কাজী মেহেদী হাসান - মায়াজম

Breaking

১৮ মার্চ, ২০১৬

কাজী মেহেদী হাসান

                                    পুরুষ













যুগল পাহাড়ে গেলে পুরুষেরা সোমত্ত হয়ে ওঠে
ত্রিকোণা বেদীতে বড্ড ধূর্ত সাপের ভিড়।
হেঁটে গেলে ব্রাহ্মনিতম্বিনী— পৃথিবীকে গণিকালয় মনে হয়

এই কথা বোললেন সাধক পুরুষ, বোললেন—
এইরূপে প্রেম আসে, করে সিদ্ধি লাভ; পুরুষ শরীর।

যারা মহাকাল লিখে রাখে, লিখে হেলেনের ত্রুটি
( আড়ালে জ্যামিতিক শরীর )
শুনেছি তারাই বলে, সঙ্গমে নারীরা অধিক সুন্দরী
বলে- যুদ্ধ ধ্বংসাত্মক, আরও বেশি নারীর শরীর!

এই বোলে চিরকাল পুরুষেরা উঠে আসে পথের ওপারে
দ্যাখে দাঁড়িয়ে প্রেমিকা এক—
মাংসের গন্ধহীন,
পৃথিবীর মতো করে অপেক্ষা লিখেছে রেখে ভেতর-বাহির।

২.

চারু মিত্র

গল্পটা বরং শুরু করা যেতো এভাবে—
এই বোলে কাগজটা দখল কোরে নেয় চারু
পুরোনাম চারু মিত্র—
হেমন্তের রোদ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।

'চওড়া ঠোঁটে আপনাকে বড্ড বেমানান লাগে বুঝলেন
ওতে আমার ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন থাকে
সে অবশ্যি আপনি বুঝবেন না'

পাটীগণিতের ফাঁকে আমি ক্যালকুলাস বোঝার সাহস করি না
চেপে যাই—
চারু'দের বাসায় আমার টিউশনির বয়স তিন
চারু'র উনিশ
আর আমার?
ছাব্বিশ নাকি ছত্রিশ?
সময় করে হিসেব করা যাবে একদিন।

সাইকেলে কোরে আসতে হতো আমাকে
দু'কিলোমিটার মাত্র—
অথচ দু'পা দূরত্বে কখনই দ্যাখা হয়নি তাঁর চোখ
জানা হয়নি কোনো শীতে সেখানে আষাঢ়-শ্রাবণ আসে কি না!

বহুদিন অলক্ষ্যে আবৃত্তি শুনেছি
'আবার বছর কুড়ি পরে......'
চারু 'জীবনানন্দ'কে ভালোবাসতো
আর আমি চারু'কে।
( সেসব বলা হয়নি কোনদিন )

সে ফ্রক ছেড়ে সালোয়ার কামিজ পড়তে শুরু করে—
আমার সাইকেলটা দিন দিন পুরনো হতে থাকে;
ব্যক্তিগত ডায়েরীতে সে কারও নাম লিখতে শুরু করে—
আমি মায়ের জন্য অ্যাসপিরিন আর ইনসুলিন লিখে রাখি;
চারু'র বারান্দায় এক দুর্লভ অর্কিড প্রার্থনা করে আকাশ।
আমার হাতের পরিসীমা সামান্য—
লোকে জেনে ফেললে আমার টিউশনি চলে যাবে
মায়ের ঔষধ চলে যাবে
সাইকেলটা অকেজো হয়ে পড়বে
আমার হাসি-কান্না, আকাশ স-ব চলে যাবে।

তাকে বলা হয় না—
তাকে বলা হয় না তাঁর অসাবধাতাবশত ওড়না সরে গেলে
আমি অপ্রস্তুত হয়ে পড়ি
বলা হয় না—
আমার বিছানায় শীতকাল চলছে গত এক যুগ ধরে
বলা হয় নি—
বহুদিন গোলাপ হাতে এনে দরজার বাইরে রেখে এসেছি।

আচমকা টিউশনিটা ছেঁড়ে দিতে হলো
চারু মিত্রের সাথে দ্যাখা নেই প্রায় কুড়ি বছর
আরও কুড়ি বছর কেটে যাবে শাদা কাগজটা পৌঁছতে—
'চারু মিত্র' কবিতাটি শেষ করা হয় না।

ঘরোয়া আড্ডায় বন্ধুরা তাকে নিয়ে কথা বলে
বলে কবিতার কথা,
আমি বিব্রত হই না
কিছু কবিতা অশেষ থাকুক।

কবিতাটা শেষ করা হলো না,
এই দুঃখ নিয়ে চারু মিত্র'কে ডেকে আনি ধীরে
রাতের বয়স বাড়লে জীবনানন্দ আবৃত্তি করি
আবৃত্তি করি চারু মিত্রকে—

“সোনালি সোনালি চিল- শিশির শিকার করে নিয়ে গেছে তারে—
আবার বছর কুড়ি পরে......সেই কুয়াশায় পাই যদি হঠাৎ তোমারে!”

৩.

ডোম

লোকটার ঘরে খবরের কাগজ আসা বারণ
এতে ব্যস্ততা বাড়ে—
নিজ স্ত্রীকে চুমু খেলে রক্ত লেগে থাকে ঠোঁটে, চোখে।

লোকটা চোখে কবর নিয়ে হাঁটে
উত্তর থেকে দক্ষিণে
দক্ষিণ থেকে উত্তরে
এতসব গোলাপ গন্ধ—
সব লাশকাটা ঘরের?

এই বোলে লোকটা ঢুকে পড়ে মৃতের চামড়ায়
নাকি সক্রেটিস?

৪.

সুভা একটি কবিতার নাম


সুন্দরী মেয়েদের নিজস্ব মহাকর্ষ ক্ষমতা বিদ্যমান

গভীর শীতকাল এলে যেমন শরীরের উপস্থিতি গৌণ হয়ে ওঠে
সুভা, আমি আপনার ব্যক্তিগত সন্ধ্যা হতে চেয়েছিলাম।
যদি দ্যাখা হয়, যদি হৃদয়ে সমুদ্র নিয়ে আসি—আপনি ফিরিয়ে দেবেন?

মানুষের নিজস্ব দর্শন নিয়ে আমরা হেঁটে গেছি একা
যদিও ঘাস-সবুজে লেগে থাকে একই পদচিহ্ন
সূর্যের বয়ঃসন্ধিকাল এলে রক্তজবা শাড়িতে আপনি উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন আরও
টং দোকান থেকে টিএসসির মোড়
হেটে গেলেই গোলাপের মিছিল
রোদ-চশমা খুলবেন না—প্রেমে পড়ে যাবো!

সিগারেটের উদ্দেশ্যহীন ধোঁয়া জানে না তার মৃত্যুরহস্য
আমিও পথ চিনি না তাই, আপনিই আমার শেষ গন্তব্য;
যুদ্ধের ভয়াবহতা আমি জানি
যদিও লোকে বলে ভালোবাসা সেই শাদা পাখির পালক
যে মৃত্যুকে সহজ করে তোলে!

আপনি শুনে থাকবেন নিশ্চয়ই, গত শীতে মরে গিয়েছিল যে প্রেমিক
সে এখন শুধুই কবি
স্তব করেন মানুষের এবং আপনার।
যারা প্রার্থনা করেন প্রেম
আমি তাদের মতো নেই
কেবল আপনাকে দেখলেই আমি ভেঙে পড়ি পাঁচ পয়সার মোমের মতো
যমুনার ভঙ্গুর মাটির মতো
ওহ প্রিয়, আমি ঘৃণা করি চলে যেতে!

আমাকে জড়িয়ে ধরুন, যেন দূরত্ব বলে কিছু ছিল না
আমাকে কথা দিন, যেন নদীরা চিরকাল দ্যাখা পায় সমুদ্রের
আমাকে ভালোবাসুন এভাবে, যেন মন্দাক্রান্তা পৃথিবীতে ক্ষুধা ছিল না কোনদিন!

কিছুদূর হাঁটলেই স্বর্গের ট্রেন
মূলত আমার কবিতা।
আপনি কবিতা ভালোবাসেন?
মানুষকে?
আপনাকে নিয়ে একটা দীর্ঘকবিতা আছে আমার
আছে দীর্ঘভ্রমণ।
বহুকাল ধরে একই পথে আমরা শুনিয়েছি জীবনের গান
মৃত্যুর মতো মহৎ!

যে বালিকা মরে গেল তার প্রেমিকের হৃদয়ে
অমরত্বের কৌশল তার চেয়ে ভালো আর কে জানে?
যে কবি মরে গেল প্রেমিকাহীন
মেয়েদের প্রকৃত হৃদয় এর বেশি কলঙ্ক পায়নি কোনদিন!

আপনি হাত রাখলেই রাজপথ কেঁপে উঠবে অঘোষিত মানববন্ধনে
আপনি তাকালেই বেলিফুলের তীব্র সুবাস
রক্তে-হৃদয়ে ভয়াবহ ক্যান্সার
দুটো এন্টিসেপটিক চুমু, যেন এতটা সুস্থতা মানুষের নয়।

গুপ্তধনের মতো আপনাকে খুঁড়ে চলেছি যাবতজীবন
আপনার কপাল একটা শহর
চোখ যেন প্রিয় নদী, বয়ে গেছে বুকের সমান্তরাল;
যদিও আমি কবি হয়ে উঠতে পারিনি আজো
যেহেতু আপনি আমার স্বীকৃতি!

আমাদের দ্যাখা হয়নি কোনদিন
এখনও পবিত্র হয়ে ওঠেনি পথ
কেবলই আপনার চুলের অন্ধকার, ক্রমশ গভীর
যেন মহাকাল—

সুভা;
যদি দ্যাখা হয়, যদি হৃদয়ে সমুদ্র নিয়ে আসি— আপনি ফিরিয়ে দেবেন?

৫.

সন্ধ্যার ভুগোল

দুটো খড়ের জামা আর ব্যালকনিতে খসে পড়া নক্ষত্র নিয়ে
জীবিত পাখিদের সংসার। কোকিলের শ্বাসনালী দেখে
একটা হারমোনিকার শখ হয়েছিল সেবার।

তুমি বরং দুটো অর্কিড লাগাতে পারতে?
বিছানায় অনভ্যস্ত শুয়ে বলেছিল সায়ন্তিকা ঘোষাল।
বলেছিল— ওদের দেখে রেখো, অমন সুরেলা জীবন।

সেই থেকে চোখদুটো দেয়ালে টানিয়ে রেখেছি।
তুমি ছেড়ে যাবার পর আরও দুটো বছর।
নজরে রেখেছি হলদেটে অর্কিড;
পাখিদের হাড়ের কঙ্কাল;
হারমোনিকায় বিস্তর ধুলো—

সায়ন্তিকা, কখনও তো বলোনি- তুমি মৃত্যু ভালোবাসো?

1 টি মন্তব্য:

Featured post

সোনালী মিত্র