ডাইনিতত্ত্ব/ সোনালী মিত্র
কুহেলীদির বর বাড়িতে না থাকলেই এসব ঘটনাগুলো ঘটে।কেন যে ঘটে!এই যেমন,রাতবিরেতে ভেসে আসে ঝিম ঝিম কুন্তলীনের খুশবু।বাড়ির পর্যাপ্ত আঙিনা ঘেঁষে, লক্ষ্মীপুকুরের ঠিক দক্ষিণপাড়ে জ্যোছনায় গা ভিজিয়ে হুরি পরিরা ডানা মেলে বসেন সন্ধ্যা ঘনালেই।এ সমস্ত বাড়ির ঝি-চাকরেরা কত্তবার যে দেখেছে!আর ঠিক তখনই নাকি কুহেলী দি টিকটিকির মতো দেওয়াল বেয়ে নামতে থাকেন জিভের চুকচুক শব্দ তুলে।বাতাসে হু হু করে ছড়িয়ে যায় মিঠে খই।পুরুষ মানুষের কলিজা খুবলে খায় এই ডায়নিতত্ত্ব লেগে থাকে গর্ভকেশরের মায়ায় ।সর্বোপরি এই সময় পাগলাটে উৎপাতে কুহেলী দির ভুতে পাওয়া ব্যামো ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।অযথা ঝি-চাকরের মুখে ছুঁড়ে দেন ভাতের থালা।কাকচক্ষু মধ্যে যেন গোঁগাতে থাকেন তীব্র জ্বালায়।
অথচ,মাসের এক পক্ষকাল শাঁখা-পলার মধ্যে জড়িয়ে থাকেন রাঙালজ্জায়।পরিপাটি কুহেলী দির গেরেস্থ্য চাবির গোছা ঝুলে থাকে সাম্রাজ্ঞী হয়ে।চুলের খোঁপা,খিড়কির পর্দা,ফুলদানীর সুগন্ধী,পানের তক্তি কোনটাই নরচড় হয় না এতটুকুন। বাকি পনেরটি দিন তার মশামাছির সংসার।অবিন্ন্যস্ত বিছানায় গড়িয়ে যায় প্রহর ও প্রহর। শিকারের অছিলায় রোগসোহাগে বুক ভিজিয়ে আস্ত দুপুর গিলে চুল শোকাতে আসেন তিনি পড়ন্ত রোদে।আচারের বয়মের মধ্যে উত্তাপ শুষে নেওয়ার ক্ষমতাকে গ্রাস করতে করতে কুহেলী এগিয়ে যায় ছাদের কিনারে।আত্মহত্যা বাতিকের দীর্ঘ হয় বাঁজা তকমা।কুহেলীদির বর বাড়ি না থাকলেই আত্মহত্যা শব্দগুলো ঘুরেফিরে কেঁদে ওঠে।পরনের শাড়ি খুলে ছাদ লাগোয়া কৃষ্ণচূড়া গাছটিতে মেলে দিতে চায় তার ডানা।
আঁচল কি কেবল খসে পড়ার জন্যই!কুহেলী দি, ছম ছম নুপুরের শব্দে নাভিজোয়ার ছড়িয়ে যায় আমার যুবক থিসিসের খাতায়। বিশুদ্ধ গর্ভফুলে ফল ধরানোর বিদ্যা ঝুলে থাকে আমার পুরুষগাছে। আমার জানলার ঈশারায় তুমি বোঝ না কুহেলীদি!তোমার অপুরুষ স্বামীর প্রথম পক্ষও বোঝেনি সে দিন।কৃষ্ণচূড়ায় আগুন লাগিয়ে রঙিন শাড়ি হয়ে উড়তে থাকে তোমাদের শাড়িবেলা।
ডাইনিতত্ত্ব - সোনালী মিত্র
অক্টোবর ০১, ২০২২
0
Tags
সুচিন্তিত মতামত দিন