চাতক (ঝুরোগল্প)
মাথায় পিঁপড়ের ডিম।পোকা কিলবিল করে চন্দ্রমণির মাথায়।অন্তত লোকে সেরকমই বলে।
বয়স হতে চলল অর্ধশতক কিন্তু মস্তিষ্কের বাড়বৃদ্ধি নেই।কেউ বুঝতে পারে না তার কথা।সময় সময় পাল্টে যায় সে।যেমন চোখ দুটো তার মাছরাঙা এই সময়।টলটলে একটা দিঘি। কালো জলের গভীরে পরিস্কার দেখতে পাচ্ছে সে কালোবরণ তেলাপিয়া,পুঁটি। মাছের ঝাঁক,গেঁড়ি গুগলি আর জলঢোড়া সাপ তার পায়ের কাছে ঘুরঘুর করছে।চন্দ্রমণি বসে থাকে ঘেরাটোপে।বসে বসে ঘুরে আসে জগৎসংসার।কেউ কেউ দেখতে পায় তাকে।ভর দুপুরে
চন্দ্রমণি হেঁটে যাচ্ছে ধুলো,বিষ্ঠা আর থুথু সমেত রাস্তা দিয়ে হনহন করে।অনেকে খেয়াল করে না কিছু।পায়ে পায়ে তার ঘন জঙ্গলে।দুপাশে বট, অশত্থ আর আকাশমণি গাছ।পলাশ ফুল ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে পড়ে আছে।কেঁদে ফেলে অযথাই।কী সব মনে পড়ে কুয়াশার মতো।ছোটো একটা ছেলে ফর্সা মুখ,ভাসা ভাসা চোখ হামা দিতে দিতে চলে যাচ্ছে মেঘে,শ্মশানে গিয়ে মাঝরাতে খোঁজে হাড় মাশ। লোকে ভয় পায়। পা দুলিয়ে বসে ভাঙা ঘাটে গান গায় চন্দ্রমণি চাঁদের দিকে চেয়ে চেয়ে।একটা মেয়ে লাল ফিতে দুপাশে বিনুনি করে হেঁটে যাচ্ছে বাবার হাত ধরে।রাত বাতাসে শোনে একমনে ওই বাজে বাঁশি।
তার ভাষা অনেক লোকে বুঝতে পারে না।
চন্দ্রমণি কথা বলে না কত কাল ধরে।
একটা শব্দের মানে লেখা থাকে অভিধানে,তার সাত সতেরো মানে করে লোকে।
হাট বাজারে লোকে দেখে চিমসে যাওয়া তার স্তন ছেঁড়া নোংরা শাড়ির ভাঁজে।
ঋতুশ্রাবে রাস্তা ভিজে যায়।
চন্দ্রমণিকে অনেকে বলে অতি চালাক,কেউ বলে অতি বোকা।অধিকাংশ এই সিদ্ধান্ত নেয় সে পাগল।সুতরাং তাকে কেউ পাত্তা দেয় না বিশেষ।
মাঝে মাঝে ডানা মেলে সে চিল।ওপর থেকে দেখতে পায় সবার সব কিছু।ছোট্ট মানুষ সব।ছোটো ছোটো রাগ হিংসে আর দর কষাকষি নিয়ে নগর পুড়ছে এখন।
পিঁপড়েরা ডিম পারে মাথায়।পোকা নড়ে।চন্দ্রমণি তখন সাজে।কাজল পড়ে ঘেরাটোপে,ঠোঁটে লাল রং।ঘেরাটোপে থাকে।
তখন সে ভরা যৌবন কামপাখি।তার চোখের সামনে খর গ্রীষ্মে হাতির শিশ্ন মাটি ছুঁয়ে থাকে।
বিছানায় এলোচুলে বসে,কখনও আড়াঢেলে শুয়ে পড়ে।অপেক্ষা করে তার হারিয়ে ফেলা ভাতারের।
সে যাই হোক টুকটুকে কোনো ডালিমকুমার আসে না।পাত্তা দেয় না তাকে।তার যোনিরস চোখ দিয়ে ঝরে ঝরে বুকের বৃন্ত ভিজিয়ে দেয়।
কাচের আয়েনাকে বিশ্বাস নেই কোনো।জলের ওপর দেখে নিজের নিটোল শরীর।একা একা ওই যজ্ঞিডুমুর,সজনের ডাল,পেয়ারা গাছ...তারাও দেখে।
চন্দ্রমণি ছুটতে থাকে দোকান, বাজার মাঠ পেরিয়ে।
শহরের ছেড়ে, গ্রাম পেরিয়ে...।
পিঠ থেকে বেরিয়ে আসে ডানা। অনেক উঁচুতে উঠে জলের জন্য কাতর হয়।চন্দ্রমণির দেহ জ্বলতে থাকে দাউ দাউ। একটা সমুদ্র চাই তার।খুঁজতে থাকে।খুঁজতেই থাকে।
জয়িতা ভট্টাচার্য
সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২২
0
Tags
সুচিন্তিত মতামত দিন