আজ সকালের চায়ের স্বাদটা অন্যদিনের থেকে একদম আলাদা। অবশেষে দীর্ঘ পঁচিশ বছর নিজের ইচ্ছেকে জোর করে দমিয়ে রাখার হয়তো ইতি হবে। বাবা মা বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি বিয়ে দিয়েছিল ঠিকই কিন্ত সুমিতা বিবাহিত জীবনে একদিনও রমেশকে সুখী করতে পারে নি, শুধু সন্তানটুকু ছাড়া। সেও জানত - রমেশও। কোনো পুরুষ শরীর তাকে আকর্ষণ করেইনি কখনো, নিরুপায় ছিল সে। দূরত্ব বাড়তে বাড়তে রমেশ ধরা - ছোঁয়া দূরত্বের বাইরেই চলে গেছে বছর দুই। এখন মূলত একাই বাস। মেয়ে দিল্লীতে পড়াশোনা করে। সপ্তাহ দুয়েক হল অবশ্য এসেছে ছুটিতে।
সুমিতার মনে কিছু দ্বিধা আছে, তেমন কিছু নয় যদিও তবুও আজ বিকেলের পর সেটুকুও রাখবে না, সবটুকুই বলে দেবে তাকে। নিজেকে মেলে ধরবে সম্পূর্ণ খোলা আকাশের মতো - একবার হলেও জীবনের ঘ্রাণ নিয়ে নেবে। ঠিক এই দার্জিলিং চায়ের আজকের স্বাদের মতো।
--------
মিলি আজ বেশিই চঞ্চল। একটু আগে মা এর কাছ থেকে পারমিশন নিয়ে ফেলেছে তার বন্ধুর সাথে দেখা করবার। এখন রোমাঞ্চকর একটা সন্ধ্যের অপেক্ষায়। দুজন দুজনকে দেখেনি এখনো অবধি। শুধুমাত্র কথার ঘোরে আটকে আছে মিলি আর সে। মাস তিনেকের ফেসবুকে পরিচয়। কিন্তু কি যে অসীম টান মিলি অনুভব করেছে এই কদিনে, পড়াশোনা সব সিকেয়। যদিও নিজের নাম আর পরিচয় গোপন করেছে এখোনো অবধি। আসলে ভীতি ছিল তার - সবাইকে তো আর প্রথমে বিশ্বাস করা যায় না। ভার্চুয়াল জগৎ বলে কথা। নামে আর কি এসে যায় ? মিলি হোক বা মল্লিকা, আসলে তো সেইই। টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনে বিকেল পাঁচটায় মিট। তারপর কোথায় যাবে তার ব্যবস্থা সেই করেছে ... এখন শুধু ঘড়ির কাঁটার অপেক্ষায়।
------
বাইরে ভীষণ মেঘ। প্রচন্ড ঝড় উঠবে উঠবে করছে। মেয়ে বেড়িয়ে গেছে অনেকক্ষণ, বাড়ি তো ফাঁকাই। মেয়ের ফিরতে রাত হবে। এই সময় আর না বেড়িয়ে তাকে তো একবার এখানেই ডেকে নিলে হয়। ফোন নং এখনো নেওয়া হয় নি। এই বয়সে সবেতেই একটা দ্বিধা জড়ায় কেমন যেন। ফেসবুকে অন হয় সুমিতা। দেখে সে অন। ম্যাসেজ করে -
- কোথায় আছ ? এই ঝড়ে আর বাইরে দাঁড়িয়ে কাজ নেই। আমি ঠিকানা লিখে দিচ্ছি।
কাছেই একদম। একটা অটো ধরে চলে এসো। মোড়ে নেমেই ডান পাশে সাদা দোতলা বাড়ি। আমি গেটে দাঁড়িয়ে আছি। তোমার অপেক্ষায় রিয়া। ভীষণ ভাবে অপেক্ষায়।
- বেশ ! তুমি ঠিকানা দাও। আসছি। বড় কাঙ্ক্ষিত সন্ধ্যে আমারও। আমার না বলা কথা, আজ সব বলতে চাই তোমায়। কেউ বোঝে নি এতদিন, কোথাও বোঝাতে পারি নি আমি কি চাই, আমার শরীর, মন কি চায়।
- এসো।
ঠিকানা লিখে দেয় সুমিতা। তার পরমুহূর্তেই ফেসবুকে অফফ্ হয়ে যায় রিয়া।
গেটে গিয়ে দাঁড়ায় সুমিতা বেশ কিছুক্ষণ। এতক্ষণ তো সময় লাগার কথা নয়। ঝড় উঠেছে। এবার ঘরে ঢুকতে হবে। বড় অশান্ত লাগে তার। ফেসবুকেও অফফ্ রিয়া।
বেশ কিছুক্ষণ পর কলিংবেল বেজে ওঠে। ছুটে যায় সুমিতা। ওই রিয়া এল তবে। খোলার আগে একবার সাড়া নিয়ে নেয়।
- কে ?
- আমি রিয়া।
দরজা খোলে সুমিতা।
ভীষণ ঝড়। অসম্ভব ধুলো উড়ছে বাইরে, চোখে বালি ঢোকে - ওই আবছা দৃষ্টিতে দেখতে পায় সামনে দাঁড়িয়ে মিলি।
ভীষণ কাঁপছে মিলি, ভিজে গেছে সারা শরীর। ঝড়ের প্রবল আওয়াজ, শঙ্খের আওয়াজ সব সরিয়ে শুনতে পায় সুমিতা, মিলির ক্ষীণ গলা,
- এই বাড়ির ঠিকানাই তো লিখেছিলে ? ম্যাসেঞ্জারে ? তাই না মা ?
সুচিন্তিত মতামত দিন