রং নাম্বার
-- হ্যালো
-- হ্যালো, আপনি কে বলছেন ?
-- ফোনটা আপনিই করেছেন । আপনিই বলুন, কাকে চান !
-- সরি, রং নাম্বার বলে চুমকি ফোনটা কাটতে যাচ্ছিল, সেই মুহূর্তে ফোনের অপর প্রান্ত থেকে ভরাট গলায় পুরুষ কন্ঠটি বেজে উঠল – প্লীজ, ফোনটা কাটবেন না । আমি আপনার সঙ্গেই কথা বলতে চাই ।
-- সরি, আমি অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলি না। চুমকি একটু রাগত স্বরে বলল ।
-- আমি আপনার অপরিচিত ঠিকই কিন্তু অপরিচয়ের বেড়া ডিঙিয়ে বন্ধু হতে আর কতক্ষণ লাগবে যদি আপনি ইচ্ছুক থাকেন !
-- সরি, আমি অচেনা, অজানা ব্যক্তির সঙ্গে খেজুরে আলাপে ইচ্ছুক নই বলে চুমকি ফোনটা কেটে দিল ।
ফোনটা আবার বেজে উঠল । মোবাইল স্ক্রীনে সেই অচেনা ব্যক্তির ফোন নাম্বার ফুটে উঠল । চুমকি দেখল । যতবারই চুমকি ফোন কেটে দিচ্ছে, নাছোড় ব্যক্তিটি ফোন করেই যাচ্ছে । বিরক্ত হয়ে চুমকি কঠিন গলায় বলল – আমি আপনাকে ব্লক করে দেব, আপনি যদি আমায় এ ভাবে বিরক্ত করেন ।
-- প্লীজ ব্লক করবেন না, করুণ কন্ঠে বলে উঠল অচেনা ব্যক্তিটি । আসলে আপনার কন্ঠস্বরটি ভারী মিষ্টি । মনে হয় কান পেতে কেবল আপনারই কথা শুনি । আপনি যখন কথা বলেন মনে হয় মধু ঝরছে । আর আপনার রাগী স্বরটি আরো মধুময় । আমার কর্ণকুহরে প্রবেশ করে হৃদ-বীণায় ঝংকার তুলছে ।
চুমকির চেনা জগতে তার কন্ঠস্বরের সুখ্যাতি সম্পর্কে সে ভালো ভাবেই বিদিত । একজন অচেনা ব্যক্তির কাছ থেকে তার কন্ঠস্বরের প্রশংসা শুনে চুমকিরও মনে একটা ভালোলাগার আবেশ ছড়িয়ে পড়ছিল । নিজের প্রশংসা কার না ভালো লাগে ! তাই কথোপকথনে ছেদ না টেনে উপহাসের গলায় চুমকি বলল – আপনি কি কবি ? কবিতা লেখেন ?
কামজ গলায় পুরুষ কন্ঠটি বলে উঠল – লিখিনি আজ অবধি কিন্তু আপনার মধুঝরা কন্ঠস্বর যদি প্রতিদিন শোনার সুযোগ পাই তাহলে একদিন নিশ্চয় কবিতা ধরা দেবে আমায়। আপনার কোকিল কন্ঠ আমায় যে মোহিত করেছে !
-- মধুমিতার খোঁজ করতে গিয়ে কবিতাকে ধরার প্ল্যান করছেন । বাব্বাঃ আপনি কী সাংঘাতিক মানুষ ! ঠাট্ঠার গলায় চুমকি বলল ।
-- আপনার মধুঝরা কন্ঠস্বর আমায় প্রেরিত করছে । আমার দোষ ? ভরাট গলায় অচেনা ব্যক্তটি বলল ।
-- সরি, একজন অপরিচিত,অজানা মানুষের দোষ গুণ জানার প্রয়োজন বোধ করি না ।
-- সব কিছু কি প্রয়োজনেই হয় । কিছু জিনিষ আপনা আপনিই হয়ে যায় না কি? এই যেমন রং নাম্বার আপনার মধুঝরা কন্ঠস্বরের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিল । আমার কি সৌভাগ্য !
উপহাসের গলায় চুমকি বলল – আপনার সৌভাগ্য, আমার দুর্ভাগ্য, কে বলতে পারে ! কথাগুলি বলেই চুমকি ফোন সুইচ অফ করে দিল ।
একজন অচেনা, অদেখা ব্যক্তির সঙ্গে অযথা বার্তালাপে মিছিমিছি সময় নষ্ট । সামনেই এম.এ পরীক্ষা । কত পড়া বাকী এখনও । চুমকি মনে মনে ভাবে । মনের একটি ভিরু স্বর প্রশ্ন তোলে - "তোমারও কি ভালো লাগেনি অচেনা ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে ?" নিজের মনকে জিজ্ঞেস করতে বড় দ্বিধা চুমকির ।
শুতে যাওয়ার আগে ফোন সুইচ অন করতেই, টিং টিং করে মেসেজ আসতে শুরু করল । চুমকি দেখল বন্ধু-বান্ধবদের মিসকল ছাড়াও ওই অচেনা ব্যক্তির নাম্বার থেকে কয়েকটি মেসেজ এসেছে ।
-- আপনি শুভরাত্রি না জানিয়ে হঠাৎ করে ফোনটা সুইচ অফ করে দিলেন । আপনার মধু ঝরা কন্ঠস্বরে শুভরাত্রি না শোনা অবধি আমি জেগে থাকব ।
-- অধমের নাম সুহাস । সুহাস মিত্র । গতবছর ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে এখন একটি কর্পোরেট জবে রয়েছি ।
-- আমি আপনাকে খুব ভালো করে চিনি । কারণ আপনার এক বন্ধুর বন্ধু আমি ।
প্রথম মেসেজটা পড়েই চুমকি ভাবছিল এই মাঝ রাত্রে তাকে একবার ফোন করে দেখবে ! সত্যি সত্যি সে জেগে আছে নাকি ঢপ দিচ্ছে । ইচ্ছেটা মুলতুবি রেখে শেষের মেসেজটা পড়তেই চমকে উঠল চুমকি । মনে প্রশ্ন জাগল তার, "কোন বন্ধুর বন্ধু এই সুহাস মিত্র ?"এই কৌতুহলটা এবং সুহাসকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন বোধহয় আজ সারা রাত জাগিয়ে রাখবে তাকে।
সুচিন্তিত মতামত দিন