রেখা নাথ - মায়াজম

Breaking

২৪ আগ, ২০১৮

রেখা নাথ

                           নেশা

নন্ত সাহার স্কুল জীবন থেকে ইচ্ছে ছিল যে পৃথিবীর সব বিখ্যাত লেখক- লেখিকাদের বই তিনি একদিন পড়বেন । বই কেনার নেশা ছিল তাঁর । কলেজ জীবনে টিউশানির পয়সা জমিয়ে মাঝে-মধ্যে বিখ্যাত লেখক- লেখিকাদের বই কিনতেন কিন্তু পড়া হত না । পড়াশোনার চাপে । চাকরী জীবনে মাইনের একটা অংশ বরাদ্দ থাকত বই কেনার জন্য এবং প্রচুর বইও কিনতেন যতদিন বিয়ে হয়নি কিন্তু যথারীতি বিশেষ পড়া হত না অফিসের কাজ এবং প্রমোশনের পড়াশোনার জন্য । বিয়ের পর দায়িত্ব বেড়ে গেল । বেড়ে গেল সাংসারিক কাজের চাপ । ইতিমধ্যে অফিসে উন্নতি হয়েছে । অফিসে সামলাতে হচ্ছে দায়িত্বপূর্‍ণ পদ । সকাল ৮টায় বেরিয়ে যান অফিসে আর ফেরেন রাত ৮ টায় কিংবা ৯ টায় । ছুটির দিনে বাড়িতে অজস্র কাজ তবু প্রতি রবিবার শেল্ফ থেকে বইগুলো পেড়ে ,ঝেড়ে-মুঁছে সযত্নে গুছিয়ে রাখতেন আলমারিতে আর মনে মনে ভাবতেন অবসর নেওয়ার পর জুত করে সব বইগুলো পড়বেন । কাঁচের আলমারিতে সুশোভিত বিদ্যাসাগর বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়, তারশঙ্কর ……ইত্যাদি ইত্যাদি ইংরাজীতে শেক্সপীয়র, থমাস হার্ডি, হেরমেন হেস, গ্রুন্টার গ্রাস, পর্‍লস্ বাক্, সমারসেট মম , গোর্র্‍কি, ও হেনরী …… ইত্যাদি ইত্যাদি । বাড়িতে একটা মিনি লাইব্রেরী করে ফেলেছেন অনন্ত সাহা । বাড়িতে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয় –স্বজন এলে,সবাই অনন্ত সাহার মিনি লাইব্রেরীর প্রশংসা করতেন – বাঃ আপনার বই এর তো খুব ভাল সংগ্রহ । আপনাস টেস্ট আছে । অনন্ত সাহা মনে- মনে খুব খুশী হতেন । অবশ্য বই নিয়ে গিন্নী সুলতার সঙ্গে মাঝে-মধ্যেই তাঁর খটাপটি লাগত । সুলতা বলতেন বাড়িতে থাকার জায়গা নেই , জিনিষ রাখার জায়গা নেই আর তুমি বই কিনে কিনে ঘর ভরাচ্ছো । তা যদিও বা বইগুলো পড়তে ! গিন্নীর কটাক্ষের উত্তরে তিনি সগর্‍বে বলতেন – পড়ব। পড়ব । সব পড়ব । রিটায়ার্‍ড করার পর জুত করে সব পড়ব । এখন তো মাথায় হাজারো চিন্তা এবং সহস্র হাজার কাজ । ছেল-মেয়েদের পড়াশোনা , চাকরী বাকরী ও তাদের বিয়ে থা ইত্যাদি ইত্যাদি । কত কাজ আছে বলো তো !
অনন্ত সাহা বিছানায় শুয়ে শুয়ে সতৃষ্ণ নয়নে কাঁচের আলমারির দিকে তাকিয়ে থাকেন । তাঁর কত সাধের বই ! অবসর জীবনে পড়বেন বলে তিল তিল করে সংগ্রহ করেছেন । তাঁর অমূল্য বই এর সম্ভার ! অবসর জীবন । এখন অফুরন্ত সময় কিন্তু হায় ! বইগুলি আকন্ঠ পড়ার ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পড়তে পারছেন না । শরীর বিদ্রোহ করেছে । প্যারালিটিক এ্যাটাকে তাঁর বাঁ দিকটা সম্পূর্‍ণ অবশ ।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Featured post

সোনালী মিত্র