আর ভালো লাগছে
না। এবার সূর্য অস্ত যাক।অন্ধকারে বীভৎসতা কিছুটা ঢাকা পড়বে। বাসুদেবের শরীর ভেঙে আসছে। দূরে নগর থেকে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা , নারীরা দ্রুত গতিতে আসছে।ভয় ও ঘৃণায় হতচকিত তারা। বাসুদেব সেদিকে তাকিয়ে
দেখলেন।ওকি ও যে দেবী
গান্ধারী।স্বেচ্ছা-অন্ধ মানুষ টির আসে পাশে কোনও সেবাদাসী নেই। একা। বাসুদেব দ্রুত এগিয়ে গেলেন। “আপনি আমার হাত
ধরুন দেবী” ।“কে বাসুদেব” কণ্ঠস্বরে পরম নির্লিপ্তি ঝড়ে পড়ে। “ আমি কি তবে এসে
পড়েছি?... এখানে কি বৃষ্টি
হয়েছে...মাটি এতো সিক্ত”।“ আপনি যুদ্ধক্ষেত্রে দেবী”।গান্ধারী শ্বাস ফেললেন,বীর রক্তে স্নাত কুরুক্ষেত্র।“ও কিসের আওয়াজ?...
কোনও
বন্যপ্রাণী বুঝি”।“ শৃগাল কুকুর
দেবী।রক্ত আর মাংসের গন্ধে এখানে এসেছে। ওরা সদা ক্ষুধার্ত”।সন্তান হারা মা
বুঝলেন তিনি এক বীভৎস সত্যের সন্মুখিন।
একটি ভাঙা রথে গান্ধারী কে বসালেন বাসুদেব । এতবড়ো বিপর্যয় সহ্য করা কঠিন ।যে বস্ত্র খণ্ড দিয়ে তাঁর চোখ বাঁধা আছে সেটি মলিন হয়েছে।দু চোখে এবার করুণাধারা।“ আমি জানতাম বাসুদেব এই হবে... তুমি যেদিন শান্তি প্রস্তাব নিয়ে ফিরে গেলে বাসুদেব সেদিন আমি জানি আর কেউ বাঁচবে না।হায়,আমার অন্ধ রাজা আর কেউ রইল না তার পাশে ।স্নেহ শুধু স্নেহ , নিজের না করতে পারা সব কিছু সন্তানের মধ্যে চেয়েছিল ।তাকে অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে... সারা জীবন ।তাঁর পুত্র যেন পূর্ণ রাজা হয়... পূর্ণ মর্যাদা নিয়ে... ।সন্তানের কোনও দোষ সে দেখত না। উহ কি মারণ স্নেহ।” “কে বলল তিনি একা হলেন... ধর্মরাজ আছেন তিনি করুনাবান”।
“চলো আরও কতটা যেতে হবে” বাসুদেবের হাত ধরে এগোলেন গান্ধারী। পায়ে কোনও একটি মৃতদেহে হোঁচট খেয়ে চমকে উঠলেন। মৃতদেহ খুবলে খাচ্ছে শকুন। বাসুদেব হিংস্র জন্তুদের বিতরণ করছেন ।সামনে দুঃশাসন। ভীমসেন রক্ত পান করেছেন তাঁর।সেই মৃতদেহে পচন ধরেছে।পাশে দুঃশাসনের পত্নী জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছেন। তাঁর দেখার কেউ নেই। গান্ধারীকে জানালেন বাসুদেব। মৃত্যুর বিবরণ আগেই পেয়েছিলেন তিনি। বিবশ শরীরে মাটিতে বসে পড়লেন তিনি। বাসুদেব বিব্রত হয়ে পড়লেন। হস্তিনাপুরের রানী এভাবে বিধ্বস্ত হয়ে আছেন। এতজন দাসীর কেউ নেই। দূরে বেশ কিছু মশাল জ্বলে উঠলো। শোকাহত গান্ধারীর চোখ থেকে অশ্রু বিন্দু বয়ে গালে নেমে আসছে।
“ কি অসীম বিশ্বাস ছিল বড় ভাইয়ের ওপর... বলতো দুর্যোধন শ্রেষ্ঠ নৃপতি হবে। দুর্যোধন যা আদেশ করতো সব পালন করার চেষ্টা করতো। পাঞ্চালীর অপমান হবার পর ...সে রাতে সেই ভয়াবহ রাতে জেগে আছি... ভোরে পিতামহ আর বিদুর এলেন...বললেন সন্তানের মৃত্যুর জন্যে তৈরি হও গান্ধারী। হায় পিতামহ তুমি তো ছিলে । তুমি নিবারণ করোনি ক্যানও।”
একটি মশাল ধারণ করলেন বাসুদেব। দূরে উচ্চকিত কান্নার আওয়াজ। একটি মৃতদেহ ঘিরে অনেক নারী। গান্ধারীর কোনও ভাবান্তর হোল না। বাসুদেব বুঝলেন গান্ধারী আর তাঁর ওপর নির্ভর করে নেই। চোখে বাঁধা বস্ত্রখণ্ড স্খলিত কিন্তু চোখ উনি বন্ধ করে রেখেছেন।খুব ধীর গতিতে যাত্রা শুরু করলেন।দূরে বিশাল দেহ নিয়ে ঘটোৎকচ শায়িত। স্তব্ধ ভীমসেনের পাশে হিরিম্বা শাপশাপান্ত করছে। যুদ্ধে জিততে গেলে অনেক অন্যায় মৃত্যু ঘটাতে হয়। শিশু সন্তান কোলে করে এক বধূ বাজপড়া গাছের মতন স্থাণু ।গান্ধারী গভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলেন “ আমরা কোথায়?” “দ্রোণ এখানে চক্রব্যূহ করেছিলেন।” “ অহ্ অভিমন্যু । সুভদ্রা কোথায় বাসুদেব ?“... জ্ঞান হারিয়েছেন”। হঠাৎ অগ্নুৎপাতের মতো ফেটে পড়লেন গান্ধারী।“আমি জ্ঞান হারাছছি না কেন ? কেন?উহ আমি কেন জীবিত?কেন শ্বাস নিতে পারছি...? এত দগ্ধতা তেও কেন ভস্ম হয়ে যাচ্ছি না।” বিলাপের প্রাবল্যে মৃতদেহ খাদক প্রাণীরাও থমকে গেছে।কাছে অর্জুন ছিলেন।তিনি সরে গেলেন। মারক যুদ্ধে বীরত্ব দেখিয়ে তার আর শক্তি নেই বিলাপ সহ্য করার। বাসুদেব মমতায় হাত রাখলেন গান্ধারীর পিঠে। শীর্ণ হয়েছেন। শরীর শোকের পরিশ্রমে ক্লান্ত।“আমি নারী কেন বাসুদেব। পুরুষ হলে যুদ্ধে মারা যেতাম।কি হীনভাবে বেঁচে থাকা”। বাসুদেব আকাশের দিকে তাকালেন। একরাশ তারা ভরা আকাশ পরিপূর্ণ অন্য দিনের মতোই নির্মল।
দুর্যোধনের দেহ দ্বৈপায়ন হ্রদ থেকে অশ্বথমা আর তার সহচররা নিয়ে এসেছে। অনেক মানুষ।গান্ধারী কে জানালেন বাসুদেব।শক্ত হলেন বৃদ্ধারানী, আভিজাত্য ফিরে এলো।প্রিয়তম পুত্রের রক্তাক্ত শরীরে হাত বোলাতেই কিছু রক্তের দাগ লেগে গ্যাল ।তাঁকে চিনে অনেকেই এগিয়ে এলো সাহায্য করতে।বাসুদেব সরে এলেন। আর তাঁকে দরকার হবে না কৌরবমাতার।
“ বাসুদেব ,তুমি কোথায় আমার হাতটা ধরো।”অবাক হয়ে বাসুদেব আবার ফিরে গেলেন। বৃদ্ধ হলে শরীর ,মন কার ও ওপর নির্ভর করতে চায়। ধীর পদক্ষেপে দুজনে পিতামহ ভীষ্মের শরশয্যা র দিকে চললেন। শোক তাঁর শব্দবদ্ধ হয়েছে।“...অহ দুর্যোধন যুদ্ধে আমি ন্যায়ের জয় হবে বলেছিলাম পুত্র।এভাবে অন্যায় ভাবে তোমাকে আঘাত করা হোল।একি ভীষণ মৃত্যু।”বাসুদেবের অসহ্য হল।“আপনি শোক ধারণ করুন... । আপনি ঋষিদের মতন সত্যদ্রষ্টা...। ন্যায়বান আপনি শান্ত হোন।” “সত্যদ্রষ্টা হ্যাঁ সত্যদ্রষ্টা। আমি সত্য দেখতে পাচ্ছি বাসুদেব।এই বিপুল অপচয় কেন? এই বীভৎস ক্ষতি কেন? কেন এই অভাবনীয় নারকীয়তা?তুমি তো ভগবান। হে ঈশ্বর সত্য কি? এ কেন হতে দিলে ?কেন? কোন সত্য ? কোন মুক্তি? কোন যুক্তি?” যে সব নারীরা দূরে দূরে ছিল তারা সব এগিয়ে এলো ।কান্না মুছে ঘিরে দাঁড়াল দেবী গান্ধারী কে। পঞ্চপাণ্ডব এসে দাঁড়াল বাসুদেবের পেছনে। বাসুদেব স্থির হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছেন ।গান্ধারী শান্ত স্বরে বলছেন। “তোমার অঙ্গুলি হেলনে সব কিছু নিয়ন্ত্রিত। এক বিন্দু জল ঝড়ে পড়ে না,... ঘাস নড়তে পারে না...। আমাকে ধারণ করতে দিলে একশত সন্তান... তাদের স্নেহ দিয়ে, ধৈর্য দিয়ে, অগণিত মুহূর্ত উজাড় করে তৈরি করলাম আমি... কুন্তী সারা জীবন আড়ম্বর হীন কষ্টকর জীবন দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে অপেক্ষা করলো... কি ভয়ানক সমাপন।এত উপেক্ষা তোমার। তুমি স্রষ্টা তাই এত তুচ্ছ এই জীবন গুলো... এই ছোট ছোট সুখ গুলো... সম্পর্ক গুলো।তুমি ঈশ্বর, তুমি নারী নও । তুমি ভীষণ না হলে মাথা নত করবে না কেউ । তাই বুঝি এত মৃত্যুর আয়োজন।আমি এটা মানতে পারছি না, আমি তোমায় ক্ষমা করতে পারছি না। আজ এই বিরাট মৃত্যুযজ্ঞে আমি সব হারিয়ে ফেলা জননী দের হয়ে তোমায় শাপ দিচ্ছি বাসুদেব। তারা যেমন তাদের মৃত্যু সময় সন্তানের স্নেহ অশ্রু না দেখে হীন ভাবে মারা যাবে তেমনি তুমি একা কেবল একা নিজের শেষ সময়ের জন্যে অপেক্ষা করবে।”কাঁদছেন গান্ধারী। শব্দহীন অশ্রুহীন। বাসুদেব হাঁটু গেড়ে বসলেন তাঁর সামনে। “ আমি এই দিনের জন্যে অপেক্ষা করে আছি দেবী। মা আপনি, হৃদয় দিয়ে সৃষ্টি রক্ষা করেন, পালন করেন। আমি এই শাপ মাথায় করে নিলাম।সকল অশ্রুর দায় মা কে দিয়ে ঈশ্বর হয়েছি আমি।আমার প্রণাম গ্রহণ করুন”।
কুরুক্ষেত্র তাকিয়ে দেখল, তারাভরা আকাশ তাকিয়ে দেখল, এক অপূর্ব ভগবান হাঁটু গেড়ে সব উজাড় হয়ে যাওয়া মায়ের সামনে ।এবার আকাশের পূর্ব কোণে আলো দ্যাখা গেল।
একটি ভাঙা রথে গান্ধারী কে বসালেন বাসুদেব । এতবড়ো বিপর্যয় সহ্য করা কঠিন ।যে বস্ত্র খণ্ড দিয়ে তাঁর চোখ বাঁধা আছে সেটি মলিন হয়েছে।দু চোখে এবার করুণাধারা।“ আমি জানতাম বাসুদেব এই হবে... তুমি যেদিন শান্তি প্রস্তাব নিয়ে ফিরে গেলে বাসুদেব সেদিন আমি জানি আর কেউ বাঁচবে না।হায়,আমার অন্ধ রাজা আর কেউ রইল না তার পাশে ।স্নেহ শুধু স্নেহ , নিজের না করতে পারা সব কিছু সন্তানের মধ্যে চেয়েছিল ।তাকে অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়েছে... সারা জীবন ।তাঁর পুত্র যেন পূর্ণ রাজা হয়... পূর্ণ মর্যাদা নিয়ে... ।সন্তানের কোনও দোষ সে দেখত না। উহ কি মারণ স্নেহ।” “কে বলল তিনি একা হলেন... ধর্মরাজ আছেন তিনি করুনাবান”।
“চলো আরও কতটা যেতে হবে” বাসুদেবের হাত ধরে এগোলেন গান্ধারী। পায়ে কোনও একটি মৃতদেহে হোঁচট খেয়ে চমকে উঠলেন। মৃতদেহ খুবলে খাচ্ছে শকুন। বাসুদেব হিংস্র জন্তুদের বিতরণ করছেন ।সামনে দুঃশাসন। ভীমসেন রক্ত পান করেছেন তাঁর।সেই মৃতদেহে পচন ধরেছে।পাশে দুঃশাসনের পত্নী জ্ঞান হারিয়ে পড়ে আছেন। তাঁর দেখার কেউ নেই। গান্ধারীকে জানালেন বাসুদেব। মৃত্যুর বিবরণ আগেই পেয়েছিলেন তিনি। বিবশ শরীরে মাটিতে বসে পড়লেন তিনি। বাসুদেব বিব্রত হয়ে পড়লেন। হস্তিনাপুরের রানী এভাবে বিধ্বস্ত হয়ে আছেন। এতজন দাসীর কেউ নেই। দূরে বেশ কিছু মশাল জ্বলে উঠলো। শোকাহত গান্ধারীর চোখ থেকে অশ্রু বিন্দু বয়ে গালে নেমে আসছে।
“ কি অসীম বিশ্বাস ছিল বড় ভাইয়ের ওপর... বলতো দুর্যোধন শ্রেষ্ঠ নৃপতি হবে। দুর্যোধন যা আদেশ করতো সব পালন করার চেষ্টা করতো। পাঞ্চালীর অপমান হবার পর ...সে রাতে সেই ভয়াবহ রাতে জেগে আছি... ভোরে পিতামহ আর বিদুর এলেন...বললেন সন্তানের মৃত্যুর জন্যে তৈরি হও গান্ধারী। হায় পিতামহ তুমি তো ছিলে । তুমি নিবারণ করোনি ক্যানও।”
একটি মশাল ধারণ করলেন বাসুদেব। দূরে উচ্চকিত কান্নার আওয়াজ। একটি মৃতদেহ ঘিরে অনেক নারী। গান্ধারীর কোনও ভাবান্তর হোল না। বাসুদেব বুঝলেন গান্ধারী আর তাঁর ওপর নির্ভর করে নেই। চোখে বাঁধা বস্ত্রখণ্ড স্খলিত কিন্তু চোখ উনি বন্ধ করে রেখেছেন।খুব ধীর গতিতে যাত্রা শুরু করলেন।দূরে বিশাল দেহ নিয়ে ঘটোৎকচ শায়িত। স্তব্ধ ভীমসেনের পাশে হিরিম্বা শাপশাপান্ত করছে। যুদ্ধে জিততে গেলে অনেক অন্যায় মৃত্যু ঘটাতে হয়। শিশু সন্তান কোলে করে এক বধূ বাজপড়া গাছের মতন স্থাণু ।গান্ধারী গভীর গলায় জিজ্ঞাসা করলেন “ আমরা কোথায়?” “দ্রোণ এখানে চক্রব্যূহ করেছিলেন।” “ অহ্ অভিমন্যু । সুভদ্রা কোথায় বাসুদেব ?“... জ্ঞান হারিয়েছেন”। হঠাৎ অগ্নুৎপাতের মতো ফেটে পড়লেন গান্ধারী।“আমি জ্ঞান হারাছছি না কেন ? কেন?উহ আমি কেন জীবিত?কেন শ্বাস নিতে পারছি...? এত দগ্ধতা তেও কেন ভস্ম হয়ে যাচ্ছি না।” বিলাপের প্রাবল্যে মৃতদেহ খাদক প্রাণীরাও থমকে গেছে।কাছে অর্জুন ছিলেন।তিনি সরে গেলেন। মারক যুদ্ধে বীরত্ব দেখিয়ে তার আর শক্তি নেই বিলাপ সহ্য করার। বাসুদেব মমতায় হাত রাখলেন গান্ধারীর পিঠে। শীর্ণ হয়েছেন। শরীর শোকের পরিশ্রমে ক্লান্ত।“আমি নারী কেন বাসুদেব। পুরুষ হলে যুদ্ধে মারা যেতাম।কি হীনভাবে বেঁচে থাকা”। বাসুদেব আকাশের দিকে তাকালেন। একরাশ তারা ভরা আকাশ পরিপূর্ণ অন্য দিনের মতোই নির্মল।
দুর্যোধনের দেহ দ্বৈপায়ন হ্রদ থেকে অশ্বথমা আর তার সহচররা নিয়ে এসেছে। অনেক মানুষ।গান্ধারী কে জানালেন বাসুদেব।শক্ত হলেন বৃদ্ধারানী, আভিজাত্য ফিরে এলো।প্রিয়তম পুত্রের রক্তাক্ত শরীরে হাত বোলাতেই কিছু রক্তের দাগ লেগে গ্যাল ।তাঁকে চিনে অনেকেই এগিয়ে এলো সাহায্য করতে।বাসুদেব সরে এলেন। আর তাঁকে দরকার হবে না কৌরবমাতার।
“ বাসুদেব ,তুমি কোথায় আমার হাতটা ধরো।”অবাক হয়ে বাসুদেব আবার ফিরে গেলেন। বৃদ্ধ হলে শরীর ,মন কার ও ওপর নির্ভর করতে চায়। ধীর পদক্ষেপে দুজনে পিতামহ ভীষ্মের শরশয্যা র দিকে চললেন। শোক তাঁর শব্দবদ্ধ হয়েছে।“...অহ দুর্যোধন যুদ্ধে আমি ন্যায়ের জয় হবে বলেছিলাম পুত্র।এভাবে অন্যায় ভাবে তোমাকে আঘাত করা হোল।একি ভীষণ মৃত্যু।”বাসুদেবের অসহ্য হল।“আপনি শোক ধারণ করুন... । আপনি ঋষিদের মতন সত্যদ্রষ্টা...। ন্যায়বান আপনি শান্ত হোন।” “সত্যদ্রষ্টা হ্যাঁ সত্যদ্রষ্টা। আমি সত্য দেখতে পাচ্ছি বাসুদেব।এই বিপুল অপচয় কেন? এই বীভৎস ক্ষতি কেন? কেন এই অভাবনীয় নারকীয়তা?তুমি তো ভগবান। হে ঈশ্বর সত্য কি? এ কেন হতে দিলে ?কেন? কোন সত্য ? কোন মুক্তি? কোন যুক্তি?” যে সব নারীরা দূরে দূরে ছিল তারা সব এগিয়ে এলো ।কান্না মুছে ঘিরে দাঁড়াল দেবী গান্ধারী কে। পঞ্চপাণ্ডব এসে দাঁড়াল বাসুদেবের পেছনে। বাসুদেব স্থির হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছেন ।গান্ধারী শান্ত স্বরে বলছেন। “তোমার অঙ্গুলি হেলনে সব কিছু নিয়ন্ত্রিত। এক বিন্দু জল ঝড়ে পড়ে না,... ঘাস নড়তে পারে না...। আমাকে ধারণ করতে দিলে একশত সন্তান... তাদের স্নেহ দিয়ে, ধৈর্য দিয়ে, অগণিত মুহূর্ত উজাড় করে তৈরি করলাম আমি... কুন্তী সারা জীবন আড়ম্বর হীন কষ্টকর জীবন দিয়ে ভালোবাসা দিয়ে অপেক্ষা করলো... কি ভয়ানক সমাপন।এত উপেক্ষা তোমার। তুমি স্রষ্টা তাই এত তুচ্ছ এই জীবন গুলো... এই ছোট ছোট সুখ গুলো... সম্পর্ক গুলো।তুমি ঈশ্বর, তুমি নারী নও । তুমি ভীষণ না হলে মাথা নত করবে না কেউ । তাই বুঝি এত মৃত্যুর আয়োজন।আমি এটা মানতে পারছি না, আমি তোমায় ক্ষমা করতে পারছি না। আজ এই বিরাট মৃত্যুযজ্ঞে আমি সব হারিয়ে ফেলা জননী দের হয়ে তোমায় শাপ দিচ্ছি বাসুদেব। তারা যেমন তাদের মৃত্যু সময় সন্তানের স্নেহ অশ্রু না দেখে হীন ভাবে মারা যাবে তেমনি তুমি একা কেবল একা নিজের শেষ সময়ের জন্যে অপেক্ষা করবে।”কাঁদছেন গান্ধারী। শব্দহীন অশ্রুহীন। বাসুদেব হাঁটু গেড়ে বসলেন তাঁর সামনে। “ আমি এই দিনের জন্যে অপেক্ষা করে আছি দেবী। মা আপনি, হৃদয় দিয়ে সৃষ্টি রক্ষা করেন, পালন করেন। আমি এই শাপ মাথায় করে নিলাম।সকল অশ্রুর দায় মা কে দিয়ে ঈশ্বর হয়েছি আমি।আমার প্রণাম গ্রহণ করুন”।
কুরুক্ষেত্র তাকিয়ে দেখল, তারাভরা আকাশ তাকিয়ে দেখল, এক অপূর্ব ভগবান হাঁটু গেড়ে সব উজাড় হয়ে যাওয়া মায়ের সামনে ।এবার আকাশের পূর্ব কোণে আলো দ্যাখা গেল।
নিবেদিতা আমাদের সবার সামনে প্রাণহীণ কুরুক্ষেত্রের একটুকরো বিশদ ও নিখুতভাবে প্রাণময় করে ধরেছেন। ধন্যবাদ লেখিকা।
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ...আর ভালো লেখার চেষ্টা করব
মুছুনঅসাধারণ, অসম্ভব সুন্দর একটা লেখা পড়লাম ভীষণ ভালো লাগলো।
উত্তরমুছুনঅনেক ধন্যবাদ... উৎসাহিত হলাম।
মুছুনdurdanto durdanto likhecho didi... Songhohe rakhlam
উত্তরমুছুনjak tui porechis....
মুছুন