অশোক মজুমদার - মায়াজম

Breaking

৬ মে, ২০১৬

অশোক মজুমদার

                               ইতরাদি






     এখন দুপুর। শীতকালটা সম্বরণ প্রত্যেকদিন বাঁধান ঠাকুরের থানে বসে। ভাত খাবার পর রোদ পোহানোর দল আছে।নির্দল জটেবুড়ি কোন ঘেঁষে শুয়ে থাকে,সিঁড়ি অবধি রোদ পড়ে,ঠাকুরদালানে রাধাকৃষ্ণের সে রোদ জোটেনা।এ সময়ে পায়রারা চুপচাপ,প্রাণী বলতে জটেবুড়ির খুঁটে বাঁধা গরুটা;আর গোটাকত সিঁড়িতে ঠাই না পাওয়া কুন্ডুলি পাকা কুকুর ফালি রোদে ঘুমোচ্ছে।
 সম্বরণ, স্যাঙাত-পড়শি সমেত বসে বেশ বোঝাচ্ছিল।বাঁশঝাড়ের ফাঁক দিয়ে অধীরখুড়োর ঝোলা পাঞ্জাবিটা দেখে চাপল,আর বিড়বিড় করল ‘ঐ আসছে!হুঃ!
অধীরখুড়ো এসেই খোঁচা দিল, ‘তা,ক’জন জোটালে হে সম্বরণ?’
জোটালে মানে কি হ্যাঁ? জোটালে মানে কি? এই যে নিত্য,শঙ্কর এদের জিজ্ঞেস করে দেখ দিকি,এদের কি আমি জোর করিচি কি!সফিকুল আর শঙ্করের সাথে বেচু ও ঘার নাড়ল ,না;তাদের জোর করেনি সম্বরণ।তারা সেধেসেধেই শুক্কুরবার বেগোপাড়ার চার্চে গেসলো।এবং সক্কলেই আরো বলল যে তারা কেউই পঞ্চাশ টাকা করে পায়নি।
 তবে? তবে গাঁয়ে যা রটেছে তা কি ফালতু? শুক্কুরবার,রবিবার চার্চে গিয়ে প্রার্থনা করলেইপঞ্চাশ করে দিচ্চে!
অধীরখুড়ো হুমম করে একটু রা কাড়ল,কিছুটা তিরিক্ষি চোখ বুলালো সে রোদপোহয়া দলে। নির্দলে জটে বুড়ি যেন আড় ভেঙে পাশ ফিরে হাতের উপর শু’ল।
‘-আর তাছাড়া দিলেই বা কি? কে দেয় পঞ্চাশ টাকা ,না খেতি পেলি?’
ব্যাস্! এই ভয়টাই পাচ্ছিল সম্বরণ।অধীরখুড়ো তেলেবেগুনে হলে বড্ড গায়ে ঝাল লাগা কটুকাটব্য করে।
-হেঃ,দেখলে তো ভায়া সম্বরণ,নিজে তো বাপঠাকুরদার দেওয়া নামটা র মান রাখলেনা।হুঃ, সম্বরণ! কখনো করেছ? তা নিজে তো করোইনি ,এখন এদেরও নাল ঝরাতে শেখাচ্ছ ! তা,বামুন পাড়া আগুন জ্বাললে...মসজিদ ভাঙলে ;ক’টা বামুনের মেয়ের ইজ্জত গেসল? বাপু,তোমার বাপ ঠাকুরদা শুনিচি মাজারের ও খেয়েচে আবার মন্দিরেরও।গাঁ শুদ্ধু বর্ষার ভয়ে সিঁটিয়ে আর তেনারা ত্রাণের মাল জড়ো করে তার ওপরে বসে গড়গড়া টানতে টানতে জীবন পার করেচে।যে-কটা বাঁচবে, বর্ষা শেষে তাদের চড়া দামে বেচবে সে মাল... এই তো?
সম্বরণ খড়গহস্ত, অধীর খুড়োর উপর প্রায় চড়াও হয়ে গাল পাড়ে তা শুনে।
-দেখো খুড়ো,বাপ তুলবেনা বলে দিচ্চি!বয়সে বড় বলে সম্মান করছি,নইলে এক এ কিল-এ তোমার দফারফা করে দিতুম শালা।
 দুপুরের নরম রোদের সাথে উত্তুরে হাওয়া কাঁপুনি ধরাচ্ছিলো। ভীষণ হইহই শুরু হ’ল ঠাকুরদালানে।গালমন্দে সে এক হুল্লোড় গাদাগাদি।
 খুড়ো বললে, দ্যাখনা, পঞ্চায়েতে যদি না কান ধরে ওঠবোস করাতে পারি তো আমার নাম পালটে নাম রাখবি,সুমুন্দিরা।বয়স গেরাজ্জি করোনা না ?
হঠাৎ কখন যে, সেই নির্দল জটেবুড়ি উঠে এসেছে তা কেউ লক্ষ্য করেনি।
 প্রথমে তার তেলো লাঠির খোঁচা আর খ্যাক্ করে ফেলা থুতু পড়ল বেচুর গায়ে। তারপর আরো যাকে যাকে নাগালে পেল সে থুঃ থুঃ করে কুকম্ম থুকে দিল ।‘এইই মাটি কইরেচে’ বলে যে যেদিকে পারছে তার নাগালের বাইরে পালাচ্ছে দেখে বুড়ি গাল পাড়তে লাগল।
 শাঁআআআলা,দুকুর বেলায় ঘুমুতে দেবেনা,বেরহ বের-হ এখান থেকে খচ্চরগুলান! হিঁদুর মেয়ে ছিনু; মোছলমানের ব্যাটা বে করে এই ভাগাড়ে ফেলেচে। শাআআআলা...একন আবার খেস্টান হতি হবে?এই পাঁচ টাকা দে বলে ছিপিএনে ভোট দে,এই গায়ের কাপড় দে বলে তিনোমুলে দিস খোন... একন আবার কোত্থে কে এয়েচে তিরিশুল নে গেরুয়া না জানি !বলে সে কাঁদতে বসল ‘কি-কি না হইনি ? কারে না ভোট দিইনি,ভাত চাইলি ছব ব্যাটা পেচন দেকিয়েচে’
জটে বুড়ি না ? জট পড়বে না তো কি ? এই চুল দেখে; কোন কোন জাত আসিসনি রা গাঁ শুদ্ধু ?
সন্ধ্যা হলিই ‘ভারতী’ ‘ভারতী’ বলে তামাক সাজাতে ? আর এই ব্যাটা অধীর ন্যাকা চৈতন ! বলি,জ্ঞান ঝেইড়ে ঝেইড়ে আর ক’দিন, আ্যঁ !
ভর বচ্ছর বাঁচি কি বাঁচিনে তা তো দেকিসনে, শুদু ভোটের ছময় ... “ভোট ট নষ্ট করিস নে বুড়ি” এবার বলতি আসিস তোর মুখে ঝ্যাঁটা মারব,দেকিসখোন ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র