মানিক সাহা

মায়াজম
0

 



আমার ভেতরে যে বাস করে



আমার ভেতরে যে বাস করে তাকে তুমি চেনো?

রাত মগ্ন হলে সে পাখিদের কথাবার্তা শোনে,
হারিয়ে যাওয়া দ্বীপের গাছগুলি তার কাছে আসে
তাতে মধুময় ফুল -  শৈশবের মতো।

মাঝে মাঝে হাওয়া হয়ে আসে, স্রোত তোলে
বিবিধ তৈজস দিয়ে বানিয়ে নেয় সুরম্য প্রাসাদ।
প্রাচীন সন্ধ্যা থেকে স্পটিফাই গান পালকের ডানা মেলে দেয়।

আমার ভেতরে যে ইঁট-খসা ঘর রাখা আছে
তার মেঝেতে বসে আর একজন ষোলগুটি খেলে। গান গায়। শিকারের 
ছক কেটে রাখে। 

আমার ভেতরে এক শিকারীও চুপ করে থাকে।
তুমি তাকে চেনো? জানো তার করতলে কতখানি রক্তের দাগ?








মায়াবী মলম 


কোথাও বৃষ্টি পড়ছে - 
ভেজা ও ঠান্ডা হাওয়া সে খবর বয়ে নিয়ে আসে।

টুপি পরা রাখালের হাতে খন্ড খন্ড মেঘের তরমুজ
এ-শহর তাকে নিয়ে জলসা করেছে কাল রাতে। আজ
অন্য কোন শহরের সাদা পাখিগুলি তাকে ঠিক ডেকে নিয়ে গেছে।

দূর থেকে 
হাওয়ার গন্ধ চিনে যাকে আমি আহ্বান করেছি
তার চুলে অনেক নদীর দাগ, দাগে দাগে পদ্ম শালুক।
তার মৃত্যু নেই জেনেও তাকে একটি শবযাত্রার গল্প শোনাব
স্থির করেছি।
সেই গল্পের রেশে আঙুলে যে সামান্য মাটি লেগে যাবে
তাকে আমি সারা গা'য় মেখে নিতে চাই।

যে-শহরে কাল সারাদিন বৃষ্টি হয়েছে 
সেই শহরের ভেজা গাছ, ভেজা চোখ, ফুরফুরে দিঘি, অনন্ত স্বপ্নের 
আঁকাবাঁকা পথ পার হয়ে সে যদি সত্যিই আসে,
তাকে আমি মেঘের তরমুজ দেবো
ফালি করে কাটা চাঁদ দেবো গোপন চুমুর ঠিক পরে।

কেউ জানতেও পারবে না -
জ্যোৎস্না জড়ানো এই বৃষ্টির রাত
পৃথিবীর জীবিত ও মৃত সব প্রেমিকার চোখে মায়াবী মলম লাগিয়ে দেবে।






পা রাখার মাটি


এখানে পা রাখার মাটি এত নরম কেন?
বাতাস কেমন দমবন্ধকরা জটিল?
এত নাটকের মধ্যে প্রকৃত সত্য কীভাবে খুঁজে পাবে,
কীভাবে নিজের স্বপ্নকে বাজি ধরবে শিশুদের দল?

ভোর থেকে গল্পের খোঁজে হাটতে হাঁটতে বুড়োর মনে হল
ভুলে যাওয়া মারাত্মক ব্যাধি 
এর কোন ঔষধ নেই, প্রতিকার নেই কেবল নির্মম অবহেলা
ও উদাস-করা হাওয়া আছে।
এখানে কেউ পার্টির লিফ্লেট বিলি করে না
মানুষের প্রিয় রং দিন দিন হয়ে উঠছে অন্ধকার।
এখানে জলের মতো নরম ও পরম স্নেহশীল কোন নদী 
বুকের আঁচল বিছিয়ে রাখেনি। 

এই ধর্মান্ধ গাছ কে কবে রোপণ করেছে? 
এর ছায়া এত বিষাক্ত, এর ফল এত ক্রুর, এর পাতা এত ধারালো
চারদিকে কেবল রক্ত রক্ত রক্ত!

পা রাখার মাটি রক্তে ভিজে নরম হয়ে আছে
বাতাস দমবন্ধকরা জটিল
প্রকৃত সত্যের খোঁজ কেউ করছে না আজকাল
শিশুরাও স্বপ্ন দেখার খেলা ভুলে যেতে বসেছে।

কেবল, একটা গুমোট অন্ধকার আর একটা অন্ধকারকে আড়াল করবে বলে
নিজেকে আলোর থেকে আরো দূরে সরিয়ে নিচ্ছে।


জোছনা বাসর 


একটি বৃষ্টির দিনের নাম রাখি শাওন
একটি রোদের দিনের নাম দিই আলোকপর্ণা
একটি ডাকাবুকো মাঝরাত তোমাদের চাঁদ পেড়ে আনে ---
তাকে গান দিই। সে ঠোঁটে করে মিহি মিহি জোছনা ছড়ায় মাঝরাতে।

গান শিখে সেও বুঝি বেগম আখতার --- 'জোছনা করেছে আড়ি' গাইতেই 
বাড়ি ভেসে যায়
আমাদের কয়েকটি ছায়া শাল সেগুনের বনে হেঁটে হেঁটে
সে-গানের স্পর্শ লাগা নদীটির চরে শুয়ে পড়ে।
আর ঠিক তখনই বাঁশি বাজানো বাতাস চলে আসে
যে গাছগুলি দোতরা বাজায় তাদের আঙুল থেকে অনায়াসে মেঘ ওড়ে ঢেউ এর মতো

এ অবশ্য রাতের কথা। যতদিন যৌবন থাকে ততদিন বাঁশি বাজে।
গানের আঁচল ধরে নৌকা ডুবে যায় সেই মনোরম জোছনার গহীন নদীতে
পাড়ানীর কড়ি নিয়ে মন চলে মাঝি ও মেঘের সাথে
ঘুমের বালিশ থেকে হাজার জোনাকী আলো --- বিবাহ বাসরটিকে 
মায়াবী বাগান করে তোলে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)