.অরূপ সরকার - মায়াজম

Breaking

১৮ মার্চ, ২০১৬

.অরূপ সরকার

                                                   গল্প নয়










গোল কিপার হিসেবে কাঁকড়ে ডাইভ দিয়ে বল ধরতে পারার জন্য অঞ্জনকে সবাই একডাকে চিনত পুরো টাউনশিপে ! তখন আমাদের বারো বছর বয়েস ! কলকাতায় পড়াশুনোর পাট চুকিয়ে তৃতীয় চাকরীর দৌলতে যখন আবার জনস্থানে ফেরা, তখন প্রাপ্ত বয়স্ক অঞ্জনকে আবিষ্কার করলাম ফটোগ্রাফার আর ট্রেকিং এক্সপার্ট হিসেবে ! আড্ডায় অঞ্জন খুব জমাটি আকর্ষণ তার বহু ভ্রমণের সুবাদে ! একটু ছোটখাটো পেটাই করা চেহারা, পকেটে পয়সা যতক্ষণ আছে, খরচা করতে দুবার ভাবা নেই, শেষ হয়ে গেলেও কোন তাপ উত্তাপ নেই ! সময়ের কোনও হিসেব নেই ! একটা অদ্ভুত নির্বিকার দিক ছিল অঞ্জনের ব্যক্তিত্বে ! যখন যে কাজটা মাথায় চাপত তার শেষ না দেখে ছাড়ত না ! খাওয়া, ঘুম, অন্য সব কাজ রসাতলে গেলেও না ! মাল খেতে খুব ভালবাসত অঞ্জন ! ইংলিশ নয়, বাংলা মাল ! আমরা প্রায়ই ওকে সম্বোধন করতাম " শালা ওসিডি" - ব'লে !

হঠাৎ হঠাৎ উদয় হওয়া, আবার দীর্ঘদিন হারিয়ে যাওয়া রেওয়াজ ছিল ওর ! একদিন সাত সকালে হাজির হল অমাদের বাড়িতে ! একটু হতচকিত ! আমি হাবভাব দেখে জিজ্ঞেস করলাম - "কি হয়েছে রে ?" ও বলল "শালা, এতদিন পাহাড়ে যাচ্ছি, এবারের মত গান্ডু হইনি কখনও ! আমি জিজ্ঞেস করলাম,-"কেন ? কি হল ?" বলল,-" এবার গঙ্গা সাগরে একটা সাধুর সাথে আলাপ হয়েছিল, বুঝলি ! মালটার কাছে খুব ভাল পুরিয়া ছিল ! গাঁজার গন্ধ আমি তো ভুল চিনব না গুরু ! গন্ধ পেয়েই ভিড়ে গেছি ! আর তারপরে কি গল্প ! দুদিন গঙ্গাসাগরে ওর ঠেকেই থেকে গেলাম ! তারপর জম্মু তাওয়াইতে একসাথে ফিরলামও ! মালটার একটু প্রেমেই পড়ে গেছিলাম বুঝলি, এক একটা টানে বলে বলে কলকে ফাটিয়ে দিচ্ছিল ! আসার সময়ে বলেছি মার্চ মাসে আমরা চার বন্ধু গোমুখ যাচ্ছি ! তখন কিন্তু তোমার সাথে দেখা হচ্ছেই মামা ! কোনও নাকাড়া-বাজি চলবে না ! তোমার পাহাড়ের ঠেক টা কোথায় বলে দেবে, আমরা শালা স্বর্গ হোক বা পাতাল, ঠিক খুঁজে বের করে নেব !

তো, মালটা প্রথমে রাজি হচ্ছিল না, বুঝলি ! আমিও শালা ছাড়ার বান্দা তো নয় ! লাস্টে ঠিক ফিট করেছি ! বুঝে নিলাম কি ভাবে যাব, শুধু বারবার বলে দিল পাহাড়ি গাইড নিতেই হবে ! আমাদের গাইড নিতে তো প্রবলেম নেই ! আগেও অনেকবার নিয়েছি !

যাই হোক, তার পরে চার বন্ধু মিলে যখন ওর ঠেকে পৌঁছলাম টানা সাত ঘণ্টা হেঁটে তখন আমাদের জিভ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম ! বন্ধুগুলো সারা রাস্তা খুব খিস্তি করেছে আমাকে ! একটা অত উঁচু পাহাড়ের প্রায় মাথায় ! আর বিকাল শেষ হয়ে আসতেই এমন ঠাণ্ডা হাওয়া পুরো ফাটিয়ে দিচ্ছে পেছন !

মালটার কাছে পৌছাতেই আমাদের হাতে সরু সরু একটা করে শিকড় দিয়ে বলল,-"চিবায়ে খেয়ে নে !" আর খেতেই ঠাণ্ডা মাণ্ডা সব গায়েব ! তারপর কোথা থেকে চার গ্লাস ভর্তি গরম চা নিয়ে এলো ! সেটা খেতেই ক্লান্তি টান্তি সব গায়েব ! বন্ধুগুলোও শালা মজা পেয়ে গেছে এবার ! শুরু হয়ে গেল গাঁজায় দম আর চুটিয়ে গপ্পো ! মালটাকে যতবার বলি " কিন্তু, যাই বল, তুমি গুরু একটা রস থেকে বঞ্চিত, সেটা হোল নারী রস ! সে রস পাতলা হলে কি হবে, হেব্বি মিষ্টি ! তোমার কিন্তু একবার অন্তত: টেস্ট করা উচিত ! না হলে আর কি করলে, বাল, একটা গোটা জীবনে ?" তা, মালটা খালি হাসে ! তবে কথা যেগুলো বলছিল সেখানে কিন্তু সলিড যুক্তি ! তুই একটা কথাও কাটতে পারবি না মামা !" আমি বললাম "বেশ ! তারপর কি হোল বল !" ও আবার বলতে শুরু করল,-" থাকলাম তো দুদিনের জায়গায় চারদিন ! এত ফুর্তি, শালা কেউই যেতে চাইছে না ! আর মালটা চার-বেলা সমানে গরম গরম খাবার আর টাইমে টাইমে চা ঠিক সাপ্লাই দিয়ে গেল ! নিরামিষ যদিও ! কিন্তু হেব্বি টেস্ট ! কোথায় বানাচ্ছে আর কোথাই বা আনাজপাতি পাচ্ছে সে আর শালা উদ্ধার করা গেল না !

পাঁচ দিনের দিন সকালে চা নাস্তা করে যখন ফিরব তখন আমার খেয়াল হল, এই চার দিনে একটাও ছবি তোলা হয় নি ! কুঁড়েটার সামনে দুটো পাথরের উপর একটা কাঠের গুঁড়ি রাখা ছিল ! সবাইকে বসতে বললাম ওখানে, সাধুটাকেও বললাম ! ও শালা কিছুতেই ছবি তুলবে না ! আমি বললাম ! শালা, এটা আবার কি নকশা শুরু করলে ? গঙ্গা সাগরে এত ছবি তুললাম, কই তখন তো এই ঢ্যামনামো টা ছিল না ! এখন আবার চুলকাচ্ছে কোথায় ? মালটা খালি বলে,-"ছবি তুলে লাভ নেই !"

আমিও শালা, বাপের বাপ ! রেগে গেলে আর কোনও কিছু মানা নেই ! বললাম,-"শোনো, ভালো ভাবে বলছি বসো, না শুনলে এবার এক ধাক্কা দিয়ে পাহাড় থেকে সোজা নিচে ফেলে দিয়ে চলে যাব !" মালটা এবার শুনলো কথা ! দুই বন্ধু সরে গিয়ে তৃতীয় বন্ধুর মাঝে জায়গা করে দিয়েছিল ! মালটা কেমন গুটিসুটি মেরে, গা বাঁচিয়ে বসল মাঝখানে ! ছবি তোলা হল ! বন্ধু তিনটে আস্তে আস্তে নাতে শুরু করল ! আমি একটু জড়াতে গেলাম, মালটা তিন পা পিছিয়ে গেল, আমি আবার এগিয়ে গেলাম, ও আবার পিছিয়ে গেল ! বুঝলাম, অভিমান হয়েছে, গালাগালি করেছি, ফেলে দেব বলেছি বলে, বললাম,-"একটা সত্যি কথা বলবে ? নাকাড়া-বাজি টা করছিলে কেন ?" বলল,-" ছবি উঠবে না বলে !" জিজ্ঞেস করলাম,-"কেন ?" বলল,_"আমার শরীরটা এখান থেকে আরও চারটে পাহাড় পরে আছে !" আমার ঐ কথা শুনে মাথা আবার গরম হয়ে গেল ! বললাম,-" তাহলে এই বালটা তোমার কি ?" বলতে বলতে আমি ওর পেটে হাত চালিয়েছি ! হাতটা পেটর মধ্যে দিয়ে ঢুকে এমন ঘুরে বেরিয়ে গেল, যেন ওখানে কিছুই নেই অথবা পেটটা হাওয়া দিয়ে তৈরি



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র