সায়ন্তন ঠাকুর' এর গ্রন্থ আলোচনা

মায়াজম
0

সায়ন্তন ঠাকুর' এর গ্রন্থ আলোচনা


নাহ, কিছুতেই মেনে নেওয়া গেল না। কেন নীলাঞ্জনা গঙ্গাবক্ষে বিলীন হয়ে যাবে।এ ইঙ্গিত প্রকারান্তরে মৃত্যুর নামান্তর যে! অহল্যা ডোমনির কোনো এক সুত্রধারিনী উত্তরপুরুষের অন্তর্লীন হওয়ার ক্ষেত্রে আরেক জনমে রূপান্তরিত হওয়ার ইঙ্গিতই কি শ্রেয় হত না! 


বড় অভিমানেই সায়ন্তন ঠাকুরের 'শাকম্ভরী'র শেষ পাতাটি সমাপ্ত করে দুদিন ধরেই চুপ করে রইলাম। তার মধ্যেই বহুবার মনে হয়েছে আমার এই অভিমান কি সঙ্গত। উত্তরপুরুষ বা পূর্বপুরুষ যে ধারাই বহমান হোক না কেন, সকলেই তো আলাদা অস্তিত্ব। তবু যে কি এক মায়াসুতোর ডোরে মহাকাল বেঁধে রাখে ভিন্নতাকে! আমিই কি আমার বাবা মায়ের মতো পুরোটাই হয়েছি! না কি কেউ হয়! আবার সম্পূর্ণ শিকড় উপড়ে ফেলাও যায় না! পারে না মানুষ। কোন সুপ্তবাসনার গায়ে বুদবুদের মত লেগে থাকে শিকড়ের টান।


 কারো থাকে বিলীন হওয়ার বাসনা অতীতে আবার কারো থাকে ভবিষ্যতে ফিরে ফিরে আসার কামনা। সবই বোধহয় সেই মহান জাদুগরের ভোজবাজি! 


তাই অহল্যাকে 'কত স্মৃতি, কত ভালোবাসার পদ সমস্বরে বলে, যেয়ো না, ওগো তুমি চলে যেয়ো না.....


সব শুনেও অহল্যা স্মিত হেসে সবাইকে বলেছে, " তোমাদের নিকট চিরতরে ফিরিয়া আসিব বলিয়াই তো যাইতেছি!"...


আর নীলাঞ্জনা! একের পর এক চিত্র চলচ্ছবির মত তার সামনে ভেসে ভেসে আসছে। কখনও অহল্যা ডোমনির মত সজ্জায় নিজেকে সাজিয়ে অভিভূত হয় সে। আবার শাকম্ভরী এসে দর্শন দিয়ে যায়।  কোন এক অদৃশ্য সুতোয় সে কলকাতা থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম রাঢের সিরহি অবধি বয়ে চলে এক স্রোতের মত। কোন এক অদ্ভুত অতীত তাকে টেনে নিয়ে চলে উজানে! বুঝি তাই তার অবলুপ্তি গঙ্গার স্রোতেই বহমান। এরকম হওয়াই উচিত ছিলো। 


ভাবতে ভাবতেই আমার বারান্দায় শেষ বিকেলের মৃত্যুপথযাত্রী আলো রেখে যায় এক গভীর গভীরতর দর্শন। ঠিকই তো নীলাঞ্জনার নশ্বর দেহটির সলিল সমাধি হয়েছে ঠিক আজ বিকেলের আলোর মত। কিন্তু এই মৃত্যুই তো নতুন জন্ম ডেকে আনবে। এক ঘন অন্ধকার রাত্রির জরায়ু থেকে জন্ম নেবে নতুন দিনের ভ্রুণ, নতুন প্রাণের মতোই তার আবিলতা। এ যে চিরকালিক। 


এ চিরকালীনতার আভাস অবশ্য লেখকের নিজের কথামুখেই মেলে। সেকারণেই এত বড় কথা বলে ফেলতে পারেন লেখক, "প্রতিদিনই লিখতে বসে বুঝতে পেরেছি এই আখ্যান কোনো অর্থেই আমার রচনা নয়! তাই প্রকাশমুহুর্তে 'শাকম্ভরীর প্রকৃত স্রষ্টা, সেই পরমা প্রকৃতিকে প্রণাম জানিয়ে আমি দূরে সরে যাচ্ছি! "


বাস্তবিকই প্রকৃতি এ উপন্যাসে চরিত্রের সাথে একাত্ম হয়ে উঠেছে শুধু নয় যেন স্বতন্ত্র চরিত্র হয়ে উঠেছে। এই স্বতন্ত্র চরিত্র হয়ে ওঠার ব্যাপারটি একটু বিশ্লেষণের দাবী রাখে। উপন্যাসের সূচনায় 



বহুদিনপর কোনো বই হাতে নিয়ে তার অক্ষর,  শব্দ,  চরিত্রের সাথে এভাবে মান অভিমান হাসি কান্নায় দুলে উঠলাম। আমার সবচেয়ে বড় দোষ হল, যাই পড়ি না কেন, সেটা নিয়ে নিজের অনুভূতিটুকুই প্রকাশ করতে পারি, সেটা বুক রিভিউ হয় কিনা জানা নেই!  কারণ কাটাছেঁড়া করতে বড় মায়া লাগে। 


উপন্যাসঃ শাকম্ভরী 

লেখক ঃ সায়ন্তন ঠাকুর

প্রকাশকঃ ধানসিড়ি

মূল্য ঃ ৪৫০ টাকা

                                                              লিখলেন - ফাল্গুনী ঘোষ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)