ফুল, বেতের ধামাখানি রাখা পারে। হাড় জিরজিরে শরীর, ঢলঢলে হাফ প্যান্ট পরনে, কালিবর্ণ মুখ। শুধু চোখ দুটো কেমন যেন দুধের মতো। গণপতি গলা তুলে জিগ্যেস করে
--এই, ফুল তুলে কোথায় নিয়ে যাবি ?
কোনও উত্তর দেয় না ছেলেটি। শিকারি বাজের মতো পট পট করে ভাঙছে মৃণাল ডাঁটি। আবার জিগ্যেস করে জাদুকর, কী রে, রা দিচ্ছিস না যে!
মুখ না ঘুরিয়েই উত্তর দেয়
--বাচারে নে যাব
--বিক্রি করবি ?
--হু
--কত দাম নিবি একেকটার ?
মুখ ফিরিয়ে এবার গণপতির চোখের দিকে তাকিয়ে শুধোয়
--ক্যানো, তুমি কিনবা ?
--না ,না, এমনি জিগ্যেস করছি
--তিশ টাকা চলিস টাকা
--ওত দাম ? বলিস কী রে!
--হু। পুজোয় লাগে।
--বাড়িতে কে কে আছে তোর ?
--ক্যানো ?
--এমনি! পড়াশোনা করিস না ?
--পরা করলি ভাত দিবা ? পেট চালাবা ?
কী আর বলবে গণপতি। চুপ করে যায়। জল থেকে উঠে এসে ধামায় কুঁড়িগুলো সাজিয়ে রাখছে ছেলেটি। গণপতির দিকে তাকিয়ে নির্বিকার গলায় বলে
--ইসকুল চেরে দেচি!
--কী করিস এখন ?
--ডামপারে নোংরা তুলি।
--কোথা থেকে ?
--ভ্যাট তেকে
--মা-বাপ নেই তোর ?
--আচে।
একটু অবাক হয়েই জিগ্যেস করে গণপতি
--তাহলে ? তুই কাজ করিস কেন, এইটুকু বয়স!
--চেরে দেচে
--তোকে ছেড়ে দিয়েছে ? মানে তাড়িয়ে দিয়েছে ?
--হু
--কেন রে ?
--আরেকজন কে বিয়া করেচে,তাই
--বাবা বিয়ে করে তোকে বের করে দিয়েছে ?
আশ্বিনের বেলা পড়ে আসছে, দূর দেশ থেকে ভেসে ভেসে আসছে মেঘের দল। যেন একদল বালক দিনান্তে সাদা জামা পরে ইস্কুল থেকে বাড়ি ফিরছে। বিলের পাশ দিয়ে চলে গেছে সরু একখানি পথ, তার দুপাশে উঠে দাঁড়িয়েছে ঘন কাশঝোপ। ওইরকমের এক পথ বেয়ে গঙ্গা স্নানে যেত প্রিয়বালার পালকি। লাল আবির গোলা জল গায়ে মেখে কোন ঊর্দ্ধাকাশ থেকে নেমে আসছে আলোর তন্তু। মলিন গলায় ছেলেটি জবাব দেয়
--দুজন বিয়া করেচে। চেরে দেচে।
--তোর নাম কী রে ?
--কাত্তিক
--কাত্তিক কী ?
--যানি না
গণপতি অনেকদিন পর একটু খেলা দ্যাখানোর কথা ভাবে। ওই হতদরিদ্র অনাথ বালকের মুখে হাসি ফুটে উঠলে মহামায়া নিশ্চয় রাগ করবেন না! হেসে কার্ত্তিককে কাছে ডাকেন, বলেন
--তোর একটা পদ্মকুঁড়ি দে তো আমাকে!
--কী করবা ?
--জাদু দেখাব! ফুল থেকে নতুন জামা করে দেব! তোর পুজোর জামা!
একমুখ হেসে ধামা থেকে একটা ফুল তুলে দেয় কার্ত্তিক। ভোজবাজির সম্রাট গণপতির কাছে এ এক অতি তুচ্ছ কৌশল মাত্র! মনোনিবেশ করারও দরকার হয় না, নিঃশ্বাস পড়ার আগেই বদলে দিতে পারে যেকোনও জাগতিক নশ্বর বস্তু। বস্তুবিদ্যার একেবারে প্রথমদিকের পাঠ।
কুসুম হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করে গণপতি। মানসপটে নতুন জামা ভেসে উঠলেই বদলে যাবে পদ্মকুসুম। কিন্তু কিছুই হয় না! কেটে যায় মন্থর পাঁচ মিনিট সাত মিনিট। অধীর বিস্ময়ে চেয়ে আছে কার্ত্তিক। কোথায় কী! অধৈর্য হয়ে হাত থেকে কেড়ে নেয় ফুল, কচি গলায় বলে ওঠে
--বাল পারবা যাদু! টেম নসটো করলা আমার। বাল পারচে যাদু!
ফেরার পথে রেলবাজার গমগম করছে। সন্ধে হয়েছে, কলরবলর বাজার, দোকানে দোকানে হৈ হৈ ভিড়। শেষবেলায় বাজার করে গরীব মানুষেরা, আপিসের কেরানি বোনাস পায়, লোকের বাড়ি বাড়ি কাজ করে বছরে এই একবার হাতে বেশি টাকা আসে, সেসব সামান্য ব্যাঙের পুঁজি নিয়েই মানুষজনের যত আমোদ আহ্লাদ!
স্টেশনের বাইরে ওই যে বড় দোকানটার নাম অন্নপূর্ণা বস্ত্রালয়। সাদা ফরাস পাতা, সেখানে লোকজন জিগ্যেস করে, ভালো মিলের কাপড় আছে ? সব পাওয়া যায়, হলুদ রঙা শান্তিপুরী তাঁত! টেরিকটনের চুড়িদার। বুকে ভালুক আঁকা বাচ্চাদের বাবাস্যুট। পাশেই শ্রীবান্ধব পাদুকালয়, কতরকমের জুতো কাঁচের শোকেসে সাজানো। জরি বসানো হিল, কালো পাম্প শ্যু! কোলাপুরি। নতুন জুতোর মায়াময় ফোস্কার যন্ত্রণাও লেগে আছে দোকানটার গায়ে। আরও একটু এগোলে হোসিয়ারি দোকান, গেঞ্জি সায়া ব্লাউজ!
সাইকেল তুলে রেললাইন পার হচ্ছে গণপতি। জাদুকরের হাতে টাকা নাই। হাজার খানেক টাকা হাতে পেলেই হয়ে যেত পুজোর বাজার, চারটে দিন একটু ভালো মন্দ খাওয়া। কী করবে, মাথা নিচু করে বাড়ি ফিরবে। ঝুঁটিপঞ্চা থাকলে ঠিক জোগাড় করে আনতো। সেবার জানবাজারে কার কাছ থেকে তিন ভরি হার নিয়ে এসেছিল, সেই গহনা বেচে জাদুর বাক্স কিনেছিল গণপতি।
--কাকাবাবু! ও কাকাবাবু!
মেয়েলি গলার স্বর শুনে সম্বিত ফেরে গণপতির। মুখ তুলে দ্যাখে, লক্ষ্মী। কালো মুখখানা কেমন আরও অন্ধকার হয়ে আছে। শহরে কোন একটা প্রসাধনের দোকানে কাজ করে। গণপতি জিগ্যেস করে
--কী হয়েছে রে মা ? মুখটা কেমন শুকনো লাগছে।
আলো আর আনন্দ উৎসবে ভেসে যাওয়া পথে দাঁড়িয়ে কান্না কান্না গলায় লক্ষ্মী বলে
--চুরি হয়ে গেল সব কাকাবাবু
--কী চুরি হল রে ?
--ট্রেনে ফিরছিলাম, আজই বোনাস দিল, কাল থেকে তো ছুটি, দুহাজার টাকা, সব গেল সব গেল
--সে কী কথা, কোথায় রেখেছিলিস টাকা ?
কাঁধের জীর্ণ ব্যাগটা দেখিয়ে বলে
--এই সাইড চেনে।
--তা ওখান থেকে নিল কী করে ?
--ভিড় ছিল আজ খুব, দেখুন না কেমন ব্লেড মেরেছে। দেখুন।
নিপুন হাতে ব্লেড দিয়ে কাটা ব্যাগটার একপাশ। ক্লান্ত স্বরে গণপতি জিগ্যেস করে
--কী হবে এবার ?
--জানি না কাকাবাবু, ভাই বাবা মায়ের জন্য বাজার করব ভেবেছিলাম, কোথায় পাব এবার আমি! কী করব আমি!
চুপ করে থাকে গণপতি। একবার ভাবল, কালবন্ধন কৌশল প্রয়োগ করে ট্রেনে ওই চুরির সময় উপস্থিত হয়ে সাবধান করে দেবে লক্ষ্মীকে, তারপরেই কিছুক্ষণ আগের কথা মনে পড়ল। না, তার নিজের বিদ্যা হারিয়ে গেছে। কিছুই পারে না সে আর এখন। একটু চুপ করে থেকে শান্তভাবে বলল
--বাড়ি চল মা, আমাদের আবার পুজো! চল, বাড়ি চল!
এক প্রৌঢ় মানুষ আর একজন হতশ্রী যুবতি বাড়ি ফিরছে। পাশে পাশে হাঁটছে ভাঙা মলিন সাইকেল,কতদিন হয়ে গেল তাকে কেউ পরিস্কার করেনি, নতুন জামা পরিয়ে দেয়নি ভালবেসে, তবুও নষ্ট হয়ে যেতে পারে কই! তামাদি জাদুকরের ওপর বড় মায়া ওই লোহার যন্ত্রের। লক্ষ্মীরও বিয়ের বয়স পার হয়ে গেছে অনেকদিন, উঁচকপালি কালো গরীব মেয়েকে কেই বা দেবে পীরিত। এগরোলের সার সার দোকান লেগেছে, বড় চাটুর ওপর পেঁয়াজ লঙ্কা ডিম ভাজার চনমনে সুবাসে মাতাল রাস্তা, লক্ষ্মী লোভাতুর চোখ মেলে চেয়ে আছে সেদিকে। ঝুটো গয়নার দোকানে কলকল করছে কিশোরীর দল। গয়না পরতে বড় সাধ হয়, ও সাধ মিটবে চিতায় উঠলে, জানে লক্ষ্মী, তবুও হতভাগার মতো তাকিয়ে থাকে!
পাড়ার মুখে ছোট প্যান্ডেল হয়েছে একখানি, টিউব আলোর মালা পরানো চারপাশে। গণেশদার ফুচকার দোকানেও ম্যালা ভিড়। পুজোর ক’দিন বেশ চলবে রমরম করে, ক’টা পয়সার মুখ দেখবে গণেশ মিদ্যা। লক্ষ্মীকে দেখতে পেয়ে একমুখ হেসে বলে
--আয়, মা, দুটা ফুচকা খেয়ি যা! ইসপেসাল আলু মেকেচি, আয় আয়।
--দোকান সামলাও, পরে আসব গণেশদা
--আচ্চা তাই আসিস, পরেই আসিস,তুই তো ঘরের লোক!
আজ বোধন সাঙ্গ হয়েছে। লক্ষ্মীর দিকে তাকিয়ে গণপতি বলে
--চল, মায়ের মুখখানি দেখে আসি একবার!
তেতো গলায় লক্ষ্মী জবাব দেয়
--কী হবে কাকাবাবু! তিনি আমাদের কথা ভুলে গেছেন!
নিজের মনেই একটু হাসে গণপতি, বিড়বিড় করে বলে
--সে গেলে যাবে, সে গেলে যাবে! কোনও চুক্তি তো ছিল না মনে রাখার! গেলে যাবে,ভুলে! আমরা কী করব!
মফস্বলের গরীব প্যান্ডেল, তেমন জাঁক নাই। একচালার মৃন্ময়ী দেবী,দশভূজা,সাদা শাড়ি অঙ্গে। হাতে উদ্যত ত্রিশূল। সিংহবাহিনী। পীতবর্ণা। পদতলে ক্লান্ত অসুর। দেবীর চোখে কোনও ক্রোধ নাই। দুজনেই প্রণাম করে হাত জড়ো করে। কী চাইল কে জানে, চাওয়ার কি শেষ আছে!
অনেকদূরে চকডাঙা রাজবাড়ির গর্ভগৃহ তখন উজ্জ্বল প্রদীপের আলোয়। অতি বৃদ্ধ কালীকিঙ্কর বসে আছেন একপাশে। সদ্য স্নান শেষ করে উঠে আসছেন রাজপুরোহিত। তিনি যুবক,ভেজা শরীর। তাম্রবর্ণ। সুগঠিত কাঁধ ও বাহু। কাঁধ অবধি সঘন কেশরাজি। সাদা ধুতি। শ্বেত বর্ণের উপবীত। ভেজা পায়ের ছাপ পাথরের সিঁড়ির ওপর ফেলে গর্ভমন্দিরে এসে দাঁড়ালেন। পুরনো,প্রায় ভেঙে পড়া নাটমন্দির। কার্নিশে বট গাছের চারা। থমথমে গর্ভগৃহে তিনশো বছরের পুরনো পাথরের বেদি। বেদির ওপর প্রতিষ্ঠিতা চতুর্ভূজা দেবী প্রতিমা। ঘোর কৃষ্ণবর্ণা, সাপ হাড় কঙ্কাল আর বিছে তাঁর অলঙ্কার। অস্থিচর্মসার শরীর আর ভীষণ বিকট দন্তপাটি, লম্বিত স্তন, মাথায় ধূসর জটার মুকুট। হাতে দীর্ঘ ক্রদ্ধ নখ, ত্রিশূল ধরে আছেন, অপর দুটি হাতের একটিতে সদ্য কর্তিত নৃমুণ্ড, অন্য হাতে রক্তপূর্ণ পানপাত্র। তাঁর কোটরাগত নয়নে ক্রোধবহ্ণি, ওই অগ্নিশিখায় তিনি জগৎ ভষ্মীভূত করেন।
গণপতি আজ বসে আছে জানলার পাশে। হাতে পয়সা নাই বিগতযৌবন জাদুকরের। সমস্ত বিদ্যা হরণ করে নিয়ে গেছে মহাকাল। অলৌকিক ভোজবাজির মতো ধুলায় মিশে গেছে সকল কৌশল। শূন্য চোখে আশ্বিনের উজ্জ্বল আকাশের দিয়ে চেয়ে আছে সে।
বাড়ির উঠানে শিউলি গাছের তলা আলো করে ফুটে আছে অপরূপ কুসুমদল। ঘরে ফেরার বাতাস বইছে ভুবনডাঙায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র